ছায়ার শক্তি বেশি
ছায়ার শক্তি বেশি
ছায়ার শক্তি বেশি
মন ভালো নেই । এতোদিন যা শিখিয়ে আসবার চেষ্টা করেছেন ও যা শিখে এসেছেন সব ভুল। ভালো লাগে না, বেঁচে থাকতে হলে চুপ করে থাকতে হবে।
কলেজে সদ্য যোগ দেওয়া তরুন অধ্যাপক, যতটা পারে নীতির পথেই চলেন। বয়স ২৬-এর কোঠায় হবে।
শহুরে জীবনের অকপট বা কপট ভাবনা তাঁর নেই।
বামপন্হায় বিশ্বাসী কিন্তু মতাদর্শের আঘাত ও কূপমণডুকতা এড়িয়ে চলে। যারা আজাদী ঝুটা বলেছিল, তারাই ক্ষমতার অলিন্দে এসে ঘরের রান্না নিয়ন্ত্রণ করেছে।
ছাত্ররাজনীতির নামে লুটেরা ও আধা-ফ্যাসিবাদীদের রক্তচক্ষু।
তাই ও দলমত নির্বিশেষে মেশেন ঠিকই , কিন্তু দলের খোঁয়াড়ে ঢুকে কান্নাকাটি করার লোক ছিলেন না।
কিন্তু সমাজে সংঘশক্তির জয়। সে শক্তি অবশ্য ভালো ও খারাপ দ্বৈত নীতিতে চলে। চুঁইয়ে পড়া নীতিতে জনকল্যাণ। আর ভেতরে ভেতরে চোরাগোপ্তা হানা। ধোপা বন্ধ থেকে মাইনে বন্ধ। এমন কি মিথ্যা থানা পুলিশের কাছে গিয়ে মুচলেকা ও পেটিকেস
খাওয়া। শেষ পর্যন্ত বিপ্লব দীর্ঘজীবী করতে পতাকা নিয়ে মিটিং ও মিছিল। কালো হাত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা। যদিও সেই কালো হাতের অস্তিত্ব ব্ল্যাকহোলের মতো রহস্যময়।
কলেজে যখন তখন শ্লোগান, ছাত্রসভা, পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও। রক্ত দিয়েছি রক্ত দেব, নেব ইত্যাদি।
প্রথম থেকেই তাঁর মনে হয়, এসব ছেলে মেয়েরা যে সময় এই সব করে নষ্ট করে,তার থেকে তিন বছর কষট করলে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।
মূল ধারার রাজনীতি যখন আছে , তখন আজকের দিনে ছাত্র রাজনীতির আলাদা দরকার নেই।
বিমল বাবু একটু গোঁয়ার ,তবে নম্রতা ও ভদ্রতা ও সততাই নাকি আলাদা। কেউ কেউ গ্রাম্য বলে, কেউ কেউ বলে সত্যি আপনি বা তুমি বা তুই ভালো মানুষ।
সে ক্লাসে বরাবর একটু কড়া ধাতের। নিয়ম অনুযায়ী সে কাজ করতে ও চলতে ভালোবাসে। দেশকাল অনুযায়ী রীতি ওপ্রথা মেনে চলাটা ও ভুল সংশোধন জরুরী। সে মনে করে ছাত্র জীবনের প্রথম কাজ পড়াশুনা করা।
চেষ্টা করলেই সবাই সাধ্যের মধ্যে সার্থক হতে পারে।
বেশ কয়েকবার ইউনিয়নের সাথে ঝামেলা হয়েগেছে।এই যেমন,সেদিন ক্লাস নিচ্ছেন,গুটিকয়েক ষণ্ডদেহী যাদের বহিরাগত বলে,অথছ জ্যাঠুর বয়সী ছেলের দল বেঁধে ক্লাসে ঢুকে লেকচার শুরু করে, ব্রিগেডে যেতে হবে,আজ পথমিছিলে যেতে হবে, বিচারকের কালো হাত ভাঙতে হবে, বিপ্লবীদের প্রতি ফতয়া চলবে না ,মিটিং মিছিল কেড়ে নিতে চেয়েছে এত বড়ো সাহস, বুর্জোয়া , জনগণের শত্রু ...., অতএব, লালা বাংলা ছেড়ে পালা ইত্যাদি।
বিমল বাবু বার করে দেন। একজনকে বলতে বলেন ও বাদ বাকিদের বাইরে যেতে বলেন।
তার একদিন পরে, ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা, ফেস্টুন টাঙানো ...ভ্রূক্ষেপ নেই। বারন করেন। শোনে না। বরং বলে, ক্লাস নিতে হবে না ,বেরিয়ে যাক। প্রতিবাদ করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করতে চেয়ে অনুরোধ করে, এবং এত খারাপ অবস্হা তৈরি হয়,ক্লাস ছাড়তে বাধ্য হন। অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি দেখবেন বলেছে ন। আবার বামপন্হী নেতা আছেন বিশেষ সিপিআইএম দলের বিশিষ্ট কর্তা ব্যক্তি।
সে সব কথা বলেন, শুনে বলেন, এবার তুই মারখাবি।
বিমল, জবাবে বলে এতো সহজ।
এরকম চলতে থাকে। কেউ বলে , তোমার কি দরকার। ক্লাস নিতে পারলে নেবে, না পারলে বেরিয়ে এসে প্রিন্সিপালকে জানাবে।
ঘটনক্রমের দুদিন পর সে ক্লাসে গেছেন । তখন একটু হাজিরার কড়াকড়ি ছিল। কলেজে আসে ক্লাস করে না ,এমন যুগলের অভাব নেই। বন্ধুত্বে অপরাধ দেখেন না। কিন্তু গলাজড়িয়ে যখন অন্যতর হয়ে ওঠে তখন জীবনের জন্য অনেক হারাবার পথ তৈরি হয়।
পড়াতে থাকে, যুগল অনেকদিন পর ক্লাসে এসেও গল্পে ব্যস্ত।
নন্দন তত্বে কাব্যের আধুনিকতা নিয়ে বলতে থাকে পালাবদলের ও দিকবদলের কথা। আধুনিকতা বাইরে নয়, মননে। পোশাকে নয় , সামাজিক মানসিকতায় তার চেতনার স্বরূপে। ....কুসংস্কারে আবদ্ধ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকারী অশিক্ষিতরা নাকি আধুনিক!
ক্লাস থেকে ফেরা মাত্র ছাত্র ইউনিয়নের মাতব্বর এসে ঘিরে ধরে। এই মারে তো সেই মারে। টিচার হয়ে কী মেয়েদের বুক দেখতে আসে, পোশাক নিয়ে কথা, ...
দু-একজন শিক্ষকদের কথায় তারা শান্ত হন, বিমল বাবু বলতে থাকেন, সে এরকম কিছুই বলেননি। আর যা পড়িয়েছেন তা যদি বলতে পারে তা হলে , দোষ স্বীকার করে নেবেন বা ক্ষমা চেয়ে নেবেন।
ওদের গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষকদের বসার ঘরে বসেন। বেশ কদিন ধরে কলেজে সমস্যা চলছে, 32 লক্ষ টাকা খরচ করে কলেজে একটি মেয়েদের কমন রূম হচ্ছে ও যার জন্য কতগুলি গাছকাটা হয়েছে। এমন ভিত করে বাড়ি হচ্ছে ,যার দোতলা আর করা যাবে না। আপাতত কাজ বন্ধ হলেও দুদিন বাদে সবদিক রক্ষা করে আবার খুঁড়ে চলছে ,তাতেও যে ভবিষ্যতে দোতলা ঘর হবে না। শুধু শুধু জায়গা ও টাকা নষ্ট। আচ্ছা, নিজেদের বাড়ি হলে কী এরকম ভাবেই কাজ করতো, ভাবতে থাকেন, বিমল বাবু।
ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস ঘরের যে সংকট তার সুরাহার নামে কেউ কেউ পকেট গরম করে। তাতে যুক্ত থাকে লোকাল পার্টি, ছাত্র সংগঠন, কিছু রাজনীতির মধ্যগ শিক্ষক। তারা যে পেশায় থাকুক ব্রোকারী করতোই।
বিমল বাবু এসব নিয়ে বেশ কয়েকবা প্রতিবাদ করেন , প্রতিফল, প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন হুমকি শুনতে হয়।
এর মধ্যে ঘটনা এই ,নীতিগত কারণে বিমল কোনো গৃহশিক্ষকতা করেন না। যেখানে কলেজে পড়ানো হয়,সেখানে বাড়িতে কেন পড়াবেন। আর ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগ গরীব বা নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত যাইহোক, তাদের থেকে টাকা নিতে পারবেন না। আর দরকারে ৬টা পর্যন্ত সে ক্লাস নিয়েছেন বা ভবিষ্যতেও নেবেন। মাঝে মধ্যে নিজের টাকা দিয়ে ভালো কিছু টিফিনের ব্যবস্হা করেন।
অনেক ছেলেমেয়ে প্রণাম করতে আসে, সে প্রনাম নিতে চায় না। মনে করে এসব নেবার মতো মহনীয় হয়ে উঠতে পারেননি।
অথচ কে কার কথা শোনে। হুড়মুড়িয়ে স্যারকে প্রনাম করে সবাই।
শ্যামল ও বনিতা দুজনে স্নাতকস্তরে ভর্তি হয়েই, বার বার দেখা করে ও ফোনে বলে চলেছে , তারা পাশ করবে না বিমল বাবু যদি সাহায্য না করেন । তারা কলেজ উত্তীর্ণ হয়ে দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ফোন করে কাকুতি -মিনতি করে।
মাঝে মাঝে কলেজে আসে । দেখাও করে। বারন করা সত্ত্বেও প্রণাম করে। বিমল বাবু ,ওদের অন্য স্যারদের সাহায্য নিতে বলে। অবসরে এটাও বিমল বাবু ভাবেন , যদি তার সাহায্য পেয়ে পাশ করে,প্রতিষ্ঠা পায় সে তো ভালো।
তবে ওদের দু-একবার ছাত্র ইউনিয়নে যেতে ও মিশতে দেখেছে ,এটা ভালো লাগে না। ওরা বলে ,তিনি না দেখালে আর তাদের পড়াশুনা হবে না।
একদিন মমতা বশত তাদের আসতে বলেন। কলেজে এখোন ওরা প্রাক্তন। আর দেখাতে গেলেই প্রচার হবে কলেজে কোচিং করছেন। তাই প্রায় সাত-আট মাস উত্তীর্ণ হল, ওরা পেছন পেছন ঘুরে চলেছে বেশি দিন নেই সামনেই ওদের পরীক্ষা ।
বিমল বাবু বই দিয়ে কিছু লিখিয়ে দিয়ে ওদের সাহায্য করেন। আর ওরা প্রণাম করে পড়তে বসার আগে ও পরে। স্নেহ ভরে ওদের কখনো কখনো মাথায় হাত দিয়ে আশশীর্বাদ করেন। যেটা বিমল বাবু উপেক্ষা করেন,এদের ক্ষেত্রে পারেন না । মোটামুটি মাস দুয়েকে ওদের সিলেবাস প্রায় শেষ। ওদের বলে দেন, এই মুহূর্তে কিছু সমস্যা রয়েছে,পারিবারিক তাই পড়াতে পারবেন না। তবে বই পত্র যখন লাগবে জানালে সুবিধা মতো দেবেন।
একসপ্তাহ যেতে না যেতে বনিতা ফোন করে,স্যার রবিবার একটু যাবো ,শ্যামল ও আমি। বিমল বাবু বলেন তার অসুবিধা আছে ও কাজ আছে পারবেন না। পরে দেখবেন।
এরমধ্যে কয়েকবার শ্যামল ফোন করে। কঠিন ভাষায় জানিয়ে দেন, সময় হলে বলবেন। এই ভাবে চলছে।
এরমধ্যে শিবার বিকালে বনিতা ফোন করে ও শ্যামল ও। বলে দুজন আসবে। নেক্সট সপ্তাহে পরীক্ষা। আগের বই গুলি দেবে ও কয়েকটা বই দিতেই হবে। কিন্তু বিমল বাবু পড়াশুনার ব্যাপারে ছাত্র দরদী হলেও কখনো কখনো কঠোর হন। বিরক্ত হন। না বলেন। যদিও খারাপ লাগে, সত্যি , ওদের সত্যি কোন অসুবিধা হচ্ছে।
আসলে বিমল বাবুর বন্ধু বেনারসে থাকে। সিবিআই অফিসার। তার বাড়িতে আসার কথা সেটা নিয়ে উৎকন্ঠা তো ছিল, আর তার পত্নী শনিবার সকালে ফিরে এসেছে। অনেকদিন মনোমালিন্য চলছিল। কলেজে কলিগরা একটু মধ্যস্হতা করেছিল। যাইহোক ফিরে আসায় খুশী । আবার অসম্মানের দাম্পত্য সম্পর্ক , যেখানে শিক্ষাকে মূল্য দেয় না বিমল বাবুর পত্নী ও শ্বশুর বাড়ির লোক। শুধু টাকা উপার্জনের যন্ত্র ভাবে।
সিবিআই বন্ধু আসে। গল্প করে । বিমলবাবুর পত্নী ক্ষুন্ন হয়েও কোনোরকম ভদ্রতা করে চা করে দেয়।
পত্নীকে বলে, একটু এগিয়ে দিয়ে আসছে সে। পথে যেতে যেতে কথা হতে থাকে। নানা বিষয়ে। বন্ধু বলে, এরপর দেখো সমস্যা কমে যাবে। ঠিক হয়ে যাবে। এরমধ্যে কল আসে বিনতার। স্যার কাল সকালে একটু সময় দিন, শ্যামল ও আমি যাবো, বই দেব ও নিয়ে চলে আসবো।
বিমল বাবুকে এতবার পীড়াপীড়ি করার জন্য , বাধ্য হয়ে ওদের আসতে বলেন। বাড়ি ফিরে এসেই শুরু হয় তার পত্নীর সঙ্গে বিতণ্ডা। কেন বন্ধু এলো। যখন ও বাড়ি ছিল না তখন আসেনি কেন। বিমল বলেন, আজ শনিবার আসার কথা ছিল। তুমি সকালে এলে। তারপর বলার মতো সুযোগ হয়নি। এসেছে ,ওতো কিছু খারাপ বলেনি।
---না,তুমি ওকে সমস্যার কথা বলে আমাকে অপমান করেছো। তুমি ষড়যন্ত্র করছো। দেখবো কে তোমাকে বাঁচাতে পারে। আমি যা খুশী করবো, তোমাকে মেনে সংসার করতে হবে। কলেজে ঐ নেতা আছে তার সাথে শোব। যার সাথে খুশী।
বিমল বাবু আজকাল কেমন আনমনা থাকেন। ঘরে সম্মান না থাকলে বাইরে সম্মান থাকে না। পাগল পাগল ভাবে আক্রান্ত। অন্যায় ঘরে ও বাইরে। না সে মাথা নত করে বাঁচবে না। সম্পর্ক যা হবে হবে। যে বিমল বাবুর গায়েও হাত তোলে সে কেমন পত্নী।
রাত যায়। সকাল দশটার মধ্যে বাজার করে বসেছে বই নিয়ে পড়ার ঘরে। এরমধ্যে পত্নীর সাথে খুব একটা কথা হয়নি। কলিংবেল বাজতে দরজা খোলে।দেখে বিনতা দাঁড়িয়ে। কী হল শ্যামল আসেনি।না স্যার ওর দেরি হবে বললো ,তাই চলে এসেছি। ও বাসে আসছে। খটকা কানে লাগলেও ভেতরে যায়নি। ঘরে ঢুকেই বইগুলো দেয়, দু-চারটি বই নিয়ে বার হবার আগেই প্রণাম করে। বিমল বাবু মুগ্ধ হন। বুকের মধ্যে যন্ত্রণা ও মধুর অনুভূতি,এত অপমানের পর এরা শ্রদ্ধা করে । কী যে করলো জীবনটাকে নিয়ে। ও বিনতার মাথায় হাত দিয়ে আলতো করে চাপকে দিয়ে বলে ভালো করে পড়াশুনা করে যেন, জীবনে প্রতিষ্ঠা পাক।
চলেগেলে দরজা বন্ধ করে পড়ার ঘরে বই নিয়ে বসে।ওর পত্নী ডাইনিং রুমে কী সব গোছানোর কাজ করছে ,সে সব দেখেও দেখে না বিমল বাবু। এড়িয়ে যাচ্ছে একে অপরে। মিনিট দশপনের পর আবার কলিংবেল বেজে ওঠে, দরজা খুলে কাউকে না দেখে ,ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে তিনচারজন ইউনিয়নের ছেলে। বলে, স্যার নীচে নামুন,কথা আছে। চমকে ওঠে,ওরা এখানে কেন। নীচে নামতেই বলে, আপনি বিনতার সাথে কী করেছেন। বিমল বাবু বলেন, সেটা কেনো হবে। ও কোথায় ডাকো। সামনা সামনি কথা হবে।
ওরা হুমকি দিয়ে চলে যায়,যাওয়ার পর বিমল বাবু ছটপট করতে থাকেন,বুঝতে পারেন না ,কী করবে। কাকে বলবে । এটার মধ্যে কী ঘটছে কেন ঘটছে আগে পিছে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে বিমলবাবুর পত্নী ঘরে ঢুকে বলে, কী ব্যাপার,ওরা এসেছিল কেন?
বিমল বাবুর চোখ ছলছল করে ওঠে,দেখে পত্নীর মুখে কাঠিন্য।
শ্যামল বাবু ছাদে যান, সেখান থেকে কল করে শ্যামলকে । বলো তো কী ঘটছে, তুমি এলে না। ও বই নিয়ে বেরিয়ে গেল। তার মধ্যে এসব গল্প কি করে আসছে।
--স্যার আপনি বাড়ি থাকবেন না। আর আমি তো ওখানে ছিলাম না। কী করে বলবো কী হয়েছে।
--তুমিও।
বলার পর ফোন কেটে দেন। এরমধ্যেই কথা শেষ হতে না হতেই জনা তিরিশেক লোক,লোকাল গুন্ডা নেতা, যারা কলেজে রাজনীতি করে ,প্রোমোটিং করে, বাম শিক্ষক নেতাদের পোষ্যপুত্র তারাও ভীড় করেছে। ডাকতে থাকে। যেতেই হবে।
বিমল বাবু মেয়েলি ব্যাপারটা চিরকাল ভয় পান,কারণ এটায় এতো ঘৃণ্য অভিযোগ তা প্রমানের অপেক্ষা রাখে না। আর মানুষকে ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট।
পত্নীকে বলে,তুমি গিয়ে দেখো, কী বলছে। পত্নী কী শুনে আসে কে জানে। বলে,তুমি ক্ষমা চাও, তারপরে ওরা যাবে।
বিমল বাবু এই কলরব ও ঘৃণ্য শক্তিকে থামাতে নীচে আসেন। ওরা বলে স্যার,আপনি গেট খুলে বাইরে আসুন। আর এসব ঘটিয়ে ওয়াইফকে ডেকে এনেছেন।উনি তো বাড়িতে ছিলেন না । বিমল বাবু বোঝাবার চেষ্টা করতে করতে গেটের তালা খুলে বাইরে আসে। ওরা বলে ক্ষমা চান।
তারসঙ্গে অশ্রাব্য গালাগালি। সাময়িক ক্ষমা চাইলে যদি সমস্যা মেটে ,তবে ছোট হতে তার আপত্তি নেই।
ওদিকে বিমল বাবুর পত্নী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে।
বিমল বাবু বলতে থাকেন, বিনতা আমি ভাবতে পারছি না। আমি পড়াই না,তবুও দিনের পর দিন বলার পর রাজি হলাম,আর আজ আসতে পর্যন্ত বারন করেছি,শেষ পর্যন্ত এই। ঠিক আছে,আমার অজ্ঞনতার বা অসাবধানতার কারণে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা চাইছি।
কথা শেষ হতে না হতে কিল-চড় -লাথি মারতে থাকে। মূর্ছিত হয়ে পড়েন। যখন জ্ঞান ফেরে তখন হাসপাতালে। পুলিশ আসে। জেনারেল ডায়েরী নেয়। কিছু সময়ের মধ্যে জ্ঞান ফিরে দেখে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। যাদের বাড়ি যেতে ৩ ঘন্টা লাগে, এতদূর থাকে, এত অল্প সময়ে এখানে আসা সম্ভব নয়। এল কী করে।
বুঝেও বুঝতে পারে না। কলেজের প্রতিবাদ ও ঘরের শত্রু সব এক হয়েছে।
কিন্তু কে কার সাথে কী ভাবে এই ছক করলো। লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যাপারটা আর কোনোদিন সামনে আসবে না। যারা সিনিয়র কলিগ তারা পাশে ছিল। তবে দুদিনে পুলিশ কিছুই করেনি।বন্ধু তাকে বলেছিল, সে থানার ও ওপরের অফিসারকে বলে ব্যবস্হা করবে। কিন্তু তাতে কি আর হবে। সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
বিমলবাবুও আগ্রহ দেখান না।কী হবে ওসব করে , প্রতিবাদের উৎস যেন শুকিয়ে গেছে ।কিন্তু বর্তমান ও ভবিষ্যতের টাকার জন্য যারা বা দুচারজন কলিগ ও তোলা তোলে যে অছাত্র ইউনিয়ন ---যা করলো , সে বেদনা ও লজ্জা রাখবে কোথায় ।
কিন্তু তার পত্নী বাড়িতে নেই এই খবরটা ছিল ওদের কাছে , একদিন আগেই বাড়ি এলো সেই খবর থাকলো না, নাকি সেটা শুনিয়ে রাখলো যাতে কোনোদিন বিমল বাবু উত্তর খুঁজে না পায়। উত্তর জানবার চেষ্টা করতেও পারবেন না।
@সুনীলকুমার@@14.4.19