সেলফি
সেলফি


মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল!
পাশে একবার তাকিয়ে সে চৈতির কাছ থেকে পুরো কথাটা শুনল| তারপর ফোনটা কেটে দিল| ঘুম ভাঙল যখন তখন বেলা ১১ টা| পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে এখন ওটাই তনুজার ঘুম থেকে ওঠার রুটিন| জানলার তলার ফাঁকটুকু দিয়ে তেরচাভাবে রোদটুকু এসে পড়ছে তনুজার মুখে| রেশমি চুলের আলুথালু ভাবটা তার মিষ্টি মুখটার আকর্ষণ অনেক গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে| একটা সেলফি তোলা যাক্|
হঠাৎ পেছন থেকে একটা ঠান্ডা হাত এসে তার কোমরটা জাপটে ধরল| ভয়ে চিৎকার করে উঠল সে| তারপর আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠে হাঁফ ছাড়ল | উফফ্| অনুপম..ভয় পাইয়ে দিয়েছিল একেবারে|
তনুজা ভয়ানক রেগে উঠল -"দেখো অনুপম| বাড়িতে বাবা মা কেউ নেই| তার উপর তুমি আমাকে এভাবে ভয় পাওয়ালে কিন্তু আমি হার্টফেল করে মরে যাব| তারপর আর হাজার ডাকলেও কিন্তু আমার দেখা পাবেনা|" অনুপম একটু হেসে উঠল-"চিন্তা নেই.. অতটাও ভুতুড়ে নই আমি| আর তুমি একা কোথায়? আমিতো আছি| "
তনুজা নিজের মাথাটা অনুপমের বুকে রেখে তাকে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরল| সে ভীষণ ভালোবাসে অনুপমকে..অনুপমকে নিজের, শুধুমাত্র নিজের করে পাওয়ার পথটা একেবারেই সহজ ছিলনা | সেকথা থাক্|
রাত হল ধীরে ধীরে| অনুপম চলে গেছে সকালেই| মোবাইলের ছবিগুলো দেখছিল তনুজা| পুরোনো ছবিগুলো একসময় গ্যালারিতে ভেসে এল তনুজার| শেষের ছবিটাতে এসে তার চোখটা আটকে গেল| এটা কবেকার? তার একটা সেলফি| লাটুস রোডের খাদটার ধারে| হঠাৎ একটা হাওয়ার ঝোঁকে জানলাটা খুলে গেল| এমনিতেই একটু ভয় পেলেই তার বুক কেঁপে হার্টফেল হওয়ার জো হয়| ভয়ে ভয়ে উঠে জানলার কাছে গিয়ে সাহস করে সেটা আটকে দিল সে| তারপর বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিতেই......
.
>
তনুজার ফোনের ১ বছর আগের শেষ ছবিটা, যেটা তার তোলা একটা সেলফি ছিল, সেটাকে আর একার সেলফি বলা যায় না| কারণ এখন তাতে একজনের বদলে আছে দুজন|
সে আর তারএককালীন বেস্ট ফ্রেন্ড মায়া| মায়ার কপালে একটা চেরা দাগ| চোখদুটো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে|
এটা সেই সেলফি যেটা সে তুলেছিল লাটুস রোডের খাদটার ধার থেকে মায়াকে ঠেলে নীচে ফেলে খুন করার পর|
কাল রাতে চৈতির ফোনটার কথা মনে হতেই বুকটা হঠাৎ আবার কেঁপে উঠল -" মায়া সুইসাইড করেনি, কেউ ওকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল| ১ বছর আগে একজন দেখেছিল ওকে কেউ খাদ থেকে ফেলে দিয়েছে, কিন্তু খুনীর বিষয়ে আর কিছু মনে নেই তার!" বিছানার দিকে তাকাতেই তার ভাবনগুলোও জট পাকিয়ে গেল| কারণ বিছানায় পা ছড়িয়ে অদ্ভুতভাবে বসে আছে মায়া|
আজ থেকে ঠিক ১ বছর আগে এই দিনটাতেই লাটুস রোডের খাদে ফেলে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে খুন করেছিল সে| কারণটা ছিল অনুপম| দুজনেই ভালবেসে ফেলেছিল অনুপমকে, কিন্তু অনুপম মায়াকে পছন্দ করত| তাই সেই রাগে ভালবাসাকে যেকোন উপায়ে পাওয়াটাই বন্ধুত্ব থেকে অনেক বড় হয়ে উঠেছিল| আর তাই সেদিন খাদের ধারে দুজনের একসাথে একটা সেলফি তোলার অছিলায় খাদের ধারে মায়াকে নিয়ে গিয়ে......কেউ জানতেও পারেনি|
সেলফি তুলেছিল তনুজা সেদিন| তবে একার|
সকালে পুলিশ এসে তনুজার লাশটাকে উদ্ধার করল বাড়ি থেকেই| ডাক্তারের কথায়র ভয়ে হার্টফেল করে মৃত্যু হয়েছে তার|
অনুপম চোখে জল নিয়ে তনুজার ঘরটার সামনে এসে দাঁড়াল| তনুজার ফোনটা নীচে পড়ে আছে| একটা ছবি তাতে... ফোনটা তুলে ছবিটা দেখতেই চমকে উঠল অনুপম| তনুজার মৃতদেহটার পাশে বসে কেউ একটা নিজের সেলফি তুলেছে| মুখটা ক্ষতবিক্ষত| চেনা যাচ্ছে না কে| তবে তার ঘাড়ের কাছে A লেখা একটা ট্যাটু| অনুপম চুপ করে দেখল খানিক্ষণ| সে জানে ওটা কার ঘাড়ে ছিল| মায়া| আর A মানে Anupam|