STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

স্বর্গের সংজ্ঞা

স্বর্গের সংজ্ঞা

5 mins
262

সুখী জীবনের চাবিকাঠি - স্ত্রীদের যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিন, নাহলে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস করুন। সংসার আর যুদ্ধক্ষেত্র মনে হবে না । এই সহজ সত্যটি যদি অনুভব করা যায়, তাহলে সব সংসারগুলো একটা শান্তিনিকেতনে পরিণত হত। অথচ এই সহজ সত্য জেনেও আমরা ভুলের মাশুল গুনি, ফলে সংসার ধরার স্বর্গের বদলে নরকে পরিণত হয়।


জানেন,আমার বিয়ের ১৯ দিন আগে আমি প্রথম চাকরি পাই। মাত্র ১৯ দিন আগে। প্রেম করেছিলাম আপনাদের ভাবীর সাথে। এক সাথেই পড়াশোনা করতাম। আমার হয়ত বিয়ের জন্য সঠিক সময় হয়নি তখন, কিন্তু কোমল মানে আপনাদের ভাবীর তখন বিয়ের জন্য পারফেক্ট সময় ছিলো। তাই চাকরিটা পেয়েই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবা মাও বেশ সাপোর্ট দিলো।

যাই হোক নতুন অফিসে কেউ সিগারেট খেতেও আমাকে ডাক দিতো না। নতুন হিসেবে অফিসে আমাকে তেমন কেউ পাত্তাই দিত না। আমিই সেধে সেধে গিয়ে কথা বলতাম।অফিস শেষে মোটামুটি সবাইকে দেখতাম নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়। গল্প করে। কিন্তু একজন সিনিয়র স্যারকে (রবীন) কখন দাঁড়াতে দেখতাম না। অফিস ছুটির পর দেখতাম সে ডানে বামে না দেখে সোজা বাসার দিকে হাঁটা দিতো।

একদিন খেয়াল করলাম আমাদের আরেকজন সিনিয়র স্যার তাকে সিগারেট খেতে ডাকছে। ঐ স্যার আসলেন না। একটা ভদ্রতা মূলক হাসি দিয়ে দুঃখিত বলে চলে গেলেন।

উনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাকিরা বলে উঠলো “ এমন বৌ পাগলা লোক জীবনেও দেখি নাই” কথাটা আমার কাছে কিছুটা আপত্তিকরই মনে হলো। নতুন তাই শুধু শুনলাম কোনো কথা বললাম না।

তার দুদিন পর অফিসের সবাই শুক্রবারে প্ল্যান করলো ঘুরতে যাবে । রবীন স্যারকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আর সে সেদিনও বলল

“না রে ভাই সম্ভব না। আপনাদের বৌদির জন্মদিন গেলো মঙ্গলবার । অফিসের কারনে সেদিন দেরী করে বাসায় ফিরেছি। কাল একটু বেড়াতে যাবো।”

সেদিন আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। আমার পাশের টেবিলে বসা লোকটা বলল

- ওনাকে যে কে ডাকতে যায়। জানে যে উনি যাবে না শুধুই মুখের শব্দ অপচয় করা ।

সেদিন একটু সাহস করে কথা বললাম আমি।

- স্যার বোধহয় খুব পরিবারের প্রতি দুর্বল। তাই না?

- আরে ভাই কিসের দুর্বল? আমাদের কি বৌ সংসার নাই নাকি? ওনার মত এমন বৌ পাগল না আমরা।

একটা চা বিড়ি খায় না। কেমন যেন নিরামিষ টাইপ।

- অনেকেই তো খায় না।

- আরে ভাই আগে খাইতো। বিয়ের পর থেকে খায় না। আগে আমাদের সাথে এদিক সেদিক ঘুরতেও যেতো, বিয়ের পর থেকে কিছুই করে না। শুধু মেয়েমানুষের মতন ঢং করে। গা টা খুব জ্বলে এগুলো দেখলে।

আমি আর কিছু বললাম না। তার কয়দিনপর আমার বিয়ের কার্ড নিয়ে রবীন স্যারের কাছে গেলাম। স্যার খুব অমায়িক মানুষ। আমাকে দেখে এত সিনিয়র মানুষ উঠে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। আমাকে তার ডেস্কে বসিয়ে বললেন

- নতুন জীবন শুরু করছেন। নিজেও ভালো থাকেন,তাকেও ভালো রাখবেন।

- হ্যাঁ স্যার। স্যার আমি আপনাকে সপরিবারে নিমন্ত্রণ করেছি। আমি জানি আপনি ম্যাডামকে ছাড়া কোথাও যান না। তাই ...............

- হাহাহাহা না বিষয়টা এমন না। তাকে ছাড়াও চলাফেরা করি কিন্তু সেটা খুব কম। এই অফিসে আমাকে অনেকে বৌ পাগলা বলে। সেটা আমি জানি কিন্তু খারাপ লাগে না। কখনো উত্তরও দেই না।

- হ্যাঁ স্যার।

- শোনো সৃজন সবাই যখন প্রতিদিন ১০০ টাকার সিগারেট খায় আমি তখন ঐ ১০০ টাকা দিয়ে প্রতিদিন তোমাদের ম্যাডামের জন্য টুকিটাকি কিছু কিনে বাসায় ফিরি। মহিলারা এসব খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে ১০০ টাকাও খরচ হয় না। ১০ টাকার ফুল নিলেই খুশি। আমি চাইলেই রাত করে বাসায় ফিরতে পারি। সবার সাথে আড্ডা দিতে পারি।

কিন্তু যেদিন থেকে ভাবছি কেউ আমার জন্য সকাল থেকে অপেক্ষায় আছে। শুধু ঘরের কাজ করার জন্য বিয়ে করিনি । তারও ইচ্ছা করে আমার সাথে সারাদিনের অত শত গল্প করতে। সে শুধু আমার সাথে রাতে ঘুমানোর কোন প্রোডাক্ট না , সেদিন থেকে আমি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে গিয়েছি। তাকে সময় দিয়েছি। আমি চাইলেই বাইরে একা ঘুরতে যেতে পারি। সে আমাকে মানা করবে না এমনকি আমাকে সে ই মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে বলে তাকে রেখে। আমিই আসি না। আচ্ছা সৃজন বলুন তো তার কি আমার সাথে ঘুরতে ইচ্ছা হতে পারে না? সব শখ কি শুধুই আমাদের পুরুষ মানুষের?

এই মেয়েদেরও ইচ্ছা করে ...বুঝেছেন? আমাকে বৌ পাগল বললে আমি একদমই রাগ হই না। তাছাড়া যেই মানুষ আমার সাথে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে তার জন্য পাগল হওয়া আমি যৌক্তিক মনে করি । বন্ধু সহকর্মী কেউই মরার সময় মুখে জল দিবে না। যে দিবে সে হলো স্ত্রী। যে আমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে সে হলো আমার স্ত্রী।

তাই তাকে ভালো রাখাটা আমার কাছে প্রধান । আমি তাকে ভালো রাখতে পারি বলে সে সারাদিন আমার ঘরকে ভালো রাখে। আমার বাবা মা কে ভালো রাখেন। পারিবারিক দিক দিয়ে আমি সুখী।

কয়েক মিনিটের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। লোকটার দিকে ভালো মত তাকালে বুঝা যায় সে আসলেও ভালো আছেন। আর এই ভাল রাখাটা খুব সহজ প্রক্রিয়া। আমি স্যার কে ধন্যবাদ বলে বের হয়ে আসার সময় স্যার বললেন

- সৃজন আমি আশা করি একদিন আপনার সুখে থাকার গল্পও কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনবে , শিখবে আর সে নিজেও ভালো থাকার চেষ্টা করবে।

আমি সেদিন স্যারের কথা শুনে ঘর থেকে বের হয়ে কেঁদে ফেললাম। অনেক শক্তি পেলাম।

আসলে ভাই সারাদিন অফিস করে যদি স্ত্রীর গোমড়া মুখ দেখেন তাহলে তো হতাশায় ভুগবেনই। একটা পুরুষ মানুষকে শারীরিক আর মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে তার স্ত্রী ই যথেষ্ঠ। যে সুস্থ রাখবে তাকে আগে ভালো রাখা উচিত....

আমি নিজেও ৬ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছি। ভালো ও আছি। দিনশেষে যখন কোমলের মুখের হাসি দেখি এমনিই আমার সব ক্লান্তি হারিয়ে যায়। আমি ভালো আছি। আমরা ভালো আছি। বেতন অল্প হলেও শান্তির কোন কম শুরু থেকেই ছিলো না - এখনও নাই।

সৃজনের কথা শেষ হওয়ার পর সাম্য সাহেব বললেন “ আমার জন্য প্রার্থনা করবেন যাতে আমিও কোনদিন এমন করে কাউকে ভালো থাকার গল্পটা বলতে পারি” ...।। সাম্য সাহেব ইমোশনাল হয়ে গেলেন।

সৃজন হেসে রবীন স্যারের কথা মনে করলেন।

অনেকদিন হলো স্যারের কোন খোঁজ নেওয়া হয় না। আজই একটা ফোন করবে সৃজন। অফিস ছুটি এখন বাসায় যাওয়ার পালা। বিয়ের পর থেকে সে ও সিগারেটটা ছেড়েই দিলো। সে ও এখন কোমলের জন্য ফেরার সময় কিছু না কিছু নিয়ে যায়। আজ সে নেবে “জিলিপী” ...... সেটা দেখে নিশ্চয়ইই কোমল দৌড়ে এসে বলবে “ তুমি কেমন করে জানো আমার আজকে জিলিপী খেতে ইচ্ছা করছে ?” ......

এরকম ছোট ছোট আশা, ছোট ছোট আগলে রাখা, একে অন্যকে প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে ভালবাসায় ভরিয়ে রাখা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলে ভবিষ্যতের দিকে আর এইভাবেই একদিন ভালোবাসার জীবন পরিণতি পায়। জীবন শেষ হয়ে গেলেও তাঁর মধুর স্মৃতি দৃষ্টান্ত হিসাবে থেকে যায়।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance