স্বপ্নপূরণ
স্বপ্নপূরণ
নাতি সরল টুডু সেরাতে ফুলমনিকে বলল
"এ বড়মা কিছু টাকা দিবি? তুয়ার পায়ে পড়ি। মারাংবুরুর কসম আর যদি চাই। না সম্পত্তি না ঘর। আর কুনওদিনও বইলব না টাকা দে...
মদ খাওয়া কমাইঁ দিব। কুলি খাইটবো, তুয়ার কোমর ব্যথার তেল আন্যে দিব। দিবি? এই শেষ বার..."
"কেনে??"
"লজর লাগ্যেছে, জানগুরুকে দিয়ে লজর কাটাবো। অনেক ধার হইঁছে। মদের, জুয়ার... সব শুধব। সঅঅব... লতুন কইরে বাঁইচব। বুঝলি বুড়ি... একটো মিয়া খুইজেঁ দিবি। সাংগা কইরব... সংসারী হব..."
ফুলমনি জবাব দেয় না। চোখ দুটো চকচক করে ওঠে।
সেই বাচ্চাকালে বিয়ের পর থেকে একটা স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখছে। হয় নি। যেমন ছিল স্বামী মোদো মাতাল তেমনি ছিল ছেলেটা। দুটোকেই মদে খেয়েছে। সারাজীবন কামিন খেটে আজ একটু জমি, নিজের ঘর, দুপয়সা করেছে। তবে কি এবারে সত্যিই স্বপ্নপূরণ...
"কত চাই তুয়ার?"
"পাঁচ হাজার হল্যেই হবে..."
"কাল লিয়ে লিস। কিন্তুক কথাগুলান যেন মনে থাকে..."
পরদিন মাঝরাতের বিচারসভায় জানগুরু যখন মাতব্বরদের সামনে নানান ঘটনার উদাহরণ দিয়ে, নীরোগ বর্ষীয়ান ফুলমনির নিজের স্বামী সন্তান, আশপাশের গ্রামের বাচ্চা, প্রতিবেশীদের গরুছাগল খাওয়ার কথা বিশ্বাস করাতে পারছিল না, তখন নাতি সরল টুডু নিজেই বলল, সে রাতে বড়মাকে চরতে যেতে দেখেছে, আর ভোররাতে মুখে রক্ত নিয়ে ফিরতে।
ডাইনি নিধনের খুশিতে পরদিন সারা গাঁয়ে মদ-মাংসের উৎসবে, একটু বেশিই মদ খেল সরল টুডু।