স্বাধীনতার পথে...
স্বাধীনতার পথে...
খোলা মাঠে, টিনের চালের স্কুল বাড়িটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে পদ্মা। কতমাস হয়ে গেল ঘরগুলোর দরজায় তালা পড়েছে। সুর মিলিয়ে পড়ার সেই ছন্দ নেই, মিড মিলের সারি বেঁধে খেতে বসা হুড়োহুড়িটাও বন্ধ। স্কুলের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই বড় রাস্তার দিকে উঠে গেল পদ্মা।
এই শনিবার স্কুল খুলবে, হেড মাস্টার আসবেন, আমি এখুনি শুনে এলাম, হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে রুহিনা। সত্যি ! স্কুল খুলবে ওইদিন? তাই তো শুনে এলাম আমাদের ওই না পড়ানো মাস্টারটার কাছে। নামটা বেশ খাসা, না পড়ানো মাস্টার, আসলে উনি স্কুল কমিটির সদস্য। মাঝে মাঝে এসে এমন হম্বিতম্বি করেন, তাতেই ওনাকে মাস্টার ভেবে বসেছেন পড়ুয়ারা।
অজানা রোগের ভয়ে বন্ধ স্কুল,যদিও তাতে খুব একটা ফারাক নেই পদ্মার। তার স্কুল ছুটি হয়েছে বছর তিনেক আগেই। চার ভাইবোনের সংসারে সেই বড়, বয়স ওই এক সংখ্যার ঘর ছাড়িয়ে সবে পা রেখেছে দু' সংখ্যার ঘরে। তাতেই বেশ দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে নিজের কাঁধে।
বছর চারেক আগে এলাকায় ভোট এর দিন চলে গেল বাবা। বাবা নাকি এলাকার ক্যাডারকর্মী , সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির নেতা জেঠুর আশেপাশে তেমন না ঘেষলেও, ডালপালার মতো সহযোগী। ভোটের দিন সকালে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ আর ওপারের মাঠের থেকে বাবার শেষ চিৎকারটা কানে যেতেই নিমিষেই বড় হয়ে গেল পদ্মা।
স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে, নাম লেখাল ওই পেন, বেলুন, ছোট রকমারি খেলনার পথেঘাটে বিক্রেতা হিসেবে। বিশেষদিন গুলিতে একটু রোজগার বাড়ে। তবে এইবার সেই আশা নেই। তবুও আজ বেলুন পুতুলের পাশে তার কাঁধে চেপেছে তেরঙ্গা। এই স্বাধীনতায় বিক্রির তেমন হবে না হয়ত । তবে একটা পতাকা বিক্রি হবেই হবে, সঙ্গে জুটবে লাড্ডু, আর নতুন একসেট স্কুল পোষাক। রুহিনা যে বলল, শনিবার হেড মাস্টার আসবেন, একটা খদ্দের পাকা। পতাকা তোলা, জাতীয় সঙ্গীতের পর লাড্ডু মিলবে এই বছরও। আর স্বাধীনতা দিবসে স্কুল থেকে দেওয়া ড্রেসটা নাম কাটানো ছাত্রীর জন্য বরাদ্দ করেছেন ওই হেড মাস্টার। তাই স্কুলঘরে নয় স্কুল পোষাকেই পথেঘাটে ছেলেবেলা থেকে স্বাধীনতা বিক্রি করা পদ্মা কিছুটা স্বস্তিতে পা বাড়াল বড় রাস্তার দিকে।
