রুটি
রুটি
সে চলে গেল।
পবন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। তার কাছে কোনো উপায় ছিল না।সে অদ্ভুত কিছু অনুভব করল যার কোনো কারণ সে জানে না। হয়তো তার সহানুভূতিশীল, কোমল হৃদয়ই এর কারণ।কোনোদিন সে মানুুষের এত নির্দয় মনোভাবের পরিচয় পায়নি। আজ তার সামনে যা ঘটে গেল তা তাকে প্রবল বেদনা দিয়েছে।
পবন বড়ো বাড়ির ছেলে। তবে উচ্চবিত্ত হলেও তাদের পরিবার অত্যযন্ত পরোপকারী ও উদার মনোভাবসম্পন্ন। ছোটো থেকেই তার বাড়ির সুুন্দর পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠা। ফলে বাস্তবের দৈনন্দিন ঘটনাগুলির সঙ্গে সে পরিচিত থাকেনি। আজ সে প্রথমবারের জন্য একা বাজারে গিয়েছিল।
তখন সকাল ৮টা। করিমগঞ্জের বাজারে বেশ ভিড়। সকালে চাকুুরীজীবীদের এই ভিড়টার সঙ্গে বাজারের দীর্ঘদিনের পরিচিতি। কিন্তু আজকের ভিড়টা একটু অন্যরকম। আজ রবিবার বলে ভিড়টা বেশী। এই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে পবনের নিজেকে একটু অপ্রস্তুুুত মনে হল। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হল।
প্রথমবার বাজারে পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে সে। বেশ আনন্দও যেমন হচ্ছে, তেমনই বেশ কিছু মানুষের আচার আচরণ তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। এমন সময় হঠাৎ তার নজরে এল এক ভিক্ষুুুক।
"বাবুু, আমাকে কিছু খাবার দিন।"-- বাজারের অন্য লোকগুলির কাছে হাতজোড় করে আবেদন করল সে।
কেউ দিল না।
সামনেই একজন দোকানের রুটি খাচ্ছিল। তাকে গিয়ে আবেদন জানাল লোকটি। মুখ ফিরিয়ে নিল লোকটি। পবন এসে লোকটিকে রুটি দিতে অনুরোধ করল।
"আপনি যখন এতো ইচ্ছুক তখন নিজে দিন না মশাই। আমাকে বলছেন কেন?"-- লোকটি মুুখের ওপর কথাগুলি বলে দিল পবনকে ।
পবন বাকরুদ্ধ । তার কাছে আর কোনো পয়সা নেই যা দিয়ে ভিক্ষুকটিকে রুটি কিনে দেবে।
"আমার জন্য আপনাকে কথা শুনতে হল। আমায় ক্ষমা করবেন।"--কথাগুলি বলে ভিক্ষুকটি চলে গেল।
পবন একদৃৃৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।