STORYMIRROR

Subhas Dey

Classics Inspirational Others

3  

Subhas Dey

Classics Inspirational Others

রিক্সাওয়ালা

রিক্সাওয়ালা

2 mins
222


অটোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম আর ভাবছিলাম - কে যে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মতো একটা গাল ভরা নাম দিয়েছিল কে জানে! দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠীর দিনও অফিসে যেতে হচ্ছে।


পাশ থেকে একজন হঠাৎ বলে উঠলো, "ও দাদা, যাবেন নাকি?"


পাশ ফিরে দেখলাম একজন রিক্সাওয়ালা, আমাকেই ডাকছে। আমি তৎক্ষনাৎ না বলে দিলাম। আসলে অটোয় ভাড়া 10 টাকা আর রিক্সায় 20 টাকা।


আবারও পাশ থেকে রিক্সাওয়ালা - "আজ রাস্তায় অটো কম চলছে, আমি তাড়াতাড়ি পৌছে দেব।"


বারবার এক কথা বলতে বিরক্ত লাগে, তাই একটু চড়া সুরেই বললাম, "শুনতে পাওনা? বললাম তো যাবো না।"


রিক্সাওয়ালা- দাদা 10 টাকাই দিয়েন, চলেন।


10 টাকায় যাবো বলেই প্রতিদিন ট্রেন থেকে নেমে অটোর অপেক্ষা করি, আজ হঠাৎ রিক্সাওয়ালা 10 টাকায় নিয়ে যাবে বলছে! তাই একটু ভ্রু কপালে তুলে তার দিকে তাকালাম। সে তো আমার চাহনি দেখেই বুঝে গেছে, রিক্সাটাকে একেবারে আমার কাছে নিয়ে এসে হাজির। যাই হোক দশটাকায় যাবে যখন বলেছে তখন সাত-পাঁচ না ভেবেই উঠে পরলাম। 


ভিতর রাস্তা দিয়ে দশ মিনিটের মধ্যেই আমার গন্তব্যস্থানে পৌছে দিল রিক্সাটি। রিক্সা থেকে নেমে একটা দশটাকার নোট তার হাতে দিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম অফিসের গেটের বাইরের পানের দোকানটাতে। "দাদা একটা গোল্ড ফ্লেক দেবেন তো"।


সিগারেট টা ধরিয়ে সুখটান দিচ্ছিলাম হঠাৎ নজর গেল একটু দুরেই ফুটপাতের উপর পুরোনো জামা-কাপড়ের স্টলটার দিকে। সেই রিক্সাওয়ালাটা মেয়েদের একটা জামা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। হঠাৎ কৌতুহল বশত এগিয়ে গেলাম। চোখাচোখি হতেই হাসিমুখে রিক্সাওয়ালাটি বলে উঠলো, "মেয়েটাকে একটা জামা দিতে পারলাম না এবার এখনও।" 


আমি বললাম, "তা পুরোনো কেন দেবেন? পুজোয় তো সবাই নতুন কেনে।" 


রিক্সাওয়ালা- "আমাদের কি সেই অবস্থা গো দাদাবাবু? পুজোর দিনে বাচ্চাটার জন্য একটা হলেই হলো।" 


পুজোর মাস, তাই অগ্রীম বেতন আবার বোনাস সবই পেয়েছি। কিন্তু শুধু ছুটি পেলাম নবমীর দিনটা তাই আর কিছু তেমন কেনাকাটা করিনি। কিছু টাকা কাছেই ছিল। মানিব্যাগ বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলাম, "মেয়ের বয়স কত?"


রিক্সাওয়ালা - "এই তো ন'বছরে পা দিল"।


মানিব্যাগ থেকে একটা হাজার টাকা বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, "এখান থেকে যে ড্রেস টা নিচ্ছেন ওটা ছাড়াও একটা সুন্দর দেখে নতুন ড্রেস নেবেন, আর মিষ্টি কিনে নিয়ে যাবেন বাড়ি"।


" আর হ্যাঁ, মাক্সটা ঠিকভাবে পড়ুন। সাবধানে থাকবেন।"


অনেক ইতস্তত বোধ করলেও আমি কিছুটা জোড় করেই হাতে গুজে দিলাম টাকাটা। ওখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, ছোটবেলার কথা মনে পরে গেল। সেবার পাঁচদিনে পরার পাঁচটা জামা প্যান্ট হয়নি বলে মায়ের শখের ফুলদানিটা ভেঙে ফেলেছিলাম।


"উফফ"! 


সিগারেটটা কখন পুড়তে পুড়তে আঙুলের কাছে চোলে এসেছে খেয়াল করিনি। আঙুল আর ঠোটে একসাথে ছেঁকা খেলাম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics