Ahana Pradhan

Drama Fantasy

3  

Ahana Pradhan

Drama Fantasy

প্রযুক্তির শহরে

প্রযুক্তির শহরে

8 mins
227


নায়িকা থাকে মুম্বাইয়ে। একটা বড় কর্পোরেট সংস্থা ডাক দিয়েছে চাকরির জন্য। ইন্টারভিউ দিতে ব্যাঙ্গালোরে যেতে হবে। আজকাল অন্তরদেশীয় উড়ান সংখ্যা এত বেড়েছে যে মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোর একদিনে যাতায়াত সম্ভব। যেন বাঁকুড়া-হাওড়া রেলযাত্রা। তাতে বরং বেশি সময় লাগে!

.

ভোর ৪টায় রওনা। মুম্বাই থেকে ফ্লাইট ৬.৩০। ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছাবে সকাল ৮টায়। এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতে বেরোতে বড়জোর ৮:৩০। ইন্টারভিউ শুরু ১০.৩০ থেকে, আশা করা যায় তার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। বিকেল ৫টার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। ফেরার ফ্লাইট রাত ৮টায়। মুম্বাই পৌঁছাবে রাত ১০টা। বাড়ি ফিরতে বড়জোর ১১টা।

কোম্পানি থেকে জানিয়েছে সমস্ত খরচ ওরা বিল জমা করা মাত্রই পাঠিয়ে দেবে।

.

নায়িকা তৈরি। সঙ্গে খালি পিঠ-ব্যাগ। ভোর-রাতে অটো পাওয়া মুম্বাইয়ে কোন ব্যাপার না!

রাস্তায় কেউ নেই, কিচিরমিচির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, দু একটা কুকুর এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। ব্যস্ত মহানগরীর রাস্তাঘাট এই সময়টা অদ্ভুত রকম ফাঁকা। ভোরবেলায় হালকা ঠান্ডায় বেশ তাজা লাগছে। আধা-অন্ধকার, রোমাঞ্চকর!

অটোওয়ালাদের বিশ্বাস করা যায়। মুম্বাই মেয়েদের পক্ষে ভারতবর্ষের সবচেয়ে নিরাপদ শহর। ব্যতিক্রম নেই যে তা নয়, তবে কম। নায়িকা জানেনা ব্যাঙ্গালোর কীরকম শহর। তথ্যপ্রযুক্তির শহর, তাই আশা করা যায় খুব একটা তফাৎ হবে না।

.

অফিসটা এয়ারপোর্ট থেকে বেশ দূরে। জায়গাটার নাম whitefield। তবে সময়ের মধ্যে পৌঁছানো গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে প্রিপেইড নিয়েছিল নায়িকা। টাকা বেশি নিলো মনে হয়, অন্তত মুম্বাই এর তুলনায়। এক বন্ধু বলেছিল ওলা নিতে। নায়িকা ভেবেছিল কি দরকার, সামনেই ট্যাক্সি পেয়ে গেলে আবার app দিয়ে গাড়ি ডাকার কোন মানে হয়? আজকাল সবার যেন খুব বেশি বেশি! সব কথাতেই খালি মোবাইলে তাকায়!

.

ইন্টারভিউ ভালোই হলো। ৪টায় শেষ। ওকে একটা presentation দিতে বলা হয়েছিল। তারপর আলোচনা, নানারকম কথাবার্তা। তবে নায়িকা তখনই ঠিক করে নিয়েছে এই কোম্পানিতে ও কাজ করবেনা। লোকজন এখানে বড্ড বেশি নাক উঁচু!

.

১ ঘন্টা হয়ে গেল একটাও পথচলতি ট্যাক্সি দাঁড়ালোনা। অটো তো দেখাই যাচ্ছে না। অফিসের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে নায়িকা, সামনে তখন চলতি-গাড়ির সার। সব অফিস-ফেরত গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি, আর মোটরবাইকের মেলা, বাস দেখা গেল একটা কি দুটো। ফুটপাথের ওপর দিয়েও বাইক চলছে! ট্রাফিক পুলিশ নেই নাকি? রাস্তার ধারে দাঁড়ানোই মুশকিল! ঘাড়ের ওপর কখন কি এসে পড়বে বলা যায়না!

নায়িকা এগোলো একটু সামনে, ওই যে মোড়টা দেখা যাচ্ছে, ওই অবধি। ওখানে আশা করি কিছু পাওয়া যাবে।

.

অটোয়ালাটা হিন্দি বা ইংরেজি কিছুই বোঝেনা। তাও নায়িকা চড়ে বসলো। উপায় নেই, তাই বাধ্য। এয়ারপোর্ট বললে যে কেউ বোঝে, তাই যথেষ্ট। ১২০০টাকা লাগবে। নায়িকা দরদাম করেনি। সে এর মধ্যেই বুঝেছে যে ব্যাঙ্গালোর মুম্বাইয়ের চেয়ে অনেক আলাদা। আর তার কাছে এখন টাকার চেয়ে সময়ের দাম অনেক বেশি। সে শেষমেশ রাস্তায় দাঁড়িয়েই ওলা app টা ইনস্টলও করেছিল। কিন্তু তাতে দেখালো আশেপাশে কোনো গাড়ি নেই।

.

"ম্যাডাম, এয়ারপোর্ট ও না? হালা এয়ারপোর্ট ও না?" হঠাৎ এরকম প্রশ্ন শুনে নায়িকা অবাক। আধঘণ্টা অটোতে সে বসে। এখন তাকে এটা কি জিজ্ঞেস করছে? আচ্ছা, লোকটা জানে তো এয়ারপোর্ট কোথায়?

নায়িকা উত্তর দিলো "ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট"। প্রশ্ন বুঝে কাজ নেই, যেটা দরকার সেটাই খালি জোর দিয়ে বলতে হবে। লোকটাকে যে করেই হোক এয়ারপোর্ট অব্দি নিয়ে যেতেই হবে! বেশি কথা বললে যদি বচসা লাগে? তখন যদি নেমে যেতে বলে? সময় খুব কম! আবার যদি গাড়ি না পায়! কিছুই বলা যায়না, এ তো আর মুম্বাই নয়!

লোকটা কি বুঝলো কে জানে! খানিক বাদে আবার একই প্রশ্ন।

নায়িকা তখন মোবাইলে গুগল ম্যাপ বের করলো। ব্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্ট লিখে সার্চ করতে অনেক কিছু বেরোলো। HAL এয়ারপোর্ট, কেম্পাগওড়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, আরো কি কি সব। নায়িকা বুঝলো ও কি ফাঁদে পড়েছে! ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এর বদলে কাছের বন্ধ এয়ারপোর্ট এ নামিয়ে ওর কাছ থেকে ১২০০ টাকা নেওয়ার ফন্দি করেছিল লোকটা! কি ভাগ্য যে গুগল ম্যাপ আছে!

.

অটো এগোচ্ছে, মাঝেমধ্যে লোকটা রাস্তার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করছে, দক্ষিনী ভাষা, তবে কিছু কিছু চেনা শব্দে বোঝা যায় ও জানতে চাইছে এয়ারপোর্ট কোনদিকে। এতক্ষনে নায়িকা বুঝেছে যে অটোয়ালা এয়ারপোর্ট এর রাস্তা চেনেনা। তবে রাজি হয়েছে যেতে, একে ওকে জিজ্ঞেস করে রাস্তা জেনে নেবে। তবে বেশি টাকা লাগবে, ২০০০। মাঝে তো বলেছিল এয়ারপোর্ট এর একটা কাছের বাসস্ট্যান্ড অব্দি ছেড়ে দেবে, সেখান থেকে নাকি এয়ারপোর্ট এর বাস যায়। তখনই নায়িকা প্রস্তাব দিল বেশি টাকার। লোকটা আর কথা বাড়ায়নি।

.

গুগল ম্যাপ এ দেখাচ্ছে নীল রাস্তা। শেষের লাল গোল টা অনেক দূরে। তবে দেখাচ্ছে যেহেতু, নিশ্চই ঠিক পথেই তাকে নিয়ে যাচ্ছে!

.

একি! একটু আগে দেখাচ্ছিল এয়ারপোর্ট আর ১৪কিমি, অথচ এখন দেখাচ্ছে ২৫কিমি! মোবাইলে নীল রাস্তাটা পাল্টে যাচ্ছে। লোকটা তাহলে ভুলভাল দিকে যাচ্ছে। হয় ইচ্ছে করে, আর না হয় রাস্তার লোকেও না জেনে এদিক ওদিক ভুল দেখাচ্ছে!

.

পৌনে ৭ টা বাজে। ফোনের ব্যাটারি কমে গেছে। GPS চলছে তো অনেকক্ষন। মা একটু আগে ফোন করেছিল। এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেছে কিনা জানতে। নায়িকা ছোট্ট উত্তর দিয়েছিল "রাস্তায় আছি, ফোনে চার্জ ফুরিয়ে এসছে, সব ঠিকআছে, পৌঁছে ফোন করব, ছাড়ছি।" মাধ্যমিকের টেলিগ্রাম লেখার কথা মনে পড়িয়ে দেয়। সে যাইহোক, কিন্তু পথ তো শেষ হচ্ছেনা। এবার না একটু একটু ভয় করছে নায়িকার ! ফ্লাইট মিস হলে রাত্রে কোথায় থাকবে? ব্যাঙ্গালোরে ওর কেউ নেই যে।

.

এখন নায়িকা বলছে লেফট, লেফট, রাইট, স্ট্রেইট, রাইট, লেফট... অটোয়ালা সেইমতো চলছে। আর রাস্তার লোকজন কে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, এখন গুগল ম্যাপ যা বলছে তাই। কারণ, যতদূর চোখ যায় শুধু ধু ধু জমি! নির্জন। খোলা আকাশ দূষণবিহীন। পিচরাস্তা, তবে অটো যাচ্ছে নেচে নেচে। ম্যাপ বলছে আর ২০কিমি, নায়িকা ভাবছে হে ভগবান! জোর করে চোখের জল চেপে আছে সে। মনে মনে ক্রমাগত বলে চলেছে নিজেকে "ভয় পাস না, ভয় পাস না"। লোকটাকে বুঝতে দেয়া যাবে না যে সে ঘাবড়ে গেছে। বুক দুরদুর করছে, হালকা হালকা বমি আসছে, তাই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। মা কে একবার ফোনে জানালো সে হারিয়ে গেছে। জানে মা চিন্তা করবে, তাও। যদি সত্যিই খারাপ কিছু হয়ে যায়, আগে থেকে বাড়িতে জানিয়ে রাখা ভালো।

.

পিচরাস্তাটা শেষই হচ্ছেনা। দুধারে বাঁধাকপি। শসা, ফুটি, তরমুজ, আর বোধহয় আলু। মধ্যে মধ্যে বড় বড় গাছ, কমলা কমলা ফুল। জায়গাটার মাটি একটু শুকনো চেহারার। একটা ছোট্ট সিমেন্টের বাড়ি চোখে পড়লো, যক্ষপ্রহরীর মাথা বসানো। বাড়ির দরজায় একটা প্লাস্টিকের কলসি রাখা। তবে কোনো মানুষ চোখে পড়লোনা। কয়েক মিনিটেই সেই বাড়ি পেছনে হারিয়ে গেল। পিচরাস্তাটা এখন একটু ভাঙা ভাঙা। চারপাশের গাছ এখন বড়বড়। জঙ্গলের মতো। গাছের ছায়ায় পড়তি রোদ আর রাস্তায় নামতে পারছেনা। নায়িকা গ্রামে ছোটবেলা কাটিয়েছে, সবুজ তার প্রিয়। খুব বেশি লোকজনের মাঝে হাঁপ ধরে। কিন্তু এখন ও খুব করে চাইছে লোকজন, ঘরবাড়ি, কোলাহল। এই প্রথম ওর সবুজে ভয় করছে।

হঠাৎ করে ফোনটা অন্ধকার হয়ে গেল। ব্যাটারি শেষ!

.

দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে ওরা পুলিশ। নায়িকা হুঙ্কার দিলো "উধার চলো"। অটোয়ালা খালি বললো "ম্যাডাম", তারপর চুপ করে গেল। নায়িকার চোখের জল তার চোখে পড়েছে আয়নার মধ্যে দিয়ে। লোকটা কেমন চুপসে গেল।

.

দুরথেকে ওনারা দেখেছিলেন অটোটাকে। লাঠি বাড়িয়ে ইশারায় ডাকছিলেন। অটো থামতেই নায়িকা গড়গড় করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো ও রাস্তা হারিয়েছে, এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে হবে, ৮টার ফ্লাইট। পুলিশদের মধ্যে একজন হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলেন "এয়ারপোর্ট জানা যায় তো ইধারসে কিউ? ইস আদমি কো জানতে হ্যায় আপ?" নায়িকা ঘাড় নেড়ে জানালো যে, না, অটোয়ালাকে সে আগে থেকে চেনেনা। পুলিশটা তখন অটোওয়ালাকে দক্ষিণী ভাষায় কিছু বললেন, বেশ কিছু বললেন। তারপর নায়িকাকে বললেন "ম্যাডাম, আপ মেরা নাম্বার রাখিয়ে, আগার আধা ঘন্টাকে আন্দার এয়ারপোর্ট না পহচে তো মুঝে ফোন করনা।"

.

অটোর এখন ঝড়ের গতি। নায়িকার বুকে দুমদুম। ৮টা বাজতে পাঁচ। লোকটাও কেমন ঘাবড়ে গেছে। আয়নায় বারবার দেখছে নায়িকাকে। কয়েকবার বললো "আম্মা নো টেনশন। এয়ারপোর্ট জাতা, পাক্কা জাতা"। আকাশ অন্ধকার, দূর থেকে কিছু টিমটিমে আলো চোখে আসছে, আর অটোর আলোয় রাস্তা দেখা যাচ্ছে। এবড়োখেবড়ো। গর্তে জমা জল। এছাড়া চারপাশ শুনশান, ঝিঁঝিঁ ডাকছে খুব। অন্ধকার। নায়িকা এখন আর ফ্লাইট এর কথা ভাবছে না। ভাবছে কোনোমতে এয়ারপোর্ট পৌঁছানোর কথা। সাথে ক্রেডিট কার্ড আছে। দরকার হলে নতুন টিকিট কাটবে দেরির ফ্লাইটের। কিন্তু আগে পৌঁছানো চাই।

.

আকাশে চোখে পড়ল একটা বিমান। আওয়াজও আসছে। মানে কাছাকাছি আছি! নায়িকা অধীর হয়ে পড়ল। এদিকে একটা ট্যাক্সি অনেকক্ষন পিছু নিয়েছে। গাড়িটার গায়ে লেখা "marriot"।

হঠাৎ অটো থেমে গেলো। আর স্টার্ট নিচ্ছে না। এবার চোখে জল, লোকটার! কি হলো? "ম্যাডাম, নো পেট্রোল"। নায়িকা আর থাকতে পারলো না, কাঁপতে শুরু করলো, আর গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো কান্না।

.

ট্যাক্সিটা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চালক বেরিয়ে এলো। বয়স্ক দেখতে। নায়িকার সাথে কথা বলল, বলল অটোওয়ালার সাথেও। নিজে থেকেই বললো ৫০০টাকা দিলে ও পৌঁছে দেবে এয়ারপোর্ট।

নায়িকা আর কিছু না ভেবে নেমে পড়লো অটো থেকে। লোকটা বললো "ম্যাডাম, পাইসা"! ২০০০টাকার নোটটা হাতে নিয়ে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চেপে বসলো নিজের চালক -আসনে। নায়িকা চলে যেতে যেতে ট্যাক্সির জানলা দিয়ে দেখলো, লোকটা অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু অটোটা আর স্টার্ট নিচ্ছেনা। চারপাশের ঘন সবুজ তখন ঘন কালো হয়ে গেছে, টিমটিমে আলো গুলো আস্তে আস্তে নিভতে শুরু করেছে, ঝিঁঝির ডাক যেন আরো প্রখর! দেখতে দেখতে অটোটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

.

এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে লাগলো আর ২ মিনিট। বয়স্ক চালক এরই মধ্যে জানিয়েছে whitefield থেকে এয়ারপোর্ট সত্যিই অনেক দূর। তবে এয়ারপোর্ট অব্দি অটো যায়না। একটা হাইওয়ে দিয়ে গাড়িটা যখন এলো, নায়িকা জানল এটাতে অটো উঠতে দেওয়া হয়না। সে তখন আর ভাবছে না মুম্বাই হলে এইটুকু রাস্তার ট্যাক্সিভাড়া কত হতো!

.

এয়ারপোর্টের বাইরে নায়িকা টিভিতে দেখতে পেলো ফ্লাইট লেট! রাত ১০টায় ছাড়বে। উফফ, একেই বলে কপাল! অবশ্য গত ৪ ঘন্টা যা গেল, সেটাও কপাল!

খুঁজে খুঁজে একটা চারজিং পয়েন্ট পেতেই আগে ফোনটা বসাল। মিনিট ১৫এর মধ্যে সেই পুলিশ যে নম্বর দিয়েছিলেন, আর মা, এই দুই জায়গায় নায়িকা তার অবস্থার কথা জানিয়ে দিল।

.

মুম্বাই ল্যান্ডিং ছিল রাত ১২টায়। বাড়ি পৌঁছাতে ১টা। তবে অটো পেতে মোটেই অসুবিধা হয়নি। রাস্তাতেও না।

.

.

.

নায়িকা আজ ৩ বছর হল ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করে। অন্য কোম্পানি, তবে কর্পোরেটই। whitefield এই। এখন সে নিয়মিত ওলা ব্যবহার করে। কথায় কথায় মোবাইল দেখার স্বভাবটাও একটু বেড়েছে।

সপ্তাহান্তে সে সাইকেল চালায়। সাইক্লিং জ্যাকেট, হেলমেট, শর্টস, গ্লাভস, সবই পরে। অনেক দূর অব্দি যায় তো, তাই সবরকম ভাবে তৈরি হয়েই যায়। মোবাইলের সাথে একটা পাওয়ার ব্যাংক ও নেয়। সাথে দুটো জলের বোতল, দু প্যাকেট বিস্কুট, রুমাল। strava তে সে এখন বেশ নাম করেছে। এক বন্ধুর থেকে এই app টার কথা জেনেছিল সে। অনেক খেলোয়াড়রা ব্যবহার করেন। সাইক্লিস্ট রাও। অনেক অচেনা রাস্তা এর মাধ্যমে চেনা হয়ে যায়। strava তে সে দেখতে পায় কত সময়ে সে কত দূর পৌছালো। আর গুগল ম্যাপ তো আছেই!

তার এখনকার বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট যাতায়াত মিলে ৭৫কিমি। সে একবার সাইকেল নিয়ে গেছে ওই রাস্তায়। ওটা whitefield থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার বাইপাস রাস্তা! ভোর ৬টায় বেরিয়ে বাড়ি ফিরেছিল দুপুর ১টায়। পিঠ কোমর জ্বলে গেছিলো যেন। জলের বোতল কখন খালি। বিস্কুট সব শেষ।

রাস্তাটা এখনো একই আছে, জনহীন শুনশান, ঘন সবুজে ঘেরা, ভাঙা, ঝিঁঝিদের বাস। বড় গাছগুলো রাস্তায় এখনো রোদ আসতে দেয়না। রাস্তা তাই ছায়াময়। দুর দুর ভরা বাঁধাকপি। খুব তরমুজ ফুটি শসা ভর্তি জমি। সাইকেল থামিয়ে জমি থেকে দু চারটে শসা তুলে নিলে কেউ দেখতে আসবে না বোধহয়। আবার চারপাশে এখন সর্ষেও দেখতে পাওয়া যায়। একটা দুটো জনবিহীন ঘর, যক্ষপ্রহরী মাথায় নিয়ে। অনেক নতুন জমির মাটি পাল্টানো হচ্ছে। লোকজন তারমানে আসে। তবে হয়তো অন্য সময়ে।

গুগল ম্যাপে এইসব ধরা পড়েনা। তাতে নীল রাস্তা দেখায় বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট দিব্যি পৌঁছানো যায় দেড় ঘন্টায়!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama