Ahana Pradhan

Children Stories Comedy Children

4.5  

Ahana Pradhan

Children Stories Comedy Children

পঞ্চাবোনুর গল্প

পঞ্চাবোনুর গল্প

5 mins
373


পঞ্চাবোনুর লিচু খেতে বড়ই ভালো লাগে। মিষ্টি হলে বেশি ভালো, কম মিষ্টি হলে একটু কম ভালো। বাবা বাজার থেকে লিচু আনলে সেদিন ও আর দুপুরে ঘুমায়না। টুকটুক করে খেয়ে খেয়ে এক দিনেই সব লিচু শেষ করে দেয়।


পঞ্চাবোনুর আসল নাম বরং উহ্য থাক। ওর দাদু ওর নাম দিয়েছেন পঞ্চাবোনু, সেইটাই আমরা ব্যবহার করবো।


পঞ্চাবোনুর দাদুর বাড়ি ভীষণ মজার একটা জায়গা। বিশাল পুকুর, ফলের বাগান, ফুলের গাছ, টেপা কল, কাঠের উনুন, আলাদা ভাঁড়ার ঘর, আবার লাল টুকটুকে মেঝেওয়ালা পাকা বাড়ি, খোলা উঠোন, বিরাট ছাদ, ডিশ এন্টেনা, ল্যান্ডফোন - সবে মিলে খুব সাবেকি ব্যাপার, এলাহিও বটে!


 ওখানে পুকুরপাড়ে একটা লিচু গাছ আছে। গোল মতন ঝাঁকড়া গাছটা। ঝাড় ঝাড় লিচু হয় তাতে। দাদুর গাছের লিচু খুব মিষ্টি। দাদু আঁকশী দিয়ে লিচু পেড়ে দেন, দিদু লিচুর ঝাড় গুলো এককাছে করে বেঁধে বেঁধে রাখেন, আর পঞ্চাবোনু খুচরো পড়ে যাওয়া লিচু গুলো তুলে রাখে ঝুড়িতে। বাবা, মা, দাদা, দাদু, দিদু, মুক্তামাসি আর পঞ্চাবোনু, সবাই মিলে খোলা বারান্দায় বসে লিচু ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে খায়। গাছের লিচু কয়েক বস্তা বাজারে পাঠানো হয়, লোক আসে নিতে। পাড়াতেও বিলি করা হয় কিছু। আত্মীয়বাড়িও যায় কয়েক ঝুড়ি লিচু। দাদুর গাছে যখন লিচু আসে, পুরো স্টেশনবাজারে আর কোথাও তখনও লিচু ওঠে না। তাই তো বাজার থেকে অনেক লোক বায়না করে যায় লিচু নেবে বলে। দাদু অবশ্য বেশি দেননা, কয়েক বস্তা পাঠিয়েই হাত তুলে নেন। সব লিচু দিয়ে দিলে পঞ্চাবোনু খাবে কি?


যেবারে দাদুর বাড়ি যেতে পঞ্চাবোনুদের দেরি হয়, দিদু আলাদা করে লিচু রেখে দেন ওর জন্য। আর কোনো বছরে ফলন কম হলে বাজারে লিচু দেওয়া হয়না, কিম্বা কম দেওয়া হয়। আরো কম হলে পাড়াতে আর বিলি করেননা। মোট কথা হলো, লিচু যখনই হোক যেমনই হোক, পঞ্চাবোনুর জন্য বেশিটা থাকবে।


দাদুর বাগানে আরো অনেক ফল গাছ আছে। আম, কলা, পেঁপে, সবেদা, বাতাবি, পেয়ারা, নারকেল, কাঁঠাল, আনারস। গরমের ছুটি, বর্ষাকাল, পুজোর ছুটি, সবসময়ই কিছু না কিছু গাছের ফল ও খায়ই।


তবে ফলগাছ দেখে অনেক হনুমান আসে দুপুরবেলা। প্রায়দিনই আসে। ইয়া বড় মুখপোড়া বীর হনুমান, মাদী হনুমান বাচ্চা কোলে, সাঙ্গ পাঙ্গ মিলে গোটা কুড়ির দল। হনুমানের উৎপাত অনেকদিনের, পঞ্চাবোনুর জন্মেরও আগে থেকে। মায়ের কাছে শুনেছে, দাদা যখন এক মাসের, দাদাকে তেল মাখিয়ে উঠোনে রোদে শোয়ানো ছিল, পাশে মায়ের ঠাকুমা পাহারায় বসে। হঠাৎ একটা বীর হনুমান গুটি গুটি এসে দাদার পায়ের কাছে বসে হাত বাড়ায় ওকে তুলে নেবে বলে! হানুমানরা তো মানুষের বাচ্চা দেখে নিজেদের বাচ্চা ভাবে! তখন চেঁচামেচি করে, লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে সেই হনুমান তাড়ানো হয়েছিল।


অনেকসময় আবার লাঠিতেও ওরা ভয় পায়না। তখন গুলতি ছুড়তে হয়, অনেকসময় ফটকাও ফাটাতে হয়!


তা এই হনুমানের উৎপাতে অনেক ফল নষ্ট হয়। ওরা গন্ধ পেয়ে আসে, আর এসে গাছ টেনে যত না ফল খায় তার চেয়ে বেশি পাতা ছিঁড়ে, ডাল ভেঙে, ফল-সবজি কামড়ে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে যায়।


দাদু দেখেছেন, সবেদা গাছে সবেদা গুলো কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলে আর হনুমানে হাত দেয়না। গতবছর তাই সারা গাছ সাদাসাদা গোলগোল ঝুলছিল, সব সবেদা পুরোনো শাড়ি ছিঁড়ে বাঁধা।


কিন্তু লিচু তো আর একটা একটা করে কাপড় দিয়ে ঢেকে বাঁধা যাবেনা সবেদার মতো। দাদু তাই বুদ্ধি করে কাছের ঝাড়গুলোকে জড়ো করে একসাথে বস্তায় ঢুকিয়ে বস্তার মুখটা বেঁধে রেখেছেন। এখন গোটা গাছটায় মোট ছ'টা বস্তা। ওগুলো নাইলনের বস্তা, সাদা রঙের। বাড়ির গেট থেকেই তাই বেশ দেখা যায় গাছে বস্তা ঝুলছে।

লিচুগুলো কচি থাকার সময় থেকেই দাদু এই ব্যবস্থা করেছেন। পাকলে বস্তাসুদ্ধ পেড়ে নেবেন।


পঞ্চাবোনু দাদুবাড়ি এলেই, যখনই ইচ্ছে হয়, পুকুরধারে গিয়ে লিচু গাছটা দেখে আসে। বস্তায় ফুটো হলো কিনা, হনুমান এলো কিনা, এইসব তদারকি করতে। দাদু বলেছেন, আর দুদিন, তার পরেই লিচু পাড়বেন। পঞ্চাবোনু এখন তাই অধীর আগ্রহে লিচু পাড়ার দিনের জন্য অপেক্ষা করছে।


নির্দিষ্ট দিনে খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে পঞ্চাবোনু। বালিশ ছেড়ে উঠে বসেই "আজ লিচু পাড়তে হবে গো" বলে তাড়াহুড়ো শুরু। কিন্তু দাঁত না মাজিয়ে মা তো কিছুতেই ছাড়বে না। তাই পেস্ট লাগিয়ে ব্রাশ নিয়ে চটি পরে চোখ কচলাতে কচলাতে টেপা কলতলায় দাদার সাথে এলো সে। কলতলা থেকেই লিচু গাছটা নজরে আসে। দাদা কল টিপে দিলো, ও ব্রাশে জল দিয়ে মুখে পুরে মাজতে মাজতে গাছটার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। তাকিয়ে হাঁ! গাছে তো বস্তা ঝুলছিল, সেগুলো কোথায়!


চেঁচামেচিতে দাদু দিদু সবাই এসে পড়েছে গাছতলায়। পঞ্চাবোনু ঠিকই বলেছে তো, সারা গাছে একটাও বস্তা নেই! কি হলো?


নিচের দিকে যে জায়গায় বস্তা বাঁধা ছিল, দাদু ঝাড়টা টেনে দেখলেন, তারপর হতাশ ভাবে ছেড়ে দিলেন। "হনুমান না, এ মানুষের কাজ। চোর এসেছিল, বুঝলে। বস্তা সুদ্ধ লিচুর ঝাড় কেটে নিয়ে চলে গেছে। সাদা বস্তা, বাইরে থেকেই দেখতে পেয়েছে। খুব সুবিধা হয়েছে ওদের। একসাথে সব লিচু পেয়ে গেছে!"


পঞ্চাবোনুর কালো মুখ দেখে দাদুর খুব মন খারাপ। একমাত্র নাতনি, লিচু খেতে বড্ড ভালোবাসে মেয়েটা। কতগুলো ছিঁচকে চোরের জন্য মনটাই খারাপ হয়ে গেল!


.

.

"বাড়িতে কেউ আছেন নাকি?"

রাঙ্গাকাকু এসেছে! রাঙ্গাকাকু বাবার খুড়তুতো ভাই। কাছেই থাকে। পঞ্চাবোনুরা দাদুবাড়ি এসেছে খবর পেলে চলে আসে মাঝে মাঝে দেখা করতে। সঙ্গে সবসময় কিছু না কিছু আনে তার আর দাদার জন্য। একবার এনেছিল বাঁশকলম। আরেকবার বাঁশের তীর-ধনুক। ক্রিকেট ব্যাট ও এসেছে। সবই রাঙ্গাকাকুর নিজের হাতে বানানো! স্বাভাবিকভাবেই, রাঙ্গাকাকুকে দেখেই পঞ্চাবোনু আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। 


রাঙ্গাকাকুর সাথে সে আর দাদা মন খুলে গল্পও করে প্রচুর। রাঙ্গাকাকুও অনেক গল্প জানে। কত্ত গল্প বলেছে তাদের, নানা রকম অভিজ্ঞতার কথা, চুটকি, ভুতের গল্প, কত কি! আজকে তো রাঙ্গাকাকুকে ওই বদমাইশ লিচু চোরের কথা বলবেই সে!


কিন্তু রাঙ্গাকাকু তার আগে কি এনেছে, সেটা তো দেখতে হবে!

.

.

"মাসিমা, স্টেশনের ধারে দেখলাম লোকটা লিচু নিয়ে বসেছে। দেখেই মনে হলো খুব শাঁস হবে। দামটা খুবই বেশি নিলো, ১৫০ টাকা কেজি। কিন্তু এমন লাল বড়ো বড়ো লিচু চট করে দেখা যায়না। আর বাজারে তো লিচু ওঠেনি এখনো। এর কাছেই দেখলাম খালি। বললো মজফ্ফরপুর স্পেশাল, সারাদিনে পাঁচ বস্তার উপর বিক্রি হয়ে গেছে, লাস্ট লট খালি করছে এখন, তবে একদম ফ্রেশ। একটা খেয়েও দেখলাম, খুব মিষ্টি। পঞ্চাবোনু এত ভালোবাসে, তাই নিয়েই নিলাম। জানি আপনাদের ঘরের লিচু আছে, কিন্তু আমার মনে হয় এটাও বেশ ভালোই হবে, কি বলেন?" রাঙ্গাকাকু দিদুকে বলছিল।


দাদু তো হো হো করে হেসেই সারা। "ঠিকই বলেছ, এমন লিচু এ তল্লাটে আর কোথাও পাবে না। আমার নিজের গাছের লিচু, দাম দিয়ে কিনে আমার বাড়িতেই নিয়ে এলে। বেশ বেশ, খুব ভালো!"


তবে পঞ্চাবোনু অত দাম বোঝেনা। দাদুর গাছের লিচু সে খেতে পাবে, এই আনন্দেই সে আটখানা!


Rate this content
Log in