Sampa Maji

Romance Others

3  

Sampa Maji

Romance Others

প্রথম ভালোলাগা

প্রথম ভালোলাগা

14 mins
411



বিয়ে বাড়িতে পলাশের আসার একদম ইচ্ছে ছিলনা।কিন্তু রজত বার বার করে বলেছে আসার জন্য ,না আসলে আর কথা বলবে না বলে দিয়েছে। বাকী বন্ধুরা সবাই আসছে, তাই যতই কাজ থাক বন্ধুর বিয়েতে উপস্থিত থাকা চাই । অনিচ্ছা সত্বেও বিয়েতে এসেছে, এই সব লোক জনের ভিড়, হইচই পলাশের একেবারে ভালোলাগে না। সব দিন একটু চুপচাপ, একা নিরালায়  থাকতে পছন্দ করে। এই নিয়ে বন্ধুদের থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়। বন্ধুদের কথায় কিছু মনে করে না, নিজের খেয়ালে থাকতে ভালবাসে। 

বন্ধু রজত ও সাথীর বিয়ে উপলক্ষ্যে পলাশ এসেছে।রজত আর সাথী ভালোবাসার বিয়ে, কলেজ থেকে ওদের প্রেম। প্রথমে সাথীর বাড়ি থেকে ওদের সম্পর্কটা মেনে ছিল না, পরে রজত চাকরি পেয়ে যেতে সাথীর বাড়ির লোক আর না করতে পারেনি। দুই বাড়ির সম্মতিতে বিয়েটা ইচ্ছে। বিয়েতে রজতের বন্ধু বলতে পলাশ, বিভাস আর কুনাল ।সাথীর বান্ধবী পাপড়ি আর খুশি। বিয়েটা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তাড়াতাড়ি লগ্ন ছিল, তাই বাকীরা খাওয়া দাওয়া করে, বিয়ে দেখে বাড়ি ফিরে গেছে। বাসর জাগার জন্য বন্ধুরা থেকে গিয়েছে, পলাশ চলে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু বন্ধুদের অনুরোধে রয়ে গেছে। আর সাথীর বান্ধবীরাও আছে। 


বাসর ঘরে দুপক্ষ থেকে সবাই কে পরিচয় করিয়ে দেয় এরপর গানের লড়াই শুরু করে, কয়েকটা গানের পরেই একঘেয়েমি লাগে। 

তখন খুশি বলল- এইসব গানের লড়াই একঘেয়েমি তার থেকে একটা অন্য গেম খেলি। 

বিভাস- কি গেম, কেমন গেম। 

খুশি - গেমের নাম Truth or dare. 

কুনাল- হ্যাঁ, ভালো খেলা। আমার সবাই close friends না, তবে friend এর friend, তাই খেলা যেতেই পারে। 

বিভাস - গেম এর নিয়ম সবাই কে ভালো করে বুঝেছিয়ে দিতে হবে, খেলতে সুবিধে হবে। 

খুশি - মাঝে একটা টেবিল রাখা হবে, টেবিলের দুই পাশে আমার বসব, টেবিলের ওপর একটা বোতল রেখে, বোতলটা হাতে করে ঘোরাতে হবে।এর পর বোতলের খোলা মুখ যার দিকে থাকবে, তাকে উত্তর দিতে হবে, আর যার দিকে বোতলের উল্টো দিক থাকবে ,সে প্রশ্ন করতে পারবে। দুটো Option থাকবে, Truth or dare. Truth নিলে জীবনে অজানা সত্যি কথা বলতে হবে, যেটা এখন পর্যন্ত কাউকে বলেনি।আর Dare নিলে, যা বলা হবে তাই করেতে হবে। 

 রজত -গেমটা দারুন interesting ,বাসর রাতটা ভালো ভাবে কেটে যাবে আর ঘুম ও আসবে না ।

খুশি - যেহেতু আমরা সবাই সবাই কে ভালো করে জানি না, তাই ছেলেদের থেকে রজতদা আমাদের টিমে আসবে আর সাথী যাবে তোমাদের টিমে। 

একটা ছোট টুল নিয়ে এসে তার উপরে একটা কাঁচের বোতল রাখা হল, দুই টিমের সদস্যরা দুই পাশে বসে খেলা শুরু করে। 

প্রথমে রজত বোতলটা ঘোরায় সৌভাগ্য বসত বোতলের খোলা মুখ তার দিকে থেমে গেল। 

জিজ্ঞাসা করা হল truth or dare. রজত truth Option নিল। 

সাথী বলল আমি প্রশ্ন করব।

সাথী- একটা সত্যি কথা বলো, যেটা এখনও আমাকে বলনি

রজত - আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি, তাকে এখনও বন্ধুদের সামনে প্রপোজ করা হয়নি। কিন্তু বিয়ে করে নিয়েছি। 

একটা গোলাপ সাথীর হাতে দিয়ে বলল, সারা জীবন আমি তোমার পাশে থাকবো। 

সাথী বলল -Thank you. 

এবার কুনালের কাছে থেমে গেল, কুনাল dare নিল। ওকে একটা নাচ করে দেখাতে হল। 

 তার পর পাপড়ির পালা, পাপড়ি truth option নিল। 

সাথী প্রশ্ন করল - তোর জীবনের অজানা কথা বল। 

পাপড়ি - আমি যখন Class xii পড়তাম তখন আমাকে একটা ছেলে কয়েকটা চিঠি দিয়ে ছিল, চিঠিতে সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখা থাকত, যা আমার মন ছুয়ে যায়। কিন্তু চিঠির শেষে কোন নাম লেখা থাকে নি আর ছেলেটা কোনো দিন আমার সামনে আসেনি। অনেক জানার চেষ্টা করে ছিলাম কিন্তু ছেলেটার খোঁজ পায়নি আর কোন দিন পাবো কিনা জানি না। তবে চিঠির ভাষা আমার মনে এখন ও গেঁথে আছে। 

পাপড়ির কথা গুলো শুনে পলাশের মন চমকে উঠে, চিঠি গুলোতো আমিই লিখতাম। তবে ওই স্কুলের শিক্ষকের মেয়ে বলে কোনদিন সামনে যায়নি বা নাম লেখার সাহস দেখায় নি। পাছে অপমান করে বা স্যার কে জানিয়ে দিলে, স্কুলে গার্জেন ডেকে অপমান করতে পারে। 

সেই মেয়ে টা যে এই মেয়ে এতক্ষণ বুঝতে পারেনি, শেষ বার ৯ বছর আগে দেখেছি আর আজ দেখল,অনেক পরিবর্তন, একেবারে মেলাতেই পারছে না। 

কুনাল জিঞ্জাসা করে ,কোন স্কুলে পড়তে। 

পাপড়ি - সোনাখালি হাইস্কুল 

বিভাস- এই স্কুলে তো আমরাও পড়েছি। তোমার কোন বিভাগ ছিল। 

পাপড়ি - আমার Arts ছিল। 

কুনাল- তোমার বাড়িতো চন্দ্রকোনার দিকে, কিভাবে এত দূরে স্কুলে আসতে। 

পাপড়ি- তখন আমার বাবা এই স্কুলে চাকরি করতো। 

কুনাল- তুমি সেই বাংলা স্যারের মেয়ে। 

পাপড়ি - হ্যাঁ। 

এবার বিভাস, বিভাস truth নিল। 

বিভাস- বন্ধুদের বলল, একবার স্যারের চেয়ারে কাঠ পিঁপড়ে কে ছেড়ে দিয়েছিল, কেউ স্বীকার না করায়, ক্লাসের সব ছাত্রদের মেরেছিল, মনে আছে। 

কুনাল -মনে থাকবে না আবার, দোষ না করেও মার খেয়ে ছিলাম সেই দিন। 

বিভাস - ওটা আমি ছিলাম, মারের ভয়ে স্বীকার করিনি, আর তোদের ও বলিনি, যদি তোরা স্যারের কাছে নিয়ে গিয়ে আবার মার খাওয়াস। 

রজত- তোর জন্য আমরা মার খেয়ে ছিলাম, আজ সবাই মিলে তোকে মেরে শোধ নিতে চাই। 

বিভাস - বিয়ের দিনে কাউকে মারতে নেই বস জানিস না। 

এরপর খুশি, খুশি dear নিল। 

খুশি একটা গান গেয়ে শোনোলো, ওর গানের গলাটা খুব সুন্দর। সবাই ভালো লেগেছে । 

 Next পলাশ, পলাশ truth নিয়েছে। 

পলাস- স্কুল লাইফে আমার একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগেছিল, বলা যেতে পারে এক তরফা ভালোবাসা। 

কুনাল- কিরে তুই তো কোনোদিন আমাদের বলিস নি। তুই ডুবে ডুবে জল খেয়েছিস আর শিবের বাবাও টের পাই নি। 

পলাশ - আমি মেয়েটাকেই কোনো দিন বলতে পারলাম না, আর তোদের কি বলব। 

এই পর একে একে truth- dear নেয় মজা করে বাসর রাত কেটে যায়। 


পরের দিন বিয়ে বাড়ির লোকজনের ব্যস্ততায় কেটে যায়, পলাশের আর পাপড়ির সাথে কথা বলা হয়ে উঠেনি। এত দিন পরে দেখল,মনটা আবার নাড়া দিয়ে উঠেছে, তাই একটু কথা বলতে চেয়েছিল একান্তে কিন্তু কথা বলার সুযোগ পেলো না ।বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগে, শুয়ে পরে, কিন্তু ঘুম আসছে না, শুধুই পাপড়ির কথা মনে আসছে। ভাবতে ভাবতে ফিরে গেল স্কুল লাইফে। 


দিনটা ছিল ক্লাস xi নবীন বরন অনুষ্ঠান। পলাশ অন্য স্কুল থেকে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে, নতুন ছাত্র, একটু ভয় ভয় আছে। ওদের স্কুলের যে কয়েক জন ভর্তি হয়েছে, তাদের কে দেখতে পাচ্ছে না। পলাশ খুব চুপ চাপ ,হই হুল্লোড় পচ্ছন্দ করে না। একাই প্রথমের সারিতে বসে অনুষ্ঠান দেখছে। অনুষ্ঠানে মাঝে একটা শাড়ী পরা মেয়ে গান করতে ওঠে, মেয়েটা কে দেখে পলাশে মনে লাগে। মেয়েটা অপরূপ সুন্দরী না ,তবে মেয়েটার মুখের হাসি, চোখের চাউনি, পলাশের ভালো লাগে। সাথে গানের গলাটা খুব সুন্দর, পলাশ মুগ্ধ হয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষে মেয়েটার সবাই প্রশংসা করে, সবাই বলাবলি করে যে এটা বাংলা স্যারের মেয়ে। শুনে পলাশের মন খারাপ হয়ে যায়। ভালো লাগেও কিছু করার নেই, স্যারের মেয়ে, পলাশ এই স্কুলে নতুন, বাড়ি এই এলাকাতে ও না। তাই নিজেকে বুঝিয়ে নেয়, যা সম্ভব না, তার কথা না ভাবাই ভালো, কিন্তু চোখ সে তো কোনো কথা শুনতে চায় না। 


পলাশ Science ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষার নাম্বার খুব ভালো কিন্তু আর্থিক অবস্থা একদম ভালো না। খুব কষ্ট করে, প্রাক্তন স্কুল শিক্ষকদের সাহায্যে পড়াশোনা করছে। বাবা মা টাকা জোগাড় করতে পারবে না বলে পড়াতে চাইছিল না, কিন্তু স্যারের জন্য পড়ার সুযোগ পেয়েছে, তাই খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করে। সবে মাত্র কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করেছে মনে পরিবর্তন তো আসবেই,পলাশের ও মনে সাড়া দিয়েছে ভালোলাগা, কিন্তু সমস্যা আছে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নাই বা কথা বলতে পারল, দূর থেকে দেখতে তো কোনো বাধা নেই, তাই দেখেই মনটা ভাল করে নেয়।ভাগ্য ক্রমে মেয়েটি Arts ছাত্রী হয়েও life since নিয়েছে। মেয়েটাকে ক্লাস করতে ওদের class room আসতে হয়, এক ঝলক দেখার একটা সুযোগ পেয়ে যায়। পড়ার ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটা দেখতো। তবে খুব সাবধানে, যদি বন্ধুদের চোখে পরে যায় তাহলে রক্ষে নেই। ওকে নিয়ে হাসাহাসি, কত কি হবে, এসব পলাশের একটুও ভালো লাগেনা। এই ভাবে 11th শেষ হয়। 


Class 12 th রেজাল্ট খুব ভালো হয়। এই মানসিক দ্বন্দ্ব পড়ার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে নি। পলাশের মনে একটু সাহস আসে, এতদিনে নাম জেনে ফেলেছে, তাই চিঠি লেখার ইচ্ছে হলো। মনের কথা কবিতায় আকারে লিখবে, কিন্তু নিজের নাম লিখবে না। যদি স্যার কে দেখিয়ে দেয়, তাহলে রক্ষে নেই,অনেক কিছু হতে পারে। 

একদিন চিঠি লিখেফেলে, কিন্তু কিভাবে দেবে ভাবতে লাগল, বন্ধুদের চোখের আড়ালে দিতে হবে, বন্ধুরা যাতে দেখে না ফেলে। শুক্রবার মেয়েটার ওদের থেকে পরে ছুটি হয়, এই দিনটাকেই টার্গেট করল। ক্লাস ছুটি পর বন্ধুদের বলল স্যার কোন দেখা করতে বলেছেন, স্যারের সাথে দেখা করতে যাবে, বাড়ি ফিরতে দেরী হবে, তোরা চলে যায়, আমার জন্য দাঁড়াতে হবে না। বন্ধুরা চলে গেলে, স্কুল মাঠে অপেক্ষা করে মেয়েটার জন্য, মেয়েটা ক্লাস থেকে বেরোতেই, মাঠে খেলতে থাকা একটা ছোট ভাইকে চিঠিটা দিয়ে বলল- গেটের সামনে এই যে দিদিটা দাড়িয়ে আছে ওকে এই চিঠিটা দিবি। কে দিয়েছে জানতে চাইলে বলবি, তুই চিনিস না, আর এই নে তোর লজেন্স। 

দুর থেকে লক্ষ্য করে, মেয়েটা কি করে, দেখল, চিঠিটা নিয়ে ব্যাগে রেখে দিল। পলাশ মনে মনে খুশি হয়। এই ভাবে ১0 টা চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু কোন দিন সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি। পলাশ একটা সাধারন দরিদ্র বাড়ি ছেলে, যদি পাত্তা না দেয়, যদি অপমান করে, তার থেকে এটাই ভাল। 

টেস্ট এর পর স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, আর দেখা হয় না পরীক্ষা সময় তিন দিন দেখে হয়ে ছিল, এর পর আর দেখে নি। 


উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট এর দিন ও দুই চোখ খুঁজেছিল অনেক, তবে দেখতে পেল না।এরপর পলাশ প্রাক্তন স্যারের সাহায্যে ভালো কলেজে ভর্তি হয়, স্কলারশিপ পেয়ে হোস্টেলে থাকার সুযোগ পায়।ভালো নাম্বার ছিল তাই কোনো অসুবিধা হয় না।

ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে, নিজের জীবন নিজেকেই তৈরি করতে হবে,ওর ওপর সবাই কত আশা করে বসে আছে। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতে পারে না, আসা যাওয়ার খরচা অনেক, তাই 4-5মাস ছাড়া বাড়ি আসে। বাড়ি ফিরলে মেয়েটার খোঁজ নেয়, জানতে পারে স্যার অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। তাই দেখা হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই ,সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছে। সামনে যখন ছিল তখন কিছু বলতে পারল না, তাকে আর কোথায় খুঁজে পাবে, তাই ব্যাপার টা মনের ভেতরেই চাপা দিয়ে দেয়।  


রজতের বিয়েতে সেই আসা আবার উঁকি দিয়েছে, এত দিন পরে আবার দেখা হবে, স্বপ্নে ও ভাবেনি। পাপড়ির সম্বন্ধে যা ভেবে ছিল, সব ভুল। এখন ভাবছে ,তখন যদি সাহস করে একবার সামনে গিয়ে মনের কথা বলতে পারতাম বা চিঠির শেষে নাম টা লিখে দিতাম , তাহলে ভালো হতো। এখন যদি বলে ,চিঠি গুলো আমি লিখতাম, সে কি বিশ্বাস করবে, উল্টে প্রমাণ চাইলে দেখাতে পারে না। আবার যেন আশার আলো দেখা দিয়ে আবার নিভে যেতে চাইছে।


কয়েক দিন ধরে মনটা খুব খারাপ, ভাবছে কিভাবে যোগাযোগ করা যায়, রজতের বৌ এর কাছে নাম্বার জানতে চাইলে অনেক প্রশ্নের মুখে পরতে হবে,তাই নিলো না। অফিসে বসে ভাবল Fb তে friend request পাঠালে কেমন হয়। এতদিন নাম জানতো, কেমন দেখতে হয়েছে যানতো না, এখন সব জানে , নাম Search করে friend request পাঠিয়ে দিল। 

কাজের ফাঁকে বার বার চেক করল, except করেছে কিনা। বাড়ি ফিরে আবার দেখল, না except for করেনি, কিছু টা হতাশ হল। এমনিতে social media কম use করে।

পরের দিন সকালে দেখল friendship except করেছে।পলাশ মনে ভরসা পেল, তখনই SMS করল। 

পলাশ - Good morning 

And thanks 

সাথে সাথে reply এল

পাপড়ি - same to you 

But Thanks কিসের জন্য। 

পলাশ- friendship করার জন্য। 

পাপড়ি - আপনার সাথে সাথীর বিয়ের দিন কথা হয়েছি, আর আমরা এক স্কুলে পড়েছি যদিও আপনাকে আমি চিনতাম না। 

পলাশ - স্কুলে আপনি আমাকে কোনো দিন দেখেন নি। 

পাপড়ি - হয়তো দেখেছি, তবে মনে পরছে না। 

এই ভাবে কিছু সময় কথা হল, 

 এত দিন পরে সরাসরি না হোক SMS কথা বলে, পলাশ খুব খুশি, পাপড়ি মাঝে মাঝে SMS করবে বলেছে।


পাপড়ি ক্লাস xi সোনাখালি হাইস্কুলে ভর্তি হয়, ওর বাবা এই স্কুলের শিক্ষক। স্যারের মেয়ে তাই বাকী স্যার ও ম্যাডাম রা পাপড়িকে খুব স্নেহ করে। স্যারের মেয়ে বলে নিজেকে অহংকারী ভাবে না। পাপড়ি ছোট থেকেই খুব মিশুকে , অল্পতেই বন্ধুত্ব করে ফেলে। বান্ধবীদের সাথে হইচই করতে ভালো বাসে, বড় হলেও আচরন ছোটদের মতো। 

তখন ক্লাস 12th, এক দিন ক্লাস শেষে ,বান্ধবীর জন্য দাড়িয়ে আছে, বান্ধবী সাইকেল আনতে গিয়েছে, এমন সময় এক ছোট ছেলে একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে এই চিঠিটা দিতে বলেছে, আর দাদাটাকে আমি চিনি না, বলেই ছেলে টা দৌড় দেয়।কিছু বোঝার আগেই ছোট ছেলেটা পালিয়ে যায়। পাপড়ি চারিদিক একবার দেখে, তাড়াতাড়ি চিঠি টা ব্যাগে রেখে দেয়। বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে চিঠিটা খুলে দেখে, একটা সুন্দর প্রেমের কবিতা লেখা, চিঠির শেষে কোনো নাম লেখা নেই। কাউকে কিছু না বলে চিঠিটা লুকিয়ে ডাইরিতে রেখে দেয়। 

এই ভাবে দু-এক সপ্তাহ ছাড়া প্রায় ১০টা চিঠি পেয়েছিল। প্রতিবারেই অন্য অন্য বাচ্চা ছেলে চিঠি দিয়ে যেত। সব চিঠিতে সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখা থাকতো কিন্তু নাম থাকতো না। কবিতা গুলো ভাষা পাপড়ির মনকে ছুয়ে যায়, মনে মনে ছেলে টাকে ভালো লাগে।জানাজানি হওয়ার ভয়ে বান্ধবী দের কিছু বলেনি, ভেবেছিল ছেলেটা কোন দিন না কোন দিন সামনে আসবেই। উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্টের সময় ও কেউ সামনে আসেনি। 


এর পর English নিয়ে ঘাটাল কলেজ ভর্তি হয়, 2nd year ওর বাবা ট্রান্সফার হয়ে চন্দ্রকোনার স্কুলে চলে যায়। ঘাটাল থেকে BA pass করার পর, MA এবং Bed চন্দ্রকোনা থেকেই করে। বর্তমানে SSC জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে। 


মাঝে মাঝে FB massages কথা হয়, পাপড়ি ভালো online আসে না।একদিন পলাস SMS করল। 

পলাশ - যদি কিছু না মনে করেন, তাহলে আপনার what apps number আমাকে দেওয়া যেতে পারে। 

পাপড়ি - দিতে পারি, তবে ফোন করা চলবে না। 

পলাশ - OK, তাই হবে, ফোন করবো না, SMS reply দেবেন তো। 

পাপড়ি -হ্যাঁ, আর আপনি না তুমি বলবে, এই আপনি আপনি আমার ভালো লাগে না। 

এখন whatapps কথা হয়, যে পলাশ ফোন ভালো ব্যবহার করে না, সে এখন সব সময় online. একদিন পলাশ বলল, 

পলাশ -একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, যদি সঠিক উত্তর দাও। 

পাপড়ি - স্কুলের সেই চিঠি দেওয়া ছেলে টাকে এখনও ভালোবাসো। 

পাপড়ি - যাকে কোনো দিন দেখিনি, সে কে তাও জানি না ,তবে তার কবিতার ভাষা, আমার মনে এখনো গাঁথা আছে।

পলাশ - যদি কোনো ছেলে তোমার সামনে এসে বল, যে, ওই চিঠি গুলো সে লিখেছিল। তখন তুমি কি করবে। 

পাপড়ি - কি করে বুঝবো, ছেলে টা সত্যি কথা বলছে। 

পলাশ - তাহলে কি ভাবে চিনতে পারবে। 

পাপড়ি - সঠিক জানিনা, তবে চিঠি গুলো এখনও আমার কাছে আছে। হয়তো চিনে নিতে পারবো। 

এসব কথা তুমি জানতে চাইছো কেন। 

পলাশ - না, এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। 

পাপড়ি - ভাবলাম ছেলেটার সম্পর্কে জানতে পেরেছো।

পলাশ - যদি জানতে পারি। 

পাপড়ি - খুব উপকার হবে, জানতে চাইবো তখন কেন সামনে আসে নি। 


পাপড়ি সব সময় online থাকে দেখে, এক দিন সাথী রজতকে বলল - যখন ই net অন করি, তখনই দেখি পাপড়ি online. জিজ্ঞেস করলে বলে একটা পুরানো Friend এর সাথে কথা বলছি।

রজত- আর বলোনা যে পলাশকে SMS করলে এক দিন পরে উত্তর দিত, সে এখন সব সময় online. 

 সাথী - এই দুজনে প্রেম করছে না তো। 

রজত- পলাস প্রেম করার ছেলেই না। 

সাথী- পাপড়ি ও ছেলেদের সাথে ভালো কথা বলে না।

আচ্ছা পাপড়ি কে চিঠি দেওয়া ছেলেটা পলাশ না তো। 

রজত- বলতে পারব না, স্কুলে তো তেমন কিছু দেখিনি। তবে মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে ,পরে বাড়ি ফিরতে, বলত স্যার দেখা করতে বলেছে, বাড়ি যেতে দেরি হবে। 

সাথী - পলাশ বলছে স্কুলে একটা মেয়েকে ভালো লাগতো, তথচ কোনো দিন বলতে পারেনি। আর পাপড়ির ও বলছে, যে ছেলে টা চিঠি লিখতে, সে কোনো দিন সামনে আসেনি। ব্যাপার টা কি বলতো। 

রজত- পলাশ যা ছেলে, কোনো দিন কাউকে কিছু বলবে না, সব মনের মধ্যে রেখে দেবে, জীবনে মুখ ফুটে কিছু বলতে শিখলো না, শুধুই পড়াশোনা করে গেল। 

সাথী- যদি পলাশ কিছু না বলে, সাথী ও কিছু বলবে না। 

 কি ভাবে জানা যায় বলতো, ওদের ব্যাপার টা সমাধান করতে হবেই। 

রজত- ছোট থেকেই পলাশ ডাইরি লেখার অভ্যাস আছে, সব কিছু ডাইরি তে লিখে রাখতে পারে। 

সাথী- ওই ডাইরি টা কোনো ভাবে জোগাড় করতে পারবে। 

রজত- পুরানো ডাইরি, মানে ওদের বাড়িতেই আছে। 

সাথী- কোনো ভাবে লুকিয়ে আনতে পারবে। 

রজত- বন্ধুর ডাইরি চুরি করবো। 

সাথী- চাইলে তো দেবে না, কোনো অজুহাতে ওদের বাড়ি থেকে লুকিয়ে নিয়ে আসতে হবে। 

রজত- হ্যাঁ পারব, ওদের বাড়ি আমি অনেক বার গিয়েছি, তখন পলাশ বাড়িতে থাকতো ,এখন পলাশ বাড়িতে নেই, কাকিমা আমাকে খুব ভালো বাসে, কোন অসুবিধা হবে না। 

সাথী- ডাইরি হাতে এলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। নাহলে ওরা সারা জীবন কথাই বলবে, কেউ মনের কথা বলবে না। 


কথা মতো রজত ,পলাশের বাড়িতে গিয়ে বলে ওর কয়েকটা বই দরকার, বই পলাশের room আছে, আর পলাশের সাথে হয়েছে ,বলেছে খুঁজে নিতে। রজত প্রথমে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না ,শেষে দেখল বই গুলোর একেবারে পিছনে ডাইরি লুকিয়ে রেখেছে। ডাইরির প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা "স্কুল জীবন"। রজত কয়েটা বই ও ডাইরি নিয়ে বাড়ি ফিরে। সাথী ডাইরি পড়ে দেখে, ওরা যা ধারনা করেছিল একবারে ঠিক। পলাশের যে মেয়েটা কে ভালো লেগেছিল, তার নাম পাপড়ি, তার মানে চিঠি গুলো পলাশই লিখেছিল। 

সাথী আর রজত পরিকল্পনা করে কি ভাবে পলাশের মুখ থেকে সত্যি কথা বলানো যায়। সাথী বলে সামনেই ওদের বিবাহ বার্ষিকী আসছে, ওদের কে আসার জন্য অনুরোধ করতে হবে, বাকীরা না আসলে ও ওরা যেন অবশ্যই আসে। 

সাথী অনেক করে পাপড়ি কে আসার জন্য রাজি করায়। পাপড়ি আসছে শুনে পলাশ ও আসার জন্য রাজি হয়ে যায়। 

রজত আর সাথীর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাড়ির লোক ছাড়া, পলাশ আর পাপড়ি এসেছে। 

ওরা যখন গল্প করছে তখন রজত বলল, বাসর রাতে যে গেমটা খেলে ছিলাম, এখন সেটা খেললে কেমন হয়। 

সাথী- হ্যাঁ খুব মজা হয়েছিল, তোরা কি বলিস। 

ওরা বলল আমাদের কোনো অসুবিধা নেই, খেলতেই পারি। 

চার জনে খেলা শুরু করে, প্রথমে পাপড়ির দিকে, পাপড়ি dear নিল। 

সাথী- ক্লাস xi নবীন বরন অনুষ্ঠানে যে গানটা করেছি, সেটা এখন কর। 

পাপড়ি - অনেক দিন রিয়াজ করা হয় নি , ভালো হবে না। 

রজত- যেমন পারবে তেমন করলে হবে। 

পাপড়ি গানটা করে শোনায়।

এরপর পলাশের ,পলাশ Truth নিয়েছে। 

রজত- প্রশ্ন করল, স্কুল লাইফে যে মেয়েটা কে ভালো লেগেছিল, তার নাম বল। 

পলাশ - এটা বাদ দিয়ে অন্য প্রশ্ন কর। 

রজত- তাহলে বল তুই চিঠি গুলো কাকে লিখে ছিলি। 

পলাশ - তুই কি যা তা বকছিস। 

রজত- আমি যা তা বকছি, না তুই আমাদের কাছে কিছু লুকোছিস। তুই নিজের মুখে বলবি না আমি বলব। 

পলাশ - কি লুকোছি।

রজত- পাপড়িকে চিঠি গুলো যে লিখেছিল, সেই ছেলেটার নাম কি। 

পলাশ - আমি কি করে জানবো। 

সাথী- তুমি এখন ও বলবে না। 

পলাশ - কি বলব না। 

রজত- আর লুকোতে হবে না, আমরা সব জেনে নিয়েছি, এই নে তোর ডাইরি। 

পাপড়ি - তোরা কি সব বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। 

সাথী- একটু ধৈর্য ধর সব বুঝতে পারবি। 

পলাশ -তুই বই নেওয়ার নাম করে আমার ডাইরি খুঁজতে গিয়েছিলি। 

রজত- হ্যাঁ, তুই কি রাগ করেছিস। 

পলাশ - না, তোকে আমি বিশ্বাস করি। 

সাথী- এবার তো বলো। 

পলাশ - পাপড়ি তোমাকে একটা সত্যি কথা বলবো, তুমি বিশ্বাস করবে না কি সেটা তোমার ব্যাপার। 

পাপড়ি - কি সত্যি কথা। 

পলাশ - স্কুলে চিঠি গুলো আমিই লিখতাম, তুমি কি ভাবে নেবে, তাই সামনে আসিনি বা নাম লিখিনি। 

পাপড়ি -তোমার সাথে কথা বলে, আমার ও যেন মনে হচ্ছিল, Fb তো ও কবিতার কয়েক টা লাইন দেখে ছিলাম।

রজত- এবার আসল কথাটা বল। 

পলাশ - কোন টা। 

রজত- তোকে নিয়ে আর পারা গেল না। সাথী ওদের জন্য যেই ফুল এনেছি, সেটা নিয়ে এসো। 

সাথী- এখনই আনছি। 

রজত- এই নে, আমরা থাকবো না চলে যাবো। পলাশ - তোদের জন্য আমি মনের কথা বলতে পারলাম, আর তোরা থাকবি না। 

পলাশ গোলাপের তোড়া পাপড়ির হাতে দিয়ে বলল, তোমাকে আমি স্কুল লাইফ থেকে like করি, আর এখন ভালোবাসি, তুমি কি আমায় like করো। 

পাপড়ি -চিঠি গুলো পরেই আমার ভালো লেগেছিল, এত বছর পর এইভাবে খুঁজে পাবো ভাবতে পারছি না। 

রজত- আমরা আমাদের কাজ করে দিয়েছি, আর এবার ওদের কাজ, কিভাবে কাকু কাকিমা কে ম্যানেজ করবি তোরা ঠিক কর।যদি তাও না পারিস বল আমরা সব সময় তোদের সাথে আছি। 

আর বিয়েতে মেন আমাদের নিমন্ত্রণ করিস । 

পাপড়ি - রজতদা ঘটকালীটা তুমিই করো, দু’পক্ষের ঘটকালীর পাওনা পাবে। 

সাথী- আমি বুঝি বাদ পরে যাবো। 

পলাশ -তুমি হবে ছেলের বাড়ির মাসি আর মেয়ের বাড়ির পিসি। 

সবাই হোহো করে হেসে উঠল


আজ পাপড়ি আর পলাশ খুব খুশি। প্রথম ভালোলাগা কে এই ভাবে ফিরে পাবে কোনো দিন ভাবেনি। ফিরে যখন পেয়েছে আর হারাতে চায় না। বাবা মা কে রাজি করিয়ে বিয়েটা করে নিতে চায়। দুজনে নতুন জীবন শুরু করতে চায়।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance