Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

3.7  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

প্রেমের হাসি

প্রেমের হাসি

2 mins
714


বর্তমান কালের শহর, কর্মব্যস্ত গতিশীল জীবন। দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরের ঘরে ফেরার জায়গা এখন সব বড় বড় মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং। এরকম একটি বিল্ডিংর একটি টাওয়ার,পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাট। দুই বান্ধবী। একজনের জীবন ভালোবাসার আবেগে পরিপূর্ণ। অন্যজন তার উল্টো। একজন যখন স্বামীর ভালোবাসার গল্প বলে, অন্যজন তখন গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একদিন স্বামীর ভালোবাসায় টইটম্বুর বান্ধবীটি চেপে ধরল অপর বান্ধবীকে ,

‘আচ্ছা, কী ব্যাপার বল তো?’

‘কোন ব্যাপার?’

‘আমি আমার স্বামীর ভালোবাসার কত গল্প করি তোকে, তুই কিছু বলিস না কেন?’

‘ইয়ে, না মানে…তোরটা শুনতেই ভালো লাগে।’

‘না না, নিশ্চয়ই কিছু গোলমাল হচ্ছে। তুই কখনোই কিছু বলিস না…আজ তোকে বলতেই হবে…।’

‘কী বলব?’

‘তোদের ভালোবাসার কথা।’

‘ধ্যাৎ!’


শেষ পর্যন্ত আবেগহীন বান্ধবী বলতে বাধ্য হলো যে তার স্বামী মোটেই রোমান্টিক নয়। বাসররাতে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল, কারেন্ট ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে জানালা খুলে বলেছিল, ‘বাপ রে, কত বড় চাঁদ উঠেছে!’ পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে রোমান্টিক ডায়লগ ওই একটাই!


‘বলিস কী! ভালোবেসে তোকে কিছু বলে না?’

‘না।’

‘কোনো উপহারও দেয় না?’

‘না।’

‘আরে হায় হায়, কী বলছিস এসব! এত দিন বলিসনি কেন?’


‘বললে কী হতো শুনি?’


‘আরে বোকা, যে পুরুষমানুষের মধ্যে ভালোবাসা নেই, তার ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে হয়। তুই সেই কাজটাই করিসনি। শোন, আমি তোকে বুদ্ধি দিচ্ছি।’


‘কী বুদ্ধি?’


‘আরে বোকা, স্বামীর ভালোবাসা আদায়ের বুদ্ধি। শোন, তোকে একটা বুদ্ধি দিই…সামনে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে, এই চান্স…তুই করবি কি, ১৩ ফেব্রুয়ারিতে তোর বরকে বলবি…’।


তারপর দুই বান্ধবী অনেকক্ষণ ফিসফাস করল।


১৩ ফেব্রুয়ারি খুব দ্রুতই চলে এল। আবেগহীন বান্ধবী রাতে স্বামীর ঘরে চা নিয়ে ঢুকল। গম্ভীর শিক্ষক স্বামী কিঞ্চিৎ অবাক হলো…।

‘চা চেয়েছিলাম নাকি?’


‘না, চাওনি। আমার খেতে ইচ্ছে হলো, তাই তোমার জন্যও বানালাম।’


‘ও।’


স্বামী চা খেতে খেতে বইয়ে মনঃসংযোগ করল। ‘ইয়ে, জানো কী হয়েছে? কাল রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম তোমাকে নিয়ে।’


‘কী স্বপ্ন?’


‘দেখলাম তুমি আমার জন্য ১৪ তারিখে একটা দামি হিরের আংটি কিনে এনেছ।’


‘স্পেসিফিক ১৪ তারিখে কেন?’


‘বাহ, ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন ডে না?’


‘ও আচ্ছা…!’ ব্যস, স্বামী আবার বইয়ে ডুবে গেল। পাশে চা ঠান্ডা হতে লাগল।


পরদিন আবেগী বান্ধবী ছুটে এল,


‘কিরে, বরকে স্বপ্নের কথা বলেছিলি?’


‘হু’


‘কী বলল?’


‘কী আর বলবে…বই পড়ছিল, ফের বইয়ে ডুবে গেল।’


‘দেখবি…ওষুধ ঠিক কাজ করবে…ভ্যালেন্টাইন ডের কথা বলেছিলি তো?’


‘হ্যাঁ।’


আশ্চর্যের ব্যাপার! ভ্যালেন্টাইন ডে -র দিন সত্যি সত্যিই শিক্ষক স্বামী একটা প্যাকেট নিয়ে ঢুকল। গম্ভীর মুখে বাড়িয়ে দিল স্ত্রীর দিকে। স্ত্রী অধীর উত্তেজনায় তৎক্ষণাৎ খুলে ফেলল প্যাকেটটা। না, ভেতর থেকে কোনো হিরের আংটি বেরোল না। বেরোল একটা বই। বইয়ের নাম স্বপ্ন বিচার — স্বপ্নে কী দেখলে কী হয়।


সে রাতে শিক্ষক স্বামীর চেয়ে বেশি গম্ভীর হয়ে রইল স্ত্রী। স্বামী যথারীতি বইয়ে নিমগ্ন। পাশে শুয়ে স্ত্রী ভাবছিল, কাল বান্ধবীকে কী বলবে। বেচারা এত বুদ্ধি-পরামর্শ দিল…সব জলে গেল।


পরদিন ভোরে মুখ ধুতে গিয়ে হঠাৎ আবেগহীন বান্ধবী আবিষ্কার করল, বাম হাতে ঝকঝক করছে একটা আংটি। চোখ বন্ধ করেই বলা যায় আংটিটা হিরের। বাথরুমের আয়নায় দেখা গেল পেছনে দাঁড়ানো শিক্ষক স্বামীর মুখ…না গম্ভীর মুখ, না। মুখে মিটিমিটি হাসি। ভালোবাসার হাসি বোধহয় এমনই হয়…!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance