প্রেমের গল্প
প্রেমের গল্প
রোহিত একজন গল্প লেখক আর আলো তার একজন গুনমুগ্ধ শ্রোতা। দুজনের দেখা হয়ে গেল একদিন এক সাহিত্য বাসরে।
– আচ্ছা আপনি এত সুন্দর গল্প লিখেন কেন??? (আলো)
– ভালো লাগে তাই! (রোহিত)
– প্রেমে পড়ে যাবে তো কেউ
– পড়লে পড়বে তাতে আমার কি, আমি তো আর পড়বো না।
– যদি আপনিও পড়ে যান
– কোনো চান্স ই না
– হুম দেখা যাবে
– কি দেখা যাবে???
– না কিছু না!!
– বলেন না প্লিজ।
– যদি আমার প্রেমে পরে যান তাহলে..??
– কিইইই???
– আরে কিছু না, মজা করলাম।
– ও মজা হলে ঠিক আছে।
– হুম
কথা চলছিল আলো ও রোহিতের মধ্যে আলো মেয়েটি খুব ভালোবাসে রোহিতকে কিন্তু রোহিত তার ভালোবাসাটা বোঝার চেষ্টাই করে না। রোহিতেরও কোন দোষ নেই, কারন আলো এখনো তার মনের কথা রোহিতকে বলেনি।বলেনি কারন তার সাহসই হয়ে ওঠে নি ভালোবাসি কথাটা বলার। এভাবে আলো ও রোহিতের মধ্যে অনেক কথা হয়।একে অন্যের মোবাইল নাম্বার আদানপ্রদান করে, ফেসবুকে দুজনে দুজনের বন্ধু হয়ে যায়।
রাতে আলো আবার রোহিতকে মেসেজ করে
– হাই (আলো)
– হ্যালো (রোহিত)
– কেমন আছেন.?
– ভালো আপনি
– ভালো না!
– কেন??
– আমি একটি ছেলে কে ভালোবাসি
– তাহলে তো বেশি ভালো থাকার কথা!
– এটাই তো আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু সে তো বাসে না
– আপনি কি তাকে আপনার মনের কথা বলেছেন কখনো?
– না তো!!!
– তাহলে সে জানবে কি করে যে আপনি তাকে ভালো বাসেন
– তাই তো এখন আমার কি করা উচিত?
– আপনি তাকে আপনার মনের কথা বলে দিন তারপর সেটা তার উপর নির্ভর করে, সে আপনাকে মেনে নেবে নাকি নেবে না।
– হুম আমি তাই করবো, মনের কথাটা তাকে বলে দেবো ধন্যবাদ বলার জন্য।
– ওকে ভালো থাকবেন আপনি ।
১০ মিনিট পর আলো – রোহিতকে মেসেজ করল, ওটা মেসেজ বললে ঠিক হবে না প্রপোজ বললে ঠিক হবে মানে
আলো – রোহিতকে প্রপোজ করেছে। আলো প্রপোজ করার পর খুশিতে আত্মহারা, আর অপর দিকে রোহিত তো জ্বলে – পুড়ে আগুন হয়ে আছে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না শুধু নিজেকে সামলে রাখছে। আর আলোকে মেসেজ করলো –
– এটার মানে কি??
– কোন টার মানে???
– দেখেন একদম নাটক করবেন না বলেন এটার মানে কি??
– দেখছো না এটা কি, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি (আলো নিজের অজান্তে তুমি তে চলে গেছে)
– আমি বাসি না!
– কেন????
– জানি না!
– আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি, প্লিজ এভাবে আমাকে না করো না।
– আমি কিছু শুনতে চাই না, বুঝলেন আর আমাকে মেসেজ করবেন না। আমরা শুধু ভালো বন্ধু থাকবো ওকে।
–(এই কথা শুনার পরই আলো কেঁদে দিলো, আর রোহিতকে একটি মেসেজ করলো) ওকে, দেবো না যাওয়ার আগে আমার একটি কথা শুনে যাও,প্লিজ ।
– তাড়াতাড়ি বলুন????
– তুমি কি জানো তোমাকে আমি কি ভাবে ভালোবেসেছি।
– না!
–তাহলে শোনো ছোট্ট একটা গল্প,
তোমার লেখা গল্প পরে তোমাকে পছন্দ করা শুরু করি। তারপর তোমার সাথে কথা বলি। তোমার গল্প পড়া আর তোমার সাথে কথা বলা এগুলো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তারপর হঠাৎ একদিন নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু মনের কথা বলার সাহস পাইনি কোন দিন। আজ যখন তুমি যখন বললে ভালোবাসার মানুষ কে মনের কথা বলে দেওয়া উচিত, সেটা তার উপর নির্ভর করে সে সেটা মেনে নেবে নাকি নেবে না। তাই আমি আমার মনের কথা বলে দিলাম, এইটুকু ই বলার ছিল। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না ভালো থেকো।
রোহিত মেসেজ টা পড়ার পর কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। সে জানতো না যে আলো সত্যি তাকে এত ভালোবাসে, তাই সেও তার রাগ অভিমান শেষ করে আলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য মেসেজ করলো কিন্তু মেসেজ করার সাথে সাথে যা দেখলো তা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার চোখের সামনে শুধু একটাই লেখা দেখা যাচ্ছে তা হলো You can’t not reply this conversation. এর মানে আলো তাকে ব্লক করেদিয়েছে।রোহিত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,আলোর মোবাইল নাম্বার ও নেই। তার বাড়ির ঠিকানা ও জানে না। শুধু আলোর একটি ছবি দেখেছে, রোহিত কি করবে এখন? আলোর সাথে কি ভাবে যোগাযোগ করবে? এই সব চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ঢুকে দেখলো আলো তাকে ব্লক থেকে আনবল্ক করলো নাকি। কিন্তু না এখনো সে ব্লক লিষ্টেই আছে।এই একদিনেই রোহিত আলোকে মিস করছে কেন
সে নিজেও জানে না।এভাবে ৪ দিন চল গেলো কিন্তু আলোর কোন সাড়া শব্দ নেই। রোহিত এই ৪ দিনে আলোকে খুব মিস করেছে।
রোহিত বুঝে গেছে সেও আলোকে ভালোবাসে, রোহিতের শুধু একটাই চিন্তা কিভাবে আলোর সাথে যোগাযোগ করবে! কিভাবে মনের কথা বলবে। কিন্তু রোহিত এটা ভেবে পাচ্ছে না যে আলো তাকে মেসেজে ব্লক কেন করেছে। একবারের জন্যও কেন মেসেজ করেনি। এটা ভাবতে ভাবতে, তখনই রিফাতের মাথায় একটি বুদ্ধি এল। তাই সে আর দেরি করলো না, কাজে লেগে গেল। বুদ্ধি টা ছিল এ রকম যে আলো হয়তো এখনও রোহিতের গল্প পড়ার জন্য তার কাছ থেকে একবারের জন্য দুরে সরে যায়নি। তাই রোহিত আর দেরি করলো না, তাড়াতাড়ি একটা গল্প লিখে ফেললো। গল্পটার বিষয়বস্তু ছিল রোমান্টিক , কষ্ট, ক্ষমা আর মধুরেন সমাপয়েৎ। গল্পের মাধ্যমে রোহিত আলোকে এটা বোঝাতে চায় যে সে তাকে খুব ভালোবাসে। রোহিতের স্থির বিশ্বাস যে আলো এটা পড়ার পর তাকে ক্ষমা করে দেবে। ঠিক তাইই হলো গল্পটা পোষ্ট করার কিছুক্ষন পরই আলো ব্লক খুলে রোহিতকে মেসেজ করল,
– এই পাগল এত ভালোবাসো আমাকে (আলো)
– হুম আমিত তোমার জন্যই পাগল (রোহিত)
– হুম, আর নাটক করতে হবে না
– নাটক নয় সত্যি!!
– তাহলে প্রপোজ করো?
– আমি তো পারি না
– মিথ্যাবাদী,এত রোমান্টিক গল্প লিখতে পারে, আর বলে প্রপোজ করতে পারে না।
– তাড়াতাড়ি প্রপোজ কর না হলে আমি চললাম।
– এই কোথায় চললে আমাকেও নিয়ে চল , তুমি ছাড়া আমি যে বড্ড একা। তুমি ছাড়া আমি যে অসহায়। আমি আমি…..
– আমি আমি কি বলবে তো??
– আমি তোমাকে ভালোবাসি আলো
সত্যি ভালোবাসি!!!
– হুম, আমি জানি। সব জানি, তোমার গল্পটাই আমাকে সব বলে দিয়েছে।
– তাহলে বললে কেন প্রপোজ করতে???
– ভালোবাসার মানুষটির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবো বলে!!
– হুম,এত ভালোবোসো আমাকে
– হুম,পাগল!
– হুম তুমি ও পাগলি, আমার পাগলি।
এভাবে বেঁচে থাকুক ওদের ছোট্ট প্রেমের গল্প। ভালোবাসা তো ভালোবাসাই, সেটা না হয় একটি গল্প পড়া থেকেই শুরু হোক। কথাটা ঠিক কিনা পাঠক বন্ধুরা আপনাদের উপরে বিচারের ভার দিয়ে গেলাম।

