Silvia Ghosh

Drama Fantasy

3  

Silvia Ghosh

Drama Fantasy

পিছুটান

পিছুটান

3 mins
1.0K



অনন্ত যখন কাঠ ফাঁটা রোদে অত্যন্ত পরিশ্রান্ত ও মন খারাপী নিয়ে পথে পথে ঘুরে ফিরছে, ঠিক সে সময় একটা মাদার গাছের তলায় অনেকটা জায়গা জুড়ে ছায়া দেখতে পাওয়ায় বসে পড়ে শরীরটাকে এলিয়ে দেয় শীতল করার জন্য। মনে মনে ভাবতে থাকে ফেলে আসা দিন কয়েকের কথা। কেমন যেন সব গুলিয়ে যেতে লাগলো তার।  

ঘটনাগুলো আবার পর পর সাজাতে থাকে সে! গত মাসে একদিন বনগাঁ লাইনের লাস্ট ট্রেনের আগের ট্রেনে লেডিজ কামরায় কানের দুল, হার, চুলের ক্লীপ, সেপটিপিন বিক্রি করছিল ঠিক ঠিক তখনই ঘটে ঘটনাটা। লাস্ট ট্রেনের আগের ট্রেনে মহিলা কামরা প্রায় ফাঁকাই থাকে। তবুও বনগাঁ লোকাল তো, তাই যে ক জন মহিলা ছিলেন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে শুয়ে থেকেও ফাঁকা ফাঁকাই ছিলেন। এখন বারো বগির ট্রেনে চারটে করে মহিলা কামরা সামনে ও পেছনে। সামনের দিকটা একটু বেশী ভিড় হয়,এই রাতে তাও কম। আর পিছনের টাতে ঐ যেমন বলা হল তেমন। 


অনন্ত সারা দিনের পরিশ্রমে আর অসহ্য গরমে ঘেমে নেয়ে প্রায় নেতিয়েই পড়েছিল। দরজার পাশে নিজের লাঠিতে ঝোলানো সাজার সামগ্রী কে ধরে নিয়েই হাওয়া খেতে খেতে চোখটা লাগিয়ে ফেলেছিল। হঠাৎ একটা মিষ্টি মন মাতানো সুগন্ধ তাকে যেন আকর্ষণ করতে লাগলো দরজার সামনে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই । টেরটা পেল যখন এক রুটি তর্কা বিক্রি করা মাসী তার হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল, মরতে চাইলে কি অত সহজে মরা যায় অনন্ত! অনন্ত চোখ খুলেই কেমন যেন হকচকিয়ে গেলো। সাথে কামরার সবাই অনন্ত কে দরজা থেকে সরে এসে বসতে বলল। অনন্ত কিন্তু কাউকেই বোঝাতে পারলো না একটা গন্ধ যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল চুম্বকের মতোন। সেদিন লাস্ট বিক্রি হয় তার কাছ থেকে একটা লাল রঙের ঝুমকো কানের দুল। দাম মাত্র দশ টাকা । তা সেও বিক্রি হয় অত রাতে চাঁদপাড়া থেকে ওঠা একটা অল্প বয়সী মেয়ে , লাস্ট প্যাসেঞ্জার সেদিনের। কামরায় তখন মাত্র চার জন। রুটি তরকার মাসী, অনন্ত, পিছনের সীটে এক নার্স দিদি আর ঐ নতুন প্যাসেঞ্জার। দেখতে যে অপূর্ব সুন্দরী তা নয়, তবে গায়ের কালো রঙের মধ্যে কালো কুচকুচে চুল আর উজ্জ্বল তারার চোখ দুটো বড় মায়াবী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় মেয়েটির গায়ে সেই গন্ধটা পাচ্ছে অনন্ত, তাই না চাইতেও বারে বারে মেয়েটির দিকে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। তার মনে হলো মেয়েটি যেন কিছু বলতে চাইছে। ঠিক বনগাঁ আসার একটু আগে অনন্ত কে ডেকে বলে 'এই যে লাল ঝুমকো টা দিন তো'! অনন্ত যেন জাদু কাঠিতে ছুঁয়ে রাখা পুতুলের মতোন হাত বাড়িয়ে দিতে যেতেই দেখে জানালার ধারে বসা মেয়েটি অনেকটা হাত বাড়িয়ে তার প্রায় হাতের কাছে হাত মেলে ধরেছে। আবার একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায় তার শিরদাঁড়া দিয়ে। তবু দশটা টাকা নিয়ে প্ল্যাটফর্ম আসতেই কেমন করে যেন লাফ দিয়ে নেমে যায় সে। শরীরটা সত্যি কেমন দুর্বল লাগছিল তার। জোরে পা চালিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল সে। সারা রাস্তা মনে হতে লাগলো কে যেন সঙ্গে সঙ্গে আসছে তার। কিন্তু কাউকেই বোঝাতে পারেনা এসব কথা সে।এরপর দিন পনেরো লাস্ট ট্রেনে সেই গন্ধ ওয়ালা মেয়েটা কে সে দেখেছে এবং কিছু কিছু কথা বার্তার আদান প্রদানও হয়েছে। মেয়েটা কে দেখে এবং কথা বলে ওর মনের অস্বস্তি কমেছে। মেয়েটা একটা বাচ্চা রাখার কাজ করে এক চাকরী করা দম্পতির বাড়ীতে। তাই রাত করে ফেরে। সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে তবুও নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসে।  ঠিক হয় এক ছুটির দিন দুজনে দেখা করবে মেয়েটির বাড়িতে। আশ্চর্যের বিষয় এটা লক্ষ্য করেছে অনন্ত ট্রেন থেকে নেমে কোনদিনই মেয়েটি কে তেমন ভাবে দেখতে পায়নি । এ সব প্রশ্ন নিজের মনেই করেছে সে। 


লেডিজ কামরায় সকলেই লক্ষ্য করেছে অনন্ত এই পনের দিনে কেমন যেন ফ্যাকাসে আর রোগা হয়ে গেছে ।এক মনে কেমন বিড়বিড় করে একলা থাকলেই। একদিন ফেরার সময় রাতে ট্রেনে সেই তর্কা রুটির মাসি অনন্ত কে ডেকে জিজ্ঞাসাই করলো তুই একলা থাকলে বিড়বিড় করে কি বলিস? অনন্ত বলল একলা কই ঐ যে এক খদ্দের ওঠেন না ওনার সাথেই তো কথা বলি। ঐ যে দেখ জানালার পাশেই বসা ঐ মহিলার সাথেই তো কথা বলি। ট্রেনের বাকী যাত্রীদের চোখ চলে যায় ট্রেনের ভিতর ফাঁকা জানালার ধারে। 

এরপর থেকেই পাগলের মতোন খুঁজে চলেছে সে ঐ গন্ধওয়ালা খদ্দের কে। যেখানে তাদের দেখা করার কথাছিল সেখানেও তো গিয়ে দেখেছে সে, কেবল শূন্যতা ছাড়া কিছুই মেলেনি। 

পাগলের মতোন একমাস ধরে ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে ছুটে চলেছে সে গন্ধওয়ালা খদ্দেরের উদ্দেশ্যে। অবশেষে আজ যখন মাদার গাছের ছায়ায় বসে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে অনন্তের দিকে তখন সেই সুগন্ধী ছড়িয়ে এক পরী এসে টেনে নিয়ে চলছে তাকে অনন্তের দিকে। অথচ তার পার্থিব শরীর যে পিছুটেনে রেখেছে যেতে দিতে চাইছো না যেন....


অবচেতন যেন বালির মতোন উড়ে যাচ্ছে অনন্তে...



Rate this content
Log in