পাখি
পাখি
পাখি আজ বেশ ভোর ভোর উঠেছে অন্য দিনের থেকে। আসলে কাল যখনই শুনেছে পরদিন সকালে ঠাম্মা আসবে, ওর শুধু মনে হচ্ছিল কিভাবে রাত শেষ হয়ে ভোর আসবে। সত্যি ঠাম্মা যদি প্রতিটি দিন ওদের কাছে থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো। কিন্তু পাখির মা বলে "কেনো শুধু আমরাই রাখবো, আরো তো দুটো ছেলে আছে, তারা কি শুধু সম্পত্তির ভাগ নেবে, মায়ের ভরণ পোষণ নেবে না?" পাখি এত শক্ত শক্ত কথা বোঝে না তবে মায়ের কথায় ওর মাঝে মাঝে মনে হয় ঠাম্মা কি এত বেশি খায় যে সব ছেলের বাড়ি পালা করে থাকতে হবে। মাকে দু চারবার জিজ্ঞেস করতে গিয়ে শুনেছে "তোমাকে আর পাকা পাকা কথা বলতে হবে না, যাও গিয়ে পড়তে বসো"। পাখি এখন ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখে, ঠাম্মা আবার দুই কাকার বাড়ি এক মাস করে থেকে কবে ওদের বাড়ি আসবে সেই হিসাব। সত্যি ওই ঠাম্মার সাথে থাকা একমাস টা যেনো হুস করে চলে যায়। দুপুরে ছাদে বসে আচার খেতে খেতে ঠাম্মার মুখে রাজা রানীর গল্প শোনার দিন গুলো আবার আসবে ঠাম্মা এলে। পাখির মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে যায় কিন্তু ঠাম্মা এখনও এলো না। পাখি যেনো আর স্থির থাকতে পারে না। ঘরে এসে মায়ের মোবাইলটা নিয়ে সোনা কাকাকে ফোন করে, "হ্যালো কাকু, আমি পাখি, ঠাম্মা এখনও এলো না কেনো?" অপরপ্রান্তে কাকুর গম্ভীর গলা জানালো "ঠাকুমা ভালো নেই, তাই যাবে না"। মন খারাপ করে ছাদের সিঁড়িতে ওঠার সময় শুনল বাবার গলা "মা আর নেই, বডি একটু পরে এখানে আনবে বললো মেজো"। পাখি চিৎকার করে কেঁদে উঠলো "ঠাম্মা তুমি আসবে বলেছিলে, কিন্তু এখন কোথায় গেলে"। বাবা সজল চোখে পাখিকে জড়িয়ে ধরে। পাখি বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলে ওঠে "বাবা, এবার ঠাম্মা কে আর সবার বাড়ি ঘুরতে হবে না বলো"।