STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

নববর্ষের প্রাপ্তি

নববর্ষের প্রাপ্তি

3 mins
166

সারা বিশ্বের অতিমারীর প্রভাবে জনজীবন অচল, তাই এখন শহরে থাকাটা আমার মতে এখন অহেতুক অর্থের অপচয় - কারণ একদিকে সব উপার্জনের রাস্তা বন্ধ, অন্যদিকে দৈনন্দিনের খরচ। আজ বাংলা নূতন বছরের প্রথম দিন - ইচ্ছে ছিল নিজের সাধ্যমত ক্ষমতায় আমার ফাস্ট ফুডের দোকানটার হালখাতা করার। কিন্তু এই মুহূর্তে তা সম্ভব নয়। আর গ্রামের বাড়িতে এই সুযোগে নববর্ষের দোহাই দিয়ে চলে যাওয়া যাবে। তাতে এক অতিমারীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং দুই খরচটাও বাঁচবে।


ঘড়ির দিকে না তাকালে বুঝতামই না আড়াই ঘণ্টা হেঁটেছি। বড় রাস্তার কাছে আসতেই দেখি যান চলাচল বন্ধ। খাঁটি বাংলা বন্ধের স্টাইলের লকডাউন শুরু। এখন হেঁটে যেতে হবে ফেরী ঘাট। রাগে মাথা টগবগ করছে। অথচ প্রিয়ার হাসি রোগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মনে মনে ভেবেছিলাম বিয়ের পরের এই প্রথম নববর্ষটা আমরা আমাদের সাধ্যমত আমাদের মত করে পালন করবো। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল এই অতিমারী।


ওর হাসিকেই আমি ভয় পাই। মনে হয় হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে রাগ কিংবা ক্ষোভ। কিংবা কান্না। আমার সামনে প্রিয়া কাঁদে না। কিন্তু আমি জানি একা একা কাঁদে। আমিই ওকে কাঁদাই প্রতিদিন। ও যেদিন খুব হাসে, কে যেন বলে আমাকে, একাকী বদ্ধ কামরায় বৃষ্টি নামবে আজ।


হাসছ কেন? বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।


তোমার রাগ দেখে। চলো হাঁটি। তোমার সাথে আজ গল্প করব।


ব্যাগ হাতে নিয়ে তো আর ভিডিও কল জমবে না। আমার সাথে গল্প করবে আজ।


আমাদের বিয়ে হয়েছে এক মাস। এক সপ্তাহ গ্রামে কাটিয়ে সস্ত্রীক চলে এসেছি মেসে। সকালে কিন্ডারগার্টেনে পড়াই, বিকেলে ফাস্ট ফুড বিক্রি করি। চলেই যাচ্ছিল একরকম। করোনা এসে ওলটপালট করে দিল সব। আর কফিনের শেষ পেরেক ঠুকল লকডাউন। গ্রামে পালানো ছাড়া উপায় নেই। মেসের দুপুর আর সন্ধ্যাগুলো কাটে আমার ফোনে, ভিডিও কল করে। প্রিয়াকে বলতাম স্কুলের জরুরি মিটিং। একদিন ধরা পড়ে গেলাম।


তোমার সব জরুরি কাজ শুধু সুমিতা ম্যাডামের সঙ্গেই? ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভিডিও কল? প্রেমট্রেম করো না তো?


বলেই কলজে ঠান্ডা করা অট্টহাসি। আমি জানি সেদিন অনেক কেঁদেছিল প্রিয়া । আজ কেন হাসছে ও?


সুমিতা ম্যাডামের সাথে কথা হয়নি আজ?


কিসের কথা? কেন কথা বলব আমি?


রেগে যাচ্ছ কেন? দেখো, ফেরিতে না দেখা হয়ে যায়?


ওর বাড়ি দিনাজপুর। ট্রেনে যাবে…


বলেই থতমত খাই আমি। কেন এই কথাটা বলতে গেলাম। প্রয়োজনের থেকে বেশী কথা বলে স্মার্টনেস দেখাতে যাওয়ার সমস্যা এটাই। এখন আবার যদি প্রশ্ন উত্তরের পালা শুরু হয় তাহলে সর্বনাশ! একটা বিষণ্ণ মুখে ভাবতে ভাবতে হেঁটে চলেছি। আবার সেই হাসি। সারাটা রাস্তা বকবক করে যায় প্রিয়া । এদিকে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।


ঘাটে পৌঁছে চোখে অন্ধকার দেখলাম। লঞ্চ, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ। যেতে হবে ফেরিতে। ছোট ফেরিটায় কয়েক হাজার মানুষ। জনসমুদ্রের মাঝে পড়ে আমরা বিধ্বস্ত হতে থাকি। প্রিয়ার হাত আমার শক্ত মুঠির ভেতর। ‘এই হাত ছাড়া যাবে না সারা জীবন,’ কে যেন বলছে আমায়। অনেক জোর দিয়ে হাতটা ধরে রাখি, তবুও কিন্তু হাত ছুটে যায়। হঠাৎ পুলিশের একটা বাঁশির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ভীড়টা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আর লোকের জটলার একটা অংশ উঠে পড়ে আমাদের ওপর। তখন আমি ছিলাম ফেরির বাইরের দিকে। ফলে এক ধাক্কায় ছিটকে পড়ি গঙ্গার জলে।


আমি আবার সাঁতার জানি না। ঠান্ডা জলে হাবুডুবু খাই। প্রিয়ার চিৎকার, ভাইরাল ভিডিও,লোভী ক্যামেরার ঝলকানির মধ্যে জলের তলায় তলিয়ে যেতে থাকি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।


জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটা ভেজা কোলের ওপর আবিষ্কার করি। ভিজে জবুথবু হয়ে আমাকে নিয়ে বসে আছে প্রিয়া । প্রিয়ার দু চোখ জলে ভরা ।


আমি এখন কোথায়?


হাসপাতালে। এটা কলকাতার একটা হাসপাতাল।


তোমার কাপড় ভেজা কেন?


গ্রামের ছেলে হয়ে সাঁতার জানো না? আমায় আগে বলোনি কেন?


তোমার সাথে কথাই তো হলো না ঠিক করে? আমাকে তুলেছে কে, তুমি? তুমি তুলেছ?


না, তোমার সুমিতা ম্যাডাম!


প্রিয়ার হাতটা চেপে ধরি।


কে সুমিতা ? নদীর জল শুধু ফুসফুসে না, মস্তিষ্কেও ঢুকেছে। ধুয়েমুছে দিয়েছে সব জঞ্জাল।


জলে পড়া আর প্রেমে পড়া কি একই রকম?


কার প্রেমে পড়েছ আবার? সুমিতা ম্যাডামের?


আবার সেই হাসি। এখন আর কোনো ভয় হচ্ছে না। কাজ করছে না কোনো অপরাধবোধ। প্রিয়ার হাতটা আমার শক্ত তালুতে। প্রেমের মতো কোনো একটা মহাসমুদ্রে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। তবু এত ঝড়ের মাঝে নববর্ষের শুভদিনে এত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও আমার ভালোবাসাকে আমি খুঁজে পেলাম - এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance