মন্দ কথন( প্রথম পর্ব )- রুপান্
মন্দ কথন( প্রথম পর্ব )- রুপান্
কিছু মুখ আবডালে ডুবে যাওয়া শৈশব,
একাধারে মুখোমুখি
দলছাড়া কলরব..!
পোষাকে ভেতরে এক অন্য পোষাক,
মুখছোটা সমাজের দৃষ্টি বিভ্রান্ত..!
নিয়মের এ শহর বুকে কান পেতে শুনি
হাত ভাঁজ নীল শার্টে চুড়ি রিনিঝিনি....! "
মেনে নিলে লজ্জা, হাঁটু গোঁজা মুখ,
পরিচয়ে যদি বলি, "আমিও সেই বুক"...?
একাধারে একপেশে শুধু তোমরাই বোঝ না,
পৌরুষ পোষাকের গায়ে মাতৃ বাসনা....!
ধবধবে সাদা কাপড়ে ভাঁজে উজ্জ্বল মুখ, তার চারপাশে নতুন পৃথিবী, সেই পৃথিবী গন্ধ তার বড় ভালো লাগে, ভালো লাগে এক মুখ মানুষের ঘর..!
হিপহিপ হুররেএএএএএ..! উৎসবের এই জীবনে হঠাৎ বদলে যাওয়া কৈশোরে মুখ দেখে, অপলক সুখী হওয়া জন্মদায়ের কাছে চোখের জলে ক্ষমা চেয়ে কিছু মানুষের রাত দিনের তফাৎ ঘুঁচে যায়...!
আমরা সবাই স্রোতের সাথে উত্তাল সাগরের সুখ নিতে চাই, বিপরীতের এক ফোঁটা জলের দায়ও যেন বড় অসুখের মতন..!
আমাদের এই বর্তমান পৃথিবীতে রূপান্তরকামিতা( ট্রান্সেক্সুয়্যালিজম) নামক এক অজানা অথচ প্রাকৃতিক বিবেচনায় এক স্বাভাবিক ঘটনায়, আমরা অতি বিশেষজ্ঞ হয়েও অজ্ঞতার বিশেষটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের অধিকারের রাজা বানিয়ে বসে থাকি ! যখন একজন ব্যক্তির জৈব লিঙ্গ সেই ব্যক্তির সাংস্কৃতিক লিঙ্গ এর সাথে বিপরিত মুখী প্রকাশ পায়, তখনই আমরা সেই ব্যক্তিটির সামাজিক জীবনের মুখের উপর ধরাস করে বেঁচে থাকার দরজা বন্ধ করে দিতে চাই ! জন্মগত ভাবে একজন মানুষ তার বাহ্যিক রুপের সাথে অন্তর্গত রুপের মিল খুঁজে না পেয়েও আর বাকি সকলের মত মনের ইচ্ছেয় নিজেকে সাজাতে চায় ! আর তখন তার সামাজিক অভিজ্ঞতা তাকে তার স্থায়ী সামাজিক লিঙ্গ পরিবর্তন করে তার মনের লিঙ্গ চরিত্রের সাথে এক করে ভাবতে বাধা দেয় !
সে ক্ষেত্রে তাকে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া একটি অসুস্থতার দায় কাঁধে চাপিয়ে আমরা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলি..!
সমাজবিজ্ঞানী অ্যান ওকলের মতে, মানুষের সেক্স শারীরিক বৈশিষ্ট্য বহন করে, আর জেন্ডার একটি নির্দিষ্ট সমাজে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ধারিত বিশিষ্টতা নির্দেশ করে ! একজন নারী ও পুরুষের কার কী রকম পোশাক-পরিচ্ছদ হবে, কে কী রকম আচার-আচরণ করবে, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কার কী রকম হবে, সমাজের নানা ধরনের কাজে একজন নারী বা একজন পুরুষের ভূমিকা কী হবে এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে জেন্ডার বা লিঙ্গ !
আজকের পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান এই রুপান্তরকামী মানুষের জন্ম সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আধুনিক সমাজ যতোটা তাদের এই প্রাকৃতিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে স্বীকৃত দেয়ার চেষ্টা করছে, সেই প্রয়াসের প্রায় শতকরা নিরানব্বই ভাগ অসফল করে দিচ্ছে আমাদের সামাজিক নিজস্ব কিছু বদ্ধ ভুল ধারণা ও সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্মবিকার !
একটি শিশু স্বাভাবিক জন্মগ্রহনের পর যখন স্বাভাবিক নিয়মে কৈশোরে এসে তার শরীরের সাথে মনের এই অমিল বুঝতে পারে, তখন কি ভয়ংকর এক মানষিক অবসাদ হতে পারে, সেটা ভাবা তো আমাদের দূর কি বাত, তার বদলে আমরা তাদের সমকামী, বহুগামী, মানষিক ভারসাম্যহীন সহ বিভিন্ন মনগড়া নামে আখ্যায়িত করে এক বিচিত্র অসামাজিক প্রাণের পরিচয় দিয়ে বসি !
ইতিহাসের পাতায়, সৃষ্টির মূল ধারায় যতোটা না মানুষের বাহ্যরূপের কথা প্রকাশ পেয়েছে, তার চাইতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে মানুষের মননশীলতার রুপ জয়..!
যখন একজন কিশোরের বুকের ভেতর জলের ঢেউয়ের মতো নারীত্ব জেগে ওঠে, এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও আমরা কিনা তার ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা করে বারংবার সেই মানুষগুলোকে ঠেলে দিই বিবর্তনের ভুল সৃষ্টির কাতারে.....?????
সভ্যতা মানুষের মুক্তচিন্তায় শেকল পড়িয়ে প্রকৃতিকে অস্বীকার করতে চায়, তবে সেই সভ্যতা বুকে নতুন মনুষ্যত্ব এর জোয়ার উঠুক....!
জয় হোক সুন্দরের,জয় হোক মনুষ্যত্বের...!