Sougat Rana Kabiyal

Children Stories

0  

Sougat Rana Kabiyal

Children Stories

ছোট্ট মনির গল্প

ছোট্ট মনির গল্প

3 mins
852


আজ তোমাদের একটা গল্প বলি। চিত্রকর নামে এক সবুজ গ্রামে একটা ছোট্ট ঘর থেকে রোজ একটা কিশোর মন খারাপ করে বিশাল এক বইয়ের ব্যাগ কাঁধেচাপা দিয়ে পাশের এক ফুলবাগানের ভেতর দিয়ে স্কুলে যেতো।সেই ফুলবাগানে মিষ্টি একটা পরী রোজ আসতো ফুলের মধু খেতে,আর প্রতিদিন ছেলেটাকে খেয়াল করতো। একদিন খুব ইচ্ছে হোলো জানার যে ছেলেটার কি এতো দুঃখ? সেইমতো একদিন ছেলেটার পথ আটকে পরীটা ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়ালো।পরীকে দেখে ছেলেটা ভয় পেয়ে গেলো, সুন্দর পরীটা অভয় দিয়ে বললো "ভয় পেও না বাবু, তোমার কোনো ক্ষতি করবো না আমি।শুধু জানতে চাই তোমার মনে কিসের এতো কষ্ট যে তুমি এতো মন খারাপ করে এই পথ দিয়ে রোজ হেঁটে যাও? অভয় পেয়ে ছেলেটা তার দুঃখের কথা সব খুলে বললো। সব শুনে পরীটা মিষ্টি হেসে বললো, " ও এই কথা, যাও কাল থেকে আর হবে না এমনটি তোমার সাথে"। শুনে ছেলেটা খুশি মনে বাড়ী ফিরে গেলো।পরের দিন সকালে, ঘুম থেকে উঠতেই ছেলেটার একটু অন্যরকম লাগলো নিজেকে।

প্রতিদিনকার মতো সকালের প্রার্থনা না করে ছেলেটা নোংরা হয়েই মাঠে খেলতে চলে গেলো।তাই দেখে তা বাবা মা অবাক হয়ে প্রতিদিনের মতো তাকে বকলো না।ভাবলো আজ ওর মেজাজ খারাপ আছে,তাই অযথা বকে দরকার নেই। ঠিক এমনি ভাবে ছেলেটা খেলার মাঠে অন্যদিনের মতো বন্ধুদের হাতে মার না খেয়ে নিজেই বিনা কারনে বন্ধুদের মেরে ঘরে ফিরলো,আজ বন্ধুরাও ভাবলো,ওর আজ মেজাজ চড়ে আছে,থাক ওকে আজ শুধু শুধু মেরে মার খাওয়ার দরকার নেই।বাড়ী ফিরে ছেলেটা প্রতিদিনের মতো শান্ত হয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা না করে চিৎকার করতে লাগলো,তার ভাই বোনের খাবার কেড়ে খেয়ে নিলো,তাতে তার ভাই বোনেরা ভয় পেয়ে রোজকারের মতন আর ওর খাবার কেড়ে নিলো না, মাও ভয়ে ভালো খাবারগুলো ছেলেটাকেই দিলো,আর বাকি ভাই বোনদের তাই বোঝালো যা আগে রোজ ছেলেটাকে বোঝাতো,যে ওতো পাজী তাই ওকেই ভালোটা দেই, তোমরা তো ভালো তাই তোমরা ওর মতো জেদ করবে না।এভাবেই ছেলেটা আজ সারাদিন শুধু সব খারাপ কাজ করতে লাগলো।স্কুলে যেতে বাগানের ফুল নষ্ট করেও প্রতিদিনের মতো অযথা মালীর হাতে মার খেলো না। স্কুলে গিয়ে প্রতিদিনের মতো নিজের প্রথম বেঞ্চ অন্যদের ছেড়ে দিলো না।দুস্টু ছেলেরা ওকে মারতে আসলে ও নিজেই মেরে দিলো।তাই দেখে মাস্টারমশাই ও আজ ওকে দিয়ে অযথা মাথা টেপালো না,মারলো না।উল্টো খেলার সময় যে বন্ধুরা ওকে না খেলা নিয়ে শুধু ওকে দিয়ে কাজ করাতো,তারাই আজকে ওকে ব্যাট করতে দিলো,ওর টিফিন কেড়ে নিলো না।এভাবেই গেলো ওর সারাটাদিন।স্কুল শেষে বাড়ী ফেরার সময়ে সেই মিষ্টি পরীটা দেখলো যে ছেলেটা আগের মতোই মন খারাপ করে বাগানের মাঝ দিয়ে একা একা হেঁটে যাচ্ছে।এই না দেখে পরীটা ছেলেটার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, " কি ব্যাপার আজ মন খারাপ কেনো তোমার? আজ তো কেও তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি? তুমি তো বলেছিলে যে তোমার সব ভালো কাজের পরেও সবাই তোমায় ভুল বোঝে,খারাপ ব্যবহার করে তোমার সাথে,

আজ তো তুমি ভালো কাজ না করেও সবার আদর পেয়েছো। ব্যপারটা কি বলো তো বাবু?

শুবে ছেলেটা মলিন মুখে বললো," দেখো,আমি আজ অনেক খারাপ কাজ করেছি, তাই মনে শান্তি পাচ্ছি না।খারাপ কাজ করে আমি সবার কাছে ভালো হতে চাই না,ভালো কাজের মুল্য যদি না পাই, তাও চাই না।" সব শুনে মিষ্টি পরী মিষ্টি করে হেসে বললো,"

দেখেছো বাছা, তুমি আজো ভালো নেই, কারন তুমি সত্যিই খুব ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষেরা কখনোই এই যুগে ভালো কিছু পায় না কারো কাছ থেকে, বা আশা ও করে না। তাই বলে ভালো মানুষরা অন্যদের মতো খারাপ হয়েও শান্তি পায় না।আসলে তোমার জীবনে যারা তোমার ভালো গূন গুলোকে দূর্বলতা ভাবে তারা জানেই না মনুষত্য কাকে বলে।এটা তাদের ব্যর্থতা, তোমার নয়,তাই তুমি কখনো ওদের মতো হতে যেও না,তুমি তোমার মতোই ভালো একটা মানুষ হয়ে বাঁচো। "

সব শুনে ছেলেটা এবার হাসলো,ভাবলো সত্যিই তো তাই।তখন সেই মিষ্টি পরীকে ধন্যবাদ দিয়ে ছেলেটা বাড়ী ফিরে গেলো।মানুষের খারাপ ব্যবহার নিয়ে আর কখনোই মন খারাপ করতো না। 

আমার গল্পটি ফুরালো,

নটে গাছটি মূরালো ।।


Rate this content
Log in