Sampa Maji

Inspirational Others

3  

Sampa Maji

Inspirational Others

মিল মেলা

মিল মেলা

5 mins
340



 আজ আমি আন্তর্জাতিক বই মেলায় এসেছি।কলকাতা বই মেলা ,এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। ছোট থেকেই শুনে আসছি এই বই মেলার কথা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মেলায় । ভাবছেন এটা আবার কোনো স্বপ্ন হল ,এতো প্রতি বছর হয় আর সহজেই আসা যায় , এখানে আসার কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না। কিন্তু আমার কাছে কেন এটা স্বপ্ন জানেন , আজ আমি আমার মাকে নিয়ে বই মেলায় এসেছি । আমার মা সব দিন বই পড়তে খুব ভালো বাসে কিন্তু তেমন হাতে কাছে বই পায় না সাথে সময় ও । মা বিয়ের আগে বাংলা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ায় কলেজে পড়া বন্ধ হয়ে যায় সাথে সাথে সব ইচ্ছে চাপা পরে যায় সংসারের চাপে। মধ্যবিত্ত ঘরের বউ এর বই এর প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তা ভূলে যেতে হয় , আমার মায়ের ও তাই অবস্থা। বাবা সামান্য কেরানীর চাকরী করে তাই তার ইচ্ছে থাকলেও মাকে বই উপহার দেওয়া মতো ক্ষমতা নেই । ছোট থেকে দেখেছি মাকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকের গল্প বারবার পড়তে , আমাদের থেকে মা বেশি বার পড়েছে আমাদের স্কুলের বই, বিশেষ করে বাংলা বই। মায়ের গল্পের বই পড়ার ইচ্ছে দেখে আমিও  গল্প পড়তে ভালোবাসি , আমি ছোট থেকেই ঠিক করেছিলাম মাকে একদিন আন্তর্জাতিক বই মেলায় নিয়ে যাবো পছন্দ মতো বই কিনে দেব। দোকানের অর্ডার দিলে হয়তো সব বই পাওয়া যেতে পারে কিন্তু এক সাথে এতো বই , এটা মেলা ছাড়া দেখতে পাওয়া যায় না। যদিও এর আগে কোনদিন এই মেলায় আসিনি তবে ছোট বেলায় একবার চুটকির কাছে শুনছিলাম বই মেলার গল্প ,ওর মা বই পড়তে ভালো বাসে। আমার আমে বই পড়তে দিত। চুটকিরা আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতো , একদিন ওর কাছেই শুনেছিলাম , চুটকি ওর মা বাবার সাথে এসেছিল বই মেলা অনেক বই ও কিনে নিয়ে গিয়ে ছিল , আমাকে একটা বই উপহার দিয়ে ছিল ,সেটা আমার কাছে এখনো আছে আমরা ভালো লাগা গল্প 'পথের পাঁচালী'। বইটা আমি স্মৃতি হিসেবে গুছিয়ে রেখে দিয়েছি কারন চুটকির সাথে আর কোনো দিন দেখা হয়তো হবে না কিন্তু ওর সাথে কাটানো সময় গুলো মনে থেকে যাবে। ছোটোবেলায় স্মৃতি আমার খুব ভালো লাগে । ওরা তখন এখানে নতুন তাই ওর কোনো বন্ধু ছিল না আমিই ওর একমাত্র খেলার সঙ্গী ছিলাম সব সময় ও সাথে খেলতাম ,ওর মা আমায় খুব ভালোবাসত । জানিনা চুটকি ,মানে তিথির মা এখনো বই পড়তে ভালো বাসে কি না , যদি ভালো বাসে তবে বই মেলায় আসতেও পারে । ওর বাবার বদলির চাকরি ,আমি তখন ক্লাস সেভেন পড়ি তখন ওরা কলকাতায় চলে আসে , তার পর থেকে আর ওদের সাথে দেখা হয়নি ,ওরাও আর কোনো দিন দেখা করতে আসেনি । জানি না এখন ওরা কোথায় থাকে, ওর বাবা যাওয়ার সময় একটা ফোন নাম্বার দিয়ে ছিল তবে সেটায় ফোন করলে এখন অন্য জায়গায় লাগে , মনে হয় নাম্বার বদলে দিয়েছে।তবে এখনোও আমার মতো আমার মাও ওদের কে খুব মিস করে ।


এতো বই একসাথে দেখে আমার মায়ের উচ্ছাস দেখার মতো । কোনটা নেবে না কোন টা না নেবে ঠিক করতে পারছে না , নেয়ার ইচ্ছে তো অনেক কিন্তু দাম দেখে পিছিয়ে যাচ্ছে । আমি বললাম, তোমার প্রিয় লেখকদের বই গুলো নাও না , আমিও তো পড়বো ।  গোটা মেলা ঘুরে ঘুরে দেখলাম মাকে , মেলায় স্টলে দু-চার জন নতুন লেখকে- লেখিকাদের দেখালাম ,মা হয়তো তাদের নাম ও জানে না , কিন্তু ওনাদের কে দেখে আমার মায়ের কি খুশি কাছ থেকে লেখককে দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না , যদিও আমার ও এই প্রথম, আমিও খুশি। আমি আর মা মিলে বার - চৌদ্দটা বই কিনলাম ।এবার বাড়ি যেতে হবে না হলে শেষ ট্রেন টা মিস হবে , তাই মাকে তাড়া দিলাম বাড়ি যাওয়ার জন্য কিন্তু মা 

 -আর একটু ,এখনো দুটো দোকান রয়ে গেল চল না দেখে আসি ,আর কোনো দিন হয়তোয় আসতে পারবো কিনা। 

-অতো ভাবছো কেন এবার থেকে প্রতি বছর তোমাকে নিয়ে আসবো , বেশি জামা কাপড় না কিনে বই কেনার জন্য টাকা জমিয়ে রাখবে ,এবার চলো না হলে বাড়ি যেতে পারবো না।


আমার তাড়া হুড়ো করে মেলা থেকে বেড়িয়ে আসছি এমন সময় সামনে থেকে একটা মেয়ে ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে -আন্টি আমাকে চিনতে পারছো , আমি তিথি , তোমাদের চুটকি।মা প্রথমে থতমত খেয়ে যায় , আসলে এই ভাবে হঠাৎ কেউ এই কলকাতা শহরে তাকে আন্টি বলে জড়িয়ে ধরবে ভাবতে পারছে না। মায়ের মতো আমিও প্রথমে চিনতে পারলাম না কিন্তু পেছনে একজন কে দেখে আর বুঝতে বাকি রইল না,এই সেই তিথি। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে বদলালনা ছোট বেলার মতো প্রান উল্লাস রয়ে গেল । আমাকে ঠিক চিনতে পারল না সেই ছোট বেলায় দেখেছিল এখন কতো বড় হয়ে গিয়েছি মুখ মন্ডল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মা আমার দেখিয়ে বলতেই ,তিথি বলে , আমি কিন্তু প্রথমে চিনতে না পারলেও নাকটা দেখে বুঝতে পেরেছি এটা তুই হতে পারিস।মা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না , এতো বছর পরে আবার চুটকিদের সাথে দেখা হবে আর চুটকি দেখেই চিনে ফিলবে ,এখনো মনে রেখেছে তার সেই আন্টিকে । মায়ের মতো কাকিমাও মাকে এতোদিন পরে দেখে কি খুশি ,যেন হারানো সঙ্গিকে মেলায় আবার খুঁজে পেয়েছে, জড়িয়ে ধরে হাসছে। 'ঠিক যেন আরন্যক গল্পের মতো , মেলায় বাপের বাড়ি কারো সাথে দেখা হলে জড়িয়ে ধরে না কাঁদলে ঠিক ঠাক হবে না'।দুই বান্ধবীর কতোদিনের জমানো কথা  , মেলায় দাঁড়িয়ে দুজনে গল্প জুড়ে দিয়েছে । কাকিমা ভুলেই গেছে যে সে কেন এসেছে ।


 আমি তাড়া দিতে লাগলাম মাকে বাড়ি যাওয়া জন্য , এখন না বেরতে পারলে ট্রেন টা ধরতে পারবো না । আমি তাড়া দিচ্ছি দেখে কাকিমা ধমক দিয়ে বলে, তুই খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না রে ,আগেতো এমন ছিলি না ,আমরা কথা বললে ধারে কাছে আসতিস না , এখন তবে আমাদের বিরক্ত করছিস কেন।

-না মানে আমাদের কে বাড়ি ফিরতে হবে তাই ট্রেন টা মিস করলে অসুবিধা হয়ে যাবে।

- কে বলেছে বাড়ি ফিরতে, তুই ভাবলি কি করে তোদের কে এতোদিন পরে ফিরে পেয়ে এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেব।

- বাবা বাড়িতে আছে।

- তাকেও চলে আসতে বল।

- তা কি করে সম্ভব হবে,এখন বেরলে আসতে পারবে না।

- তাহলে ফোন করে বলে দে আজকে তোরা বাড়ি যেতে পারছিস না আমাদের বাড়িতে থাকবি ।কালকে বিকালে বাড়ি যাবি , যেন একটু কষ্ট করে রয়ে যায় । যদি কিছু বলে আমাকে ফোন টা ধরিয়ে দিবি।

কাকিমা গল্প জুড়ে দিয়েছে দেখে তিথি বলে, মা তোমরা বাড়িতে গিয়ে গল্প করবে ,চল না এখন একটু বই মেলা ঘুরে দেখি কিছু বই কেনা কাটা করি ,আন্টিতো থাকবে তুমি না হয় সারারাত জেগে গল্প কোরো।

- আমরাতো এই মাত্র ঘুরে এলাম ,আর গিয়ে কি করবো।

- দুবার গেলে কেউ কিছু বলবে না , প্রথম বার নিজের জন্য বই কিনেছো,এবার না হয় আমাদের জন্য বই বেছে দেবে , কোনো অসুবিধা আছে ।

- না ।

- তাহলে চল।

আমার মা কিছুতেই আসতে চাইছিল না মেলা থেকে তাই আমার যদি যাওয়ার কথা বলা হয় সে তো খুশি হবেই । 


আমিও ওদের পিছন পিছন মেলায় ঘুরতে থাকলাম। সত্যি মেলায় কতো লোক জনের সাথেই না দেখা হয় । যাদের সাথে কোনো দিন আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তাদের ও সাথে দেখা হয়ে যায় ।এই জন্যই এর নাম মেলা না মিলন ক্ষেত্র। পুরানো দিনের এই মেলাই ছিল একমাত্র মিল ক্ষেত্র , বছরে একবার মেলায় সবার সাথে দেখাও হবে আবার অনেক কিছু কেনাও হবে । এখন ফোনে যুগে আগে থেকেই কথা হয়ে থাকে ,তবে কিছু কিছু মানুষের সাথে Coincidentally দেখা হবে যায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational