মধ্যবিত্ত
মধ্যবিত্ত
আকাশে কখনো রোদ কখনো আবার বৃষ্টি তবে এই সবের মাঝে রয়েছে কিছু বিধাতার সৃষ্টি। বুদ্ধদের পরিবারে চার জন সদস্য বুদ্ধ তাঁর বাবা মা আর একটা ছোটো বোন। বুদ্ধের বোন বুদ্ধের থেকে মাএ দুবছরের ছোটো।বুদ্ধের বাবা ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।তাঁর বাবার ইনকামের উপর নির্ভর করত তাঁদের পারিবারিক অবস্থা। বুদ্ধ ছোটো থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্ৰহী ছিল। তাঁর ইচ্ছা ছিল স্কুলের শিক্ষক হওয়ার।একথা সে তাঁর বাবাকে জানিয়েছিল।তখন তাঁর বাবা তাঁকে কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করবেন। সে পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতেও বেশ ভালোবাসতো। তাঁর বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না তবুও তিনি তাঁদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ করতে কোনো আপোস করতেন না।ছেলের স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করতেন।
আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার সও্বেও তাঁর বাবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য, পোশাক পরিচ্ছদ,ঔষধপত্র এছাড়াও অন্যান্য যাবতীয় খরচের ক্ষেত্রে কোনো কিছু কম রাখেনি। বুদ্ধ তখন ছোটো সে এইসবের কিছু জানত না। তখন তাঁর বয়স মাএ বারো বছর তাই তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার সম্পর্কে কোনো ধারনা ছিল না। তাঁর মনে একটা আকাঙক্ষা ছিল সে স্কুলের শিক্ষক হবে।এরপর সে দেখতে দেখতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফেলল। মাধ্যমিকে সে ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছিল। তখনও তাঁর মনে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থেকে গিয়েছিল। তাই সে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। এদিকে বুদ্ধদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ার জন্য বুদ্ধের মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।সে চেয়েছিল উচ্চমাধ্যমিকে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করবে তাই সে ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলো।সে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার ব্যাপারটা কখনই মন থেকে মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না হওয়ার কারণে তাঁর মনের মধ্যে জন্মানো শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিলো।কারণ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার উপর নির্ভর করেছিলো তাঁর ভবিষ্যৎ। সে এবার কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়।গত লকডাউনের কারণে বুদ্ধদের পরিবারে আর্থিক অনটন শুরু হয়ে গিয়েছিলো।তাই তাঁর কলেজে পড়াশোনার জন্য যা খরচ তা তাঁর বাবার একার পক্ষে আয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সে ঠিক করে ফেলেছিলো সে অর্থ ইনকাম করবে এবং তার পাশাপাশি পড়াশোনা করবে। বুদ্ধদেব তখন যথেষ্ট বড়ো হয়ে গিয়েছিলো তাঁর কোনো কিছু বোঝার মতো স্বাভাবিক জ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে বুদ্ধের বাবা অসুস্থ হলে পড়লে তাঁকে সংসারের দায়িত্ব ভার নিতে হয়েছিলো।সে একাই তাঁর বাবা মা এবং বোনের ভবিষ্যৎ তাঁর কাঁধে তুলে নিয়ে ছিল।বুদ্ধ সংসার এবং পড়াশোনা দুটোকেই সামাল দিয়ে যাচ্ছিল।ইনকামের জন্য তাঁকে যথেষ্ট খাটা খাটনি করতে হত,তাই তাঁর পড়াশোনার প্রতি আগ্ৰহ আস্তে আস্তে চলে গিয়েছিল।সে অর্থকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল।নাহলে তাঁর বাবা মা এবং বোনদের কে দেখবে ? একদিন সে হঠাৎ টাকা ইনকামের জন্য পড়াশোনা সম্পূর্ণ ছেড়ে ফেলল। এবার সে তাঁর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে ভেঙে দিয়ে যেন এক পাকা সংসারি ছেলে হয়ে উঠল।
