Partha Pratim Guha Neogy

Romance

3.3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

মধুর ভালোবাসা

মধুর ভালোবাসা

6 mins
767


প্রতিটা মানুষ জীবনে একবার হলেও কাউকে না কাউকে ভালবাসে। আর প্রথম প্রেম সেটা তো মৃত্যু্র আগে পর্যন্ত মনে থেকে যায়। চাইলেও ভোলা যায়না সেই মানুষটিকে যার জন্য জীবনে প্রথম বার নিজের চেয়েও অন্যের প্রতি অসীম ভালোবাসা জন্মায়।


সময়টা ছিল শীতকাল, মানে বোঝাই যাচ্ছে যে রোদের দাম কত বেশি। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের কলেজের গেটের সামনের বসার জায়গাটায় জমিয়ে রোদের মজা নিচ্ছি, চলছে নানান গল্প গুজব, তবে সবার চোখ কিন্তু কলেজের গেটের সামনে। মানে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, উঠতি বয়সে একটু ফুর্তি করার ইচ্ছা আরকি? 


হঠাৎ চোখে পড়ল হালকা নিল রঙের সোয়েটার, কালো কুচকুচে কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল রূপী কোনো এক মহামানবী এগিয়ে আসছে। সূর্যের আলোর কিরনের সাথে তার কপালের কালো টিপ আর ঠোঁটের লিপস্টিক, যেন একসাথে মিশে গেছে। যখন মেয়েটি আমাদের আরও কাছে এল, ততক্ষণে আমার ঘোর কেটে গেছে। 


আরে এই মেয়েটাতো প্রিয়া । আমি প্রিয়ার রুপে আগাগোড়া মুগ্ধ। তবে আমি কিন্তু প্রিয়াকে বেশ কয়েকবার আমার ভালোলাগার কথা জানিয়েছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। প্রিয়া না’ও বলেনি আবার হাঁ ও বলেনি, শুধু হেসেছিল। আর এই জন্যই আমার বন্ধুরা আমাকে বলে প্রিয়াও তোকে ভালোবাসে, তুই প্রপোজ কর ওকে। 


প্রিয়া আমাদের কাছে আসতেই, আমার বন্ধুরা আমার কানে বলতে শুরু করে দিল- দেখ তোর dream girl আসছে, কিছু একটা কর। হুম, আমিও আমার মন ঠিক করে নিলাম যে, আজকে প্রিয়ার কাছ থেকে উত্তর নেবই। দেখতে দেখতে প্রিয়া আমাদের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেল। 


দুটো ক্লাসের পর আমাদের ৩০ মিনিটের ব্রেক, তখন আমি ঠিক করলাম এবার প্রিয়াকে আমার মনের কথা বলবই। আমি তার কাছে গিয়ে মনের সমস্ত সাহস এক করে বলেই ফেললাম- “প্রিয়া , আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।“ প্রিয়া বলল- “হ্যাঁ অবশ্যই,বলো না বলো।” আমি নিজেকে সামলে নিয়ে আমার কথা তাকে বলতেই যাব, এমন সময় প্রিয়াই বলে উঠল-“তুমি তো অনেক কিছুই বলেছ, তাই আজকে আমি বলব আর তুমি শুনবে।” 


এই কথাটি শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আমার হৃদয় কম্পন অনেক বেড়ে যাচ্ছে, আমার মনে হল এই শীতের দিনেও আমি ঘেমে যাচ্ছি। কিন্তু এরপর সে যা বলল সেই কথা শুনে আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এত বার বলার পড়েও যে মেয়ে কোনো সাড়া দেয়নি, সেই মেয়েই আমাকে আমার কথার উত্তর আজ নিজেই দিচ্ছে, কি আনন্দই না হচ্ছিল। হ্যাঁ প্রিয়া আমার কথা রেখেছে। 


কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা গোটা কলেজে লায়লা-মজনুর মত বিখ্যাত হয়ে গেলাম। আমার বন্ধুরা সবাই স্নেহাকে বৌদি বলে ডাকা শুরু করে দেয়। এরপর আমরা দুইজনে মিলে আশে পাশের বেশ কিছু জায়গায় ঘুরতে যাই। নতুন প্রেমের ভেলাতে ভেসে আমরা তখন ভালোবাসার মাঝদরিয়ার সৌন্দর্য উপলব্ধি করছি। সপ্তাহে রবিবার-তো একদম হাতে ধরাই ছিল, প্রতি রবিবার কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়াটা আমাদের নেশাতে পরিণত হয়েছিল। 


আমাদের আশেপাশের লোকেদের নজর সবসময় আমাদের উপরে । কিন্তু দেখতে দেখতে সেই খুশির দিন হারিয়ে যেতে চলল, আমাদের কলেজ জীবনের শেষ দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা। এই সময় আমাদের পেয়ে বসে একেঅপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়, একে অপরের সাথে সময় না কাটানোর ভয়। আমরা যে আজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি করেছিলাম সেটি প্রায় ধ্বংস হতে চলল। এখন বুঝলাম, পৃথিবীর সবথেকে বড় ভয় হল প্রিয়জনকে হারানোর ভয়। 


কি জানি এরপর কে কোথায় যাবে, আমি কোথায় যাব। কয়েকদিন আর কিছুই ভালো লাগছিল না। মোবাইলের ওয়ালপেপারে লাগানো আমার ও তার ছবি দেখে মনটা আরও বেশি ভেঙ্গে যাচ্ছে যেন, মনের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। দেখতে দেখতে কলেজ জীবন শেষ হয়ে গেল, অনেক প্রতীক্ষার পড় যাকে কাছে পেয়েছি, তার থেকে এভাবে দূরে সরে যাওয়ার কষ্টটা চেপে রেখে, তার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ঝাপসা হতে থাকে, ধীরে ধীরে। 


আমি মা-বাবার বড় সন্তান, তাই দায়িত্বটাও আমার একটু বেশি, আমার বাড়ি থেকে আমাকে বলে দিয়েছে যে- “এবার কিছু একটা কর বাবা” এই কাতর আবেদনটা সোজাসুজি বুকে এসে লেগেছিল আমার। সে যাই হোক, আমি একটি ভালো বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পেলাম। তবে আমি প্রিয়াকে যে, ভুলে গেছি তা নয়, এখনও মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়লে, প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে, কেঁপে উঠে বুকটা, কোনো এক অজানা কারণে, আবার সেই হৃদ - স্পন্দন বেড়ে যায়, ঠিক যেমনটি, আগে প্রিয়াকে দেখলে হত। মাঝে মাঝে মনে হয় এত দিনে প্রিয়াও হয়ত আমাকে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে হয়ত আমাদের সেই মধুর স্মৃতি গুলি। 


কিন্তু তখনই আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে, আমি তো তাকে ভুলতে পারিনি, সে কি করে আমাকে ভুলতে পারে ? এই কথাটিই ভেবে নিজের মনকে শান্ত করতাম যে, সে একদিন আবার আমার কাছে ফিরে আসবে, আবার আমরা আগের মত, ঘুরব-ফিরব একসাথে বাদাম খাব, একসাথে বসে পুকুরের মাছগুলিকে খাবার ছুঁড়ে দিব, একসাথে লং ড্রাইভে যাব। এটা আমার একটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিশ্বাস, যেটা আমি কারো সাথে ভাগ করে নেই নি। 


ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গেলাম সেই কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে, সত্যি বলতে কি এই সব চাকরির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই, কিন্তু কি আর করা যায়, এখন এটা প্রয়োজন তাছাড়া পরিবার যখন বলছে। কি জানি কেন, আজ প্রিয়ার কথা খুবই মনে পড়ছে। ইন্টারভিউ এর লাইনে দাঁড়িয়েও প্রিয়ার চিন্তা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আশে পাশের এত মানুষের ভিড়েও কেমন যেন একাকীত্ব আমাকে তাড়া করছে। আ

সলে হয়ত মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এই ইন্টারভিউ দিতে এসেছি তাই এ সব মনে হচ্ছে। 


কিছুক্ষণ পর আমার দিবাস্বপ্নকে ভেঙ্গে দিয়ে অফিসের রুম থেকে একজন বেড়িয়ে এসে আমাকে বললেন- “আপনাকে ভিতরে ডাকা হচ্ছে” 


আমি ভিতরে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি, একজন স্বাস্থ্যবান লোক চেয়ারে বসে আছেন, সামনের টেবিলে অনেক কাগজ পত্র পড়ে আছে। 


সেই ব্যক্তিটি আমাকে বসার জন্য বললেন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর আরও অনেক প্রশ্ন করলেন, আমি তার সব প্রশ্নের উত্তর খুবই কনফিডেন্সের সাথে দিয়েছিলাম। এরপর তিনি কিছু আজব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, যেমন- তোমার বাবা কি করেন? বাড়িতে কে কে আছে? যদিও এই সব প্রশ্ন গুলি শুনে আমি ইতস্তত না হয়ে ঠিক ঠিক বলে দিয়েছিলাম। 


তার পরের প্রশ্নটি আমাকে রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-“ তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?” ইন্টারভিউতে এরকম প্রশ্ন কে করে ভাই? তার প্রশ্ন শুনে আবার প্রিয়ার কথা মনে পড়ে গেল। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। 


এরপর লোকটি বলল- “তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।” এরপর তিনি কলিং বেল বাজিয়ে একজন লোককে ডাকলেন এবং সেই লোকটিকে বললেন-“ এনাকে নীচে ম্যামের টেবিলে নিয়ে যাও।” আমি সেই কর্মচারীর সাথে সেই ম্যামের টেবিলে গেলাম। ম্যাম কি যেন কাজ করছেন, আমার দিকে না ঘুরেই বললেন- "স্যার আপনার কত স্যালারি লাগবে?" ম্যামের আওয়াজ শুনেই আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। এই আওয়াজটা কেমন যেন, আমার চেনা চেনা লাগছে, এরপর সেই ম্যাম আমার দিকে ঘুরতেই আমার সমগ্র শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। 


আরে এ যে আমার স্বপ্নের রাণী, এ যে প্রিয়া । আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম-“প্রিয়া,তুমি?” প্রিয়া বলল- “কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে ভুলে যাব? উঁহু না স্যার না এমনটা কি হয়?” তার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসার জোগাড় শুরু হয়ে গেছে, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলাম। প্রিয়া আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। এতগুলি মানুষের সামনে একজন মেয়ে যদি এভাবে জড়িয়ে ধরে, তাও আবার আমি এখানে নতুন, কেমন লজ্জাটাই না লাগে বলুন। মুহূর্তের মধ্যে আমি যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম। যেন মনে হচ্ছিল একজন সর্বস্বান্ত ব্যক্তি তার হারানো দুর্লভ জিনিসটি খুঁজে পেয়েছে। 


এরপর প্রিয়া আমাকে বলল-“এই অফিসটি আমার বাবার, বাবাকে আমিই রাজী করিয়েছিলাম। তাই বাবাকে বলেই তোমাকে এখানে এনেছি। এটা আমার তরফ থেকে সারপ্রাইজ। আর বাবাও তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।"

এরপর যা হওয়ার তাই হল- happy ending. আমাদের পরিবারের সম্মতেই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। সারাজীবন পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি আমরা একে অন্যকে দিয়েছিলাম , শেষ পর্যন্ত সেটাই পূর্ণ হল। আজ আমরা দুইজনে একসাথে আছি। একদম কাছাকাছি, একদম পাশাপাশি।

আমার ভালোবাসা এখন আমার কাছে, এই বিশ্বের অপরূপ সৌন্দর্যে নয়, প্রিয়ার সৌন্দর্যেই যে আমি মুগ্ধ। ভগবান প্রত্যেককে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিক, এটাই কামনা করি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance