Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Inspirational Others

মানবিক নারী

মানবিক নারী

8 mins
222


বর্তমান সময় থেকে বেশ কয়েক দশক আগে - ‘নারীদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই’ টেলকো’র চাকরির বিজ্ঞাপনের নীচে লেখা ছিল এই কথামালা। দেখে প্রচন্ড রাগ চড়ে গেল সুধা কুলকার্নির। ঠিক করলেন, এই চাকরিই করতে হবে। আবেদন তো করলেনই। সেইসঙ্গে স্বয়ং চিঠি লিখলেন জে আর ডি টাটাকে। জানতে চাইলেন, এই লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ কী? নিরাশ হতে হলো না সুধাকে। উত্তরও এলো। ‘বিশেষ ইন্টারভিউ’র বন্দোবস্ত করা হলো সুধার জন্য। চাকরির জন্য মনোনীত হলেন তিনি। ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যোগ দিলেন ‘টেলকো’তে। তিনিই আজকের সুধা মূর্তি।


উপরের ঐ ঘটনার বেশ কয়েক বছর পরে ট্রেনে করে ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছিলেন-


 'টিকিট প্লিজ' বলে টিটিই আমার কাছে এসে দাঁড়ালে আমি একটু অবাকই হলাম। বললাম- 'এইমাত্র টিকিট দেখালাম যে!' টিটিই বলল- 'আপনার নয়, আপনার সিটের নিচে আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছি যে।'


'বেরিয়ে এসো'- বলতেই দেখি একটা বছর ১৩-১৪ বছরের মেয়ে অস্বাভাবিক কান্নাকাটি করছে। টিকিট তো নেই-ই। তার উপর শীর্ণ, অভুক্ত, মলিন একটা মুখ। টিটিই বলল- 'ভাগো ইঁহা সে।' আমি জিজ্ঞেস করলাম- 'কোথায় নামবে তুমি?'


কোনো উত্তর নেই, শুধু কান্নাকাটি। বাধ্য হয়ে টিটিকে বললাম- 'ওর ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি, একদম শেষ স্টেশন ব্যাঙ্গালোর অবধি টিকিট দিন।' টিটি বলল- কেন ফালতু এতগুলো টাকা নষ্ট করবেন ম্যাডাম?' তবুও কী ভেবে বললাম- 'না, আপনি টিকিটই দিয়ে দিন। মেয়েটি শুধুই কাঁদছে। শেষ অবধি কাটা থাকুক। মধ্যিখানে কোথাও নেমে যাবে হয়তো।'


আমায় অবাক করে মেয়েটি কোথাওই নামল না। নাম জানলাম চিত্রা। নিজের বাবা-মা কেউই নেই দুনিয়ায়। সৎমা খুব খাটায় এবং মারে। সে তাও সহ্য করে নিয়েছিল, কিন্তু খেতে দিত না যে। খিদের জ্বালায় পালিয়ে এসেছে। শুধু এটুকু ভেবেছে, ওই নরকের চেয়ে অন্তত ভালো থাকবে।


ব্যাঙ্গালোরে নামলাম। শুধু একবার পিছন ঘুরেছি, দেখি চিত্রা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টিকিট কাটার সময় একবারও ভাবিনি এই মেয়েটার দায়িত্ব নিতে হতে পারে। আমার পক্ষে এ গুরুদায়িত্ব নেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়, আমার ট্যুরে যাওয়া আছে দুদিন বাদেই। তবুও বললাম- 'এসো আমার গাড়িতে এসো।' ড্রাইভার অবাক হয়ে বারবার দেখছে।

আমার এক বন্ধু আছে রাম। সে মেয়েদের শেলটার দেয় এবং আরও সমাজসেবামূলক কাজ করে। ওর ওখানে চিত্রাকে দিই। আর বলি, আমাদের ইনফোসিস ফাউন্ডেশন ওর সব দায়িত্ব নেবে। থাকতে চাইলে থাকবে, নয়তো আবার পালাবে মেয়েটা।


ভুলেই গিয়েছিলাম ওর কথা। হঠাৎ মনে পড়তে দেখতে গেলাম। কি হাসিখুশি হয়েছে এখন চিত্রা আর পড়াশোনায় ভারী আগ্রহ। ও স্কুলে আবার ভর্তি হতে চায়। এভাবে চলতে লাগল।


ওকে একদিন গিয়ে বলেও এলাম, তুমি যতদূর পড়তে চাও পড়তে পারো। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। আমায় অবাক করে বলল, 'না আকা (দিদি), আমি তাড়াতাড়ি একটা চাকরি পেতে চাই। তাই কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপেস্নামা করব।'

তারপর প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ওর কথা। হঠাৎ একদিন বিদেশ থেকে ইমেল পেলাম চিত্রার। ও বিদেশে চাকরিতে খুব উন্নতি করেছে আর এখন খুব হাসিখুশি সুন্দর জীবন ওর। মেইল পড়ে ভগবানকে বললাম, ওর মুখের হাসি যেন এমনিই থাকে।


এবারে সানফ্রান্সিসকোতে একটা লেকচার দিতে গিয়েছি। যখন হোটেল থেকে চেক আউট করব, গিয়ে দেখি রিসেপশনিস্ট বলছে, 'ম্যাম, আপনার সমস্ত বিল ফুললি পেইড। ওই লেডি নিশ্চয়ই আপনাকে খুব ভালো করে চেনে।'


খুব অবাক হয়ে চারদিকে দেখলাম, দেখি একজন ভদ্রমহিলা সুন্দর একটা শাড়ি পরা, একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। পাশে ফরেনার বর। কি সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে ছোট ছোট চুলে। সেই চিত্রা। এসে আমায় জড়িয়ে ধরল।


'চিত্রা তুমি আমার সমস্ত বিল কেন পে করবে?'


আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল- 'কারণ তুমি একদিন আমার সমস্ত বিল পে করেছিলে। আমার সমস্ত জীবনটাই যে ওই পেমেন্টের ওপর দাঁড়িয়ে। সেই বম্বে টু ব্যাঙ্গালোর।'

ঘটনাটি ইনফোসিসের কো-ফাউন্ডার সুধা মূর্তি তার ব্লগে লিখেছিলেন।

 

সুধা মূর্তি একজন ভারতীয় প্রকৌশল শিক্ষক এবং কন্নড় ও ইংরেজিতে ভারতীয় বিখ্যাত লেখক।


কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসাবে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং গেটস ফাউন্ডেশনের জনস্বাস্থ্য সেবা উদ্যোগের সদস্য। তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে বেশ কয়েকটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন, কর্ণাটকের সমস্ত সরকারি স্কুলে কম্পিউটার ও লাইব্রেরির সুবিধা প্রদানের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ভারতের মূর্তি শাস্ত্রীয় গ্রন্থাগারের' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কর্ণাটকের সকল স্কুলের কম্পিউটার ও লাইব্রেরী সুবিধা চালু করার জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞান শিখিয়ে মুর্তি একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে ব্যাঙ্গালোরের রোটারি ক্লাব থেকে তিনি "সেরা শিক্ষক পুরস্কার" পান। মূর্তি তার সামাজিক কাজ এবং কন্নড় ও ইংরেজিতে সাহিত্যে তার অবদানের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার 'ডলার বহু' একটি বিখ্যাত উপন্যাস; ২০০১ সালে জী টিভিতে এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে, একটি টেলিভিশন সিরিজ প্রদর্শিত হয়েছিল। মূর্তি মারাঠি চলচ্চিত্র পিতৃঋণ এবং কন্নড চলচ্চিত্র প্রার্থনা-তে অভিনয়ও করেছেন।


সুধা মূর্তি ১৯৫০ সালের ১৯শে আগস্ট কর্ণাটকের শিগগাঁওতে একটি মাধওয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন সার্জন ডা। আর এইচ। কুলকার্নি এবং তার মা বিমলা কুলকার্নি। তিনি এবং তার ভাইবোনেরা তার বাবা-মা এবং দাদু-দিদিমার কাছে বড় হয়েছিলেন।। এই শৈশব অভিজ্ঞতাগুলি তার প্রথম সাহিত্য কীর্তি "হাউ আই টট মাই গ্রান্ডমাদার টু রীড আন্ড আদার স্টোরিস"-এ উঠে এসেছে। মূর্তি বি ভি বি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বর্তমানে কেএল ই টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত) থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং-এ ক্লাসে প্রথম হয়ে, বি ই সম্পন্ন করেন এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।মূর্তি ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন এবং ইনস্টিটিউট অফ এঞ্জিনিয়ার্স থেকে স্বর্ণ পদক লাভ করেন।


ভারতের বৃহত্তম অটোমোবাইল কারখানা, টাটা প্রকৌশল ও লোকোমোটিভ কোম্পানি (টেলকো) -এ নিয়োগকৃত প্রথম মহিলা কর্মী ছিলেন সুধা মুর্তি।টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চারী কোম্পানি (TELCO)। তিনি পুণেতে একজন ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কোম্পানির সাথে যোগ দেন এবং তারপর মুম্বাই ও জামশেদপুরেও কাজ করেন। টেলকোতে "শুধুমাত্র পুরুষদের"- এই শর্তের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানকে একটি পোস্টকার্ডে চিঠি লিখেছিলেন।ফলস্বরূপ, তাকে একটি বিশেষ ইন্টারভিউ-এর সুযোগ দেওয়া হয় এবং অবিলম্বে নিয়োগ করা হয়। পরে তিনি ওয়ালচাঁদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সিস্টেম বিশ্লেষক হিসাবে যোগ দেন।


১৯৯৬ সালে তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশন শুরু করেন।সুধা মূর্তি হয়ে ওঠেন এই সংস্থার সেক্রেটারি। দুই সন্তানের মা হিসেবে সাংসারিক সমস্ত দায়িত্ব সামলে তিনি ইনফোসিসের কাজও সামলেছেন। জানা যায় মাঝেমধ্যে অফিসে এসেও রান্না করতেন সুধা। ইনফোসিস-এর ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল, সুধা তাঁর সমস্ত সঞ্চিত অর্থ এ জন্য তুলে দিয়েছিলেন নারায়ণের হাতে আর নিয়মিত অর্থের যোগান রাখতে অন্য একটি সংস্থায় কাজও করতেন তিনি। কিন্তু এত শ্রম দেওয়া সত্ত্বেও নারায়ণ মূর্তির ইচ্ছেয় তাঁকে ইনফোসিস থেকে সরে আসতে হয়। ইনফোসিসে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই যুক্ত থাকুক চাইতেন না নারায়ণ মূর্তি। নিজের স্বপ্নকে দূরে সরিয়ে স্বামীর স্বপ্নকেই বড়ো করে দেখেছিলেন সুধা মূর্তি। ইনফোসিস থেকে সরে এসে সংসারের চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেন তিনি। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না সুধার। পরবর্তীকালে ইনফোসিস সংস্থার স্বেচ্ছাসেবী শাখা ‘ইনফোসিস ফাউণ্ডেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত হন সুধা মূর্তি এবং এই সংস্থার পুরোধা হয়ে ওঠেন তিনি। এই শাখাটি তৈরি হয় ১৯৯৬ সালে। সমাজসেবার নানা দিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর স্বনির্ভরতা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে এই সংস্থা।


আজ পর্যন্ত তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এবং ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিজি সেন্টারে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন। তিনি ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি অনেক বই লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দুটি ভ্রমণকাহিনী, দুটি কারিগরি বই, ছয়টি উপন্যাস এবং তিনটি শিক্ষামূলক বই।


তিনি ২০০৬ সালে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা 'পদ্মশ্রী ' উপাধিতে ভূষিত হন।


টেলকোয় কাজ করার সময় বইপ্রেমী সুধা এক বন্ধুর থেকে বই নিতেন যার মধ্যে বেশিরভাগ বই থাকতো নারায়ণ মূর্তির লেখা। লেখকের লেখা পড়ে আগ্রহী হয়ে নারায়ণ মূর্তির সঙ্গে আলাপ করতে চান সুধা। দুজনেরই একই নেশা বই পড়া, ফলে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব জমে গেল খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। নারায়ণ মূর্তি ছিলেন বরাবর খুব সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত এবং সাদামাটা ভাবটাই তাঁর বেশি ভালো লাগতো। যখনই তাঁদের কথা হতো, কথার বিষয় হতো বই। প্রকৃতিগতভাবে বিপরীত মেরুর ছিলেন সুধা এবং নারায়ণ। একদিকে সুধা ছিলেন খুবই বহির্মুখী এবং কথা বলতে বেশি ভালোবাসতেন আর নারায়ণ ছিলেন অন্তর্মুখী এবং শান্ত। নারায়ণ মূর্তিই একদিন প্রেমের প্রস্তাব দেন সুধা মূর্তিকে। এদিকে সুধার বাবা-মা প্রথমে রাজি হননি এই সম্পর্কে। তার উপর এক সাক্ষাতে বম্বে থেকে কাজ সেরে অনেক দেরি করে সুধার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন নারায়ণ মূর্তি এবং পরবর্তীকালে একজন কমিউনিস্ট হিসেবে অনাথ আশ্রম খোলার পরিকল্পনার কথা জানালে সুধার বাবা নারায়ণকে নাকচ করে দেন। কিন্তু তিন বছর পরে তাঁদের বিবাহ হয়। নারায়ণ মূর্তি সেসময় একজন সামান্য রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করায় বেতন পেতেন সুধার থেকে কম, তাই রেস্তোরাঁয় খাবারের বিল মেটাতেন সুধাই। বিয়ে উপলক্ষে প্রথম সিল্কের শাড়ি পড়েছিলেন সুধা এবং পরবর্তীকালে জানা যায় বারাণসীতে গিয়ে প্রতি বছর একটি করে নতুন শাড়ি কেনার অভ্যাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি। এই দম্পতির দুটি সন্তান আছে অক্ষতা এবং রোহন। তার মেয়ে অক্ষতা স্ট্যানফোর্ডের সহপাঠী, এক ব্রিটিশ ভারতীয়, ঋষি সুনাককে বিয়ে করেছিলেন।ঋষি যুক্তরাজ্যের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হেজ-ফান্ডে তিনি একজন অংশীদার।


ফিল্মফেয়ার পত্রিকার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে , মিসেস মুর্তি বলেন, "আমার হোম থিয়েটারে আমার ৫০০টি ডিভিডি রয়েছে। আমি সামগ্রিকভাবে একটি ফিল্ম দেখি - তার পরিচালনা, সম্পাদনা ... সব দিক। সবাই আমাকে একজন লেখক হিসেবে, একজন সমাজকর্মী হিসেবে চেনে, কিন্তু কেউ আমাকে মুভি বাফ হিসাবে জানেন না। এ কারণে আমি ফিল্মফেয়ারের সাথে এই সাক্ষাত্কারে আনন্দিত। ফিকি লেডিস অর্গানাইজেশন (এফএলও) এর চেয়ারপার্সনের একটি প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে মুর্তি বলেন, তার স্বামী নারায়ণ মূর্তিকে ইনফোসিস শুরু করতে সহায়তা করার জন্য যখন তিনি টেলকো থেকে ইস্তফা দেন, জে.আর.ডি.টাটার থেকে প্রাপ্ত পরামর্শটি তার জীবনকে বদলে দেয়। তিনি বলেছেন, "সর্বদা মনে রাখা উচিত, যে টাকার কোন মালিক হয় না এবং এটি সবসময় হাত ঘুরতে থাকে; যদি তুমি সফল হও, তাহলে কিছু অংশ সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো, যে সমাজ তোমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।"


মুর্তি নানারকম সমাজসেবা করেন যার মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জনস্বাস্থ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি, এবং তৃণমূল পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন। 'প্রতিটি স্কুলের জন্য একটি গ্রন্থাগার' তার এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এখন পর্যন্ত ৭০,০০০টি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।তিনি ব্যাঙ্গালোর শহরে কয়েকশ টয়লেট এবং গ্রামীণ এলাকায় ১০,০০০ টি টয়লেট নির্মাণ করে গ্রামীণ এলাকায় সাহায্য করছেন। ইনফোসিস ফাউন্ডেশন 1996 সালে প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং মুর্তি ট্রাস্টিদের মধ্যে একজন।ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় 2300 টি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি তামিলনাড়ুতে এবং আন্দামানে সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ , গুজরাট কচ্ছ অঞ্চলে ভূমিকম্প , ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশের বন্যা ও হারিকেন এবং কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে খরা তেও সেবাকার্য চালিয়েছেন। ২০১১-১২ অর্থ বছরে তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য কর্ণাটক সরকার তাঁকে সম্মানিত সাহিত্য পুরস্কার, 'আতিমাববে পুরস্কার' প্রদান করেছিল।


সুধা মূর্তির লেখা ১০টি বিখ্যাত বই :

১) Gently Falls the Bakula

২) How I Taught My Grandmother to Read and Other Stories

৩) Mahashweta

৪) Dollar Bahu

৫) Three Thousand Stitches

৬) House of Cards

৭) Wise and Otherwise

৮) Here, There and Everywhere

৯) The Magic Drum and other 

   Favourite Stories   

১০)The Mother I Never কেনেও


সুধা মূর্তির স্বপ্ন, দেশের প্রত্যেক স্কুলে একটা করে সুন্দর পাঠাগার থাকবে। তাঁর সংস্থা ইতিমধ্যে ৭০ হাজার পাঠাগার তৈরি করেছে। বই কিনে পড়ার জন্য বাড়তি উৎসাহ দেন সুধা। তিনি মনে করেন, পাঠকদের বই কেনার অভ্যাস না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লেখকরা। বই পড়ার পাশাপাশি সুধার আর দু’টি পছন্দের শখ হল বেড়াতে যাওয়া আর সিনেমা দেখা। ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে‌ অন্যতম নারায়ণ মূর্তি। সাম্প্রতিক নথি অনুযায়ী, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় আড়াইশো কোটি ডলার। কিন্তু সবকিছুর পরেও মূর্তি দম্পতির বিশ্বাস সাধারণ জীবনযাপনে। বাকি শিল্পপতিদের ঘরনির মতো মহার্ঘ্য সাজপোশাক তো দূর অস্ত, গত প্রায় দু’দশকের বেশি সময় হল, সুধা মূর্তি কোনও শাড়িই কেনেননি।প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, বারাণসীতে গিয়ে সুধার মনে হয়েছিল, তাঁর প্রিয় কোনও কিছু ত্যাগ করবেন। সেইমতো, তিনি বর্জন করেন নতুন শাড়ি কেনার অভ্যাস। যশ ও খ্যাতি শীর্ষে পৌঁছেও মেধাবী সুধার জীবনদর্শন বাঁধা আটপৌরে সুরেই।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational