ক্ষুধার্ত আষাঢ়
ক্ষুধার্ত আষাঢ়


সব বৃষ্টি কি ভেজায়?
বর্ষা শুধু ভেজায় না , বর্ষা শুকায়। মন শুকায় , মুচড়ায় , স্মৃতি গলা টেপে তখন চোখ ভেজে। বর্ষা মানে স্কুল থেকে ফেরার পথে রিকশা থামিয়ে , জলে লাফিয়ে উনিফরম ভিজিয়ে নোংরা করে বাড়ি ফেরা। হ্যেচ্চো দিয়ে পেরাসিটেমলের বড়ি গেলা। মনে পরে মামাবাড়ির কথা, মাধ্যামগ্রাম স্টেশনে নামতাম, রেল লাইনের ধার বরাবর একটা নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ ছিল, যখনই ট্রেন যেত ওটা হেলেদুলে উঠত ,মনে হত পরে যাব বুঝি নিচে কচুরিপানার খালে। সেটা পেরিয়ে বৃষ্টিতে ভরা ডোবার পাস কাটিয়ে, চোরকাঁটা জামায় নিয়ে পৌঁছাতাম মামারবাড়ি যার স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল কত ভালবাসে কত কাছে টানে আমার শৈশবকে। খুব ধুম হত সেখানে ......ইলিশভাজা, খিছুরি, বেগুনি আর তার সাথে মেজমামা অর্থাৎ এই বাড়ির তারিণী খুড়োর ভূতের গল্প।সেই জোনাকি পোকার রাতগুলিতে একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়তাম জানি না। যত বড় হতে থাকলাম মামাবাড়িতে যাওয়া কমল, কিছুটা পড়াশোনার চাপে কিছুটা প্রেমের আহ্লাদে। আমিও কলেজ উনিভারসিটির গণ্ডি পেরিয়ে প্রেমের সাত পাঁকে বেঁধে সংসারী হলাম। ওদিকে রয়াল এসটেটের দালালরা মাধ্যামগ্রামের ডোবা বুঝিয়ে টাওয়ার লাগিয়ে জনাকির বংশ প্রায় ধ্বংস করে বিশাল ফ্ল্যাট তুল
ে দিল। মামাবাড়ি ভাগ হয়ে গেল। এখন আর জনাকিরা রাত জাগে না, বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ মন ভেজায় না রহস্যময় রাত ভয় দেখায় না। শৈশব হারিয়ে গেল।
ভরা বর্ষায় যেমন নদীর দুকুল প্লাবিত হয় সেই আদিমতা আমার যৌবনের মন, শরির স্পর্শ করল। আমি ঋভুর জন্মদিলাম, ২০শে আষাঢ়। যখন ওকে আমার কোলে দিল সেদিনও ছিল ঘোর বর্ষা আর আমার চোখে সুখের বর্ষা। ঋভুর প্রথম 'মা' ডাক আমার আজও কানে বাজে। সারা শরীর শিহরিত হত যখন ওর ছোট্ট হাত আমার আঙ্গুল স্পর্শ করত। স্কুলে সবাই ওকে কৃতি আর দুষ্টু ছাত্র বলে চিনত। সারাঘর আশ্চর্য সব এক্সপেরিমেন্টে ভরিয়ে রাখত। ওর সপ্নমাখা দুচোখে নীল আর্মস্ট্রং ছিল গুরু।
চুপচুপে ভিজে ঋভু বাড়ি ফিরল। কিছু বোঝার আগেই জ্বর লাফিয়ে ১০৪। আইসিউতে দুদিন ছিল। আমি আজও বুঝে উঠতে পারি নি ঋভুকে। ছানার বাটি আমার হাতেই রয়ে গেল আর ঋভু চিরকালের জন্য লুকিয়ে গেল। ভাবি ভগবান একজন সান্তান হারা মাকে কি লজিকাল রিশনিং করবেন? গোপাল ঠাকুর কয়েক ঘণ্টার জন্য যশোদা মাকে ফাঁকি দিয়েছিলেন আর ঋভু আমার ...............।কি পাথর বসাই হৃদয়ে। আষাঢ় মাস আমাকে শুখনো পাথর করে, বুকের ঘা গুলিকে গাঢ় করে নখ দিয়ে ক্ষত করে । ক্ষুধার্ত আষাঢ়।