STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

ক্ষনিকের ভালোলাগা

ক্ষনিকের ভালোলাগা

6 mins
440

সপ্তাহের মাঝামাঝি একটি কর্মব্যস্ত দিন, সকাল হবার পর থেকে কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে সকলের। কোনোমতে কিছু নাকে মুখে গুঁজে অফিসের পথে বাংলা সমাজের বৃহৎ অংশ। বাস ট্রামের লড়াই শেষ করে অফিস পৌঁছনো। 


সকাল ১১টা।অফিসে তখন সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব‍্যস্ত।

অফিসের বস তিমির চ‍্যাটার্জী, ওনার ব্যক্তিগত সহকারী মলিনাকে তলব করলেন। মলিনা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন বসের কেবিনে। 


- আমাকে ডেকেছেন স‍্যার?

ও হ্যাঁ মলি ,গতকাল তোমাকে একটা দরকারি ফাইল দিয়েছিলাম, ওটা আমার এখনি দরকার।

- ও কে স্যার,আমি আনছি। 


মলি মানে মলিনা মজুমদার, ফাইল টা এনে স্যারকে দিলো।

বললো স্যার এটা তো?

তিমির ফাইল টা খুলে দেখলো, বললো হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই। মলিনা বললো আমি তাহলে আসি স্যার ।

- না তুমি বসো আমার কিছু কথা আছে।

বলুন স্যার ,

তুমি কাল খুব ভোরে আমার সাথে যাবে?

কোথায় স্যার ?

আমি আগামীকাল নতুন প্রোজেক্ট এর ব‍্যাপারে রায়পুর যাবো।তুমিও যাবে আমার সাথে।

ইতস্তত করে মলিনা বললো, স্যার,আমি বাইরে কখনও অফিসের কাজে যাইনি এবং রাত ও কাটাই নি।বুঝতে তো পারছেন, সাধারণ পরিবারের মেয়ে,বাবা মা এগুলো পছন্দ করেন না।

তাই ক্ষমা প্রার্থনা করছি স্যার ।

তুমি কি বলছো মিস মলি, তোমার কোনো ধারণা

আছে?

তোমার কি চাকরি টা দরকার নেই?

না,না স্যার, চাকরি টা না থাকলে অসুস্থ বাবার ওষুধ,ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়া কি করে চলব, একদম মারা যাবো স্যার । 


- তাহলে এই বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট ছেড়ে, যা বলছি সেটাই করো।

কাল সকাল সাতটায় হাওড়া স্টেশন গেটে চলে আসবে। আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো।

অবনত মস্তকে মাথা নাড়িয়ে মলিনা চলে গেল

বাড়ি ফিরে এসে নিজের মনের সাথে নিজে যুদ্ধ

করলো খানিকটা।

মা বললো, মলি আজ এত চুপচাপ কেন রে, শরীর খারাপ নাকি?

না মা তোমার সাথে একটু কথা আছে। কাল আমাকে অফিসের কাজে কয়েক দিনের জন‍্য বাইরে যেতে হবে।

না গেলে চাকরি টা থাকবে না।তাই আমি কাল ভোরে বেরিয়ে যাবো।

বাবা কে তুমি সামলে নিয়ো। 


সে কি মলি সমর্থ মেয়ে বাইরে রাত কাটাবি, লোকে এ নিয়ে নানা কথা বলবে মা।

মা, লোকে আমাদের সংসার টা চালাবে না।আমার

সমস্যা আমাকেই মেটাতে হবে।তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না।আমাকে প্যাকিংটা সারতে হবে। 


পরদিন কথামত নির্দিষ্ট জায়গায় মলিনা উপস্থিত হলো। যথারীতি বস ও গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

আজ মলি একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ, আর সাথে গোলাপি রঙের ওড়না, চোখে সানগ্লাস,

হালকা পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক, অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। 


বস তিমির চ‍্যাটার্জী মলিকে দেখে বেশ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পর একটু ধাতস্থ হয়ে গাড়ি র

লক খুলে দিল।মলিনা পিছনের সিটে বসতে উদ্যত হলো।

তিমির চ‍্যাটার্জী বললো, কোন দরকার নেই, আমার

পাশের সিটে বসো আর সিটবেল্ট টা বেধে নাও। 


অগত্যা তাই করলো মলিনা , গাড়ি চলতে শুরু করলো, সুন্দর বিদেশি পারফিউম এর গন্ধ, গাড়ির

মধ্যে। একটা সুন্দর গান বাজতে শুরু করলো। 


ভীষণ ভালো লাগলো মলিনার।

দারিদ্র্যতার জীবনে এমন মনোরম জার্নি এর আগে কখনও করে নি ও ।

দুজনে ই চুপচাপ। মাঝে মাঝে শুধু তিমির ওকে

আড়ে আড়ে দেখছিল।

হঠাৎ নীরবতা ভেঙে তিমির চ‍্যাটার্জী বললো, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?

এই এতদূর আসতে হলো বলে।

মলিনা বললো না স‍্যার, পেটে যখন ক্ষিদের

জ্বালা থাকে, তখন কোনো চয়েস না থাকাই ভালো। 


কাজের জায়গায় বিকাল ৫টা নাগাদ ওরা পৌঁছে

গেল।আগের থেকে ই দুটো রুমের কথা বলা ছিল।

হোটেল এর দুটো রুমের চাবি দুজন কে দেওয়া হয়েছে।

যে যার লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে

মলিনা ফ্রেস হয়ে নিল।একটা ম‍্যাজেন্টা কালারের শাড়ি পরলো,আর হালকা প্রসাধন।তাতেই ওকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছিল।

জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায়, মলিনা দেখছে,

জায়গাটা বেশ মনোরম।

মনে মনে স্যারকে ধন্যবাদ দিচ্ছে, প্রথমত স্যার সত্যিই ভদ্রলোক, তাই তার জন্য আলাদা রুমের ব‍্যবস্তা করেছে, আর দ্বিতীয়ত কাজের সুত্রে হলেও এমন মনোরম পরিবেশে সে আসতে পেরেছে। 


একটু পরেই দরজায় নক, মলিনা দরজা খুলে

দেখে তিমির চ‍্যাটার্জী। ফ্রেস হয়ে একটা ক‍্যাজুয়াল ড্রেস পরেছেন। বেশ

লাগছে ওনাকে।অফিসে সব সময় সুট,টাই এধরনের পোশাকে ওনাকে দেখেছে।

আজ একদম অন‍্যরকম লাগছে। মলিকে বললো

চলো সন্ধ্যা হতে দেরী আছে, আশপাশে একটু

ঘুরে আসা যাক। 


মলিনা ও হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লো।গাড়ি না নিয়ে দুজনে হাটা পথ ধরলো। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে।কত নাম না জানা ফুল পথের ধারে ফুটে আছে।পাহাড়ী নদী কুলুকুলু শব্দে বয়ে চলেছে।

নাম না জানা অচেনা পাখি গুলো বাসায় ফিরে যাচ্ছে।সূর্য অস্ত যাবার রক্তিম আলোয় মলিনাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিল। 


তিমির মলিনাকে না জানিয়ে, কয়েকটা ছবি মোবাইল বন্দি করে নিয়েছে। 


হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল ছোট্ট একটা চায়ের দোকান।

মলিনা ভাবলো, অতবড় মানুষ এখানে হয়তো চা খাবেন না।তাই বললো, স্যার আপনি একটু আস্তে

হাঁটুন ,আমি একটু চা খেয়ে আসছি। 


তিমির অবাক হয়ে বললো, আপনি একা খাবেন, আর আমি?

মলিনা লজ্জা পেয়ে বললো, আপনি খাবেন স্যার ।

আমি বুঝতে পারি নি।

এই বলে দুটো মাটির ভাড়ে চা আর নাম না জানা অচেনা দুটো বিস্কুট দিয়ে দুজনে পরম তৃপ্তি নিয়ে চা খেলো। 


ততক্ষণে সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিক ঢেকে গেছে।

দুজনে তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে এলো

তিমির বললো মলিনা তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে

রেষ্ট করো।

সকালে তাড়াতাড়ি বেরাতে হবে কাজের সাইটে।

ঠিক আছে স্যার,বলে রুমে ঢুকে গেলো। 


খুব সকাল সকাল উঠে পড়েছে মালবিকা, স্নান সেরে জীনস আর টপ পরে নিল।কাজের সময়

মলিনা জীনস পরে সাধারণত।

বেশ লাগছিল ওকে। সাথে ছাতা আর সানগ্লাস টা ও নিল। এরা ওর সবসময় সঙ্গে থাকে। 


তিমির চ‍্যাটার্জী ও সময়মত চলে এল।দুজনে

কাজের সাইডে চললো। সেখানে নতুন প্রোজেক্ট চলেছে, কনট্রাক্টটর, লেবার সবাই কে ঠিক ঠাক সব বুঝিয়ে দিল তিমির।

মাঝে মাঝেই কিছু লেখালেখি ও ছবি তোলার কাজ মলিনা করছিল। 


মাঝে একবার ওরা সামান্য টিফিন আর চা খেয়েছিল।কাজের চাপে কখন যে দুপুর গড়িয়ে গেছে কারোর ই খেয়াল নেই। 


হঠাৎ আকাশে ভীষণ মেঘ করে উঠেছে।ভীষণ

বৃষ্টি শুরু হল।মলিনা চির সঙ্গী ছাতাটা খুলে কোনো রকমে নিজেকে নিরাপদ করলো।

কিন্তু তিমির ভীষণ ভাবে ভিজে গেল। কিছু করার ছিল না। 


একটু পরে বৃষ্টি একটু কমলে ওরা গাড়ি স্টার্ট

দিয়ে বেরিয়ে এল।

তিমিরের হাঁচি শুরু হয়ে গেল।চোখদুটো লাল হয়ে উঠেছে।মলিনা বললো, স্যার আপনি ভীষণ ভিজে গেছেন। শরীর খারাপ হতে পারে।

কিছু মেডিসিন নিয়ে নেবেন। 


তিমির বললো, ও আমার অভ‍্যাস আছে, তুমি চিন্তা কোরো না। 


হোটেল এর রুমে যে যার মতো ঢুকে গেলো।

কিছু হালকা টিফিন করলো মলিনা , সন্ধ্যা প্রায়

হয়ে গেছে। 


একটু ফ্রেস হয়ে সোফায় বসে ছিল।

সারাদিনের ধকলে কখন চোখ বুজে এসেছে কে জানে। 


হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ এ ঘুম ভেঙে গেল।

দরজা খোলা মাত্র হোটেলের একটি ছেলে বললো,

ম‍্যাডাম আপনার সাথে যে স্যার এসেছেন ওনার

ভীষণ শরীর খারাপ।

জ্বরে বেহুঁশ। আপনি সঙ্গে এসেছেন তাই আপনাকে জানালাম। আপনি একটু দেখুন। 


মলিনা দরজা লক করে, স্যারের রুমে ঢুকলো। সাথে হোটেলের ছেলেটি।সত্যিই তিমিরের জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, কোন হুঁশ নেই। 


মলিনা ছেলেটিকে বললো, ভাই কোনো ডাক্তার

পাওয়া যাবে?

ছেলেটি বলল, না ম‍্যাডাম এ তো আর শহর না,

এখানে এখন ডাক্তার পাওয়া সম্ভব নয়। 


বলল, একটা থার্মোমিটার আর কিছুটা বরফ পাওয়া যাবে ভাই।

ছেলেটি বলল,হ্যাঁ দিদি আমি এটা তোমায় দিতে

পারবো। 


সারারাত মলিনা জ্বর দেখে আর জলপট্টি দিতে থাকে। রাতের ডিনার ও করে নি।

ভোরের দিকে জ্বর টা তিমিরের একটু কম হয়।

চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মলিনা ওর পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। 


তিমিরের বড় অবাক লাগল, শরীর খারাপ বাড়িতে ও কখনও কখনও হয়েছে, কই তার স্ত্রীকে

কোনো দিন দেখেনি এমন করে সেবা করতে পরম মমতায়।

সত্যিই আমার বৈভব আছে ঠিকই তবে পার্থিব

সুখ থেকে আমি বঞ্চিত।

আর এই মলি, একজন বেতনভুক্ত স্টাফ। কিন্তু কত

মায়া মমতা ওর শরীরে। 


ও তো একজন আধুনিকা। কত তফাৎ ওর সাথে

আমার স্ত্রীর। তিমিরের মনে মলিনার জন্য

ভালো বাসা তৈরী হতে থাকলো। 


মলিনার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। দেখল তিমির উঠে বসেছে।

ব‍্যস্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কতটা।

না এখন জ্বর নেই।

তবে ভীষণ দূর্বল দেখাচ্ছে।

বললো, স্যার ভীষণ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ঈশ্বর কে

ডেকে গেছি। যাক বাবা আপনাকে উঠে বসতে দেখে আমি নিশ্চিন্ত। এখন কিছু খাবার খেয়ে নিন।আমি বলছি হোটেলের ছেলেটিকে।

তিমির আর মলিনা একসাথে টিফিন করলো আর রেডি হয়ে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। 


আসার পথে মলিনা বললো, স্যার আস্তে গাড়ি চালান, আপনি দূর্বল আছেন এখনো। 


তিমির হঠাৎ করেই মলিনাকে বললো, মলি

আমি বড় একা তুমি আমার জীবনে থাকবে মলি,

আমি তোমাকে ভালো বেসে ফেলেছি। 


মলিনা বললো তা হয় না স্যার,এ সম্পর্ক বৈধ হবে না, সমাজ বলবে পরকীয়া।আমি ভারতীয় নারী, আমি পারবোনা অন‍্যের ঘর ভাঙতে।

এই ক্ষনিকের ভালো লাগা আমি যত্ন করে রাখবো

স্যার ।

নিজের গন্তব্যে মলিনা নেমে গেল।

তিমির অপলক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকলো আর ভাবতে লাগলো সত্যিই তো মলি ঠিকই বলেছে এই ভালোলাগাটুকু অনেক দামী, একে অত্যন্ত যত্ন করে রাখতে হবে। হয়ত কোন বিষন্ন দিনে মনে পড়লে একটা আলোর ঝলক হয়ে মনের আনন্দ যোগাবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance