STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Classics

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Classics

কল্পনার জগৎ

কল্পনার জগৎ

3 mins
1.3K

এক একেকটা দিন এরকম থাকে যে বাইরের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের মনের ভিতরে একটা অস্থির ঝড় ওঠে। এরকমই এক ভীষণ ঝড়ের রাত। একটি বত্রিশ-তেত্রিশ বছর বয়সী মেয়ে বন্ধ ঘরে রিভলভার হাতে! রিভলভারের মুখ ছুঁয়ে রয়েছে মাথা আর তার তর্জনী রিভলভারের ট্রিগারে! দুই চোখের অশ্রু-ক্ষরণে সিক্ত তার অভিব্যক্তি-হীন মুখমণ্ডল।

—--------------------

কয়েক বছর আগে ...

রমা একটি রিসার্চ ইন্সটিটিউটে একজন থিয়োরিস্ট। সে স্বভাবে খুব নিরীহ, একেবারেই মিশুকে নয়। কয়েক বছর হল মা-বাবা গত হয়েছেন। অসামাজিক না হলেও সে আলাদা থাকতেই বেশী পছন্দ করে। তবে একজনের ব্যাপারেই সে আবেগপ্রবণ –। সেদিন ইন্সটিটিউটে থাকাকালীন রমা ফোনে কল পেল। কল রিসিভ করে সে নিচু স্বরে বলল, "বলো.."


ফোনে এক পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠল, "কিগো ইন্সটিটিউট থেকে বেরিয়েছো? তাড়াতাড়ি আসবে বললে! লাঞ্চ রেডি। আমার খিদে পেয়ে গেছে..."


রমা বেশ বিচলিত হয়ে বলল, "এ..এই তো বেরোচ্ছি। শোনো, তোমার সাথে একটা কথা আছে।"


পুরুষ-কণ্ঠটি বলে উঠল, "ঐ তিনটে শব্দ?"


চন্দ্রিমা বলল, "ধ্যাত্, খালি বাজে কথা! বিয়ে হয়েছে দু-বছর হতে চলল, এখনও আদিখ্যেতা!!"


পুরুষ-কণ্ঠটি কৌতুক করে বলল, "যা-ব্বাবা! একটা ছেলে তার সুন্দরী বউয়ের মুখে ঐ তিনটে ম্যাজিকাল ওয়ার্ড শুনতে চাইতে পারে না? সেই কবে থেকে শুনতে চাইছি! যাই হোক, আগে এসো..."


রমা বাড়িতে ঢুকে দেখল তার স্বামী ড্রইং রুমে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, "মোহন বলছি..."


রমা সোফায় ভ্যানিটি ব্যাগটা রেখে পেছন থেকেই মোহনকে জড়িয়ে ধরল। মোহনও ফোনটা রেখে সামনে ফিরে দু'হাতে রমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "চটপট ফ্রেশ হয়ে এসো। উফ! আবার পারফিউম ব্যবহার করেছ?"


মোহনের বুকে চিবুক রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আধ-বোজা ঠোঁটে রমা জিজ্ঞাসা করল, "কেন, গন্ধটা সুন্দর না?"

মোহন কিঞ্চিৎ বিরক্তির সাথে বলল, "পারফিউমের গন্ধে তোমার গায়ের গন্ধ চাপা পড়ে যায়।"


লাঞ্চ খেতে-খেতে রমা বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলল, "জানো, কয়েকদিন হলো আমার মাথায় একটা থিয়োরি এসেছে!"


"শুনি!"


রমা বলল, "আমাদের মস্তিষ্ক যে তিনটে স্পেশিয়াল ডায়মেনশন আর একটা টেম্পোরাল ডায়মেনশনের সাহায্যে জগৎ-কে বোঝে, সেই প্রত্যেকটা ডায়মেনশন আসলে এক একটা কমপ্লেক্স প্লেইন-র রিয়্যাল অ্যাক্সিস্।" রমা মোহনের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে বলল, "কি বুঝছেন মিস্টার ম্যাথেমেটিশিয়ান ?"


মোহন হাসিমুখেই বলল, "তুমি বলতে চাইছ যে, আমাদের পরিচিত চারটে ডায়মেনশন হলো বস্তুত রিয়্যাল ডায়মেনশন্স, যেগুলোর প্রত্যেকটার জন্য একটা করে ইমাজিনারী ডায়মেনশন আছে। অর্থাৎ কমপ্লেক্স কোয়ান্টিটি-র যেমন একটা রিয়্যাল আর একটা ইমাজিনারী পার্ট থাকে, স্পেস-টাইম-ও চারটে রিয়্যাল ডায়মেনশন নিয়ে তৈরি একটা রিয়্যাল ইউনিভার্স ও চারটে ইমাজিনারী ডায়মেনশন্ নিয়ে তৈরি একটা ইমাজিনারী ইউনিভার্স-এ বিভক্ত!"


রমার দু'চোখ চকচক করে উঠল। বলল, "কারেক্ট! আর কসমোলজি যাকে 'ডার্ক এনার্জি, বলে তা আসলে ইমাজিনারী বোসন কণাসমূহ, স্পেস-টাইম-এ যাদের গতিপথ এই ইমাজিনারী ইউনিভার্স-এ সীমাবদ্ধ। আবার 'ডার্ক ম্যাটার বলতে প্রকৃতপক্ষে ইমাজিনারী ফার্মিয়ন কণাগুলোকে বোঝায় যাদের গতিপথ সর্বদা ইমাজিনারী ইউনিভার্স-এর মধ্যেই থাকে। ফলে ঐ কণাগুলো রিয়্যাল ইউনিভার্স-র ফার্মিয়ন বা পদার্থ কণা এবং বোসন বা শক্তি কণাগুলোর সাথে ইন্টারাক্ট করে না, আমাদের পার্কটিকল ডিটেক্টর-এ ধরা পড়ে না। আবার নিউট্রিনো কণার গতিপথের অল্প অংশ আমাদের রিয়্যাল ইউনিভার্স-র মধ্যে পড়ে, তাই নিউট্রিনো আমাদের চেনা কণাগুলোর সাথে সামান্য ইন্টারাক্ট করে।"

—-------------------

বর্তমান সময় ...

রমার দৃষ্টি চোখের জলে বারবার আবছা হয়ে আসছে। বাড়ির ড্রইং রুমের সোফায় উপবিষ্ট রমার দৃষ্টি টেলিভিশনে চলতে থাকা নিউজ চ্যানেল-এ ,"ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ পার্কটিকল্ ফিজিক্স-এ কর্মরতা বিজ্ঞানী রমা দেবের প্রস্তাবিত 'ইমাজিনারী ইউনিভার্স' তত্ত্ব যখন ব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে, তখনই রমা দেবের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রহস্যের ঘনঘটা! ডঃ রমা মিডিয়াকে বারবার জানিয়েছেন, 'ইমাজিনারী ইউনিভার্স' তত্ত্বের গাণিতিক ভিত ওনার স্বামী মোহন দেব তৈরি করেছেন, কিন্তু তথ্য-প্রমাণাদি নিশ্চিত করেছে যে বাস্তবে মোহন দেবের কোন অস্তিত্বই নেই! সাইকিয়াট্রিস্টদের মতে ডঃ রমা 'স্কিজোফ্রেনিক ডিসোশিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার' নামে এক জটিল মনরোগের শিকার, যে রোগে 'স্কিজোফ্রেনিয়া' ও 'ডিসোশিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার' উভয় রোগেরই লক্ষণ প্রকাশ পায়। ওনার মস্তিষ্ক কখনও রমার ভূমিকায় থাকে আবার কখনও তা নিজেকে মানসিকভাবে পুরুষ ভাবতে শুরু করে ও মোহন দেবের ভূমিকা নেয়। রমার ভূমিকায় থাকার সময় সেই মস্তিষ্ক মোহনকে কল্পনা করে তাকে নিজের স্বামী বলে ভেবে নেয়, আবার মোহনের ভূমিকায় সে রমা নামে কল্পিত নারীকে নিজের স্ত্রী বলে মেনে নেয়..."


রমা ড্রইং রুম ছেড়ে বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। ড্রয়ার থেকে একটা রিভলভার নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে অস্ফুট স্বরে তিনটে শব্দ উচ্চারণ করল, "আই লাভ ইউ!"

তারপরেই গুলির আওয়াজ। এক অনির্বচনীয় মুক্তির আনন্দ , কিন্তু দুঃখ রয়ে গেল যে গবেষণার সাফল্য অধরা রয়ে গেল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance