কৈলাস মন্ডল করিল গন্ডগোল
কৈলাস মন্ডল করিল গন্ডগোল
প্রায় ছয় মাস পরে বাড়ি ফিরছিলাম। ভাবলাম কৈলাস কাকুর বাড়ি দেখা করে যাই। কাকিমা আমাকে দেখে খুব খুশি হবেন কৈলাস কাকুর বাড়ি আমাদের বাড়ির তিনটি বাড়ি আগে। আমি বাড়ির সামনে এসে বেল বাজালাম । আরতি কাকিমা দরজা খুলল, আরতি কাকি কৈলাস কাকুর বউ।কাকিমা আমাকে দেখা মাত্রই ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম কি হয়েছে,কাঁদছ কেন? কাকিমা আমাকে বলল ভিতরে আয় বলছি। আমি ভিতরে ঢুকলাম, দেখি কৈলাস কাকু মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে, আর বলছে সব গন্ডগোল হয়ে গেছেরে শিবু । আমি বললাম, কি হয়েছে আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন কাকিমা বলল, এই লোকটার জন্য পল্লবীর জিবন টা খারাপ হয়ে গেল। কতো করে বলেছিলাম অরুণের সাথে পল্লবীর বিয়ে দিয়োনা। কৈলাস কাকু বলল আমি তো মেয়ের ভালোই চেয়েছিলাম। অরুণ সরকারি চাকরি করে, বাড়ির অবস্থাও ভালো। মেয়ের যদি কপাল খারাপ থাকে তাহলে আর আমরা কি করবো। আমি কাকিমাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? কাকিমা বলল অরুনের চাকরি টা আর নেই,ও এখন বেকার। কি করে হলো এই সব? শুনেছি ও নাকি ঘুস দিয়ে চাকরি পেয়েছিল, তাই ওর চাকরি চলে গেছে। এই কথা শুনে আর পল্লবীর কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, তবুও কাকু আর কাকিমাকে সান্তনা দিয়ে বললাম মন খারাপ করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর ওনাদের কাছথেকে বিদায় নিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে বাবাকে প্রনাম করে বললাম আমি আসার পথে কৈলাস কাকুর বাড়ি গেছিলাম।সব কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে।বাবা বলল আমি ইচ্ছে করেই তোকে কিছু জানাইনি, যা-হবার তাতো হয়েই গেছে। সব জানিয়ে তোর মন খারাপ করতে চাইনি। তারপর বলল তুই ফ্রেস হয়ে নে, আমি তোর জন্য খাবার রেডি করছি। আমি জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না তবুও বাবার মনে কষ্ট হবে ভেবে অল্প কিছু খেয়ে নিলাম।
রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে কিন্তু আমার ঘুম আসছিল না।অন্য দিন ১০বাজলেই আমার ঘুম এসে যেত । আজকে আমার পুরোনো কথা খুব মনে পড়ছে। মায়ের কথা পল্লবীর কথা, আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছু দিন পরে আমার মা মারা গেছে। আজও সেই দিনের কথা মনে পড়লে আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠে । তারপর থেকেই আমার বাবা আমাকে মানুষ করেছে। আমার কোনো অভাব রাখেনি, আমার ছোট খাটো সব আবদার মেনে নিত।যাতে আমি মায়ের কথা মনে করে কষ্ট না পাই । এরপর দুই বছর কেটে গেছে। আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছি । এরপর কলেজ ভর্তি প্রস্তুতি চলছে,এমন সময় এক দিন বাবা আমাকে সারপ্রাইজ দিল। সকাল সকাল আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে একটা বাইকের চাবি দিয়ে বলল দেখতো পছন্দ হয়েছে কিনা। আমি তো অবাক হয়ে বাবা দিকে তাকিয়ে আছি দেখি বাবা মুচকি মুচকি হাসছে। আমি তারাতারি উঠে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। দেখি বাইরে একটা ব্লাক কালারের পালসার ১৫০(তখন কার লেটেস্ট মডেলের) দাঁড়িয়ে আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে বাইকের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, তখনই আমার খেয়াল হলো পল্লবী ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে।ওর চোখে চোখ পড়তেই মুহূর্তে জন্য আমার কেমন যেন একটা অনুভুতি হলো। আমি আর ওঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, চোখ ফিরিয়ে আবার আমার বাইক দেখতে লাগলাম। তারপর ঘরে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম কখন কিনলে? বাবা বলল কালকে বিকালে , রাতে কৈলাস কাকুর বাড়ি রেখে ছিলাম। তোকে সকালে সারপ্রাইজ দেবার জন্য। এখন রেডি হয়ে নে আমার পূজো দিতে যাব। আমি তারাতারি রেডি হয়ে নিলাম। তারপর আমি আর বাবা পূজো দিতে গেলাম, আমিই বাইক চালালাম।এই প্রথম বাবাকে নিয়ে বাইক চালালাম। আমার মনটা খুব খুশি ছিল। তারপর দুই তিন দিন আমি খুব বাইক চালালাম। আমার সব বন্ধুদের বাইক চরালাম। সবাই খুব খুশি হয়ে ছিল।
বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছিলাম পল্লবীর দিকে, ওকে আজ কাল অন্য রকম লাগে। আমি লক্ষ্য করেছি আমার সঙ্গে দেখা হলে ওকে যেন ঠিক আগের মতো স্বাভাবিক মনে হয় না, আমার চোখে চোখ পরলে ও চোখ সরিয়ে নেয়না, বরং আমাকেই চোখ সরিয়ে নিতে হয়। আমি আরও লক্ষ্য করেছি পল্লবী খুব সুন্দরী হয়েছে।ওর কথা মনে পড়লে আমার খুবই ভালো লাগতো। একদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম, মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। খুব ভালো লাগছিলো আমার, হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেছে, দেখি পল্লবী আমার পাশে বসে আছে। আমি চোমকে উঠলাম, দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বললাম কিরে তুই?ও বলল মা তোমার জন্য আচার পাঠিয়েছে (আরতি কাকিমা মাঝে মাঝে আমার জন্য কিছু না কিছু খাবার পাঠায়)। আমি বললাম ঠিক আছে, কিন্তু কারো ঘরে ঢোকার আগে পারমিসন নিতে হয় জানিসনা? ও একটু হেসে নেকা নেকা গলায় বলল জানিতো কিন্তু দেখলাম তুমি গভীর ভাবে ঘুমাচ্ছ তাই ডিস্টাভ করছিলাম না। আমি বললাম ঠিকাছে যা এখন( কথা টা বললাম ঠিকি কিন্তু মনে মনে চাইছিলাম ও যেন না যায়)। দেখলাম কথাটা শুনে ওর মুখটা একটু শুকিয়ে গেছে।বলল তারিয়ে দিচ্ছ? আমি বললাম না,আর কিছু বলবি? তোমার বাইকটা খুব সুন্দর তোমাকে সাথে ভালো মানিয়েছে। জাবি আমার সাথে ঘুরতে? ও বলল হ্যাঁ যাবো। বললাম তাহলে কালকে বিকালে রেডি হয়ে কল করিস।ও একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে গেছে। আমি মনে মনে ঠিক করলাম কোথায় যাবো।
পরের দিন বিকেলে ৪টার সময় পল্লবী আমাকে কল করে বলল ও বড়ির থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার দিকে যাচ্ছে। আমি আগের থেকেই রেডি হয়ে ওর কলের জন্য ওয়েট করছিলাম। তারপর আমিও বেরিয়ে পড়লাম। বড় রাস্তার কাছে এসে ওকে দেখতে পেলাম। কি সুন্দর লাগছিল ওকে, আমি আজও সেই দিনের কথা ভুলতে পারিনি। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম উঠে বসতে।ও একটু হেসে উঠে বসলো। তারপর সারা বিকেল ওকে নিয়ে না না জায়গায় ঘুরলাম, ফুচকা খেলাম,মোমো খেলাম। সন্ধ্যার একটু আগে বড় রাস্তার মোড়ে ওকে নামিয়ে দিলাম। এরপর আরো কয়েকবার পল্লবীকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলাম, কয়েকবার স্কুল পালিয়ে, টিউশন ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীর বাড়ির নামকরে। সেই বছরেই সরস্বতী পুজোর দিন পল্লবীকে আমি প্রপোজ করেছিলাম ।ও হেসে বলেছিল আমিতো সুধু তোমাকেই ভালবাসি, এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম তুই সুধু আমার। ধিরে ধিরে পুরো এলাকায় আমাদের প্রেমের কথা ছরিয়ে পরলো।
এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলো। আমার গ্ৰাজুয়েসন কম্পিলিট হয়েছে, পল্লবী ও কলেজ। একদিন কৈলাস কাকু আমাদের বাড়িতে এসেছিল বাবা সাথে অনেকখোন কথা বার্তা বলছিল। হঠাৎ বাবা আমাকে ডাকলো, আমি তাদের সামনে গিয়ে বললাম হ্যাঁ বলো।কৈলাস কাকু তোকে কিছু বলবে। আমি কৈলাস কাকুর দিকে তাকালাম।কাকু বলল হ্যাঁ বাবা সিবু কেমন আছো? আমি বললাম ভালো আছি কাকু। তা বাবা তোমারতো গ্ৰাজুয়েসন কম্পিলিট হয়েছে , আগে কি করবে ঠিক করেছে? আমি বাবার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর কাকুর দিকে তাকিয়ে বললাম এখনও কিছু ঠিক করিনি। কাকু বলল আমার এক বন্ধু মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এর কাজ করে, তার একজন এসিস্ট্যান্ট এর প্রয়োজন। তোমার বয়স কম, তুমি ওর কাছে থাকলে ভালো কাজ শিখতে পারবে।ও এখন উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়িতে পোস্টিং আছে, তোমাকেও ওইখানে গিয়ে থাকতে হবে। দুই বছর পরে ও কলকাতায় চলে আসবে, তখন তুমিও ওর সাথে চলে আসবে। কাজটা খুব ভালো হাত ছাড়া করোনা। এখন তোমার আলোচনা করে আমাকে জানাবেন। এরপর কিছু এদিক সেদিক এর কথা বলে কাকু চলেগেল। বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি করবি ? আমি বললাম তুমি কি চাইছো?কাজটা ভালো তুই চাইলে করতে পারিস।কালকে সকালে তোমাকে জানাবো আমি বললাম। তারপর আমারা রাতের খাওয়া দাওয়া করলাম, বাবা আমাকে আরো অনেক কথা বোঝাল। আমি রাতে পল্লবীকে কল করলাম, ওকে সব কথা জানালাম। তারপর বললাম আমি কিছুই ঠিক করতে পারছিনা, তুই কিছু বল এখন আমার কি করা উচিৎ?ও বলল আমার মনে হয় কাজটা ছাড়া উচিৎ হবে না, আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জন্য এখন থেকেই রেডি হতে হবে। আমি বললাম কিন্তু তোকে ছেড়ে আমি এতোগুলো দিন কি করে কাটাবো?জানি আমাদের কষ্ট হবে বলতে বলতে ও কেঁদে উঠলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল দুটো বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে। তারমধ্যে বছরে দুইবার তো তুমি আসবে, আমার কথা বেশি ভেবোনা আমি ঠিক তোমার জন্য ওয়েট করে থাকবো। জানিনা কীকরে ও আমার মনের কথাটা বুঝতে পারলো। তারপর আমার আরো অনেকক্ষন গল্প করলাম। সকালে ব্রেকফাস্ট করতে এসে বাবাকে বললাম আমি শিলিগুড়িতে যেতে রাজি আছি। বাবা খুব খুশি হয়ে বলল তাহলে আমি আজকেই কৈলাসের সাথে কথা বলবো। খাবার খেতে খেতে আমাকে অনেক পরামর্শ দিলো,কি করে একা থাকতে হবে, মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যাবহার করতে হবে, এই জাতীয় আর কি। কৈলাস কাকুর সাথে কথা বলে সব ঠিক হয়ে গেছে আমি সামনে সপ্তাহে শিলিগুড়িতে যাব।আর মাত্র ৫ দিন বাকি আছে।তার মধ্যে একদিন পল্লবীকে নিয়ে সপিং করতে গিয়ে ছিলাম। প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কেনাকাটা সেরে দুজনে একটু নিরিবিলি পরিবেশে বসলাম।ও আমার কাঁধে মাথা রাখলো আমিও ওর কাঁধে হাত রাখলাম। দুজনে অনেক কথা বললাম তারপর এক সময় আমি বললাম চল এবারে আমাদের বাড়িতে ফিরতে হবে। ও বলল আর একটু বসি, আবার কতো দিন পরে তোমার সাথে দেখা হবে তাতো জানিনা। আমি আর কিছু বললামনা, আমারা আরো অনেকক্ষন বসলাম। তারপর বাড়ি ফিরে আমি আর বাবা মিলে প্যাকিং করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া সেরে শুতে গেলাম, মনটা ভালো লাগছিল না, পল্লবীকে কল করলাম ও কলটা রিসিভ করে বলল কি হয়েছে ঘুম আসছে ন? না। আমার ও। তারপর প্রায় সারারাত দুজনেই জেগে কাটালাম ভোর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তাই পরের দিন সকালে উঠতে অনেক বেলা হয়েছিলো। বাবা বলল আজকে রাতের কলকাতা টু শিলিগুড়ির বাসে আমাকে যেতে হবে। আমি তো এই কথা আগে থেকেই জানতাম কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। বুঝতে পারলাম বাবাও মনটা ভালো নেই,করন একই কথা বার বার বলছিলো। আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম তুমি চিন্তা করো না আমার কোনো অসুবিধা হবে না। দেখলাম বাবার চোখের কোণে দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, আমিও আর থাকতে পারলাম না, আমার চোখেও জল গড়িয়ে পড়ছে। সেই সময় মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। বিকেলে কৈলাস কাকু, আরতি কাকিমা, পল্লবী, আমার আরো দুই বন্ধু এসেছিল বাসস্ট্যান্ডে আমাকে ছাড়তে।
শিলিগুড়িতে পৌঁছে আমার কোনো অসুবিধা হলো না। কৈলাস কাকু যেমন বলেছিল সবকিছু তেমনি হলো। নতুন জায়গা নতুন কাজ, আমার বেশ ভালোই লাগছিলো। প্রতিদিন রাতে পল্লবীর সাথে ফোনে ক কথা বলার ছিল ওকে। বাড়ি ফিরে ওর সঙ্গে অনেক সময় কাটাবো,কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। মনের ভেতরটা খচ খচ করছিল , এমন তো আগে কখনো করেনি। তবুও নিজেকে সান্তনা দিয়ে সুয়ে পরলাম। পরের দিন রাতে পল্লবীকে কল করলাম কিন্তু ও কলটা রিসিভ করেননি। বুঝতে পারলাম না ওর কি হয়েছে। এমন করছে কেন? সারা সপ্তাহ ওর সঙ্গে কথা হয়নি। অনেক বার কল করাতে একদিন টএস্কট করে জানালো এখন কলেজের খুব চাপ তাই কথা বলতে পারছেনা। বাড়ি ফেরার দিন রাতেও থা হতো। দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল, একদিন খবর পেলাম আমার ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সামনে সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের ছুটি। রাতে পল্লবীকে কথাটা জানালাম, আমার মনে হলো ও যেন খুসি হলো না। বেশিক্ষণ কথাও বললনা, কলেজের প্রজেক্টের কাজ করছি বলে ফোন রেখে দিল। আমার অনেকঅনেক বার কল করলাম কিন্তু কোন সাড়া পেলাম না। সকালে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখলাম বাবা দাঁড়িয়ে আছে, আমি প্রনাম করলাম। বাবা আমাকে কাঁধে হাত রাখল, তারপর আমার ভারী ব্যাগ দুটি নিজের হাতে নিয়ে বলল চল।
আমি বললাম আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না,ব্যাগ দুটো আমাকে দাও। বাবা বলল চল আমরাও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তারপর বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বড়ির দিকে চললাম। পল্লবীদের বড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় কাউকে দেখতে লাগলাম না। আমার খুবই রাগ হচ্ছিল। বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে বাবার সাথে অনেকখোন গল্প করলাম। তারপর আমি বললাম বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাব। বাবা বলল বেশি রাত করিস না। বিকেলে বাইক নিয়ে বের হলাম, বন্ধুদের কাছে গেলাম সবাই খুব খুশি হয়ে। আমি সবাইকে নিয়ে গেলাম রেস্টুরেন্টে, খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে সুতে চলে গেলাম। সারা বিকেল খুব মজা করে ছিলাম। কিন্তু সেই বিকেলটা আমি পল্লবীর সাথে কাটাতে চেয়ে ছিলাম। সারারাত ভালো ঘুম হয়নি,ও কেন আমার সাথে এরকম করছে বুঝতে পারছিলাম না।
পরের দিন সকালে দেখা করতে গেলাম ওদের বাড়ি।বেল বাজাতে আরতি কাকিমা দরজা খুলল আমাকে দেখে কেমন হকচকিয়ে গেল। আমি প্রনাম করলাম কাকিমা বলল আয় ভিতরে আয়, ভাল আছিস বাবা? আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর এদিক সেদিকের অনেক কথা হলো। একসময় আমি বললাম পল্লবী কোথায় ওকে দেখছিনা? কাকিমা আমতা আমতা করে বলল ওতো অনেক সকালে বেরিয়েছে কোন বান্ধবীর বাড়ি গেছে নোটস নিতে। বুঝতে পারলাম ও বাড়িতেই আছে, আমার সাথে দেখা করতে চাইছে না। তারপর কাকিকে পারে আবার আসবো বলে বাড়ি ফিরে আসলাম। সেদিন বিকেলে আমি ছাদে উঠে দেখলাম পল্লবী ওদের ছাদে দাঁড়িয়ে কার সাথে জেন ফোনে কথা বলছে ।
আমাকে দেখে অন্যদিকে ঘুরে গেল, তারপর আস্তে আস্তে ভিতরে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, আমি কি এমন দোষ করলাম। তারপর মধ্যে একদিন মার্কেটে গিয়ে পল্লবীর এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, ওর নাম বিলকিস। মার্কেটে ওদের অনেক বড়ো ইলেকট্রনিক্সের দোকান আছে। আমি ভিতরে ঢুকলাম,ও আমাকে দেখে চিনতে পারলো বলল ভালো আছো শিবুদা? আমি বললাম হ্যাঁ তুমি কেমন আছো? ও বলল ভালো আছি। আমি বললাম তুমি দোকানে, তোমার বাবা কোথায়?ও বলল আব্বু আম্মুকে নিয়ে ডাক্তার সাহেবের কাছে গেছে, কয়দিন ধরে আম্মুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না,তাই আমি এই বেলা আছি। তারপর আমি বললাম তোমার বান্ধবী কেমন আছে?ও একটু হেসে বলল কে পল্লবী?
আমি বললাম হ্যাঁ। ওর তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি চমকে উঠলাম বললাম কি?ও বলল হ্যাঁ তুমি জানো না? প্রায় চার মাস হয়ে গেল, ওর বাবা এক বন্ধুর ছেলের সাথে। তুমি ও চেনো ছেলেটাকে, তোমাদের স্কুলেই পরতো , তোমার সিনিয়র হবে মনে হয়। ছেলেটার নাম অরুণ সরকার। সাদা রঙের অ্যপআচই বাইক চালাতো।এক বছর মতো হবে সরকারি হাইস্কুল মাষ্টারের চাকরি পেয়েছিল। আমি বললাম হ্যাঁ আমি চিনি ওকে। এরপর আমি বিলকিসকে বললাম এখন তাহলে আশি পারে আবার আসবো।ও একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল ঠিক আছে। মার্কেট থেকে বেরিয়ে বাড়ির ফিরে আসলাম। এখন আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল, মনে মনে হাসলাম আর বললাম কৈলাস কাকু আমাদের সাথে ভালোই গেম খেলছে। কিন্তু পল্লবীর কথা ভেবে খুব অবাক হয়েছিলাম,ও আমাকে একটু ও বুঝতে দেয়নি যে ওর মনে কি চলছিলো। এরপর ছুটি শেষ করে আমি আবার ফিরে গেলাম শিলিগুড়িতে। বেশ কিছু দিন পরে খবর পেয়েছিলাম পল্লবীর বিয়ে হয়ে গেছে।

