Sampa Maji

Romance Inspirational

3  

Sampa Maji

Romance Inspirational

জননী

জননী

5 mins
295



মৌসুমী আজ বাড়ী ছেড়ে চলে এসেছে। এই ভাবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে আর ভালো লাগছে না। স্বামী, শাশুড়ি এত গঞ্জনা আর সইতে পারছে না। সে বাপের বাড়িতে ও আর ফিরে যেতে চায় না। তার মা বাবা কে এসব কথা জানিয়ে ছিল অনেক আগেই কিন্তু তাদের একটাই কথা ,একটু মানিয়ে চল , সব ঠিক হয়ে যাবে। তার যে কী অপরাধ সে নিজেও জানেনা।

মৌসুমীর বিয়ে হয়েছে আজ ৭ বছর। এখন ও ওদের কোনো সন্তান হয় নি। অনেক ডাক্তার,বৈদ্যি, দেখিয়েছে কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু ফল হয় না। এই নিয়েই সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি। শাশুড়ি প্রতি নিয়মিত মৌসুমীকেই দোষারোপ করেন ,ছেলেকে কিছুই বলে না । এত দিন সব সহ্য করে এসেছে, কিন্তু আজ অশান্তি এক চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে , শাশুড়ি মৌসুমীর গায়ে হাত তুলেছেন। স্বামী ও বাড়িতে ছিলনা, যদিও সে তার মাকেই সমর্থন করে ,বৌ এর প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই, মা যেটা বলবে সেটাই ঠিক মনে করে।

এমন ঘটনা মৌসুমী একেবারেই মেনে নিতে পারছে না। তাই সে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগে শাশুড়ি কে বলে এসেছে , আজ সন্তান হয় নি বলে আমাকে এত অপমান করছেন তো, একদিন আমি শত সন্তানের জননী হবো। এ কথা শুনে শাশুড়ি বললেন , একটা সন্তান জন্ম দিতে পারছে না, সে আবার শত সন্তানের জননী হতে চায় কত শখ দেখোনা , ওসব গল্পেই হয় বাস্তবে হয়‌ না ।


মৌসুমী বাড়ী থেকে বেরিয়ে তো এসেছে কিন্তু কি করবে, কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পরছে না। বাপের বাড়িতে ফিরে গেলে মা বাবা বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার ওই বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু মৌসুমী কিছুতেই আর ওই বাড়িতে ফিরে যাবে না, যে বাড়িতে তার কোনো সম্মান নেই, সেই বাড়িতে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে থাকতে আর পারবে না। এখন মৌসুমীর মাথায় একটাই কথা ভেসে আসছে কি করে ওদের এই অপমানে জবাব দেওয়া যায়, তার জন্য নিজেকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে ওদের অপমানের যোগ্য জবাব দেওয়া যায়। তখন মনে আসলো সায়নের এর কথা। সায়ন বর্তমানে একজন ডাক্তার এবং অনাথ আশ্রমের সাথে যুক্ত। সায়ন, মৌসুমীর school friend. School সামনেই সায়নের বাড়ি, কিন্তু অনেক দিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এই বারে দুর্গা পূজোর সময় মৌসুমী বাপের বাড়িতে গিয়েছিল, তখনই সায়নের সাথে দেখা, সায়ন দেশের বাড়ীতে এসেছিল পুজো কাটাতে।সায়ন বলেছিল ও ডাক্তারের পাসাপাসি NGO দেখা শোনা করে। মৌসুমী ভাবল যদি ওর নাম্বার টা নিয়ে রাখতাম,তাহলে খুব সুবিধা হত। তখন ওর বান্ধবী সুমনাকে ফোন করল যদি কোনো ভাবে নাম্বার টা জোগাড় করতে পারে।


মৌসুমী - হ্যালো সুমনা।

সুমনা- হ্যাঁ, বল কেমন আছিস।

মৌসুমী - আমি ভালো আছি, তুমি আমাকে সায়নের ফোন নাম্বার জোগাড় করে দিতে পারবি।

সুমনা- কোনো ,তুই সায়নের নাম্বার নিয়ে কি করবি।


মৌসুমী - আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই, ওর NGO ব্যাপারে।

সুমনা- আমার কাছে তো নেই, তবে আমার দাদা কাছে আছে।

মৌসুমী - তুই তোর দাদা কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমাকে এখনই দে, আমার খুব দরকার।

সুমনা- কার ও কি কিছু হয়েছে।

মৌসুমী - তোকে আমি পরে ফোন করে সব বলব, এখন তুই শুধু সায়নের নাম্বার জোগাড় কর।

সুমনা- আচ্ছা দাদাকে ফোন করে নাম্বার নিয়ে, তোকে জানাচ্ছি।


সুমনা ওর থেকে সায়নের ফোন নাম্বার নিয়ে মৌসুমীকে দেয়। মৌসুমী নাম্বার টা পাওয়া মাত্রই ফোন করে , কিন্তু ফোনটা রিং হয়ে কেটে যায় ।

মৌসুমী আবার ফোনটা লাগায় , এবার ফোন টা রিসিভ করেছে,

সায়ন:-হ্যাল, কে বলছেন?

মৌসুমী -আমি মৌসুমী বলছি। তোর মনে পরেছে, তোর সাথে পূজোর সময় স্কুল মাঠে দেখা হয়েছিল।

সয়ান:- আরে মৌসুমী তো, হ্যাঁ বল, কি হয়েছে? হঠাৎ আমাকে মনে পড়ল ।

মৌসুমী:- তুই বলেছিলি না ,তুই একটা আশ্রমের দেখা শোনা করিস। 

সায়ন:- হ্যাঁ, তো কি হয়েছে।

মৌসুমী - তুই কি ওখানে আমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিতে পারিস। আমার পড়াশোনা তো জানিস, উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই বাবা মা আমার বিয়ে দিয়ে দিলো, উচ্চ মাধ্যমিক টা ও দিতে দিল না।

সায়ন:- কেন? তোর শোশুড় বাড়ীর অবস্থা শুনেছি খারাপ না। তাহলে তুই কাজ করবি কেন?

মৌসুমী -সব কথা পরে বলবো, তুই কি কাজটা দিতে পারবি বল?

সায়ন:-হ্যাঁ। কিন্তু তোর Husband !সে কিছু বলবে না।

মৌসুমী - বললাম তো সব বলব। কাজটা আমার এখনই দরকার।

সায়ন:-ঠিক আছে, তাহলে তুই চলে আয়। তোকে ঠিকানাটা Send করছি।

মৌসুমী -Ok, ঠিক আছে।

সায়ন: OK, Bye.


মৌসুমী আশ্রম এবং আশ্রমের বাচ্চাদের আপন করে নিয়েছে। মৌসুমী এখন আশ্রমের নয়নের মনি। সায়ন প্রতি সপ্তাহে আসে, সায়নের বাচ্চাদের Health দিকটা দেখে।

মৌসুমী চলে আসার পর ওর বাবা মা ওকে অনেক বুঝিয়েছে, ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ,কিন্তু মৌসুমী ফিরে যায়নি তাদের কে ফিরেয়ে দিয়েছে । শোশুড় বাড়ীর সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখেনি আর বাবাকে বলেছে মৌসুমী কোথায় আছে সে কথা যেন ওই বাড়ির কাউকে বলে। 


এদিকে মৌসুমীর শাশুড়ি অনুপমা দেবী ছেলের আবার বিয়ে দিয়েছেন। বংশের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য কেউ না থাকলে হয়, তাই নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনও কোনো সন্তান হল না। খুব চিন্তা বিষয়, অনেক তুকতাক করেছেন তাতেও কিছু হয়নি। ডাক্তার দেখিয়ে ও কাজ হল না, ডাক্তার বলেই দিয়েছে, কিছু করা যাবে না, ছেলেরই সমস্যা আছে।

তখন নতুন বৌ বলল, আর কত বার ছেলের বিয়ে দেবেন, আগের বৌমাকে তো দোষ দিয়ে অত্যাচার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন, এখন কি আমাকে ও তাড়াতে চান। তার থেকে বরং আশ্রয় থেকে একটা বাচ্চা দত্তক নিয়ে নেই তাকেই মানুষ করব। কিন্তু অনুপমা দেবী আশ্রয় থেকে দত্তক নিতে চান না। কোন বংশের সন্তান কে জানে, যার জাতের কোনো ঠিক নেই, সে হবে রায় বংশের প্রদীপ,কখনই না।

কিন্তু অনুপমা দেবী ভুলে গেছেন, তিনি যার সাথে ঝগড়া করছেন, সে মৌসুমী নয়, যে সব মুখ বুজে শুনে নেবে। তাই শেষে বাধ্য হয়ে নতুন বৌমার কথা মানতে হল।


অনুপমা দেবী ছেলে এবং নতুন বৌমার সাথে এল আশ্রমে বাচ্চা দত্তক নিতে। ঘটনা চক্রে ওরা মৌসুমীর আশ্রমে আসে। মৌসুমী ওদের কে দেখে নিজেকে আড়াল করে নেয়, মৌসুমী যানে অনুপমা দেবী সামনে গেলে তিনি হয়তো এই আশ্রম থেকে আর বাচ্চা দত্তক দিতে দেবে না, অন্য আশ্রমে চলে যাবেন। অনুপমা দেবীর মতো মানুষ ভাঙবে তবু ঝুঁকবে না।

মৌসুমী তাই অন্য একজনকে দিয়ে দত্তক নেয়ার সব অফিসের কাজ করিয়ে নেয়। মনে মনে ঠিক করল সময় মতো অনুপমা দেবীর অপমানের জবাব দেবে।


এই আশ্রমে মৌসুমী ১০ বছর হল এসেছে।এখন প্রায় ১০০ বেশি ছেলে মেয়ে তার সন্তান ।আশ্রমের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । এই আশ্রম সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার জন্য, একটি নামী সংস্থা ওদের আশ্রমকে অর্থ প্রদান করতে চায় এবং মৌসুমী কে তার কাজের জন্য প্রশংসা পত্র দিতে চায়।

এই অনুষ্ঠানে মৌসুমী একজনকে ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রন জানিয়েছে। মৌসুমী তার হাত থেকেই প্রশংসা পত্র নিতে চায়।

অনুষ্ঠান মঞ্চে সবাই কে প্রনাম জানিয়ে মৌসুমী বলতে শুরু করল - প্রথমে ধন্যবাদ জানাই সায়ন বসু কে, যিনি আমায় এখানে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে ছিলেন। ধন্যবাদ আর ও একজনকে, যার জন্য আমি এখানে এসেছি। তিনি হলেন অনুপমা রায়, আর আমি ওনার হাত থেকে এই পত্র টা নিতে চাই। আমি অনুরোধ করব উনি যেন এটা করেন।

অনুষ্ঠান শেষে মৌসুমী অনুপমা দেবী কে প্রনাম করে বলল, আপনার জন্যই আমি এখানে পৌঁছাতে পেরেছি,আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনি বলেছিলেন না ওসব কাহিনীতে মানায় বাস্তবে


নয় । আজ দেখুন বাস্তবেই হয়েছে, আপনি আমার সন্তানকেই দত্তক নিয়েছেন, সন্তানের জন্ম না দিয়ে এভাবে ও মা হওয়া যায়।আজ আমি একশো বেশী সন্তানের জননী হয়েছি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance