জীবনের পরিহাস
জীবনের পরিহাস
জীবনটা কতই না সুন্দর হতো যদি দেখা স্বপ্ন গুলো আর প্রিয় মানুষ গুলো সবসময় পশে থাকতো .
নিজের মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নেওয়া যেত , কিন্তু আমাদের জীবনটা আসলে কি আমরা সাজাতে পারি ?
আমরা তো এই নাটকের নাট্যমঞ্চে অভিনেতা মাত্র , যেমন ভাবে আমাদের স্ক্রিপ্ট এ বলা হয়েছে আমাদের তেমন ভাবেই আমাদের অভিনয় করে যেতে হবে , আর জীবনের কঠিন সময় এর মধ্যেও যেন জীবনের প্রাপ্তি তা খুঁজে নিতে হবে ..
অভিনয় করতে করতে যখন তুমি ক্লান্ত হয়ে পরবে , তখন এই নাটকের নাট্যমঞ্চে তোমার অভিনয় শেষ , তখন তোমার বিদায় নেওয়ার সময় চলে আসবে এই নাট্যমঞ্চ থেকে ..
এই পৃথিবী তে আসার সাথে সাথে কেউ দেখতে পাই না কিন্তু ভবিষৎতেও দেখতে পারবে না এই রকম ভাগ্য নিয়ে এসেছিলো শুভ ..
কে জানে তার ভাগ্য তা এইরকম হবে , যে জন্মগত অন্ধ হবে ...
এইখানে তার ভাগ্যের পরিহাস নয় , শুভ এর যখন ৪ বছর বয়স তখন তার বাবা এক…
জীবনটা কতই না সুন্দর হতো যদি দেখা স্বপ্ন গুলো আর প্রিয় মানুষ গুলো সবসময় পশে থাকতো .
নিজের মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নেওয়া যেত , কিন্তু আমাদের জীবনটা আসলে কি আমরা সাজাতে পারি ?
আমরা তো এই নাটকের নাট্যমঞ্চে অভিনেতা মাত্র , যেমন ভাবে আমাদের স্ক্রিপ্ট এ বলা হয়েছে আমাদের তেমন ভাবেই আমাদের অভিনয় করে যেতে হবে , আর জীবনের কঠিন সময় এর মধ্যেও যেন জীবনের প্রাপ্তি তা খুঁজে নিতে হবে ..
অভিনয় করতে করতে যখন তুমি ক্লান্ত হয়ে পরবে , তখন এই নাটকের নাট্যমঞ্চে তোমার অভিনয় শেষ , তখন তোমার বিদায় নেওয়ার সময় চলে আসবে এই নাট্যমঞ্চ থেকে ..
এই পৃথিবী তে আসার সাথে সাথে কেউ দেখতে পাই না কিন্তু ভবিষৎতেও দেখতে পারবে না এই রকম ভাগ্য নিয়ে এসেছিলো শুভ ..
কে জানে তার ভাগ্য তা এইরকম হবে , যে জন্মগত অন্ধ হবে ...
এইখানে তার ভাগ্যের পরিহাস নয় , শুভ এর যখন ৪ বছর বয়স তখন তার বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা যাই , যেটুকু সে মা বাবার থেকে ভালোবাসা তা পেয়েছিলো , সেইটুকু যেন শেষ হয়ে গেলো ..
তার বাবা মারা যাওয়ার পর , তার বিধবা মা তাকে মানুষ করার জন্য লোকের বাড়িতে কাজে যোগ দিলো , মায়ের আর সময় কোথায় তাকে ভালোবাসার , কেমন যেন বিনা ভালোবাসায় শুভর জীবন তা কাটতে থাকলো ....
শুভ এর বয়স বাড়তে থাকলো , কিন্তু সে অন্ধ , যেন জীবনের কোনো আনন্দ টুকুই নেই তার জীবনে , শুধু তার মায়ের ভালোবাসা ছাড়া ...
এই জীবনে তার বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন নেই , কিন্তু ঈশ্বর কাউকে খালি হাতে পাঠায় না , খারাপ এর সাথে সাথে কিছু ভালো কিছু দিয়েও পাঠায় , তেমনই শুভ যেরকম ভালো রান্না করতে পারতো সেইরকমই গানের গলাটাও ছিল খুবই ভালো...
সংসারের হাল ধরার জন্য সে ছোট রেস্টুরেন্ট খুললো , তার কাজে সবসময় সহায়তা করতো তার মা ...
খুবই ভালোই চলছিল তার রেস্টুরেন্ট ....
সকাল থেকে রাত এ সমস্ত কাজ কর্ম শেষ করে তার প্রিয় গিটার তা নিয়ে শুভ গান করতে বসলো .. এখন আর কেউ আসবে না রেস্টুরেন্ট বন্ধ ..
হঠাৎ একটি মেয়ে প্রবেশ করলো রেস্টুরেন্ট এ , দরজা খুলে ঢুকতেই সে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লো ..
মুগ্ধ হয়ে যেন শুভ এর গান শুনতে থাকলো ,
শুভ নিজের মনে গান করতে থাকলো , সে বুজতে পারেনি কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে গান শুনছে ...
এইভাবে অনেক তা সময় কেটে গেছে মেয়েটা চুপ করে দাঁড়িয়ে ,
মা এখন তো রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে , এখন তো কোনো কিছু করে দিতে পারবো না , শুভ এর মা বলে উঠলো ,
মেয়েটি যেন চমকে উঠলো ,
শুভ চুপ হয়ে গেছে ..
মেয়েটি বলে উঠলো সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ভেবেছিলাম আপনাদের দোকানটা হয়তো খোলা আছে তাই আসলাম ,আর যদি না পাই আর কি করা যাবে , সারারাত না খেয়ে থাকতে হবে ...
শুভ বললো ওনাকে দাঁড়াতে বলো , আমি কিছু করে দিচ্ছি ...
আপনার এগ রোল করে দিলে চলবে তো ..
হা অবশ্যই চলবে , খুব দারুন গলা আপনার ..মেয়েটি বললো
এইভাবে তাদের কিছুক্ষন আলাপ চললো , মেয়েটির খুব ভালো লাগলো শুভ কে...
এইভাবে মেয়েটি প্রায়ই শুভর রেস্টুরেন্ট আসতে থাকলো , তাদের মধ্যে সম্পর্ক তা যেন একটু গভীর হতে লাগলো , মেয়েটি শুভকে গান শোনানোর জন্য অনুরোধ করতো ,
সব কাজ শেষ করে শুভ মেয়েটিকে গান শোনাতো . মেয়েটি মন দিয়ে শুভ এর গান শুনতো ,
মেয়েটি হয়তো তাকে ভালোবেসেই ফেলেছিলো , তার জীবনের সমস্ত কিছু কে ,
যেন তার অবলম্বন হতে চেয়েছিলো ...
শুভর জীবনে তার মায়ের পরে কেউ যেন আবার তাকে ভালোবাসছে ..
শুভর মা ও খুশি , কারণ সে আর কতদিন, তিনিও তার ছেলের জীবনে এমনই এক জন কে তো সে চেয়েছিলেন , যে সারাজীবন তার পশে থাকবে ...
কিন্তু সব সুখ কি সবসময় সাথে থাকে ...
এই ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয় ...
মেয়েটির বাড়ির থেকে মেয়েটির বিয়ে ঠিক হলো ...
মেয়েটিকে বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হতে হলো ..
মেয়েটি রেস্টুরেন্ট এ আসা বন্ধ হয়ে গেলো ...
শুভ অপেক্ষায় রয়ে গেলো ..
সে ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো আসবে ...
কিন্তু সেই অপেক্ষা অপেক্ষায় রয়ে গেলো ...
সে অন্ধ কিন্তু তাই বলে কি সে স্বপ্ন দেখতে পারবে না ....
কিন্তু তার স্বপ্ন দেখা এই ক্ষেত্রে মিথ্যে প্রমাণিত হলো ..
মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো ...
আর এদিকে শুভ পাগলের মতো আচরণ শুরু করলো ..
রেস্টুরেন্ট ও সে এখন ঠিকভাবে চালায় না .. তার মায়ের সাথেও কথা বলে না .. চুপ করে এক কোনায় বসে থাকে ...
এদিকে শুভ এর মা যেন শুভ এর চিন্তায় দিন দিন কেমন যেন হয়ে গেলো ...
শেষমেশ শুভ কে ছেড়ে সবাই চলে গেলো . তার মা ও মারা গেছে ..
এই পৃথিবী তে বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয়না শুভর কাছে ..
এমনিই তার কাছে সব অন্ধকার ... যেটুকু আলো সে দেখেছিলো সব যেন নিভে গেছে তার সামনে ...
অন্ধকারময় তার জীবন ...
শুভ.... শুভ ......
একটা খুবই পরিচিত আওয়াজ ভেসে আসছে শুভর কানে ...
আওয়াজ তা তার পরিচিত খুবই পরিচিত ... সেই মেয়েটি ..
এ কি হাল করেছো নিজের ... পাগলের মতো নিজেকে করে তুলেছো ..
আমি তো এই শুভ কে চিনি না ... আমি সেই শুভ কে চিনতাম যে সবকিছু প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছিল ... আজ তোমার এ কি হাল করেছো নিজে ...
শুভ বললো ....কেউ কথা রাখেনি, সবাই চলে গেছে একলা রেখে , কেউ এই অন্ধ মানুষ তার পাশে থাকেনি , কেউ থাকতে চাই না , আজ সবাই চলে গেছে একে একে , মা ও চলে গেছেন আমার বাঁচার কোনো মানে হয়না ... তুমিও চলে গেছো ...তুমি বোঝোনি একবারও .. যে তুমি আর মা ছাড়া আমি কতটা অসহায় বুজতেও চাওনি ... তোমরা চলে গেছো ...
জাওনা যাও যেখানে তুমি খুশি থাকো ... এখানে এসছো কেন যাও চলে যাও...
মেয়েটি বললো ......শুভ ... বাচ্চাদের মতো করো না ... আমি তোমার জীবনে কখনও ছিলাম না , ক্ষনিকের অথিতি মাত্র , তোমার জীবনে আমার অভিনয় করার মতো এইটুকু সুযোগ পেয়েছিলাম , আর দেয়নি ঈশ্বর আমাকে সেই সুযোগ ....
আমার সেইসময় করার মতো কিছু ছিল না , আমি মেয়ে বুজেছো , আমাদের নিজেদের ইচ্ছে থাকে না , শুধু মাত্র জীবনে কাউকে মন থেকে ভালোবাসার অধিকার তাই থাকে , তাছাড়া আমরা নিরুপায় , তুমি বুজতে আমার জায়গায় থাকলে ..
শুভ বললো .... তুমি বুজতে আমার জায়গায় থাকলে ? আমাকে এই কথা বলছো ...
আমি কি পেয়েছি জীবনে ??? কি আছে চারি দিকে অন্ধকার ছাড়া ...
আমি অন্ধকার ছাড়া কি দেখেছি সারাজীবন ... যেটুকু আলো দেখিয়েছিলে নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলে ...
আমার বেঁচে থাকার মতো কি আছে বলো .. তুমি আমার জায়গায় থাকলে একবার ভেবে দেখেছো ..তুমি নিজের কথা ভাবলে একবার ভেবে দেখেছিলে কি নিয়ে বাঁচবো আমি ?
মেয়েটি বললো ......ভালোবাসার কথা বলছো সে তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না , তবে সত্যি তোমার মধ্যে এই পাগলামি আমি দেখতে পারবো না ... তোমার এই কষ্ট দেখে আমি খুশি হতে পারবো না ...তোমার এই কষ্ট আমার জীবনে অভিশাপ হয়ে নামবে ..
যদি তুমি সত্যিই আমায় ভালোবাসতে তবে নিজেকে তোমার জন্য ফিরিয়ে নিয়ে এসো . ..
পাগলামি তোমায় মানায় না , কাকিমার কথা ভেবে, যে কত কষ্ট সহ্য করে তোমায় মানুষ করেছেন , আজকে যদি কাকিমা বেঁচে থাকতেন তোমাকে এই অবস্থায় দেখে খুবই খুশি হতেন কি ???
তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ টুকু রাখো একটা দাবি বলতে পারো নিজেকে শক্ত করো , এইভাবে ভেঙে পড়োনা , আর কখনো তোমাকে ভাঙার সুযোগ দিয়ো না ...আমার শেষ দাবি তোমার কাছে রেখো দয়া করে ...
মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো ...
শুভ কাঁদতে চাইলেও যেন আওয়াজ বেরোচ্ছে না গলার থেকে ... শুধু প্রাণ টুকুই রয়েছে ...
ঘুরে দাঁড়াতেই হবে সমাজ এর চোখে এইভাবে প্রতিবন্ধী থাকলে হবে না ... পারবো আমি , পারবোই , এর আগে পেরেছি এখন কেন পারবো না , পারতেই হবে , মনে মনে ভাবতে থাকলো শুভ ...
আবার সে তার রেস্টুরেন্ট চালু করলো ... একজনকে তার কাজের সুবিধার জন্য রাখলো ...
খুব তাড়াতাড়ি তার রেস্টুরেন্ট এর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো খুব ভালো রান্না করে সে ..
আস্তে আস্তে শুভ যেন তার প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ সে সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত ... সে এখন খুবই বড়োমানুষ হয়ে গেছে , যেমন টি সেই মেয়েটি দেখতে চেয়েছিলো ...
সন্ধেবেলায় সমস্ত গেস্ট এর সামনে সে বসে গান করে ... গেস্টরাও খুশি হয় তার গান শুনে , সবাই তার গানের প্রশংসা করে..
একটি পরিবার আসে তাদের হোটেল এ
মা বাবা আর তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ...
সন্ধেবেলার সময় শুভ গান শুরু করলো ...
মেয়েটি যেন গান শুনে শুভ কে ভালোবাসতে শুরু করলো ..
সে রোজ সন্ধেবেলায় হোটেল এ আসতো , শুভ এর সাথে কথা বলতে চাইলে শুভ কথা না বলে চলে যেত ..
মেয়েটি একদিন শুভ এর সাথে কথা বলে ...
আস্তে আস্তে তারা ভালো বন্ধুত্বে পরিণত হয় ...
মেয়েটি শুভ কে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় ...
শুভ জানাই তুমি আগের বাড়ির লোকজন কে রাজি করাও তারপর এইসব ভেবো ...
মেয়েটি বাড়িতে জানাই আর বাড়ির লোকজন রাজি হয় শুভর সাথে বিয়ে দিতে ...
যাইহোক দুজনে দুজনের নতুন করে ভালোবাসায় পরিণত হলো ...
এত সবকিছুর পরে জীবনে আবার জন সুখ খুঁজে পেয়েছে শুভ ..
ভরসা যোগ্য মানুষ পেয়েছে শুভ এবার ..
সন্ধেবেলা হয়ে গেছে শুভ হোটেল এ বসে গান শুরু করবে ... মেয়েটি হয়তো এখুনি আসবে সেই অপেক্ষায় শুভ ...
ফোন এর রিং বেজে উঠলো ... ওপাশ থেকে কান্না মাখা কণ্ঠ ভেসে আসছে ....
বাবা শুভ .....রিনি আর নেই ... এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে আমরা হাসপাতাল এ আছি তুমি শেষ দেখা দেখে যাও ...
চোখ দিয়ে জল আসতেই শুভ সেটা মুছে নিলো ... গান শুরু করলো ...
এখন সে নিজেকে সামলে নিতে শিখেছে ... এর আগেও নিজেকে সামলে নিয়েছে সে .. এটা তার কাছে নতুন কিছু না ...
একদিন বন্ধুদের আড্ডা হচ্ছে ...
শুভ তুই তো খুবই সুখী মানুষ তোর এখন অর্থ সম্মান সবকিছুই আছে ....
শুভ বলে উঠলো যেখানে ভালোবাসার মানুষগুলো একে একে চলে গেলো , সেখানে এই অর্থ , সম্মান বিলাসিতা ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই না .....