Silvia Ghosh

Drama

1.0  

Silvia Ghosh

Drama

জীবন দর্শন

জীবন দর্শন

2 mins
1.3K


পতাকার আড়ালেলুকিয়ে থাকা উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মান্ধতাবাদকে যদি পরিবর্তন করা যেতো তাহলে একবার ভাবুন তো কত মানুষের সুরাহা হতো আর কত মানুষ বেরোজগার হতো !

যেদিন খড়ম পায়ে এক কাপড়ে শুধুমাত্র শালগ্রাম শিলা হাতে করে দাদুন ওপার থেকে এপারে এসেছিলেন উদ্বাস্তু হয়ে, সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন 'রাজনীতি যে দুই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে শত্রুতার বীজ বপন করে চলেছে, তা বোঝার মতোন শক্তি বা মানসিকতা সেই সর্বোহারা মানুষগুলো বুঝলো কোথায় ! এত কিছুর পরেও মাথায় রাখতে হবে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ'.... 

   দাদুন কে নৌকা পার করতে সাহায্য করেছিলেন বিপরীত সম্প্রদায়ের লোকই...


আমরা যখন ভারা বাড়িতে আসি তখন বোনের আটমাস, আমার চার বছর। সেই সময় ভিক্ষা নিতে আসে এক অল্প বয়সী মহিলা। যার কোলে সাত মাসের মেয়ে, আর হাতে 2¹/² বছরের ছেলে। দুই তিনদিন পর পর ভিক্ষা নিতে আসায় মা জিজ্ঞাসা করেন নাম ধাম। জানা যায় সে বিপরীত সম্প্রদায়ের বিধবা। সম্পত্তির জন্য ভাসুর, দেওররা সব নিকে করতে চেয়েছিল কিন্তু সে হিন্দুর বিধবাদের মতোন এক স্বামীতে অনুরাগী থাকতে চায় শুনে তাকে মারার ষড়যন্ত্র করে তারা। তাই সে পালিোয়ে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। আমার বোনের সাথে এক বিছানায় শুতে দেখেছি ছোট্ট সালিমা কে, এক বাটি থেকে মুড়ি খেতেও দেখেছি ওদের কে ,কারণ তখন সালিমার মা ওকে আমাদের কাছে রেখে বাড়ি বাড়ি কাজের সন্ধানে ঘুরতো। ঠাকুমাকে দেখেছি পুজো করে আমাদের সাথে ওকেও প্রসাদ দিতে। একবারো ও বলেননি ও তো অন্য ধর্মের। আসলে তাঁরা জানতেন যা ধারণ করে তাই তো ধর্ম। মানবিকতাই মানুষের ধর্ম। 


শাশুড়ি কে নিয়ে কেদার-বদ্রী ঘুরতে গিয়েছিলাম যে বার গাড়ির ড্রাইভার ছিল অন্য ধর্মের..... তবুও সারাটি রাস্তা মা কে... মা জী ,মা জী করে কতটা খেয়াল রাখতে দেখেছি তা আমিই জানি। আটদিনের ট্যুর সেরে যখন হরিদ্বারে ওকে ছেড়ে দিলাম, আমার বড় ছেলে কে বলতে দেখেছিলাম চোখ ভর্তি জল নিয়ে , 'আঙ্কেল কলকাত্তা ম্যায় জরুর আনা, পাপা কা নম্বর সে কল করনা', এক প্যাকেট লজেন্স কিনে ওর ছেলে মেয়ে কে দিতে বললেন আমার হাবি দিলাম ও তাই।

 

কাশ্মীরের ঘটনা আরো বিচিত্র। যখন কাশ্মীর যাই নীল ষষ্ঠী, পয়লা বৈশাখ, প্রথম হরিশ মঙ্গল চন্ডী সব পড়েছিল।  সব কটা আচার অনুষ্ঠান কিন্তু আমরা (আমি আর শাশুড়ি) পালন করেছি ওখানে। ফলের দোকান থেকে ফল কিনে দিয়েছিল আমাদের 20দিনের সঙ্গী পাঠান ড্রাইভার মুমতাজ। আমি তন্ব তন্ব করে খুঁজে বের করেছিলাম কাশ্মীরের রাজাদের পুরোন দেবী সিংহবাহিনীর মন্দির। সে খোঁজায় আমায় সাহায্য করছিল সেই মুমতাজ। মা , আমি নীলের ঘরে বাতি দেখিয়ে নেমে এসে যখন গাড়িতে উঠতে যাবো তখন মা আঁচল দিয়ে মুমতাজের মাথায় আশীর্বাদ দিলেন ...আর ওকে হাত পেতে প্রসাদ নিয়ে মাথায় হাত দিতেও দেখেছি। ধর্ম আমার কাছে জীবন-দর্শন । 

 মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, জাতি , ধর্ম, সমাজ ভেদে নয় তবেই তো স্বামীজীর বাণী সার্থক রূপ পাবে, তবেই তো সাম্য আসবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama