Susmita Sanyal

Tragedy

1  

Susmita Sanyal

Tragedy

ইমেইল

ইমেইল

4 mins
331


মা,


তুমি হয়তো অবাক হবে আমার এই email পেয়ে, হয়তো এটা ভাববে email আবার কেন, ফোনেই তো বলতে পারতো। শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখো, হয়তো উত্তর পেয়ে যাবে।


তুমি এবং বাবা দুজনেই আমাকে দেশে ফিরে আসার জন্য অনেক বার বলেছো। আমিও একরকম ঠিক করে নিয়েছিলাম যে ফিরেই যাবো। মেয়ে হিসেবে আমার ও তো দায়িত্ব তোমাদের পাশে থাকা, এই বয়সে তোমাদের খেয়াল রাখা। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু...


সেই ছোট্টবেলা থেকে , তোমাদের পাহাড় সমান আশা আকাঙ্খা পূরণ করতে করতে আমি হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। আমার ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলোর অনুভূতি নিজের কাছেও বড় ফিকে হয়ে গেছিলো। পড়াশুনার চাপ বাড়বে বলে, আমার নাচের ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলো ক্লাস 8 থেকে। স্কুল, tuition, ক্লাস এ rank ঠিক রাখতে, বাকি সবার থেকে এগিয়ে থাকার জন্যে এক্সট্রা ক্লাস, এই এত কিছুর মধ্যে নাচের এক ঘন্টার ক্লাস টাই ছিল আমার একমাত্র ভালো করে শ্বাস নেওয়ার জায়গা। কিন্তু একবারের জন্যেও আমাকে জিজ্ঞেস করো না তোমরা, আমি কি চাই, আমি সামলে নিতে পারবো কিনা। আমার বন্ধু কে বা কারা হবে, সেটাও তোমরা ঠিক করে দিতে সেই ছোট্ট বেলা থেকেই।এভাবে আমি নিজেও যে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সে আত্মবিশ্বাস আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম একটু একটু করে। জানো মা, সায়ন দা যখন প্রেসিডেন্সি তে ভর্তি হলো, আমিও স্বপ্ন দেখতাম ওখানে পড়াশোনা করার। কিন্তু তোমাদের ইচ্ছে মতন ভর্তি হলাম যাদবপুর এ। একমাত্র বিষয় নির্বাচনে তোমাদের সাথে আমার ইচ্ছের মিল ছিল ভাগ্যিস। কলেজে আমার সেভাবে কেউ বন্ধু হয়ে উঠলো না। আমি নিজেও কারোর সাথে বন্ধুত্ব করে উঠতে পারিনি। socialise করার মতন আত্মবিশ্বাস যে ছিল না আমার। অনেকেই ক্যান্টিন, বলাই দার দোকানে আড্ডা দিত কলেজের পর। আর আমি কলেজের ক্লাস শেষ হলেই বাড়ি ফিরে আসতাম। না তোমরা হয়তো কিছুই বলতে না late এ ফিরলে, আমি নিজেই দেরি করতে চাইতাম না, ছোটবেলা থেকেই যে বাধ্য মেয়ে তোমাদের। সেই বাধ্য মেয়ের তকমা সরিয়ে ফেলার দুঃসাহস আমার ছিল না। Graduation, post graduation দুটোরই রেজাল্ট আমার ভালো হলো। সে তো ভালো হওয়ারই ছিল। পড়াশোনার বাইরে কি বা আর করতে পেরেছি আমি।


আমার এই ছকে বাঁধা জীবন খানা কখন যেন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করলো Texas এ আসার পর। যদিও তুমি আর বাবা দুজনেই চেয়েছিলে, আমি দেশে থেকে doctorate করি। কিন্তু জীবনে বোধহয় প্রথম বার আমি তোমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে এই university র জন্যে apply করেছিলাম। জানি তোমরা কষ্ট পেয়েছিলে অনেক, বাবা তো ঠিক মতন কথা বলেনি আমার সাথে কয়েকদিন। এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে, আমাকে নিজের সাথেও লড়াই করতে হয়েছিল। কিন্তু আমি আর পেরে উঠছিলাম না। আমি এক রকম পালিয়ে এসেছি এখানে। আমার দম বন্ধ লাগতো, নিজের সাথেই নিজের এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব সর্বক্ষণ।


জানো মা, আমাদের দেশের সাথে এই দেশের অনেক ফারাক। এখানে কেউ কারোর ব্যাপারে মাথা ঘামায় না, সবাই খুব সাবলম্বী। University তে আমার বেশ কয়েক জন বন্ধুও হয়েছে। ওরা এত খানি সাবলীল, কখন যেন আমার মনের ওই অদৃশ্য বাঁধ খানা ভেঙে গেছে নিজেও টের পাইনি। আমি এখন নতুন মানুষের সাথে নিজে যেচে আলাপ করতে শিখে গেছি। প্রাণ খুলে হাসতে শিখিয়েছে আমাকে এই জায়গা টা। আমি ওই ভালো মেয়ে, বাধ্য মেয়ের তকমা খানা সরিয়ে ফেলতে পেরেছি। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতন আমিও ভুল করি, Professors দের থেকে মাঝে সাঝে বকুনিও জোটে। কিন্তু আমি অনেকটা ভালো আছি। জানো মা, সেই ক্লাস 8 এর পর আবার নাচ টা শুরু করেছি এখানে।


আর একজনের কথা তোমাকে বলার ছিল, Oliver। এখানে এক public library তে ওর সাথে প্রথম দেখা হয় আমার। ও Autistic। কম কথা বলে, একটু তেই উত্তেজিত হয়ে পরে। কিন্তু কোনোভাবে, আমরা দুজন বন্ধু হয়ে উঠি। প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসে, trekking করে। ওর যদিও কোনো ফরমাল এডুকেশন নেই। কিন্তু ও নিজের পৃথিবীতে দিব্যি রাজত্ব করছে। ওর ইচ্ছে mountaineering নিয়ে আরো পড়াশোনা করবার।পার্ট টাইম কাজ করে টাকা জমিয়ে, কোর্স করবে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর বাবা মায়ের কি ইচ্ছে ওকে নিয়ে। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল কিছুক্ষন। তারপর উত্তর দিলো, ' It's my life after all. After 18, I am an adult. So I should know what I want to do in my life. They are pretty happy that I am not a drug addict. They are enjoying their lives and I am having fun with mine.' আমি আর কথা বাড়াই নি সেদিন ওর সাথে।


যাই হোক, সেদিন যখন তুমি আর বাবা দুজনেই আমাকে অনেক বোঝালে তোমাদের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে। আমি সারা রাত ভেবেছি কি করা উচিত আমার সেই নিয়ে। একটা সময় ঠিক করেই নিয়েছিলাম ফিরে যাব। তোমাদের এই বয়সে তোমাদের পাশে থাকবো। কিন্তু কোথাও যেন আটকে যাচ্ছিলাম। বিশ্বাস করো মা, আমি দায়িত্ব এড়াতে চাইনা, এটাও ঠিক না যে, আমি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড এর জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলে ফিরতে চাই না। আমি ফিরতে চাইনা কারণ, এখানে এই জীবন টা আমি নিজের মতন করে সাজিয়ে নিয়েছি। এখানে আমার নিজের মনের সাথে টানা পড়েন নেই। এখানে নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই বাকি মানুষ দের কাছে। এখানে আমি শুধু মাত্র আমি হয়ে বেঁচে আছি। আর সেটাই আমার কাছে বিশাল একটা জয়। তোমরা কষ্ট পাবে জানি, কিন্তু হয়তো এই email পড়ে আমাকে বুঝবে। ভালো থেকো মা। আর মনে রেখো , I am just a phone call away.



Rate this content
Log in

More bengali story from Susmita Sanyal