Sampa Maji

Inspirational Others

3  

Sampa Maji

Inspirational Others

গ্রীষ্মের দুপুর

গ্রীষ্মের দুপুর

4 mins
645



একটা কম্পানিতে চাকুরীর Interview জন্য SMS পেলাম, আমার বন্ধু তন্ময় কয়েক দিন আগে পেপারের বিঞ্জাপন দেখে ফ্রম ফিলাপ করেছিল সেটারই। দেওয়া আছে interview তে পাস করলেই চাকরি পাকা , স্যালারি ভালো , কিন্তু সমস্যা টা হল কোম্পানির যে অফিসের জন্য দিয়েছে সেটা  অনেক দূরে নারায়নগড়  , এখন যেতে প্রায় ৩থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে । এর আগেও অনেক  চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু কোনোটাতেই হয়নি হয় রেজাল্ট আসেনি নয়তো Interviewতে কেটে গিয়েছি। এখন আমার চাকরির খুব দরকার, যে কোনো সম্মান জনক কাজ হলেই হবে, তাই ঠিক করেছি এই interview টা দিতে যাবো।


যদি ট্রেন মিস করি তাহলে April এর এই গরমে সমস্ত রাস্তাটা বাসে করে যাওয়া সেটা খুব কষ্টকর তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রবিবারে এমনিতেই বাস ট্রেন কম থাকে তারপর এতোটা রাস্তা, প্রথমে বাস তারপর দুটো ট্রেন চেঞ্জ করে আবার গাড়িতে তবেই পৌঁছব। এই গ্রীষ্মের দাবদাহে মধ্যে ও আমাকে যেতে হবে আর কিছু করার নেই তাই এটাই করতেই হবে চাকরির জন্য। ট্রেন গুলো ঠিক সময়ে পাওয়ার জন্য সময়ের আগেই ওদের অফিসে পৌঁছে গেলাম,  তবে ট্রেন থেকে নেমে ছুটে বাসটা ধরেছিলাম না হলে পরের বাস ১ ঘন্টা পরে,এই রাস্তায় গাড়ি খুব কম। যাইহোক ঠিক সময়ে পৌঁছে গিয়েছি এটাই ভালো।


Interview জন্য খুব বেশি জনকে ডাকেনি কোয়ালিফিকেশন দেখে ১০ জনকে ডেকেছে , আমার interview হাওয়ার পর  কিছু  খাওয়ার কেনার জন্য দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল , কারখানার ভেতরে নিজস্ব ক্যান্টিন আছে কিন্তু রবিবার  বন্ধ থাকে, বাইরে দুএকটা দোকান আছে । আমি বাইরে এসে দেখলাম দুপুরের জন্য সব দোকান বন্ধ হয়েগিয়েছে । তবে এখানে একটা কল দেখতে পেলাম সেখান‌ থেকে জল খেলাম আর নিয়ে নিলাম । তবে আমার মতো আর  যারা এসেছে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তার হয়তো এখানে সমন্ধে আগে থেকেই জানে।কিন্তু আমি , বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা ব্যাগে বেশি করে খাওয়ার নিয়ে আসতে বলেছিল যদি কিছু না পাওয়া যায় তাহলে কিছু অন্তত খেতে পারবো কিন্তু আমি ভারি ব্যাগ বওয়ার ভয়ে কিছুই রাখিনি ভেবেছিলাম যখন খিদে পাবে কিছু কিনে নেব। কিছু কিনে খেয়ে নেব।ট্রেন থেকে নেমে তাড়াহুড়োর জন্য কিছু খাওয়া হয়নি ভেবেছিলাম কাজ হয়ে গেলে সেখানেই খেয়ে নেব , কিন্তু এখান দেখছি কিছু খাবার নেই, শুধু জল পেলাম তাকেই পেট ভরে খেয়ে নিলাম। ট্রেশন প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে, তার ওপর রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখতে পারছি না। কিছু সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে কিছু না পেয়ে হাঁটা দিতে লাগলাম , আজকে তাপমাত্রা সবথেকে বেশি , আগেই খবরে শুনেছিলাম দুপুরে বাইরে বেরতে বারন করেছে বাতাসে লু বইবে কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না তাই বেড়িয়েছি ।  এখানের কাজ শেষ বাড়ি ফিরতে হবে ,  আজ আবার ছাতা আনতে ভুলে গিয়েছি , তাই বাধ্য হয়ে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে মধ্যে কোনো ক্রমে পথ চলতে লাগলাম মাথার ওপর সূর্যের তাপ আর রাস্তার ওপর গরম লাভা  ,এক কিলোমিটার হাঁটার পর মনে হচ্ছে এই রোদের তাপে  সানস্টোক হয়ে যাবে,এই ভর দুপুরে রাস্তা তেমন কোনো লোক জনকে দেখতে দেখা যাচ্ছে না সমস্ত রাস্তা ঘাট খাঁ খাঁ করছে, মনে হচ্ছে এই গরমে বেশি ক্ষন থাকলে মারাই যাবো আর বোতলে ও জল ও শেষের পথে সেরকম কোনো জায়গায় ও দেখতে পাচ্ছি না যে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটবো ।এমন সময় একজন লোক সাইকেল থেকে নেমে বলে ,

- তোমাকে তো লোকাল মনে হচ্ছে না , তাই এই ভরদুপুরে কোথায় গিয়েছিলে  তোমার কাছে তো ছাতা নেই , আমার ছাতাটা নাও।

এমনিতেই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার ওপর অচেনা লোকের বকবকানি , বিরক্ত সঙ্গেই বললাম,

-  না লাগবে না,এই সামনের কারখানাতে গিয়েছিলাম, তা আপনার কি কিছু অসুবিধা আছে।

- তা নয়, তুমি একা হাঁটছো তাই ভাবলাম এই ফাঁকা রাস্তায় একা কেন হাঁটবে ,তাই তোমার সাথে সঙ্গ দিতে এলাম , এই রৌদ্রে আমার ছাতা নিয়ে কিছু টা পথ যেতে পারে তার পর ফিরিয়ে দেবে, তবে আমি তোমাকে একে বারে দিতে পারবো না।

- আমি কি আপনাকে চেয়েছি ছাতা।

- না , আমার কাছে একটা গামছা আছে ,তাই তোমাকে ছাতাটা দিচ্ছিলাম। বলছি তোমার নাম টা তো বললে না।

- না জেনে কি করবেন।

- অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না।

- না কোনো অসুবিধা নেই , আমার নাম সুমন , বাড়ি ঘাটালের ওই দিকে।

- বাড়ি কিন্তু জিজ্ঞেস করিনি ,তবে তুমি আগেই বলেদিলে।সে তো অনেক দূর, তা একাই এসেছো ।

- আচ্ছা আপনি গায়ে পরে এতো কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন বলুন তো।

- না মানে , তোমার শুকনো মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক ক্ষন কিছুই খাওয়া হয়নি, তোমার চলা দেখে মনে হচ্ছে তুমি ক্লান্ত।

- আচ্ছা আপনি কি মন বিজ্ঞানী , দেখে সব কিছু বলে দেন।

- না আমি চাষি বাসি মানুষ ওতো কিছু জানি না , আসলে তোমাকে দূর থেকে লক্ষ্য করছি দেখে মনে হল ক্লান্ত তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।

- হ্যাঁ অনেক দূর , বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

- বলছি যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমার বাড়ি যাবে , ওই সামনেই আর কিছু টা গেলই আমার বাড়ি , এই দুপুরে একটু জল বাতাসা খেয়ে যেতে  ।

লোকটার কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম , ভাবছিলাম লোকটা আমার সাথে ইয়ার্কি করছে তাই ও তার সাথে উত্তর দিচ্ছিলাম , কিন্তু একজন অচেনা ছেলে কে প্রথম পরিচয়ে বাড়িতে খাওয়ার জন্য ডাকবে ভাবি নি , কিন্তু যতো খিদে পেলেও হ্যাঁ বলতে পারবনা তাই এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললাম,

- না ,আমার ট্রেন মিস হয়ে যাবে।

- আরে পরের ট্রেনে চলে যাবে ,আমিও তো একটু পরে ট্রেশনে যাবে আমার এক আত্মীয় কে আনতে , তোমাকে না হয় আমিই সাইকেল করে পৌঁছে দেব।

আমি আর না জিজ্ঞেস করে থাকতে পারলাম না,

- আচ্ছা আপনি যে , চেনা নেই জানা নেই অচেনা একজন ছেলেকে বাড়িতে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যাবেন  বাড়ির লোক কিছু বলবে না।

- চিনি না তো কি হয়েছে তোমার নাম তো জানি ,তাছাড়া এই ভরদুপুরে অতিথিকে না খাইয়ে ছাড়লে বাড়ির অমঙ্গল হয় , আর তুমি তো আমার ছেলের বয়সী মানে আমার ছেলের মতো।


 গ্রীষ্মের চরা গরমে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় এই আগন্তুকের  কথা ফেলে দিতে পারলাম না ,তার সঙ্গে তাদের বাড়িতে চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখলাম গরিব গ্রাম্য মানুষের আতিথেয়তা,হয়তে মেনুতে তেমন আহামরি কিছু ছিল না কিন্তু নিজের খাবারের ভাগ থেকে  অচেনা এক ছেলে কে এমন ভালো বেসে দেবে ভাবা যায় না ।রাস্তায় যখন হাঁটছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এই গরমের দাবদাহের হয়তো মারাই যাবো আর বাড়ি ফিরতে পারবো না কিন্তু আমার সাথে হল অন্য রকম।


ঠিক একবছর আগে আজকে দিনের  সেই ঘটনা টা মনে পরে গেল , অন্যান্য বছরের মতো এই বছর ও গ্রীষ্ম এসেছে তবে মানুষের অজান্তে প্রকৃতির এই পরিবর্তনের ফলে এখনো আসেনি গ্রীষ্মের দাবদাহে ভরা দুপুর।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational