Debanjoly Chakraborti Chakraborti

Romance Fantasy Others

4.0  

Debanjoly Chakraborti Chakraborti

Romance Fantasy Others

গোপন অনুভূতি

গোপন অনুভূতি

4 mins
271



ইতি ফুলসজ্জার খাটে ক্লান্ত শরীর ও ক্লান্ত চোখ দুটোকে জোর করে টেনেটুনে খুলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদিকে রাত প্রায় এক টা বাজতে চললো বর মহাশয়ের কোন পাত্তাই নেই। তাতে অবশ্য কনের মাথা ব্যথাও নেই, কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে যদি রেগে যায় ঐ হুকোমুখো মাস্টার মসাই!! তাই ঘুমতে পারছে না।

না, না ইতির বিবাহ পূর্ব অপূর্ণ কোন প্রেম কাহিনি নেই!!

জেনেশুনে এই মেয়ের প্রেমিক হয়তো দুঃসপ্নেও কেউ হতে চায়নি।


কেন?? ,,,ওই যে প্রবাদ আছে রতনে রতন চেনে,,,, হয়তো এই" ইতি" নাম্নী নারী রত্নটির সহিত তার প্রেমিকা পরিচয় প্রদানকারী পুরুষ রত্নটির এ যাবত কাল অব্দি সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।


তাছাড়াও ইতির কন্ঠে নারী বাদী শ্লোগানও পথ রুদ্ধ করতে পারে  আমাদের কল্পিত প্রেমিক প্রবরের।


তাহলে তার নিরাসক্ত তার কারণ জানতে চাইছেন বুঝি তবে সংক্ষেপে বর্ননা করছি।


ইতির বয়স যখন ১০ বছর,, কোন একদিন তার মা - বাবার প্রচন্ড ঝগড়া হয় ।প্রায় সাড়ে তিন দিন ব্যপি চলে এই গৃহযুদ্ধ ।রনকৌশলে নিপুন যোদ্ধারা ঘরের ঘটি, বাটি,ফুলদানী,বালিশ, বিছানা,আসবাপত্রের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছেন।

এতক্ষনে গৃহিণীর মনে পরে তার সাজানো সংসারখানির যে শ্রী, তার আর কিছুই অবশিষ্ট নাই।


অবশেষে ঘরের ঘরনী রনে ক্ষ্যন্ত দিয়ে বিরহী আত্মার মতো দ্বিপ্রহর বেলা থেকে রাত্রির প্রথম প্রহর অব্দি এক নাগাড়ে অশ্রু বির্সজনে বিন্দুমাত্র ত্রুটি না করে সততার সহিত সুসম্পন্ন করে।


এমতাবস্থায় তার বড় মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে পরম আদরে মাথায় হাত দিয়ে সেই দিব্য মন্ত্র দান করে " মা,,, সংসারে মেয়ে মানুষের কোন দাম নাই, যদি দাম পেতে চাস, যদি মানুষ হতে চাস তবে উপার্জন করবি। তাহলেই সমাজে তোকে সবাই সম্মান করবে মানুষ ভাববে। নইলে আমার মতো লাথি ঝাটা খেতে হবে,,,, বলেই অশ্রু সিক্ত নয়নে, রোদনে ক্লান্ত শরীরে জরিয়ে ধরে তার সন্তান টিকে।""


যদিও ইতি তার মায়ের ভাস্য মতো লাথি, ঝাটা খাওয়া কোনদিন চোখে প্রতক্ষ করেনি তবুও মায়ের এহেন দশা তার কোমল মনে একটি আবেগযুক্ত সংকল্পের জম্মদিল এবং সেই লক্ষেই নিজেকে তৈরির পথে এগিয়ে চললো।


ইতির পরিবারে আরও এক বোন ও একটি ভাই বর্তমান। গ্রাজুয়েশন এর পর, প্রায় পাঁচটি বসন্তেও যখন ইতি তার কৃত সংকল্প বাস্তবায়নে অসফল। তার কনিষ্ঠ সহদোরাটিও যখন পূর্ণ যৌবনা, তখন তার গর্ভধারিণি মাতা পূনরায় পরম আদরে মাথায় হাত দিয়ে বলেন " দেখ পৃথিবীর সবাই তো তোর বাবার মতো নয়, আমি তোর জন্য এমন জোড় খুঁজবো যে তোকে রানি করে রাখবে।" চিরকালের মাতৃ- পিতৃ আদেশে নতশিরা ইতি এবারও বাধ্য সন্তানের দায়িত্ব পালন করলো।

এবার বুঝি ভাবছেন তাহলে ইতি বাসর রাতে এহেন নির্লিপ্ত কেন??


বলছি, বলছি একটু দাড়ান না বাপু,,,,


ওই যেদিন মলয়, মানে ইতির সেই হুঁকোমুখো বর,,,,যেদিন ইতিদের বাড়িতে কনে দেখার উদ্দেশ্য রওনা দেয়ার কথা সেদিন কোন কারনে তার অতি জরুরি একটি কর্ম সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে। তাই তার মাতা ও পিতা অতি দুঃখ মনে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে পদার্পণ করেন।


এই দিনে খরস্রোতা ইতি রুপ নিয়েছিল কবির আঁকা পদ্মপুকুরে।


এই স্থির পুকুর হতে মলয়ের মা নিজ বাগিচা রুপি গৃহ লালনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেলেন। কাল বিলম্ব না করে বিবাহের দিন তারিখ নির্ধারণের পর বেশ মিষ্টি মুখ সহ মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ন,ও নৈশভোজ শেষে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করলেন। আর ছেলের জন্য নিলেন সরস্বতী পূজায় তোলা হলুদ পুস্পে সজ্জিত কেশে, লালে পাড়ের সাদা শাড়ি তে সমান্য আভরণে একখানি অসামান্য পট।


চিরকালের চুপচাপ, চিন্তাশীল, কর্মী, সাহিত্যমনস্ক ও মেধাবি মলয় একটি বার পট খানিতে কন্যার মুখর্দশন করেন মাত্র। তারপর মাতৃ আজ্ঞা শিরো ধার্য বাক্য ব্যয়ে ততকালীন কর্ম সম্পাদন করেন।


ইতোমধ্যে ইতি কয়েক বার মলয়ের সহিত সাক্ষাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়,,,, শুধু মলয়ের কারণে। মলয় সিদ্ধ হস্তে বার বার সন্তর্পণে দেখা হওয়া বিষয়টিকে নিস্ফল করেছে।

যেহেতু বিবাহ মাত্র পনের দিনের ব্যবধানে ছিলো। এই সামান্য সময়ে ইতির হাতে মলয়ের নম্বর টুকু ও তার পেশা জানা ছাড়া না

একখানি প্রতিচ্ছবি আছে না আছে কোন টান।


এর উপর মলয়ের কলেজে অধ্যায়ন রত একটি ছাত্রী একদিবস বাড়ি বয়ে এসে মলয়ের রসকসহীন, রাগি, অহংকারী, সহ আরও কিছু গুনের এমনতর বর্নণা দিয়েগেছে যে ইতির মনে এই ধারনা বদ্ধমূল হয়েছে,, বিবাহের কয়েকদিনের মধ্যে সে চিরকালের মতো পিতৃগৃহে প্রত্যার্বতন করবে। এতো গেলো পূর্বের কথা,,

বর্তমানে তাই ইতি মনেমনে স্থির করে যে আজ রাতে নব বিবাহিত স্বামী কে তার মানসিক ও শারীরিক মিলনে অপারগতার কথা জানাবে। কিন্তু সে ব্যক্তির অনুপস্থিতি মনে আনন্দ আনলেও কথা অসমাপ্ত থাকার ব্যথা অনুভুত হতে লাগলো।


অন্তপর বর বাসরে প্রবেশ করলেন। তার সৌম্যকান্তি চেহারা দর্শনে ইতির সকল সাজানো ভাষা মনের কোন গহীন কোন এ লুকিয়ে গেলো। বিবাহের সবটুকু সময় নিজের উপেক্ষারত চোখ যুগলে অকারনে এক অপরাধ বোধ ভেসে রইল।


কিন্তু কেন বড়ই চেনা লাগছে এ মুখ??, এই চোখ,,,??, এই চিন্তায় যখন মস্তিষ্ক কে পিড়ন করছিল ইতি। ততক্ষনে মলয় বলে উঠলো ""তুমি ঘুমাও অগ্নিকন্যা অনেক রাত হলো,,, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। "


অগ্নিকন্যা!!!!!

এবার ইতি বুঝল এতো তার হ্যবলা কান্ত,,,,, কৌশরে যার নিবেদিত প্রেমকে অস্বীকার করেছিল ভবিষৎ সুন্দর করবে বলে। না, আজো ভালোবাসে না হ্যবলা কান্তকে,, কিন্তু অভিমান এ যখন ইতির কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিল,,খুব মনে পড়তো তার একমনে চেয়ে থাকাটাকে, নিজের টিফিনকে ইতির অধিকারে পরিনিত করাকে,হোমওয়ার্ক গুলো করে দেয়াকে, বকবক সহ্য করাকে অথবা ইতি বাড়ি না যাওয়া পর্যন্ত দারিয়ে থাকাকে তার এতো কেয়ার দেখেই তো নাম দিয়েছিল হ্যবলা কান্ত,,,, আর ইতির প্রতিকথায় জ্জ্বলে ওঠা দেখে মলয় নাম দিয়েছিল অগ্নিকন্যা ।


না আজ নিদ্রা দেবীর কোলে যাবে না ইতি তার হ্যবলা কান্তকে তো তার কত কথা বলার আছে। তাকে আজ বুঝতেও ইচ্ছে করছে বড্ড।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance