Debanjoly Chakraborti Chakraborti

Romance

3.4  

Debanjoly Chakraborti Chakraborti

Romance

❤তোমায় ভেবে❤ পর্ব- ২

❤তোমায় ভেবে❤ পর্ব- ২

11 mins
266


নিজের রুমে এসে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেয় রাতুল,,,,,

এতো দিন পরে ফিরে এলাম কই কারও তো আমায় নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। আমি কালই চলে যাব। (একাই কথা বলতে বলতে ব্যগ খুলে কাপর নিয়ে বার্থরুমে চলে যায়)

কিছুক্ষণ পর,,,,মহীধর নামের প্রায় পঞ্চশ উদ্ধো একজন কাজের লোক রাতুলকে ডাকে,,,

মহীধরঃঃঃ রাতুল বাবা আসবো??

রাতুলঃঃঃআবেগ মিশ্রিত কন্ঠে,, মহিকাকা!!! ,,,হ্যা ভতরে আসো,,

মহীধর কুন্ঠিত পায়ে ভিতরে ডুকলো।

রাতুল তার মহিকাকার দু হাত ধরে বললো কেমন আছো কাকা?? কত বছর পর তোমাকে দেখলাম।

রাতুলকে পাঁচ বছর পর দেখে তার মহিকাকার মুখের কথার বদলে দুচোখে জল চলে আসে। সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পরে যখন রাতুল যে কোন জিনিসের জন্য তার মহি কাকার জামার কোন টেনে ধরতো। রাতুল মহিকাকার পিঠে চরে ঘোড়া ঘোড়া খেলতো, কাঁধে চড়ে নদীর চরে ঘুরে বেড়াতো, কালির মেলায় যেতো।

আস্তে আস্তে যখন একটু বড় হলো তখন তার সকল দুষ্টুমিকে ঢাকার জন্য মহিকাকার চেয়ে আপন জন আর কাউকে পায় নি রাতুল। দুপুরে চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে যাওয়া, রাত্রে নিঃশব্দে বের হয়ে বন্ধু দের সাথে আড্ডা দেয়া এই সবকিছু সম্ভব হয়েছিল মহিকাকার জন্য।

মহিধরের জীবনে আর একজন অবশ্য ছিল সবসময়। আজো আছে। তাকে দেখেই তো শৈশব থেকে মাতৃ স্নেহে বঞ্চিত মহিধরের সকল অতৃপ্তি কেটে গেছে। সে তো কাছেই ছিল। আর ছোটবাবু তো সেই যে চলে গেলো আর পাঁচ পাঁচটি বছর পেরিয়ে আজ এলো।

এতো গুলো বছরে তার সেই ননীর পুতুল,অতি আদরের ছোটবাবুর অনুপস্থিতি এতো বড় বাড়িটাতে এতো মানুষের মধ্যেও মাঝে মাঝে দুচোখ ভরিয়ে দিত। অকৃতদার মহিধরের ব্যপ্তিহীন জীবনে তার ছোট বাবুর অভাব তাকে আনমোনা করে দিত । 

(মহিধরের চোখের জল মুছেদিয়ে,,)

রাতুলঃঃঃ মহি কাকা কি হলো কথা বলবে না আমার সাথে। খুব মনে পড়তো তোমার কথা জান।

প্রথম প্রথম তো ঠিক মতো ক্লাসেই যেতে পারিনি।ঘুমের মধ্যে মনে হতো সময় হলে তুমি ঠিক ডাকবে। আবার কত দিন রাত্রে খাওয়াও হতো না পড়তে পড়তে ঘুমাতাম, বাড়িতে তো তুমি ডেকে খাওয়াতে কিন্তু ওখানে তো তুমি ছিলে না। কি যে বদ অভ্যাস করে দিয়েছিলে। তোমাকে ছাড়া জীবন চালাতে আমাকে রীতিমতো নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে।

রাতুলের কথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে মহিধরের তার ছোটবাবুর কষ্টের দিনগুলোকে কল্পনা করে এক তীব্র ব্যথা বুক থেকে গলা বেয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

"ভালো করেন নি বড়বাবু অতোটুকু মানুষকে অতো যন্তণার মধ্যে ঠেলে দিয়ে। "মহিধরের অভিমানী মন বলে উঠলো।

রাতুলঃঃঃ( অবাক হওয়ার ভান করে)মহিকাকা তুমি কথা বলছোনা কেন?বোবা হয়ে যাওনি তো??দেখি দেখি মুখটা খোলো। জানই তো আমি এখন ডাক্তার। চিন্তা করোনা এক বার ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। মুখটা খোল জ্বিহ্বাটা বের করোতো।

চিন্তার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে রাতুলের কথায় হেসে ফেললো মহিধর।.....

ঃঃঃ তুমি এক্কেবারে আগের মতোই আছো ছোটবাবু।

ঃঃঃ আমি তো আগের মতোই আছি কিন্তু তোমরা পাল্টে গেছো। আর আগের মতো ভালোবাসো না আমাকে।

কতক্ষণ হলো এসেছি কারও কি আমার কথা মনে পরে? ক্ষুধায় যে জীবন গেলো আমার কে বোঝে?

আগে তো কত বলতো রাতুলদা এটা কর সেটা কর এটা খাও সেটা খাও। আর এখন এতোক্ষণ যে হলো এসেছি তার কোন পাত্তা আছে? তাই থাকো তোমরা আমি কালই চলে যাব।

মহিধর জানে রাতুল অনুরাধার কথা মানে সবার প্রিয় ফুলদির কথা বলছে। মেয়েটা সেই কোন ভোরে উঠে রান্না শুরু করেছে, রান্না শেষ করে, তারপর নাট মন্দিরে পুজো দিতে গেছে। বোধ হয় ছোটবাবুর জন্য মানত ছিল।

ঃঃঃ অনু মা তো নাট মন্দিরে গেছে পুজো দিতে, এই কিছুক্ষন হলো।

ঃঃঃঃ তাহলে তোমার অনু মা এখনো ঠাকুরঘরে দিন কাটায়। ওই মাটির মূর্তির সামনে বসে বসে একা একা কথা বলে?? কি বল,,,,

ঃঃঃ হ্যা,,, যেমন তুমি এখনো ঠাকুর দেবতাকে বিশ্বাস কর না।

ঃঃঃ যা নেই তাকে বোকারা বিশ্বাস করে।

ঃঃঃ এই,,,,,এই শুরু করলে তো। এসেই শুরু হলো তোমার ঠাকুরের নামে নিন্দে বন্দনা। আমি তোমার কথার কোন উত্তর দিব না। সে তুমি অনু মাকে জিজ্ঞেস করোগে।

ঃঃঃ আসলে তো অবশ্যই করবো। তার তো টিকিটিরও দেখা নেই

দরজার কড়ার আঘাত,,,সুমিষ্ট কন্ঠ কেউ একজন বললো

ঃঃঃ ভেতরে আসবো।

ঃঃঃ কাংখিত কন্ঠখানিকে চিনে নিতে এক সেকেন্ড ও দেরি হয় নয় রাতুলের। আর এই এক সেকেন্ডে "ভেতরে আসবো "কথাটি কয়েকশ বার অনুরণিত হতে লাগলো মনে।

ঃঃঃঃ কে ফুল? এসো মা এসো আমি তো এখানেই আছি। ( রাতুলের বিহ্বলতা দেখে মহিধর বলে উঠলো)

অনুরাধা ঃঃঃ আস্তে করে ভিতরে এসে নত মস্তকে সসংকোচে বলে উঠলো না মানে পুজোর আর্শিবাদী ফুল এনেছিলাম, মাথায় ছোঁয়াতে হবে আর একটু প্রসাদ নিতে হবে।তুমি একটু ছুয়ে দাও না কাকা।

অনুরাধাকে দেখে স্তব্ধ রাতুল।পাঁচ বছর আগের সেই পনেরো বছরের কিশোরী মেয়েটি আজ কুড়ি বছরের সদ্য যৌবনা। সোনার রং , মাথা ভত্তি ভেজা চুল, লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, প্রসাধন হীন মুখ, হালকা গয়না আর চোখে কাজল তাতে মনে হচ্ছে একটি পদ্ম সদ্যই তার পাপড়ি খুলেছে।

মহিধরঃঃঃ তা কি করে হয়। আমি কেন দিব? সেই সকাল থেকে তুমি উপোস আছো। ছোট বাবুর জন্য তুমি পুজো দিয়েছো। আর আমি এই কাপরে আর্শিবাদি ফুল ছোঁয়াতে পারবো না।

আর আমার অনেক কাজ বাপু বরং তুমিই দাও আমি যাই।

মহিধর রাতুল ও অনুর শৈশবের সাক্ষী, কৈশোরেরও সাক্ষী। সে তো জানে তাদের প্রানের বাঁধন যা তিল তিল করে তৈরি হয়েছিল সবার অলক্ষে শুধু মহিধরের সামনে।

সেই সে বার যখন ছোট বাবুর এক বান্ধবী সবার আড়ালে নিয়ে গিয়ে কি না কি অসভ্যতামী করেছিল। অনু মায়ের সে কি কান্না। পরে ছোট বাবু কত চেষ্টা করে রাগ ভাঙ্গিয়েছিল।

আবার ছোট বাবুও তো কম যেতো না। অনু মাকে রাস্তায় কোন ছেলে কিছু বললে মেরে একেবারে রক্ত বের করে ছাড়তো।

আজ এতো দিন পর একটু থাক ওরা নিজের মতো।

( অনুরাধা রাতুলের চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে আর্শিবাদি ফুলটা হাতে নিয়ে। রাতুল হঠাৎ করে ঘুরে দ্বারায়,,,,,,,,,, )

রাতুলঃঃঃ এতোক্ষণে মহারানীর সময় হলো??

অনুঃঃঃ আগে আর্শীবাদি ফুলটা নেও। তার পর যত পার বকো। ঘুরে দারাও তো,,,

রাতুলঃঃঃ না ঘুরবো না। কতক্ষণ হলো এসেছি ,,, আর তুই কোথায় না তোর ঠাকুরের কাছে। এতো দিন তো তাকে নিয়েই ছিলিস। তাই বলে আজো?

অনু ঃঃঃ হ্যা আজো,,

 

রাতুলঃঃঃ যা তবে এখানে আসার কি ছিল। ঠাকুর ঘরেই থাক গিয়ে।

অনুঃঃঃঃ তাই বুঝি,,,,, বলেন এগিয়ে এসে রাতুলের মুখে প্রসাদ খাইয়ে দিলো।

হাসতে হাসতে বললো,,,

-----তুমি তো দেখি আগের মতোই আছো।

অনুকে এতো কাছে দেখে রাতুল নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়,,,

ঝট করে অনুর হাতটা ধরে,,,,একদম বুকের কাছে নিয়ে এসে ,,,,

রাতুলঃঃঃ আমি তো একই আছি,,,, (গভীর ভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে) কিন্তু বাকি সবাই কি আগের মতো আছে?

রাতুলের দৃষ্টি হঠাৎই বড় কঠিন মনে হয় অনুর।

তবে পাঁচ বছর পর কাংখিত ছোঁয়ায় এক অনাবিল আনন্দো ছেয়ে গেলো অনুর মনে, অদ্ভূত শিহরণ খেলে গেলো সম্পূর্ণ শরীরে।সেই চোখ, সেই অধিকার, সেই দাপট, সেই ছোঁয়া কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যায় অনুরাধা। অনুভব করতে থাকে রাতুলের বেড়ে চলা নিশ্বাসের শব্দ। দুটি হৃদয়ের স্পন্দনের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা।

খানিক পরে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে হাতটা ছারিয়ে নিয়ে অনুরাধা ,,,,,

অনুঃঃঃ; যাচাই করার মনটা যদি একই থাকে তাহলে আশা করি মুখে বলতে হবে না।

রাতুল শুধু একটা বড় দীর্ঘশ্বাসে চাপা কষ্ট কে লুকাতে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি প্রসারিত করলো।

কত কথা জমে আছে মনের মাঝে কিন্তু ও চোখের দিকে তাকিয়ে সব হারিয়ে যাচ্ছে।

এ অনু যে তার এতো দিনের কল্পনার থেকে হাজার গুণ সুন্দর।

ওই চোখের গভীরতা মাপার মতো আর সাহস পাচ্ছে না রাতুল।

শুধু মনে হচ্ছে তার অনুর আগুন রাঙ্গা রুপ, সাগরের মতো গভীর চোখ তাকে পুরিয়ে ফেলবে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

তবু এক খন্ড কালো মেঘের মতো বুকের গভীরে লুকানো ভয়, কারও তীব্র ব্যঙ্গাত্বক স্বর, মোবাইলের স্কিনে অনু আর শুভর ক্লোজ ফটো দেখা, আর সেসব কে ভুল ভাববার আপ্রান প্রচেষ্টা সব মনে পরে যায় রাতুলের।

এতো লড়াই করেও আজ অনুকে দেখে কোথাও চেপে রাখা যন্ত্রণা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে।

অনুঃঃঃ নিচে চলো,,,৷

রাতুলঃঃঃ যা আমি আসছি,,

অনু সামনে এসে,, মৃদুস্বরে বলে উঠলো,,,

ঃঃঃঃকি হলো এসেই মন খারাপ নাকি?? খেতে হবে না?

অনুর চোখের দিকে চেয়ে শুধু একটি কথাই বললো

,,,,,হুম,,,,,

অনু ঃঃঃতোমার শহরের বান্ধবী মনে হয় ক্ষুধায় পাগল হয়ে গেলো।

রাতুলঃঃঃঃসম্বিত ফিরে,,,,,আচ্ছা আচ্ছা চল নিচে,,,,বাবা কোথায়? বাড়ি এসেছে?

------ না,,, জ্যেঠামসাই উত্তর পাড়ার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে গেছে, ঝামেলা হয়েছে শুনলাম।

আজ তো যাওয়ার কথাই ছিলো না কিন্তু,,,,,,

---- থাক,,, তোকে অতো সাফাই দিতে হবে না,,,,,

চুপ করে যায় অনু,,,,বুঝতে পারে রাতুলের বড় অভিমানের জায়গা এটা,,,,,, তা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো,,,

দড়জার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল অনু।

অনুর যাওয়ার দিকে লক্ষ করে রাতুল অভিমানি কন্ঠে হঠাৎ বলে উঠলো,,,,,

রাতুলঃঃঃ শুনেছি আজকাল শুভর সাথে তুই খুব ডেটে যাচ্ছিস।

স্তব্ধ অনু এ কি শুনছে সে? আর এ কথার কি উত্তর দিবে সে??

কি প্রমান আছে তার কাছে যে এই পাঁচটি বছর শুধু রাতুলকে ভেবেই কাটিয়েছে।

পাওয়া না পাওয়ার হিসেব ভুলে প্রত্যেকটা মিনিট, প্রত্যেকটা সেকেন্ড, দিন,রাত,বছরের প্রতিটা মূহুর্ত রাতুলে অস্তিত্বের অভাব অনুকে কত যন্ত্রণা দিয়েছে।

কি পরিমান শূন্যতা গ্রাস করেছিল তাকে।

আজ এই খুসির দিনে রাতুলের এই একটি কথাই অনুর জমানো সমস্ত শক্তি,সপ্নকে একমূহুর্তে উরিয়ে নিয়ে গেলো।

যেন হোমের পবিত্র আগুনের উপর আকর্ষিক বর্ষনে সমস্ত যজ্ঞ পন্ড করে দিলো ।

দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাড়িয়ে,,নিজেকে একটু ধাতস্ত করে,,,,,,

অনুঃঃঃও,,,, তাই জানো বুঝি? তবে আমি আর কি বলি বলো,,,

বলেই আগত অশ্রু ধারাকে লুকোতে তারাতাড়ি চলে গেলো অনু,,,,

অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে রাতুল,,,

নিজের মনেই বলে উঠে,,,,,

রাতুলঃঃঃঃ সিট,,,, হোয়াট হ্যাব আই ডান,,,

নিজের এ দুস্কর্মে নিজেই লজ্জিত হলো রাতুল। অনুর ছলছল চোখ বুক থেকে বেড়িয়ে আসা কান্নার রেস, ধরা গলা কোন কিছুই তো অচেনা নয় রাতুলের। তবে কি অকারণেই তার অনুকে আঘাত করলো সে? শুধু সন্দেহের বসে অন্যের কথায় এ কি করলো সে?

তার এ মূর্খের মতো আচরনে মেয়েটা কত কষ্ট পেলো। খানিক পরে এ ভেবেই ঘর থেকে বাইরে যেতে উদ্দত হল রাতুল। এমন সময় মহিধর দরজায় এসে,,,,

মহিধর ঃঃঃ ছোট বাবু,,,, বড় বাবু তোমার জন্য খাওয়ার টেবিলে অপেক্ষা করছে।

রাতুলঃঃঃ ভ্রু কুচকিয়ে,,,, তাই!!!!

,,,,ওকে চলো।

একটু দাড়িয়ে,, রাতুল ব্যগ্র কন্ঠে মহিধরকে জিজ্ঞাসা করল,,

রাতুল ঃঃঃমহিকাকা,,,, অনু কোথায়?

মহিধর ঃঃঃ ফুলমা তো টেবিলে সবাই কে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

রাতুল চিন্তিত স্বরে,,,

ঃঃ; ও,,

রাতুলের বাবার নাম রথিন মুখার্জি তিনি ইংল্যান্ড থেকে ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে আসলেও বিশেষ কারণে তিনি এখন কয়েকটা গার্মেন্টস এর মালিক। তার চার পাশের লোকজন ও গামেন্টসের দায়িত্ব এটাই তার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।

রাতুলের দাদু রমাপ্রসাদ মুখার্জি তিনি ইংরেজদের আমলে প্রভাবশালী তরুন বিপ্লবি জমিদার ছিলেন। আর রাতুলের পূর্বপুরুষরা দীর্ঘ দিন এই গঙ্গাছড়া উপশহরটির একছত্র জমিদার হিসেবে তাদের জীবন অতিবাহিত করেছেন।

বর্তমানে রাতুলেরা তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল এই পূর্ব পুরুষদের দ্বারা নির্মিত অট্টালিকায় থাকে। রাতুলের পরিবার শুধু নিচতলা আর দ্বিতীয় তলার কয়েকটা ঘর ব্যবহার করে উপরের দিকটা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এতোবড় বাড়িতে রাতুল থাকে দোতলার দক্ষিণ দিকে সবচেয়ে বড় ঘরটাতে। আধুনিকতা ও সাবেকিয়ানার মেল বন্ধন সমস্ত বাড়ির ইনটেরিয়ার ডেকোরেশন যে কারও চোখে পড়বার মতো ।

রাতুলের ঘরের সাথে আছে ধবদবে সাদা টাইলস লাগানো বেলকোনি তার কিছুটা জুরে সবুজ প্লাস্টিক গ্রাস কার্পেট আর উপরে ঝুলোনো রাতুলের পছন্দমত কিছু ফুল গাছ। এই জায়গাটি ওর সবচেয়ে পছন্দের।এতো দিনেও তার ঘরের বিন্দুমাত্র পরির্বতন হয়নি। কেউ যেন ফেলে আসা সময়কে তার সর্বস্ব দিয়ে আটকে রেখেছে।

তার দুটো ঘর পেরিয়ে একটা রুমে টিনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছারা দোতলার পূর্বদিকের একটা ঘরে রথিন বাবু আর মৃণালিনী দেবী থাকেন। নিচের তলায় কিচেন, ডাইনিং, আর সুসজ্জিত লাউঞ্জ। তার পাশেই দেশি বিদেশি বইয়ে ভর্ত্তি লাইব্রেরি, তারপর রাতুলের আশি উদ্ধ দাদু রমাপ্রসাদ বাবুর ঘর, তার পাশের রথিন বাবুর অতি আদরের, সকলের অতি স্নেহের অনুরাধার ছোট্ট রুম ।

আর বাড়ির পিছনের দিকে সার্ভেন্টস কোয়াটার তো আছেই।

বাড়ির চারদিকে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুরে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের বাগান। সাথেই কৃষ্ণের প্রাচীন মন্দির ও বিশাল পুকুর।

                     ******************

রাতুল --মহিকাকা টিনা টেবিলে গিয়েছে?

মহি---আমি টিনা মা মনিকে ডেকে তোমার কাছে এসেছি। বললো দেরী হবে।

রাতুল--- ওহ,,,,, তুমি যাও আমি টিনাকে নিয়ে আসছি। টিনা কোন রুমে আছে?

মহিধর ----,,,,,,ওই যে ওই রুমে।

সামনের দিকে আঙুল নির্দেশ করে।

রাতুল টিনার দরজা কাছে গিয়ে হালকা নক করে,,,

রাতুল ---- টিনা, নিচে চলো খাবে।

টিনা --- উম,,,রাতুল আসছি।( কারণ রাতুলকে কোন ভাবেই অপেক্ষা করাতে চায় না টিনা। এই পাঁচটা বছর টিনাদের বাড়িতে থাকলেও রাতুল ওর কাছে' পাজেল ম্যান' এই নামেই ডাকে টিনা মনেমনে রাতুলকে।

হয়তো রাতুলকে জানতে চায় বলেই টিনার সবসময় রাতুলের সাথে থাকতে ভালো লাগে। আর রাতুলের সব কিছুতে থেকেও এবসেন্ট মাইন্ডটার খোঁজ করতে ইচ্ছা করে ।

রাতুল--- হারি আপ টিনা,,,,,,

টিনা তার স্বভাব মতো তারাহুরো করতে গিয়ে একেবারে রাতুলের বুকে উপর আছরে পরলো আর পরিনাম স্বরুপ তার লিপস্টিকের হালকা দাগ রাতুলের সাদা শার্টের বুকের বা পাশে অংকিত হলো দুজনের অলক্ষে।

টিনা --- সরি,,,, সরি বলেই কান দুটো ধরলো।

রাতুল টিনার হাত কান থেকে নামিয়ে,,, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো,,,,

রাতুল----,,,,ইসট ওকে,,,,,লেটস গো,,,

এবার রাতুল টিনার হাত ধরে সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো।

আর দূর থেকে কালো মেঘে ডাকা, সদ্য অশ্রুতে ধোয়া দুটি চোখ রাতুলের টিনার প্রতি কেয়ারিং দেখে তার প্রতি সন্দেহের আসল কারণ খুঁজে পেলো। আর মনে মনে বললো

""এই তো হওয়ার ছিল। ভালো থেকো তোমরা।""

টেবিলে রাতুলের মা, বাবা ,দাদু বসে আছে খাবার পরিবেশন করছে অনুরাধা আর তাকে হেল্প করছে মহিধর।

রাতুল একটা চেয়ার টেনে টিনাকে বসতে দিয়ে আর একটা চেয়ার টেনে নিজে বসলো। তার এ অভুতপূর্ব কর্মে অবাক টিনা নিজেও। তবে রাতুলের এই সামান্য কেয়ারও টিনার মনের কোনে বসন্তের হাওয়া বইয়ে দিতে লাগলো। আর এক তপস্যিনির তপস্যা ব্যর্থতার গ্লানিতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।

রথিনবাবু--- রাতুল কেমন আছো??

রাতুল----ভালো আছি?

রথিন বাবু ---- টিনা তুমি কেমন আছো? রাস্তায় কোন সমস্যা হয় নি তো?

টিনা --- আ'ম গুড আঙ্কেল। না কোন অসুবিধা হয় নি।

রথিন বাবু ---- রাতুল তোমার স্কলারশিপ টা কি কনফার্ম?? খোঁজ নিয়েছো?

রাতুল --- হ্যা,,,, চার মাস লাগবে ফরমালিটিস শেষ করতে।

রথিন বাবু---- আশা করি তুমি জানো তোমাকে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য আমার আসল উদ্দেশ্য?

রাতুল---- নিশ্চুপ,,,,,,

রথিন বাবু ---- কাল তুমি আমাদের গ্রাম গুলো ঘুরে দেখবে এবং বুঝতে চেষ্টা করবে সাধারণ মানুষের জীবন। তবে পাঁচ বছর আগের রাতুল হয়ে নয়, একজন দায়িত্বশীল ডাক্তার হিসেবে। আমি চাই তুমি তোমার পূর্বজদের মতো এই গঙ্গাছরা উপশহরটিতে সাধারণ মানুষ গুলোর পাশে দ্বারাবে।

তবে আমার চাওয়াই সব নয় তুমি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন। আমি শুধু সাধারণ মানুষের পক্ষো থেকে তোমাকে আমার মতামতটা জানাতে পারি,,, বাকিটা তোমার উপর।

রাতুল---- ঠিক আছে আমি ভেবে দেখবো।

রমাপ্রসাদ বাবু--- রথিন,,, ছেলেটা এতোদিন পরে আজ বাড়ি এসেছে, তোর কি এই মুহুর্তে এই কথাগুলো না বললেই নয়।

রথিন বাবু---- সরি বাবা,,,, কিন্তু আমার কাছে অতটা সময় নেই।

রমাপ্রসাদ বাবু---- হয়েছে, হয়েছে, আমার ফুলদির রান্না,,,,, সামনে নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তোদের এই কথার জন্য,,,,, ধুর,,,, এই ফুল দি ভাই তুই আমার খাবারটা দে তো জিহ্বায় একে বারে জল চলে আসলো।

 আহা বুঝলে রাতুল এ তো রান্না নয় যেন অমৃত।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance