একটা ভালোবাসার গল্প
একটা ভালোবাসার গল্প
সকাল সকল দিদির মোবাইলের আওয়াজে শীতের সকালের সাধের ঘুমটার বারটা বেজে গেলো। একটু চেচিয়ে, পাশে শুয়ে থাকা দিদিকে ধাক্কা দিয়ে বললাম.....
-দিদি,,, এই দিদি ফোনটা তোল না,,,কখন থেকে বেজে যাচ্ছে,,,,, তোর জন্য জন্য একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না?? প্রতিদিন এক ঝামেলা,,, এই কি হলো তোল,,,,!!!
- (আমায় এক ধমক দিয়ে) এক দম চুপ থাক,,,, বুঝলি?
- ও বাবা,,,
,,,,মহারানীর মেজাজে বুজতে পারলাম আবার সৈকতদার সাথে কিছু হয়েছে,,,,উফ পারেও এরা এখনও বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে!!! করবি তা কর দিনের বেলা যত পারিস ঝগরা কর তাই বলে এই সকালে। আমার এত সাধের সকালে ঘুমটা,,,,ধুর,,,
আমি রঞ্জা আর এই রাগি মহারানী হলো আমার একমাত্র দিদি রাশি। বাবা মায়ের একচেটিয়া আদরে আর শাষনের অভাবে মোটামুটি জাগতিকজ্ঞানের ভান্ডার টি অবহেলায় রিক্ত করে রেখেছে। আমার বেলায় তা আবার কড়ায় গন্ডায় শোধ করে নিয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবি আমি বোধহয় আমার বাবা মায়ের কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে আর দিদি নিজের। ভাবলেন তো যে আমি হিংসুটে তা ভাবুন,,,, তবে সেসবের পরেও আমি দিদিকে খুব ভালো বাসি। কি বলুনতো,, এ রকম আপন ভোলা, মাথা মোটা,,,( ইস দিদি শুনলে) আর নরম মনটার কারনে ওকে ভালো না বেসে থাকা যায় না। যদিও দিদির আমাকে তার থেকে একটু হলেও বেশিই ভালোবাসে।
এবার আসি মহারাজ মানে সৈকতদার কাছে।সৈকতদা আর দিদি ছোটবেলা থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড। আর এখন বুঝতেই পারছেন এদের ফ্রেন্ডশিপের খুনসুটির অত্যাচারে বর্তমানে অতিষ্ট আমি।
ছোট বেলা থেকে দেখতাম দিদি যেখানে সৈকতদাও সেখানে এই যেমন দিদির শরীর খারাপ তো সৈকতদা আমাদের সাথে ডাক্তারের চেম্বারে ।পরিক্ষার আগের রাত তো সৈকতদা নিজের পড়া ছেরে সারারাত দিদিকে সাহস দিচ্ছে।
নোটস থেকে সাজেশন দু'জন একজোট হয়ে পড়ছে। কোন বখাটে দিদির সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তো প্রতিবাদ সৈকতদা করেছে।
আমরা দুবোন মার্কেটে যাব তো সাথে সৈকতদা গেছে (চুপিচুপি বলি,, , মাঝে মাঝে তো সৈকতদাকে বডিগার্ড মনে হয় অসহ্য লাগে তখন কিন্তু নিরুপায়)।
পিকনিকের ড্রেস থেকে পার্টির ড্রেস সৈকতদা দিদির আর দিদি সৈকতদার পছন্দের পড়বে।
তবে এই দুই মহা মানব মানবী ছাড়া সৈকতদার পরিবার আমার পরিবার ওদের ব্যপারে নিশ্চিত আর চার হাত এক করার জন্যও রাজি। ওই যে লোকে বলে "" যার বিয়ে তার নাম নাই আর পাড়া পরশির ঘুম নাই" এখানেও সেই অবস্থা।
দিদিকে যদি বলি
-- দিদি সৈকতদা কি হ্যন্ডু তোর সাথে হেব্বি মানাবে,,,তুই সৈকতদাকে বিয়েটা করেই ফ্যল?
-- দিদি চোখ দুটো রসগোল্লা মার্কা করে,,, তোর মাথা খারাপ!!!,,, সৈকতের মতো আনরোমান্টিক ছেলেকে বিয়ে? তাও আবার আমি??
আমার বড় হবে আরো র্স্মাট, গুড লুকিং,আর,,,,,,
--- আর,,,!!!!!
---- আর আমাকে ভালোবাসবে। সৈকতের মতো নয় যে শুধু ঝগড়া করবে,,,,,
--- ভগবান,,, কি করে দিদিকে বোঝাই যে সৈকতদা ওর কাছে আর ও সৈকতদার কাছে কি,,,বলুন তো ভালো লাগে??
দিদির সব অবাস্তব, অবান্তর,চিন্তাধারা যখন প্রকাশ করে, তখন ধৈর্য ধরে মুখে টানটান উত্তেজনা নিয়ে শোনা এই বিষয়টি আমার মতে ধৈর্যের সবচেয়ে বড় পরিক্ষা। এ বিষয়ে সৈকতদার জুরি এ পর্যন্ত মেলেনি,এমনকি আমি ও বাড়ির সকলেই তাতে ফেল।
সে জন্যই বোধ হয় সৈকতদা ছাড়া দিদির না আছে ছেলে বন্ধু না মেয়ে বান্ধবী।
আর এই দিদি বলে কি না সৈকতদার থেকে বেশী কেউ ওকে ভালোবাসবে? হতেই পারে না,,,,,কিন্তু,,, বুঝবে কবে সে কথা এ আপনারাই বলুন??
ছোট ছোট ঝগরা এদের নিত্য কর্মের মধ্যে পরে। যা না করলে বোধ হয় খাবার হজম হয় না। তাই বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম,,,,
---ফোন ধরবি না,,,তাহলে আমাকে দে আমি বলে দেই তুই রেগে আছিস।
--- ( রেগে একদম লাল হয়ে)একদম পাকামো করবিনা রঞ্জা ,,, এক চড় দিয়ে আগে তোর দাঁত ভেঙে ফেলবো।
এ বাবা এ কি ভয়ঙ্করী রুপ দিদির!!!বুঝলাম ব্যপার একটু বেশিই খারাপ।
কিছুক্ষণ পর সৈকতদার নম্বর আমার ফোনে ভেসে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে বেলকোনিতে গিয়ে ঘটনা কি জানতে চাইলাম,,,,
- ---দাদা কি ব্যপার গো আজ আবার দিদির মেজাজ সপ্তম আকাশে কেন??
----- তুই জানতে চাইছিস বুনি!!! আমিতো ভাবলাম তুই জানিস।
- ----কি বলো?? তুমিও জানোনা!!!
তবে একটু দাড়াও সব খবর বের করছি। হাহাহা জানোই তো টেকনিক,,,,
- ---হুম তোর হাতের কফি।।
----- তাহলে,,,, ওয়েট,,, জাস্ট ফিউ মিনিটস,,,,
---- ওকে,,,,, আমি একটু পর ফোন করছি।
রুমে ডুকতেই,,,,
-----ওই বানরটা ফোন দিয়েছে না,??
----- (কথাটা ঘোরাতে মাথাটা চেপে ধরে)দেখ সকালে তোর ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙেছে তাই মাথাটা প্রচন্ড ধরলো,,,কফি বানিয়ে নিয়ে খেতে খেতে কথা বলছি।
------ কফি আমার জন্যও আনবি???ও তোর মাথা ব্যথা বললি যে তবে আমিই যাই তুই বস।
---- ( ভাবুন কি ডেপো),,,,না না আমিই করছি।তুই বোস// সারারাত ঘুমাসনি তাই না?? চোখদুটে ফুলে গেছে!!
- ------কুত্তা, ছগলটা ঘুমাতে দিলনা।( বলেই কাঁদতে শুরু করলো)
(কি হলো ব্যপারটা??ওদের ঝগড়া নিত্যনৈমিত্তিক হলেও,, এই প্রথম যে দিদি সৈকতদার জন্য এভাবে চোখের জল ফেলছে। তাই আমিও একটু চিন্তিত হলাম। তাই তাড়াতাড়ি কফি করতে গেলাম। ফিরে এসে দেখি কিছু ভাবছে কিন্তু খুব রাগি মনে হলো।)
-এই দিদি,,,, এইনে তোর কফি।
- হুম দে,,, খুব রাগ হচ্ছে রে,,,,, শান্ত স্বরে
----- (মনেমনে,,,জানি এককাপ কফি যথেষ্ট তোর পেটের কথা বের করতে,,, গন্ধেই ম্যজিক শুরু হয়েছে),,,, কি হয়েছে,বল আমায়?
-----কাল দুপুরে যখন চাকুরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরছিলাম তখন খুব খিদে পায়। তাই ওই অফিসটার পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিলাম। ওখানে দেখি সৈকত একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে হেসে হেসে অনেক ক্ষন ধরে কথা বলছে। আমি কোথায় ভাবলাম সারপ্রাইজ দেব তাই ফোন করলাম,,, কিন্তু,,,
- ----কিন্তু কি??
---- ও আমার ফোন কেটে দিল। (বলেই আবার চোখে জল টলমল করতে লাগলো।)
---- ও হো এতো গরম লোহা!!! হাতুড়ির পিটানি চাচ্ছে। কি বলেন আপনারা?)
তাই!!!!(অবাক হওয়ার ভান করে) হতেও তো পারে সৈকতদার গার্ল ফ্রেন্ড। তোকে সারপ্রাইজ দেবে বলে আগে থেকে বলেনি। তবে ডেট এ গেছে।( লাগিয়েছি আগুন)
- গুষ্টি কিলাই এমন সারপ্রাইজর,,ওই মেয়েকে আমার পছন্দ হয় নি।
---- কেন?? পছন্দ হয়নি কেন? খুব বাজে দেখতে?
---- না,,,, সু,,,,,সুন্দরি তো মনে হলো।
--- তো??,,,,( আরে বুঝবি তো যে তোর সৈকতদার পাশে অন্য কাউকে সহ্য হয় না,,,,আপনারাই দেখুন এই মেয়ের কান্ড)
--- তো আবার কি?? আমার পছন্দ হয়নি ব্যস।
--- আরে কেন পছন্দ হয় নি সেটা বলবি তো। দেখ,,, এমনি এমনি তো কাউকে খারাপ লাগতে পারে না,,, তাই না??
--- মেয়েটা বেশি মর্ডান,,, কিরকম ছোট ছোট ড্রস, ক্যটক্যটে মেকাপে মুখ ডাকা। ওভার স্মার্ট টাইপের।সৈকত তো এরকম মেয়েদের একদম পছন্দ করে না।
----- আরে দিদি প্রেম করলে কি আর এতো ভাবে বল??
- --- তোর অনেক জ্ঞান দেখছি প্রেম নিয়ে ,,৷ কোন কোর্স করেছিস, নাকি কয়েকটা প্রেম করেছিস?
- (এইরে চটেছে দূর্গা,,,,) না মানে সবাই,,,, মানে আমার বন্ধু বান্ধবী রা বলে তাই মনে হলো আর কি।
- ----সৈকত কখন আমাকে না বলে প্রেম করবে?? তাও আবার এমন একটা মেয়ের সাথে। তুই বল?
-----(ধুর,,, মাথা মোটা কি তোকে সাধেই বলি। আর একটু চটাই,,,,কি বলেন) তুই যাই বলিস ব্যপারটা কিন্তু সেই প্রেম বলে কথা ,,, আমিতো সৈকতদার কাছে একটা ট্রিট নেব ভাবছি। আর দিদি!! প্রেম করলে মানুষ বাবা মায়ের পারমিশনো নেয় না তুই তো জাস্ট ফ্রেন্ড।
---- জাস্ট ফ্রেন্ড!!!
----( লেগেছে জায়গা মতো) তা নয়তো কি,,,,,,তোরা তো বি এফ, জি এফ নস তাই না।
----হ্যা,,,মানে না,,,,( কথা ঘুরাতে) শোন,, তুই একদম হ্যংলামো করবি না রঞ্জু,,,,ট্রিট নিবি মানে,,,, আর কিসের প্রেম হ্যা। একবার সামনে পাই ওকে সব প্রেম ঘাঁনিতে ফেলে বের করে নিব। আমি না হয় ওর প্রেমিকা নাই হলাম তাই বলে ও একটা মেয়ের জন্য আমায় এভাবে ইগনোর করবে। করুক তাহলে আমিও বোঝাবো আমি কে,,,,,
(সৈকতদা তুমি তো গেছো,,,এবার হিহিহি)
আমার ফোন বেজে উঠলো সৈকতদার ফোন,,,দিদির বড় বড় রাগী চোখ আবার। ভয়ে বেলকোনিতে গিয়ে ফোন রিসিভ করতেই,,,,
---হ্যালো বুনি
--- হ্যালো দাদা,,, হ্যা বলো।
--- কিছু জানতে পারলি??
--- হুম,,,, জটিল কেস।
--- কি হয়েছে??
--- তুমি কাল কোন মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলে??
---- হ্যা,,, বিজনেস ডিল ছিল মিস গুপ্তর সাথে। কিন্তু কেন বল তো?
--- দিদি দেখেছে। আর ও ভেবেছে তোমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ডেটে গিয়েছো ওকে না জানিয়ে তাই চরম ঘেঁটে আছে। সমান তালে কাঁদছে।
--- কাঁদছে!!! কাঁদছে মানে( উদ্বিগ্ন কন্ঠে)
--- হুম,,, মনে হয় সারারাত কেঁদেছে চোখ ফুলে রক্ত জবা হয়ে আছে।
--- কি যে করে না মেয়েটা,,,,আমি এক্ষুনি যাচ্ছি দ্বারা , নিজে আবোল তাবোল ভাববে আর আমাকে ছোটাবে।
---- ( ইস,,,,বুক ফেটে যাচ্ছে একেবারে)এসো,,, তারাতাড়ি ( জানি বলতে হবে না তাও)
টিং টিং,,,পরপর কয়েকবার,,,মা বিরক্তির স্বরে,,,
মা রান্নাঘর থেকে "রঞ্জা দেখতো কার বাড়িতে আগুন লাগলো,,,, বেল বাজাতে বাজাতে কানটাই ঝালাপালা করে দিল সকাল সকাল।"
(আগুন তোমার বাড়িতে লেগেছে মা, আর গেটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিহিহি,,, মনেমনে)
দরজা খুলে ""সৈকতদা,,,, ভেতরে এসো। (ইস স্লিপিং ড্রসটাও ছাড়েনি লোকটা রাতে ঘুমায়ও নি মনে হয় দিদিটা না এক্কেবারে যা তা ,,,, ,)
----বুনি এককাপ চা দিবি?
---- তুমি দিদির রুমে যাও আমি দুজনেরই চা জলখাবার দিচ্ছি।
সৈকতদা প্রায় ছুটতে ছুটতে দোতলায় দিদির রুমের দিকে গেলো।
মা--- কে এসেছে রে রঞ্জা?
তোমার হবু বড় জামাই,,,,
সৈকত এতো সকালে!!!!
তোমার বড় মেয়ের মান ভাঙাতে,,,,,উনি কাল থেকে রনচন্ডী হয়ে আছে।
ও এজন্যই রাতে খেতে বলতেই চটে উঠেছিল। আমি ভাবলাম চাকুরির ইন্টারভিউ খারাপ দিয়েছে তাই।
---- হুম,,,, ওদের জলখাবার আর চা টা রেডি করে দাওতো দিয়ে আসি।
----- সে দিচ্ছি কিন্তু তুই যে এসব দেখে দেখে ইচরে পাঁকা হচ্ছিস তার কি হবে??
---- কি আর হবে,,,, আমার জ্ঞান এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে ,,,,,হিহিহি
----- তোর সাথে কথায় পারবো না। তার চেয়ে বরং জলখাবারটা নিয়ে যা।
*****----*******------******---******--------******
সৈকত রাশির ঘরের দরজায় দাড়িয়ে দেখে রাশি একমনে খাতায় আঁকিবুঁকি করে চলছে।
"রাগ হলেই পেন্সিল দিয়ে আঁকে পাগলিটা" ভেবে রুমের ভেতরে ঢোকে সৈকত।
রাশি কারও পায়ের আওয়াজে মুখ তুলে দেখে সৈকত সামনে দাড়িয়ে আছে। সৈকতের ক্লান্ত চেহারা আর লাল চোখ দেখে ওর ও বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। তখনি মনে পরে কাল রেস্টুরেন্টে একটা মেয়ের সাথে সৈকতের মূহুমূহু হাসি মাখা চেহারা। সাথে সাথে চোখে মুখে একটা কঠিন আবরনে ছেয়ে গেলো।
-----তুই এতো সকালে??
----- তার আগে তুই বল কাল থেকে ফোন তুলছিস না কেন?
---- আমার ইচ্ছা,,, আর তোর কি কথা বলার লোকের অভাব যে আমাকে ফোন করছিস। বেশ তো রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলছিলি। তখন কতবার ফোন দিলাম আমার সামনেই তো কেটে দিলি। তাহলে এখন আমার ফোন বন্ধ না খোলা তাতে তোর কি?
----- দেখ ওখানে মিস গুপ্তর সাথে একটা ডিলের ব্যপারে আলোচনা করছিলাম।ওটা একটা বিজনেস মিটিং ছিল। তাই ভেবেছিলাম তোকে পরে ফোন করে নেব। তার পর থেকেই তো তোর ফোন হয় বন্ধ, না হয় তুলছিস না।
--- যা যা আমাকে আবোল তাবোল বোঝাস না। বিজনেস মিটিং তো কাকু কোথায় ছিল আর তো কেউ ছিল না শুধু দুজনে?
----- বাবা এই প্রথম আমাকে একাই একটা ডিল কমপ্লিট করতে দিয়েছিল। তাই শুধু আমিই ছিলাম।
------ এই ছাড়তো আমি তোর কোন কথা শুনবো না। আমিও এবার প্রেম করবো তুই শুধু দেখ। আমায় দেখিয়ে মেয়ের সাথে ডেটে যাস এবার তুইও দেখবি।
আমাদের কলেজের মানিক কে তোর মনে আছে? আগে কতদিন আমাকে প্রপ্রোজ করেছে বাট আমার ইচ্ছে হয় নি। কিন্তু আজ ওর সাথে ফেসবুকে কথা হলো বললাম আমিও প্রেম করবো। সে ছেলে শুনে কি খুসি,,,,,
---- কি বললি,,,,কোন মানিক,,,, তা সে যেই হোক এখনি তাকে বল তুই ফাজলামো করছিলি।
---- কখন না,,, আমি তাহলে অন্য কারও,,,,
সৈকত রাশির হাত ধরে বুকে টেনে নিয়ে একহাত দিয়ে রাশির কোমর শক্ত করে ধরে, অন্য হাত রাশির গালের উপরে কানের নিচে রেখে আঙ্গুল দিয়ে কানের পাশে স্লাইড করতে করতে,,,,
----- ভালোবাসবি না ভালোবাসিস সেটাও তো জানিস না। আর অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা বললে না ঠ্যং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
হঠাৎ সৈকতের এরকম করে জড়িয়ে ধরা আর কানের নিচে সৈকতের আঙ্গুলের স্পর্শ এক অচেনার অনুভূতির পরিচয় করালো রাশিকে। আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে রাশি। মন চাইছে সময় থেমে যাক সৈকতের স্পর্শ শুধু অনুভব করুক অনন্তকাল।
----- কি হলো চুপ করে আছিস যে।
সম্বিৎ ফিরে রাশির,,,,বুঝতে চেষ্টা করে কি হচ্ছে তার সাথে। কিন্তু সৈকতের বাহু ডোরে নিজেকে এতোটাই নিশ্চিন্ত লাগছে যে পৃথিবীর আর কোন কিছুতেই যেন কোন যায় আসে না। তবে কি এটাই ভালোবাসা? যার কাছে সমস্ত মন খারাপের অবসান, যার উপস্থিতি দুঃখের সাগরে সুখের পরশ দেয়। যার জন্য কবিরা কবিতা লেখে,শিল্পী গান গায়। যার বিরহে পৃথিবীর সমস্ত সুখ বিসর্জন দেয়া যায়। হ্যা তাই,,, এই তো সেই শক্তি, সেই অনুভুতি ,,,,,
""সৈকত আমি তোকে ভালোবাসি!!! ""বলেই অবাক চোখে তাকিয়ে রাশি।
সৈকত--- এতো দিনে বুঝলি আমিতো ক্লাস নাইনেই বুঝেছি যে এই মেয়েটিকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। এর কাছেই আমার সুখের চাবি।আর তাই আমার পাগলিটাকে সবার কাছ থেকে আগলে রেখেছি সবসময়।
বলেই রাশির কপালে একটা গভীর পরশ একে দেয় সৈকত।রাশি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সৈকত কে। এ যেন ওদের এক অন্য পৃথিবীর শুরুর প্রথম পদক্ষেপ।
দরজায় কারও গলার আওয়াজে চমকে যায় রাশি ও সৈকত,,,,
রঞ্জা--- হু,,,,,হু,,,,,, মনে চা তো ঠান্ডা হয়ে গেলো। আর কতক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে থাকবো।
(সলজ্জায়,,,,রাশি),,,,,এই,,,এই পাজি মেয়ে তোকে আসতে কে বারন করেছে?
না মনে যা সিন চলছিল সিনেমাও ফেল,,,, কাবাব মে হাড্ডি কে পছন্দ করে বলতো?
কি বললি,,,,,দিদি ছুটে আমাকে মারতে আসে, আমি ট্রে টা রেখে এক দৌর,,,
একছুটে বাইরে এসে দাড়াই,, আজ খুব খুশি আমি। অবশেষে দিদি বুঝতে পেড়েছে তার ভালোবাসার অনুভুতি ও ভালেবাসার মানুষকে। এভাবেই তো দিদিকে খুশি দেখতে চাই।
বাহিরে দেখি তার বাবা পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখে বাবা বললেন""রঞ্জা মা এককাপ চা খাওয়াবি???""
আনছি বাবা,,,
চা নিয়ে বাবার সামনে,,,"" বাবা নাও""
""এবার তাহলে সৈকতের বাবার সাথে ভালোভাবে দেখাটা করতেই হয়। অনেকদিন থেকেই ডাকছেন আমার হবু বিয়াই মসায়। না কি বলিস ছোট মা,,,,""
অবাক আমি বাবা জানলো কিভাবে? ,,,,,আবার খুশিও,,,,,হয়ে যাক সব ঠিক,,,,না কি বলেন? কবে যে আমারও এ রকম পারফেক্ট একজন জুটবে ভগবানেই জানেন।
দরজায় দেখলাম দিদির ছায়া,, আমাকে ধাওয়া করতে এসে আড়াল থেকে দিদিও শুনে ফেললো তার সদ্য বিকাশিত ভালোবাসা নামক স্বপ্ন টি বাস্তবে স্বীকৃতির পথে,,,,,
দিদির বিয়ে,,,, খুব আনন্দ করবো,,,, আসবেন কিন্তু,,,,নিমন্ত্রণ রইলো,,,,আর দিদির প্রেম কাহিনীটা কেমন লাগলো জানাতে ভুলবে না যেন।