Raktim Dey

Abstract

1  

Raktim Dey

Abstract

গালগল্প

গালগল্প

4 mins
500


এই গল্পের সকল চরিত্রের সাথে বাস্তবের চরিত্রের মিল আছে। এই গল্প কারোর ভাবাবেগে আঘাত করার জন্যে লেখা হয় নি কিন্তু লেখক আশায় আছেন যে মিল থাকা চরিত্র খুঁজে পেলে আপনি তাকে আঘাত করতে যাবেন না । আপনারা সবাই নিশ্চয়ই বিভিন্ন সময়ে জীবিত অথবা জড় বস্তুর আত্মকথা পড়েছেন কিন্তু কখনও কি এরকম কারোর আত্মকথা পড়েছেন যে জীবিত তো নয় কিন্তু তাকে জড় বস্তু বলা যাবে কিনা সেটা নিয়েও সংশয় আছে । যদি না পড়ে থাকেন তাহলে আজ একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। নমস্কার। আমার নাম Kolkatans এবং এটা আমারই গল্প । আমার নাম শুনে হয়তো অনেকেই ভাবছেন এটা কেমন নাম? আসলে ফেসবুক পেজের নাম এরকমই হয়। আমার যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে। উত্তর কলকাতায় এক বেকার ছেলে নিজের একাকীত্ব কাটাতে আমাকে শুরু করে। বয়স বাড়লেও আমার আকার কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। শুরুতে ছেলেটা খালি নিজের দুঃখের গল্প লিখত। আমি দেখে ভাবতাম, দুঃখের কথাই যদি শোনানোর ছিল তাহলে আমার নাম 'Kolkatans' কেনো দিলি? 'আমার দুঃখ কাহিনী' দিতে পারতিস। একে গল্পের মাথা মুন্ডু নেই, পেজে মেম্বার নেই তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত জুটেছে কয়েকটা কলেজের বন্ধু। এই ছেলেটা যাই ছাইপাশ লেখে সবই উনাদের পছন্দ হয়, মানে পছন্দ হোক না হোক লাইক করেই দেয়। এই ভাবেই প্রায় এক বছর কেটে গেল। আমি তো ততদিনে এইসব বাজে গল্পের অ্যাড লোককে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজেই লাইক পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। ছেলেটারও দেখি আমার দিকে কোনও নজর নেই। মাসে দু একবার ন্যাকাকান্না লেখে আর বাকি সময়ে ফিরেও তাকায় না। আমার সমসাময়িক পেজগুলো যে ভাবে বেড়ে উঠছে তা দেখে আমার মনেও প্রশ্ন আসতো মামনি আমি বাড়বো কবে? তার পরেই মাথায় আসতো, Horlicks টা খাবো কিভাবে? Virtual Horlicks বলে তো কিছু শুনিনি। যখন ভাবছি এইবার আমার বন্ধ হওয়ার সময় এসেছে সেই সময় একটা ঘটনা ঘটলো। হঠাৎ করে দেখি কলকাতার কিছু জায়গার ছবি পোস্ট হলো। আমি তো অবাক। আজ কি নিজের প্রোফাইলে relationship status বদলেছে নাকি? নাতো! তাহলে হলো কি? পরে বুঝতে পারলাম বেশ কিছু মাস ধরেই কলকাতার ব্যাপারে পড়াশোনা চলছিল। পুরোনো চাকরিতে সময়ের অভাবে ছবি তুলতে পারছিল না। নতুন চাকরি শুরু করতে সেই সময় পেয়েছে আর তাতেই এই পোস্ট। আমিও বাঁচলাম। যাক বাবা! আমার নামের প্রতি একটু সুবিচার তো হলো। পরের বছরে Virtual Horlicks ছাড়াই আমি অনেকটা বেড়ে উঠলাম। ফোনটা দিনে বেশ কয়েকবার ঝুলে তো পড়তো কিন্তু তাই বলে সেটা মোটেই আমার বেড়ে ওঠার একমাত্র কারণ না। এই এক বছরে ছেলেটা অনেক জায়গায় ঘুরলো, ছবি দিলো, অনেক তথ্য লিখল। পেজের মেম্বার সংখ্যা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার অনেক ধরণের লোকের সাথে দেখা হলো। তাদের মধ্যে এরকম লোক আছে যারা কলকাতাকে ভালোবাসে, এইরকম লোক আছে যারা ভাবে কলকাতার থেকে বাজে জায়গা তো পৃথিবীতে নেই, এই রকম লোক ছিল যারা নিজেরা পেজের কাজে অংশ নিতে ভালোবাসে । এদের সবাইকে ছাড়া আর এক বিশেষ ধরণের লোক ছিল, যাদের নাম আমি দিয়েছি 'কার্টুন'। এদের কাছে টম এন্ড জেরী ও ফেল। এই কার্টুনের একটা গল্প বলি। একবার দুর্গাপুজোয় একটা মণ্ডপের থিম হয়েছিলো মা। মণ্ডপে একটা আয়না ছিল যেখানে লেখা ছিল, "আমি অনেকটা আমার মতো বাকিটা আমার মায়ের মতো '। ছেলেটার এক বান্ধবী তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিল। ছেলেটা সেই ছবিটা পেজে পোস্ট করলো। সেই পোস্টে ছেলেটার বোন কমেন্ট করলো যে সেও ওই একই মণ্ডপে ঘুরতে গিয়েছিলো। ছবি যার এবং কমেন্ট যার এই দুটো মানুষ আলাদা। ছবিতে লাইক পড়ছিল ভালোই, এমন সময় বিজয়ার পরে আবির্ভাব ঘটলো এক কার্টুনের। কমেন্ট বক্সে সেই এক বস্তাপচা কমেন্ট করে সে প্রমাণ করেই ছাড়লো যে সে মানুষরূপী কার্টুন। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ লিখে বসলো nic pic dear । এই কমেন্টের পর তাকে ব্লক করা ছাড়া আর উপায় ছিলো না। এই সব করতে করতে আরও একটা বছর কেটে গেল। আমি এখন আরও একটু বড় হয়েছি, বেশী না, একটু। রোজ দুপুর আর বিকেলে কলকাতার ছবি দেখাই। মাঝে মাঝে কলকাতার ব্যাপারে নতুন তথ্য জানাই, মেম্বারদের সাথে গল্প করি। এখন তো আবার অনেকেই নিজেদের তোলা ছবি পাঠায়। এই দিনটা দেখতে পাবো এমন আশা করিনি। কাঁদতে তো পারবো না, যাই যদি sad emoji দিতে পারি সেটার চেষ্টা করি। এই রে, দুঃখের কথা বলতে গিয়ে আর একজনের কথা মনে পড়লো। বেচারা মানুষ। বয়স হয়ে গিয়েছে কিন্তু বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। মেয়ে খুঁজে পাওয়া কি আর অতো সহজ ব্যাপার? এমনিতেই যেখানে ছেলেদের সংখ্যা বেশী এবং মেয়েদের সংখ্যা কম, তার উপর অ্যাজ্ঞেল প্রিয় ভর্তি (প্রিয় টা ভুল করে না, ইচ্ছা করেই লেখা)। যাই হোক, বেচারা মানুষ। বউ খুঁজতে খুঁজতে একদিন পেজের ইনবক্সে হাজির। এসেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি ছেলে না মেয়ে? আমি তো এর উত্তর জানি না কিন্তু ওই ছেলেটা ফস করে বলে, 'দুর্ভাগ্যবশত আপনার মনের গোপন ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারবো না দাদা'। ব্যাস, একটা মেম্বার কমে গেলো। বলি ভাই, আমাকে তো Virtual Horlicks দিতে পারিস না, নিজে অ্যাজ্ঞেল হতে তো পারতিস। দুঃখের কথা কি আর বলবো, পাড়ার কাকিমাদের থেকে শুনে নেবেন বাকিটা। উনাদের কাছে তো সব খবর থাকে। আমি আজ চলি। বদের ধাড়িটা কি একটা পোস্ট করছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি। 


સામગ્રીને રેટ આપો
લોગિન

More bengali story from Raktim Dey

Similar bengali story from Abstract