মধ্যবিত্ত
মধ্যবিত্ত


গরীবের চাই টাকা, অনেক অনেক টাকা। সে তার পেশার কথা ভাবে না। সে ভাবে, সে টোটো চালালে কোনো অসুবিধা নেই, যতক্ষণ তার ঘরে টাকা আসছে সব ঠিক হয়ে যাবে । সে রেশনে পাওয়া মোটা চালের ভাত আর কাঁকর ভর্তি ডাল দিয়েই খিদে মেটাতে চেষ্টা করে । সে সরকারী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য অপেক্ষা করে। যে যখন তাকে বিনামূল্যে কিছু সুবিধা দেয় সেই তার ভগবান হয়ে যায়।
বড়লোকের চাই সন্মান, অর্থের অভাব তার নেই। সে চাইছে লোকে তাকে সন্মান করুক, সে অন্যদের থেকে উঁচুতে রয়েছে এই অনুভূতি সে অনুভব করতে চাইছে। সে নিজেকে একটা আলাদা বৃত্তের মধ্যে রাখা পছন্দ করে।
মধ্যবিত্ত দুটোই চায়। অর্থ না থাকলে সে বিনা চিকিৎসায় মরবে, না খেতে পেয়ে মরবে অথবা দৈনন্দিন জীবনে দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে মরবে। এত কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সে তার তথাকথিত মান মর্যাদা বজায় রেখে চলার চেষ্টা করবে কারণ সে ভাবে স্নাতক হয়ে ট্যাক্সি চালানো পাপ, তার থেকে না খেয়ে মরা ভালো। সে ভাবে ২৩ বছর বয়সে বেসরকারি চাকরি করার থেকে ৩০ বছর বয়স অবধি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়া অনেক ভালো। সে ভাবে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করা উচিৎ কিন্তু নিজের সন্তানকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করা মহাপাপ। সে নিজে ডাক্তার হতে পারেনি বলে ভাবে বেশিরভাগ ডাক্তার চোর, তাদের কাছে গেলেই সঞ্চিত অর্থ লুঠ হয়ে যাবে। জন্ম থেকে সে শোনে পড়াশুনা না করে কেউ ফার্স্ট হয় না, ফার্স্ট না হলে কেউ চাকরি পায় না। তার পর চাকরি না পেলে জীবনের দুর্দশার উদাহরণ হিসাবে পরিচিত কাউকে একটা দেখানো হয়। চাকরি পাওয়ার পর সমান পরিমাণ অর্থ উপার্জনকারী জীবন সাথী খুঁজে সেটাকে ভালোবাসার নাম দিয়ে বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান পরিকল্পনা, সব দরকারী জিনিস কেনার জন্যে সঞ্চয়। সন্তান বড় হলে তার পড়াশোনার চিন্তা। সে পরীক্ষায় প্রথম দশে থাকতে না পারা ফেল করার সমান হিসাব গন্য হয়। সন্তান আর একটু বড় হলে তার চাকরি নিয়ে চিন্তা এবং কোনোভাবে চাকরি জুটিয়ে ফেললে তার বিয়ে নিয়ে চিন্তা। এই সব চিন্তার যখন শেষ হয় আর মধ্যবিত্ত তার সন্তানকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে তখন সে হাসপাতালে ভর্তি। এই অবস্থায় সে বলে আমি তোমাকে কোনোদিন কোনো কিছু করার জন্য বাধ্য করি নি। তুমি নিজের ইচ্ছামত নিজের পছন্দের পথে এগিয়েছ।