STORYMIRROR

Koyel Banerjee (Ayesha)

Classics Thriller

4  

Koyel Banerjee (Ayesha)

Classics Thriller

'একদিন তুমিও ভালোবাসবে' 🌸❤

'একদিন তুমিও ভালোবাসবে' 🌸❤

5 mins
477

১.

ফুলশয্যার রাতে ঘরের সব লণ্ডভণ্ড হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। আমি গা-ভর্তি গয়না, ভারী লেহেঙ্গা পরে চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই পুরুষালি চিৎকারে আমি কেঁপে উঠলাম।


'এই বিয়ে আমি মানি না! তাই আপনাকেও স্ত্রীর মর্যাদা আমি দেবো না। বুঝেছেন? যদি আমার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা চাইতে আসেন তাহলে ঠিক এই ঘরের মতোই আপনার জীবনটা তছনছ করে দেবো আমি।'


কথাগুলো বলে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি, আমার স্বামী। ও না! তিনি তো আমায় স্ত্রী হিসেবে মানেন না। কিন্তু তাই জন্যে কি আমিও তাকে স্বামী হিসেবে মানবো না? নাহ! এমনটা করতে পারবো না আমি। বিয়ে যখন হয়েছে তখন যেমনই হোক আমাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।


"আদিত্য ব্যানার্জী!" সবচেয়ে বেশি বিরক্তির কারণ আমার জীবনে এই নামটা। আমি দুঃস্বপ্ন-এও কোনদিন ভাবিনি এই মানুষটাকে আমায় বিয়ে করতে হবে, সারাজীবন কাটাতে হবে। আমি "মৌমিতা চৌধুরি!", ওহ স্যরি! এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে, এখন আমার নাম "মৌমিতা ব্যানার্জী!"। 


২. 

ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে বসে নিজের গয়নাগুলো খুলে রাখছি। উনি যে সেই বেড়ালেন, এখনও আসেননি। অন্যমনুস্ক হয়ে কাঁচের চুড়িগুলো খুলছিলাম বলে হাত ফসকে কাঁচের চুড়িগুলো পরে গিয়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছি, "ঠিক এইভাবে আমার তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন গুলোও ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো আজ।" কথাটা ভাবতেই এক গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আমার। 


'ড্রেসিং টেবিলটা আমার মিস চৌধুরি! আপনি ওখান থেকে সরে গেলে খুব ভালো হয়।'


আমি আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাঁপ। আমি উঠে দাঁড়িয়ে চুড়িগুলো তুলে রেখে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,


'আপনি যেমন এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না তেমন আমিও রাজি ছিলাম না। অযথা আমার উপর এভাবে চোটপাট করে লাভ হবে না। বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তা অস্বীকার করে কি কোনো লাভ আছে?'


উনি আমার হাতের কব্জি শক্ত করে চেপে ধরলেন আর তার ফলে চুড়িগুলো ভেঙ্গে যেতে লাগলো। আমার হাতে ফুটে গেলো কয়েকটা চুড়ির অংশ। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি ব্যাথা সহ্য করে। এখনও পর্যন্ত ওনার মুখের দিকে আমি তাকাইনি।


'এতো সাহস ভালো না। আমার সামনে সাহস দেখানোর চেষ্টা করবেন না মিস চৌধুরি। তাই জন্যেই আপনাকে 'মিস' বলে সম্বোধন করছি। এই বিয়েটা আমি কোনদিন মানবো না, যেখানে আমার কোনো পছন্দ ছিলো না। খুব শীঘ্রই আমি এখান থেকে চলে যাবো তখন থাকবেন আপনি আপনার ঘর সংসার নিয়ে।'


উনি আমার হাত ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমার হাত বেয়ে "টুপটুপ" করে রক্ত পরছে, তাও চোখ দিয়ে জল পরার জো নেই আমার। যখন বিয়ে হয়েছিল তখনই বুঝেছিলাম আমার জীবনটা শেষ। উনি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ওয়াডরব থেকে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পরলেন। আমি এখনও স্থির হয়ে ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। 


'এইসব ন্যাকামি না করলে চলছে না আপনার? রাত বিরেতে এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে পড়ুন।'


ওনার দিকে ফিরে দেখলাম উনি পাশ ফিরে শুয়ে পরলেন। কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ-মুখের সাথে হাতটা ধুয়ে নিলাম। রক্তক্ষরণের পরিমাণ টা বেশি কারণ যে জায়গায় উনি চেপে ধরেছিলেন সে জায়গায় হাতের শিরা ছিলো। আমি ঘরে এসে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা সোফা রাখা। সেখানেই গিয়ে শুয়ে পরলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি,


'আমার শত্রুরও জানো এহেনো ফুলশয্যার রাত না হয়। সবার এই রাত নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে সেখানে আমার..?? কি করে পারলো আমার বাবা-মা এভাবে হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করে দিতে? একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করল না? যাক গে, যা করেছে তা হয়তো ভালোর জন্যেই করেছে। শুনেছি বাবা-মা কখনো সন্তানের খারাপের জন্য কিছু করে না। এই কথাটা সত্যি না মিথ্যে তা তো সময় বলবে।'


৩.

সকালে ঘুম ভাঙতেই উঠে বসলাম। ঘরটায় ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে দেখলাম বিছানা পরিপাটি করে গুছানো। অর্থাৎ উনি ঘুম থেকে উঠে বিছানা গুছিয়ে গেছেন। আমি উঠে দাঁড়াতেই আমার হাতে কাঁটা জায়গায় ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ চোখে পরলো।


'এটা আমার হাতে কি করে এলো? আমি তো রাতে এমনি শুয়ে পরেছিলাম। তাহলে কি উনি?'


নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে উত্তর পেলাম "হ্যাঁ!" উনি ছাড়া আর কেই বা ছিলো এই ঘরে? দরজা তো বন্ধ ভিতর থেকে তাই কেউ আসতেও পারবে না। 


'মানুষটা যে কেমন? তা বুঝতে একটু সময় লাগবে আমার। কিন্তু উনি তো আমায় সেই সময়টুকুও দেবেন না।'


আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে নেমে গেলাম। দেখি শাশুড়ি মা কে কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারি কি না। শাশুড়ি মা কে উদাসীন হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে আমি একটু অবাক হলাম।


'মা, আপনি এভাবে এখানে বসে আছেন যে? কোনো সমস্যা হয়েছে?'


শাশুড়ি মা আমার দিকে করুন ভাবে তাকালেন। আমার হাত ধরে ওনার পাশে বসিয়ে বললেন,


'আমায় ক্ষমা করে দাও বউমা। আমি ভাবিনি আমরা তোমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেবো।'


'আমি কিছু বুঝলাম না মা। কি হয়েছে একটু খুলে বলবেন?'


'আদি চলে গেছে আজ সকালে নিজের ইউনিভার্সিটি তে। ও ওখানেই হস্টেলে থেকে পড়াশোনা কম্পলীট করবে।'


শ্বশুরমশাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম গতরাতে উনি যা বলেছিলেন তাই করেছেন। চলে গেছেন অনেক দুরে। নিজের উপর আজ বড্ড বেশি করুণা হচ্ছে আমার। এতো সুন্দর ভাগ্য করে জন্মেছি আমি? ভাবতেই অবাক লাগে আমার।


'আমরা ভেবেছিলাম তোমার সাথে বিয়ে দিলে হয়তো আদি শুধরে যাবে। কিন্তু নাহ, ও আমাদের কোনো কথা না শুনে রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।'


'এতে আপনাদের কোনো দোষ নেই। সবই আমার ভাগ্যের দোষ।'


কথাটা বলে উঠে রান্নাঘরে চলে এলাম। বাবা-মার জন্যে চা বানিয়ে নিয়ে ওনাদের সামনে রাখলাম।


'বউমা তোমার না ইচ্ছে ছিলো ইংরেজি অনার্স করার? সেটা তো যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে তাই না?'


'হ্যাঁ বাবা। কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন?'


'আমি তোমায় যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেবো। কি বা করবে তুমি একা ঘরে থেকে। এর থেকে নিজের স্বপ্ন পুরন করো।'


বাবার কথা শুনে জানো আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। শত কষ্টের মাঝেও এক চিলটে সুখ খুঁজে পেলাম। এবার আমি আমার স্বপ্ন কে আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকবো। সব মেয়ে কি আর স্বামীর সোহাগ, সমর্থন পাশে পায়? আমিও না হয় নিজেকে সেই সব মেয়েদের দলেই মেনে নিলাম।


'বাবা আমি যাদবপুরে থেকেই পড়াশোনা করতে চাই।'


'সে কি কেন? এখান থেকে মানে কলকাতা থেকে তো যাদবপুর বেশি দূর নয়। ট্রেইনে গেলে বেশি সময় লাগবে না।'


'না আসলে আমি ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি থেকেই পড়তে চাই। আপনি প্লিজ ওখানে একটা হস্টেলের ব্যবস্থা করে দিন?'


আমার কথা শোনার পর শ্বাশুড়ি মা ইশারা করতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন। মা হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি কেন ওখানে থেকে পড়াশোনা করতে চাইছি। আসলে এই ঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না, কিছুতেই না। আমি দূরে যেতে চাই ওনার থেকে, উনি সম্পর্কিত সব কিছু থেকে।


[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]


'একদিন তুমিও ভালোবাসবে' 🌸❤

||পর্ব~১||

@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা


Rate this content
Log in

More bengali story from Koyel Banerjee (Ayesha)

Similar bengali story from Classics