ধূপকাঠি
ধূপকাঠি
এই শয়তানটি বাঙালির প্রত্যেক ঘরে, বিশেষ করে হিন্দুদের ঘরে ঘরে অতি শান্তিতে বিরাজ করছে । কিন্তু কেউ তার শয়তানি বা ভিলেনি ধরতে পারে না , বললে হয়তো অনেকে বিশ্বাসও করবে না। গদগদ চিত্তে বহু মানুষ, বলতে গেলে ৯৯ ভাগ হিন্দু ধর্মের মানুষরা ধূপকাঠি হাতে নিয়ে মাটির বা পাথরের তৈরী ঠাকুরের সামনে, বা কাঁচে বাঁধানো ছবির ঠাকুরের সামনে হাত ঘোরাতে থাকে, বা দোকানদাররা দোকান খুলে ধূপকাঠি হাতে নিয়ে দোকানের চারদিকে নমঃ নমঃ করে ঘুরে দোকানের এক কোনে ছোট কাঠের বাক্সের মধ্যে রাখা তার পছন্দের ঠাকুরের কাছে গুঁজে দেয় ।
বৌদ্ধদের মধ্যেও তাদের পূজা, বা আরতির মধ্যে, বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে ধূপকাঠি জালায়।
কি থাকে ধূপকাঠিতে?
সব ধূপকাঠির মুখ্য উপাদান হচ্ছে বাঁশের শনের গায়ে কাঠকয়লার গুঁড়ো লাগানো৷ এই শন আর কাঠকয়লার গুঁড়ো মেশানোর সময় তার মধ্যে কিছু সস্তা আতর ঢেলে দেওয়া হয়।
এই কাঠকয়লার গুঁড়ো যত পুড়তে থাকে ততো বেরুতে থাকে কার্বন মনোক্সাইড, এবং বেঞ্জোপাইরিন গ্যাস। রসায়নের ভাষায়-- মিউটাজেনিক মালপত্র।
এই বিষাক্ত গ্যাসগুলি যখন আমাদের নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে শরীরে ঢোকে তা শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে ইরিটেশন করে।
২০০০ সালে বৃটিশ লাঙ ফাউন্ডেশন গবেষণা করে জানিয়েছেন ধূপকাঠির ধোঁয়ার কার্সিজেনিসিটি অর্থাৎ ক্যানসার তৈরী করানোর ক্ষমতা বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ার থেকে অনেক গুণ বেশী।
২০১৩ সালে নর্থ ক্যারোলাইনা ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক সার্ভে রিপোর্ট বলছে-- নিয়মিত ধূমপান করলে ফুসফুসে যে পরিমান কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস প্রবেশ করে , নিয়মিত বদ্ধ ঘরে ধূপকাঠি জ্বালিয়ে বসে থাকলে তার থেকে অনেক বেশী কার্বন মনোক্সাইড বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশ করে।
বিশেষ করে মন্দির বা ঠাকুরঘর গুলি আয়তনে ছোট হয়, এবং দরজা জানালা কম থাকে , দরজা জানালা অনেকে বন্ধও রাখে। ফলে ঘরটি আবদ্ধ হওয়ার জন্য কার্বন মনোক্সাইড এবং বেঞ্জোপাইরিন গ্যাস মোটেই বাইরে বেরুতে পারে না, যারা ঐ ঘরের মধ্যে বসে থাকে তারাই শুধু বিষাক্ত গ্যাসগুলি গিলতে থাকে।
এর সাথে যোগ হওয়া উগ্র কমদামী বিষাক্ত আতরের গন্ধ ব্রেনকে ইরিটেট করে মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, মাথাঘোরা, বমির ভাব, ইত্যাদি কারুর কারুর শরীরে দেখা দিতে পারে।
কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে ভবিষ্যতে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার প্রবনতা ছাড়াও অনেকের শরীরে তৈরী করতে পারে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, এবং এ্যালার্জিক কাশি।
তাই সাবধান হন,
এসব পূণ্য সামগ্রীতে কতটা পূর্ণ অর্জন হয় আমি জানি না, তবে ভগবান কিন্তু অতি দ্রুুত তার কাছেই টেনে নিতে চাইবে।