বসন্তের ছোঁয়া
বসন্তের ছোঁয়া
গ্রামের নাম বসন্তপুর , নামের মতোই গ্রামের চারিদিক জুড়ে প্রকৃতির খেলা, আর বসন্তকালে প্রাণহীন গাছে শিমুল আর পলাস , কৃষ্ণচূড়ার মেলা ।তাই অনেকই বলে বসন্তের মতো প্রকৃতি হওয়ার জন্যই হয়তো গ্রামের এই নামের নাম করণ হয়েছে।
বিগত ১০ বছর ধরে বসন্ত উৎসব একটু অন্য রকম ভাবে পালন করে এই গ্রামের মানুষ জন। শুধু এই গ্রাম নয় আসেপাসের গ্রাম থেকেও লোকজন আসে এই আনন্দ যজ্ঞে অংশ নিতে। আগে প্রতি বছরই স্কুলের পাশে কৃষ্ণ মন্দিরে দোল পূর্ণিমার দিন কৃষ্ণনাম ও রং খেলা হতো । কিন্তু এক বছর গ্রামের ইয়ং ছেলেরা ঠিক করে তারা স্কুল মাঠে শান্তিনিকেতনের মতো বসন্ত উৎসব করবে। প্রথমে কিছু লোক আপত্তি জানায় , তাদের মতে, এই তো একটা দোলের অনুষ্ঠান হচ্ছে তাছাড়া এতোদিন ধরে চলে আসছে কৃষ্ণ পুজোর পরম্পরা , যদি এটাকেই বড় করে করা যায় তাহলে ভালো হয় । কিন্তু ছেলেরা চায় একটু অন্য রকম করতে তাই অনেক আলোচনা অনেক বিবাদ শেষে ঠিক হয় পাশাপাশি দুরকমই উৎসব হবে , একদিকে বৃন্দাবনের দোল উৎসব অন্য দিকে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব । যাদের যেটা ভালো লাগবে সে সেটাতে অংশ নেবে, কোনো বাধানিষেধ থাকবে না।আরো ঠিক হয় ওই দিন মেলাও হবে যাতে দিনটা সবাই আরও সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারে। সেই থেকে শুরু হয়েছে এমন অনুষ্ঠান ,এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে এবং সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে এই উৎসবকে আরও বড় করে পালন করার ইচ্ছে।
যেই বছর শান্তিনিকেতনের মতো দোল উৎসব শুরু হয় এখানে তখন শ্রাবনী ক্লাস xi উঠেছে, তাই পড়ার চাপ তেমন নেই। যেহেতু স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তাই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের অনুরোধ করা হয় , যারা রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত এবং রবীন্দ্রনাথ নৃত্য পারদর্শী তারা যে অবশ্যই অংশ নেয়। শ্রাবনীরা যেহেতু নবীন বরণ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনৃত্য করেছিল তাই ওদের নাম দিয়েছেন স্যার ।এর আগে এমন অনুষ্ঠান হয়নি তাই ওরাও খুব আগ্রহী , তাছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ না নিলে বাড়ির লোক আসতে দিতে নাও পারে, তাই সব ভেবে রাজি হয়ে যায়।ওরা মানে তৃয়াশা , স্নেহা, অরুনিমা, পল্লবী, মৌসুমী এবং শ্রাবনী , ওরা মাধ্যমিক পর্যন্ত একই স্কুলে পড়েছে। ওদের ' ওরে গৃহবাসী ' এবং আজি এ বসন্ত' নৃত্য পরিবেশন করার জন্য বলা হয় । শেষ মুহূর্তে রিয়েশাল করে নেই যাতে মঞ্চে কোনো অসুবিধা না হয়।
অনুষ্ঠানে দিন প্রথমেই ওদের নৃত্য, তবে গান কেসেডে বাজবে না শুনে একটু ঘাবড়ে যায় শ্রাবনী, যদি ঠিক সুরে না গাইতে পারে তাহলে নাচে তালের গন্ডোগোল হয়ে যেতে পারে ভেবে একটু নার্ভাস হয়ে যায়। কিন্তু শ্রাবনীর ভাবনাকে মিথ্যে প্রমান করে দেয় , ছেলেটার এতো সুন্দর গানের গলা শুনে শ্রাবনী নৃত্য করতে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ,অরুনিমার ঠেলায় ওর মোহ ভঙ্গ হয় । আরম্ভ এতো সুন্দর হয়েছে অতিথি এবং বাকি সব মুগ্ধ ওদের প্রারফ্রমে । ওরা পর পর দুটো নাচ করে, পাসাপাসি গ্রামের অনেকেই অংশ নিয়েছে তাই ওদের আর কোনো নাচ নেই, ওরা কস্টিউম খুলে ফেলে। শ্রাবনীর কানে তখনও ছেলেটার গলার সুর বাজতে থাকে। সবাই বলছে ছেলেটা ওদের ক্লাসেই পড়ে কিন্তু কোনো ছেলেটা শ্রাবনী বুঝতে পারেনা আসলে শ্রাবনী ক্লাস xi এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাই সবাইকে ঠিক মতো চেনে না।অনুষ্ঠান খুব জমে উঠেছে সবাই সবাইকে আবির মাখিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। পাছে ছামেলা বাঁধে তাই অচেনা কাউকে আবির দিচ্ছে না, নয়তো জিজ্ঞাসা করে তবেই রং লাগাচ্ছে।বিশেষ করে মেয়েদের কে। বাড়িতে যাইহোক বাইরে বেরোলে ছেলেরা মেয়েদেরকে একটু বেশিই সম্মান দেখায়। ভলেন্টিয়াররা সচেতন ভাবে লক্ষ করছে যাতে কেউ জোর জবরদস্তি না করে। শ্রাবনী আবির মাখা বা মাখানোয় অতোটা আগ্রহ নয় তাই বসে অনুষ্ঠান দেখছে হঠাৎ কিছুটা আবির ওর মুখে মাথায় এসে পরে এবং সাথে একটা ছেলে হুমরি খেয়ে চেয়ার ধরে কোনো রকমে সামলে নেয়, আর একটু হলে চেয়ারটাই উল্টে যাচ্ছিল হঠাৎ এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই প্রথমে একটু ঘাবড়ে যায়, দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে। তখন বিরক্তের সরে বলে
- এটা কি হলো?
যে ছেলেটা ওর চিয়ার টা ধরে ছিল সে কাচুমাচু হয়ে বলে,
- আমার কোনো দোষ নেই, আমি ঠেলা হয়ে চলে এসেছি, হাতের আবির ছিল , তাই তোমার মুখে পরে গিয়েছে।
শ্রাবনীতো খুব রেগে গিয়ে, কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় একটা ভলেন্টিয়ার এসে বলে,
- বোন ওর কোনো দোষ নেই, ও ঠেলে খেয়ে চলে এসেছে, আমরা দেখেছি।তোমার কোথাও লাগেনি তো।
- না আমার কোথাও লাগেনি।
- ঠিক আছে তুমি অনুষ্ঠান দেখো। ভাই কিছু মনে করো না নিজের অনুষ্ঠান ভেবে মিলেমিশে আনন্দ করো।
বাকিদের বলে এই তোরা ওদিকে গিয়ে খেল ,যারা অনুষ্ঠান দেখছে তাদের বিরক্ত করিস না।
ভলেন্টিয়ার চলে যাওয়ার পর ছেলেটা চেয়ারের পাশে এসে বসে।
- তোমরা খুব সুন্দর নাচ করেছো , তোমাদের অনুষ্ঠান নবীনবরণের সময়ও দেখেছিলাম কিন্তু আজকে যেন বেশি ভালো লেগেছে। আচ্ছা তুমি রং খেলছো না কেন?
- আমার ভালো লাগে না।
- সরি! আমার জন্য তোমার মুখে আবির লেগে গেল। আসলে আমি বন্ধুদের মাখাবো বলে আবির নিয়েছে ছিলাম ,হঠাৎই এই ভাবে ঠেলে খেয়ে পড়ে যাবো ভাবিনি, সত্যিই দুঃখিত ।
- ওকে, ঠিক আছে, ভুল করে যখন হয়েছে ।
- তুমিতো আর্টসে পড়ো তাই না।
- হ্যাঁ, তো।
- না কিছু না , আমি কমার্সে , তুমি আমাকে স্কুলে দেখো নি কোনো দিন।
- হয়তো , কেন ? কি হয়েছে?
- না এমনি, আচ্ছা তুমি কি আমার ওপর রেগে গিয়েছো?
- কেন রাগতে যাবে?
- এই যে আবির লাগিয়ে দিয়েছি বলে।
- সত্যি ভুল করে , না মিথ্যে বলছো ইচ্ছে করেই.....
- সত্যি বলছি আমি ইচ্ছে করে করিনি।
- তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন।
- সরি ভুল হয়ে গিয়েছে, আচ্ছা তুমি অনুষ্ঠান দেখো, আমি রং খেলি।
অরুনিমা পিছন থেকে এসে ,
ছেলেটার সাথে এতোক্ষণ কি কথা বলছিলি।
- কোন ছেলেটার।
- তোর পাসে যে বসেছিল।
- আর বলিস না হুড়োহুড়ি করে একটু হলে আমার গায়েই পরে যাচ্ছিল।
- তাই বুঝি।
- আরে ওর কোনো দোষ ছিল না।
- সেতো বলবেই।
- ভলেন্টিয়ার দাদা রা বলে গেল।
- তোকে কে আবির মাখিয়ে গেল।
- হুড়োহুড়িতে কারো হাত থেকে ছিটকে এসেছে বোধ হয়।
- না অন্য কিছু।
- তোর সবেতেই ইয়ার্কি।
- আরে , এই ছেলেটাই আমাদের নাচের গান গেয়েছিল
- ও তাই, আগে জানলে ।
- আগে জানলে কি করতিস?
- ছেলেটা আমাকে নাচের প্রশংসা করে গেল, আমি ও করতাম।
- আচ্ছা এসব বাদ দে, কখন বাড়ি যাবি বল?
- আর একটু বসি না খুব সুন্দর অনুষ্ঠান হচ্ছে।
- ওকে , তুই অনুষ্ঠান দেখ, আমরা ওদিকে আছি।
অরুণিমা চলে যেতেই মনটা যে কেমন হয়ে গিয়েছিল শ্রাবনীর হয়তো অরুনিমার কাছে কথা চেপে যাওয়ার জন্য। তবে এখনো মনে পরে , ছেলেটার চোখে সত্যি কথা ফুটে উঠেছিল সেই দিন ।বাড়ি ফিরেও ছেলেটার কথা ভেবেছিল শ্রাবনী। পরের দিন স্কুলে ছেলেটার নামটা প্রথম শুনেছিল তৃয়াশার মুখে ,ওর নাম প্রভাত ।
তার পর কেটে গিয়েছে ১০ বছর , শ্রাবনী যখন ফাইনাল ইয়ার তখন হঠাৎ করেই ওর মা মারা যায়, ওর বাবা একে বারে ভেঙে পরে । তার দাদার বিয়ে করে বিদেশে চলে যাওয়া, সে আর ফিরবে না বলে দিয়েছে । ওর জীবনের ওপর অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে।তাই প্রতি বছর বসন্ত আসলেও কোনো না কোনো কারনে ওর এই অনুষ্ঠানে আসা হয়ে ওঠেনা। শেষের ৫ বছর চেষ্টা করলে হয়তো আসতে পারতো কিন্তু মনে কোনো উৎসাহ ছিল না তাই আসে না । এই বছর ও আসতো না ,ক্লাব থেকে চিঠি দিয়েছে তাই আসতে বাধ্য হয়েছে । প্রথম বছর যারা অংশ নিয়েছিল তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ , তবে ওদের বাকিরা আসবে না আগেই জানিয়ে দিয়েছে। সাত পাঁচ ভেবে ভেবে শ্রাবনী একাই এসেছে। এখন শ্রাবনী চিলের দলে নাম লিখিয়েছে , যতো বয়স বেড়েছে ততোই বন্ধু- বান্ধবীর সংখ্যা কমেছে।তবে এখানে দু- একজন চেনা মুখ দেখতে পেয়েছে, কিন্তু কি বলবে, কি ভাববে ,কি করছি এখন, দাদা ঠিক কাজ করেনি, এখনো কেন বিয়ে করিসনি ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে হবে,তার থেকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।এই ভেবে এককোনে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘোষকের মুখে নামটা শুনে একটু আনমনা হয়ে যায় তবে তবে নাম আর ব্যক্তি যে এক হবে এমনটা নয় কিন্তু মঞ্চে প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত খুব চেনা গলায় শুনে শ্রাবনী চমকে ওঠে। শ্রাবনীর আর বুঝতে বাকি থাকে না, যদিও প্রায় ৯ বছর পর দেখছে শেষ বার দেখেছিল উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষার দিন তার পথ থেকে পথে ঘাটেও কোনো দিন দেখে নি ।আজ এতোদিন পরে হঠাৎ দেখতে পাবে তা অবচেতন মনেও আসেনি তাও আবার গ্রামের অনুষ্ঠানে। শ্রাবনী মনে মনে ভাবছে ঠিক মানুষ কেই দেখছে তো না অন্য কেউ। সেই চোখ সেই গলা , মুখের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে তবে চোখ এখনো একই রকম আছে।
দোলের পরে স্কুলে অনেক বার দেখা হয়েছে তবে তেমন করে কোনো দিন কথা বলা হয়নি। প্রভাতকে দেখলে মনটা কেমন ভালো হয়ে যেত শ্রাবনীর , একটা অন্য রকম অনুভুতি কাজ করতো মনের মধ্যে। যখন অন্য কোনো বান্ধবীর সাথে কথা বলতো কেন জানি না হৃদয়ের স্পন্দন আপনা আপনি বেড়ে যেত। তবে ইচ্ছে থাকলেও বান্ধবীদের ভয়ে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কথা বলে নি । ওরা যদি একবার দেখে নেয় কথা বলছে তাহলে আর রক্ষে নেই,গোটা স্কুলে ছড়িয়ে পরবে মিনিটের মধ্যে । প্রার্থনার লাইনে একঝলক দেখার জন্য শ্রাবনীর দু-চোখ উৎসুক হয়ে থাকতো। কারন তারপর আর দেখার সুযোগ ছিল না ।এই ভাবে দূর থেকে দেখে দেখেই মন ভালো করে নিত। ভালো দিন গুলো যেন মুহূর্তের মধ্যে পেরিয়ে যায় তার পর পরীক্ষা চলে আসে । পরীক্ষা শেষ দিন প্রভাতের লেখা একটা চিঠি পেয়েছিল শ্রাবনী ,সেটাই ছিল শেষ এবং প্রথম চিঠি । শ্রাবনী হিজিবিজি ভেবে চলেছে কখন গান শেষ হয়েগিয়েছে বুঝতে পারনি। সকলের হাতের তালির শব্দে ধ্যান ভাঙে ততক্ষনে প্রভাত মঞ্চ থেকে নেমে গিয়েছে। এমন সময় পিছন থেকে ,
- ভালো আছো শ্রাবনী, আমায় চিনতে পারছো।
- না,হ্যাঁ।
- না ,না হ্যাঁ কোন টা।
- হ্যাঁ।
- আমি তোমাকে প্রথম দেখেই চিনি নিয়েছি। তোমাকে আবার এই ভাবে পাবে ভাবি নি।
- কি ভেবেছিলে?
- ভেবেছিলাম তোমরা হয়তো এখানে আর থাকো না।
- কেন তোমার এমনটা মনে হয়েছে।
- স্যার রিটায়ার্ড হওয়ার পর তোমরা হয়তো অন্য কোথাও কিংবা তোমার দাদার সাথে থাকো,অথবা....
-তুমি তো অনেক কিছু ভাবতে জানো।
- না মানে।
- না মানে কি , তুমি কি কিছুই খবর রাখো না।
- আসলে আমি.
- আসলে আমি কি?
- তুমি যদি এই ভাবে জেরা করতে থাকো , তাহলে আমি কি ভাবে বলবো।
- সরি ।
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
- হুম।
- তুমি কি এখনো আমার ওপর রেগে আছো , সেই ঘটনার জন্য।
- কোনো ঘটনার কথা বলছো।
- সেই চিঠি , যেটা তোমার বইয়ের মধ্যে পাঠিয়ে ছিলাম তন্ময়ের হাতে।
- চিঠির উত্তর যখন দেবে না তখন চিঠি দিয়েছিলে কেন, আমাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলে।
- সত্যি বলছি শ্রাবনী আমি কখনো এমনটা ভাবি নি। আমি এখনো তোমাকে.... কিন্তু তন্ময় বলল চিঠিটা স্যারের হাতে পরেছে আর স্যার আমার ওপর খুব রেগে আছেন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, আর আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে ছিল, যেটা পড়ে ।
- সেই ভয়ে কি রেজাল্ট ও আনতে আসোনি।
- না মামা এসেছিল ।
- তুমি কি এখানে আর আসো না ।
- না বাড়িতে যাই ,কলকাতায় মেসে থাকি ।
- তা এতো দিন পরে বা আবার এলে কেন ?
- আমাকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছিল, বন্ধু দের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারি সবাইকেই আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে তাই সবার সঙ্গে দেখে হওয়ার আনন্দে চলে এলাম, বিশেষ করে তোমার সাথে।
- কেন অন্য বছর আসো নি।
- না , সেই প্রথম বছর , তাছাড়া এখন আর তেমন মামা বাড়ি আসি না।
- তা ভালো।
- মামার সাথে কয়েক দিন আগে স্যারের দেখা হয়েছিল ।
- তাতে কি হয়েছে ?
- তুমি কেন আছো বলেন, আমাকে দেখা করতে বলেছেন?
- শুনে কি করলে।
- না আগের বুঝে ছিলাম তন্ময় মিথ্যে কথা বলেছিল, স্যারের কথায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
- এতো দিন পরে সত্যি, মিথ্যে জেনে কি হবে।
- কিছু হবে না, তবে শেষ চেষ্টা ,তোমার কাছে ক্ষমা ।
- তুমি এতো ভিতু আমি জানতাম না।
- আসলে তন্ময় এমন ভাবে বলেছিল , শুনে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম , মামার সম্মান হারানোর ভয়। মামাকে যদি অপমান করে তাহলে বাবা আমায় আস্ত রাখতো না তাই বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।
- তোমার চিঠি পাওয়ার পর আমিও তোমায় চিঠি দিয়েছিলাম তন্ময়ের হাতে কিন্তু তন্ময় বলল তুমি বাড়ি চলেগিয়েছো । রেজাল্টের দিন ও স্কুলে অনেক ক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু তুমি আসোনি।
- তন্ময় আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিল, সেটা পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছিল সে দিন। সত্যি তন্ময় যে আমার সাথে এমনটা করবে ভাবি নি।কথা প্রসঙ্গে সোহম না বললে জানতাম না তোমার চিঠির রহস্য। ভুল ধারণাটা এতো বছর বয়ে চলেছি হয়তো বাকি জীবন টাও বয়ে বেড়াতাম।
- কি ভুল ধারণা
- চিঠির উত্তর যে চিঠি তন্ময় আমায় দিয়েছিল সেটা ওর লেখা তোমার না।
- কি লেখা ছিল ওতে।
- ওসব বাদ দাও , পুরানো বিবাদ ভুলে যাওয়াই ভালো।শ্রাবনী একটা কথা বলবো?
- বলো
- তুমি তো এখন খুব কথা বলো।
- কেন তুমি কি চাও না আমি কথা বলি।
- না তেমন নয়, আচ্ছা তুমি কি এখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারোনি।
- আমি কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি ।
- তাহলে চিঠির উত্তর কি হ্যাঁ হবে।
- সে দিন বলেছিলাম, এখন আর বলবো না।
- ঠিক আছে বলতে হবে না। তবে আমি কি একটু আবির মাখাতে পারি।
- না।
- না কেন।
- আমি পছন্দ করিনা।
- পছন্দ করো না তো কি হয়েছে ভাববে ভুল করে..
- আচ্ছা তুমি কি সেই দিন ইচ্ছে করে আমায় রং দিয়েছিলে।
- সত্যি বলছি ভুল করে, তবে আজকে ইচ্ছে করে দিতে চাই।
- না আমি রং মাখবো না।
-আমার জন্য না হয় মাখলে, বসন্তের ছোঁয়ায় বসন্তের রঙে আজ আমি তোমায় রাঙিয়ে দিতে দিলাম।
- তাই বুঝি।
সত্যি শ্রাবনী এটা কল্পনা না বাস্তব বুঝতে পারছি না, আবার তোমায় এভাবে রং মাখাতে পাবে , মনে বসন্তের ছোঁয়া ফিরে পাবে .....। কথায় আছে যদি তুমি মন থেকে কিছু যাও প্রকৃতিও তোমায় সঙ্গ দেয়। এক বসন্তে তোমায় প্রথম ভালোবেসেছিলাম আর এক বসন্তে তোমায় পেলাম । যদিও মাঝ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গিয়েছে।
- প্রকৃত ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, সময়ের চাপে লুকিয়ে থাকে মাত্র, সঠিক সময়ে আবার বেড়িয়ে আসে।
- বসন্ত ফিরে আসে বারবার খুশির আমেজ নিয়ে এসেছে আবার ।চলো শ্রাবনী স্যারের সাথে দেখা করি , স্যারের আশির্বাদ নিয়ে আসি।