বৃষ্টিস্নাত প্ৰেম
বৃষ্টিস্নাত প্ৰেম
সারা বিশ্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য জলবায়ু এখন অনেকটাই বদলে গেছে - এখন আমাদের জলবায়ুও উষ্ণ হয়ে উঠেছে আগের থেকে। তাই মানুষেরা হা পিত্যেশ করে বসে থাকে বর্ষার অপেক্ষায়। বর্ষা আসলে আমাদের ভাঙা রাস্তার জন্য নানারকম অসুবিধা হলেও, বর্ষার নিজস্ব শীতলতা শরীরের ক্ষেত্রে আরামপ্রদ হয়ে থাকে। তাছাড়া একটা বর্ষার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আছে যা সব মিলিয়ে প্রেমী মনকে উদ্বেল করে তোলে ভালোবাসার ভালোবাসা পাবার জন্য। তাই তো বর্ষা চিরকাল কবিদের ঋতু। বৃষ্টির সঙ্গে আমাদের আমাদের প্ৰেম সেই আদিকাল থেকে। বৃষ্টিই আমাদের প্রথম প্রেমিক,প্রথম প্রেমিকা, বর্ষায় জমে ওঠে অনন্য প্ৰেম।
দিনটি ছিল বর্ষার শুরুর সময়ের, সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে । ফেলে আসা দিনের তিক্ত গরমে প্রশান্তির বৃষ্টি ।
অপ্রতিভ সৌভাগ্য ( কোমলের ভাষায় ক্যাবলাকান্ত সৌভাগ্য ) - কে নিয়ে রিকশার হুড খুলে বসে আছে কোমল । নতুন জোয়ারের জলেতে বৃষ্টি পড়লে যেমন টুপুর টুপুর শব্দের রোমান্টিক নাচ তোলে । কোমলের মনেও আজ বৃষ্টির নাচন । দু হাত বাড়িয়ে চোখ বুজে আছে কোমল । রিকশার গতি,শীতল বাতাস আর বৃষ্টির স্পর্শ পাগল করে তুলেছে কোমলকে, কিন্তু সৌভাগ্য নিঃশব্দে বসে আছে কোমলের পাশে, সহ্য করছে ভালোবাসার অত্যাচার ।
এটা একটা জীবনের এক টুকরো দৃশ্য যেটা এক সঙ্গে তিনটি অনুভূতি প্রকাশ করছে -
রিকশাওয়ালা জীবন এবং জীবিকার জন্য বাধ্য
হয়ে মাথায় নীল পলিথিন জড়িয়ে রিকশায়
প্যাডেল মেরে চলছেন তার ভিজে যাওয়া শরীরটা নিয়ে। কারণ এটা তার জীবনসংগ্রাম।
রিকশায় বসে থাকা চঞ্চলা মেয়েটি উপভোগ
করছে বৃষ্টির শীতল পরশ । বারবার উচ্ছ্বাস
প্রকাশ করছে গোমড়া আর রাগ মুখ করে বসে থাকা ছেলেটির কাছে। তার জীবনশক্তি দিয়ে তার হৃদয়ের ভালোবাসাকে অনুভব করতে চাইছে বৃষ্টিস্নাত হয়ে এবং উৎসব পালন করছে এই বৃষ্টির অনন্য প্রেমের বাতাবরণকে।
ছেলেটি ভাবছে এ কেমন পাগলী মেয়ের পাল্লায়
পড়লামরে বাবা, এত বৃষ্টিতে ভেজার কি হলো ।
ভালোবাসি বলে এত অত্যাচার সহ্য করতে হবে
কেন !! নির্ঘাত আজ জ্বর এসে যাবে ।
তাই এই বৃষ্টি সবাই ভিজছে - কেউ জীবিকার জন্যে ভিজছে,কেউ শখে কেউ বা নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বাধ্য হয়ে ।
কোমলকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে
কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরেছে সৌভাগ্য । প্রচণ্ড
ঠান্ডা লাগছে তার । তাড়াতাড়ি কোনরকমে স্নান করে সামান্য কিছু খেয়ে শুয়ে পড়েছে সৌভাগ্য।
T
মাঝ রাতে সৌভাগ্যের মনে হলো ভূমিকম্প
হচ্ছে, আসলে না ওর সারা শরীর কাঁপছে ।
বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসে গেছে । সাধারণ ধরনের জ্বর না হাড় কাঁপানো জ্বর । কম্বলের নিচে শুয়ে
ছোট্ট একটা মেসেজ করে কোমলকে । ''তুমি কি
একটু আসতে পারবে সকালে আমার না খুব জ্বর''।
কোমলের ঘুমটা আজ অনেক ভালো হয়েছে অনেকদিন পর রাতের পরিবেশটা আজ ঠান্ডা ছিল । আড়মোড়া ভেঙে প্রতিদিনের অভ্যাস মতো
মোবাইলটা হাতে নেয় কোমল, মোবাইল ফোনে দেখে সৌভাগ্যের একটা মেসেজ । মেসেজ ওপেন করে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল । কোমলের মনে হতে লাগলো যে বেচারা কে বৃষ্টিতে এভাবে
ভেজানো ঠিক হয়নি । যে জিনিস উপভোগ করা
যায় না সে জিনিস গায়ে সয় না ।
কোমল কলিংবেল বাজতেই বাসার কাজের
ছেলেটা দরজা খুলে দিয়েছে । কোমল আলতো পায়ে হেঁটে যায় সৌভাগ্যের বেড রুমের দিকে, যদিও সে এ বাড়িতে পূর্ব পরিচিত । কারণ ওদের মাঝে এনগেজমেন্ট হয়ে আছে ।
সৌভাগ্য কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে
সম্ভবত রাতে ঘুম হয়নি । মাথার চুল উস্ক শুষ্ক ।
চেহারায় স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ । সৌভাগ্যের
নিষ্পাপ চেহারাটির দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া
হয় কোমলের । আস্তে করে সৌভাগ্যের পাশে গিয়ে
বসে । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ।তারপর আলতো করে তার শীতল হাতটা ছুঁয়ে দেয়
সৌভাগ্যের কপালে ।
সৌভাগ্য স্বপ্নের ঘোরে ছিল । একটি চেনা শরীরের
গন্ধ কিছু নিশ্বাস অবশেষে একটি হাতের শীতল
পরশ শরীরে অন্য রকম আবেশ ছড়ায় । নিয়ে যায়
স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে । কপালে রাখা হাতের উপর
সৌভাগ্য আলতো করে হাত রাখে । চোখ মেলে
তাকায় কোমলের গভীর চোখের তারায় ।
কোমলের চেহারাটা অন্য রকম হয়ে আছে, যেন
এখনই কেঁদে দেবে । এক সময় কোমল কাঁচুমাচু মুখ করে অস্ফুট স্বরে বলে উঠে, সরি....., আমি দুঃখিত। আমি বুঝতে পারিনি এরকম হবে।
সৌভাগ্য কোমলের দুঃখ প্রকাশের ভঙ্গি দেখে ফিক করে হেসে উঠে ।
স্নিগ্ধার মুখের বলিরেখাগুলো পরিবর্তন হতে
শুরু করে কষ্টের রেখাগুলো রূপ নেয় আনন্দের ।
ভালোবাসাটা মনে হয় এই রকমই । কাঠ ফাটা
রোদে মাটি যেমন শুষ্ক হয়ে যায়, তৃষ্ণা নিয়ে
অপেক্ষায় থাকে বৃষ্টির আর বৃষ্টিও তেমন
ভালোবাসার পরশ দিয়ে মাটিকে আপন করে নেয়
। ঠিক তেমনি কোমলও এখন সৌভাগ্যের বুকে
মাথা রেখে খুঁজে নেয় ভালোবাসার প্রশান্তি ।
আর সৌভাগ্য স্নিগ্ধ হাতে কোমলের কালো চুলে
ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ায় । আর মনে মনে বলে
পাগলি একটা মেয়ে কষ্টও দেবে আবার
ভালোবাসে আপন করে নেবে । কি দরকার ছিল
আমাকে বৃষ্টিতে ভেজানোর.......

