Sampa Maji

Drama Fantasy

3  

Sampa Maji

Drama Fantasy

ভাইফোঁটা

ভাইফোঁটা

6 mins
325



বাবা মায়ের আদরের মেয়ে দিয়া। পরিবারের প্রথম সন্তান তাই সবাইয়ের প্রিয় এবং আদরের, বিশেষ করে বাবার, যদি ও ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বাবার কাছে একটু বেশিই প্রিয় হয়। দিয়ার ক্ষেত্রে ও হয়তো তেমনি ,নয়তো তার থেকেও বেশি।  দিয়ার ছোট্ট ভাই ও আছে , এই বাড়িতে ছেলে মেয়ে দুজনই সমান। ছোট বেলায় ভাইবোনের সম্পর্কটা একটু অন্য রকম হয় এদের মধ্যে ও সেই রকম। মাঝে মাঝেই সামান্য কিছু নিয়েই ভাই দিদিতে ঝগড়া, মারপিট লেগেই থাকে ।বড় হচ্ছে কিন্তু ছেলে মানুষী এখনও যায়নি।


দিয়া ছোট থেকে খুব কিউট দেখতে, যাকে বলে সুন্দরী পরী। কিন্ত দিয়া রূপে লক্ষী হলেও গুনে একেবারে সরস্বতীর বাহন হাঁসের মতো, শুধু খায় আর ঘুমোয়।না আছে কাজে না আছে পড়া শোনায়। কোনো রকমে প্রতি ক্লাসে টেনে টুনে পাস করে যায় । 


এই বছর দিয়া স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ উঠেছে।এতো দিন বাবার চোখে চোখে রেখে এসেছে বাড়ি সামনে স্কুল তাই কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এখন এতো দূরে কলেজ ,কি করে একা একা যাবে, তাছাড়া এর আগে এতো দূরে কোনো দিন একা কোথাও যাইনি তাই পরিবারের একটু চিন্তা হয় ।তবে মেয়েকে হোস্টেলে রেখে পড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই, যদি হোস্টেলে থাকলে মেয়ে বিগড়ে যায়,তার থেকে ভালো বাড়ি থেকে কষ্ট করেই যাতায়াত করুক । 

বাড়ির আদরের দিয়া বাসে করেই বান্ধবীদের সাথে কলেজে যাতায়াত করে। দিয়া বাধাঁ ধরা জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে একটু উড়তে শুরু করে। ছয়মাস যেতে না যেতেই একটা ছেলে দিয়াকে প্রপোজ করে, প্রথমে না না করলেও ছেলেটার সম্পর্কে জানার পর দিয়াও ছেলেটার প্রেমে পরে যায়।এই ভাবে দিয়া- আর অরুনাভ এর প্রেম চলতে থাকে । প্রমে পরে দিয়ার পড়াশোনা একে বারে শেষ এমনিতেই বুদ্ধি কম তার উপর তিন ভাগ দিন ক্লাস করে না আড্ডা দেয় নয়তো সিনেমা দেখতে চলে যায়। শুধু বই নিয়ে কলেজে আসে আর যায়,পড়া কতোটা করে তা সে নিজেও জানে না। ওদিকে সুখেন বাবু দেখেন মেয়ে আমার প্রতি দিন সময় মতো কলেজে যাচ্ছে আবার ঠিক সময় ফিরে ও আসছে। ভাবে মেয়ের বয়সের সাথে সাথে বুদ্ধি ও হয়েছে, মেয়ে আমার মন দিয়ে পড়াশোনা করছে।

 

কয়েক মাসে মধ্যে দিয়া অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। দিয়া বাড়িতে মিথ্যে বলতে শুরু করে ,এখন আর ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে না । এতে মায়ের মনে সন্দেহ হয় মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলে না।তাই মেয়ের বাবার কাছে মেয়ের নামে নালিশ করে। কিন্তু সুখেন বাবু মেয়েদের বিষয়ে খারাপ কথা শুনতে চায় না ,ও কিছু নয় বলে উড়িয়ে দেয়। কিছু মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরছে দেখে মনে সন্দেহ হয় , সুখেন বাবু খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে এবং জানতে পারে মেয়ে একটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায় কলেজের ক্লাস করে না। একদিন দিয়াকে এই নিয়ে একটু বকা বকি করে দেন। সুখেন বাবু ভাবেন মেয়েকে বারণ করে দিয়েছি , মেয়ে আমার আর এমন করবে না। কিন্ত দিয়া ভাবে বাবা মা আমাদের সম্পর্ক টা কোনো দিন মেনে না নেয়।এখন যদি কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয় , ফোন ছাড়িয়ে নেয় , যদি অন্য ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে আর অরুনাভ এর সাথে আর দেখা হবে না। দিয়া  ভাবে যদি বিয়ে করে নেয় তাহলে বাবা মা আর না করতে পারবে না। অরুনাভ ও দিয়ার কথায় রাজি হয়ে যায়, তাই ওরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেয়। এদিকে সুখেন বাবু দিয়া বাড়ি না ফেরার খুব চিন্তায় পড়ে যায়।একে ওকে ফোন করতে থাকে , কিন্তু কেউ দিয়ার খবর দিতে পারে না , তখন নিজেকেই দোষারোপ করতে থাকে,কেন মেয়েটাকে বকতে গেলাম, যদি এখন কিছু করে ফেলে তাহলে কি হবে এই সব হিজিবিজি ভাবতে থাকেন। দিয়ার চিন্তায় বাড়ির সকলের খাওয়া দাওয়ার উঠে যায়, মেয়ে কথা ভেবে মাও শান্ত থাকতে পারে না ,এই ভাবে রাত কেটে যায়। পরের দিন সকালে দিয়ার এক বান্ধবী জানায় দিয়া অরুনাভকে বিয়ে করেছে । এই খবর শুনে সুখেন বাবু খুব ভেঙে পরেন।তার আদরের মেয়ে এমন কাজ করতে পারবে, তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।কি এমন অভাব রেখে ছিলেন মেয়ের যে মা , বাবাকে না জানিয়ে ,মা বাবাকে সমাজের কাছে ছোটো করে একটা ছেলের হাতে ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে হলো। রাগে দূঃখকে সুখেন বাবু,  স্ত্রী ও ছেলেকে বলেদেন এখন থেকে এই বাড়িতে যেন কেউ  আর না দিয়ার প্রসংঙ্গ তোলে । এখন থেকে ভাববো মেয়ে আমার হারিয়ে গেছে।  


১০দিন পরে দিয়া অরূনাভকে নিয়ে বাবার কাছে আসে , কিন্তু সুখেন বাবু দিয়ার মুখ মুখি হননি ,তিনি রুমের দরজা বন্ধ করে  দেন । আর স্ত্রীকে বলে দেন , দিয়া যেন এই বাড়িতে না আসে তার জন্য এই বাড়ির দরজা সে দিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছে যে দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছে। দিয়া বাবার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু সুখেন বাবু দরজা খুললেন না।এই রকম কঠিন সময়ে সাবিত্রী দেবীর কিছুই করার নেই না পারবেন স্বামীর বিরুদ্ধে যেতে , আবার না পারবেন মেয়ে কে দূরে ঠেলে দিতে ।এক দিকে স্বামী আর অন্য দিকে মেয়ে , মায়ের মনের অবস্থা জাতা কলের মতো , তবুও তিনি স্বামিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু কিছু হয় না। কয়েক ঘণ্টা দিয়া দাঁড়িয়ে থাকা কিন্তু বাবা বেড়িয়ে আসছে না  দেখে দিয়া ভেবে নেয় বাবা তাদেরএই সম্পর্কটা মেনে নেবে না তাই বাধ্য হয়ে দিয়া অরূনাভকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। মা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখে জল ফেল। তখন দীপ বাড়িতে ছিল না , স্কুলে গিয়ে ছিল।


প্রায় 6মাস হয়েগেল দিয়া এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। সেই যা বিয়ের পর এসেছিল, তার পর আর আসেনি, কার ও সাথে যোগাযোগ রাখেনি।তবে বান্ধবীর থেকে সব খবর পায়। এদিকে সুখেন বাবু সরাসরি যোগাযোগ না রাখলেও বন্ধুর মারফত খোঁজ খবর নেয়, তিনি দিয়াকে খুব মিস করেন কিন্তু কাউকে বুঝতে দেন না। দিয়া মা ও মেয়েকের কথা ভেবে মনে মনে খুব দুঃখ পান কিন্তু তিনি স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেন না। তাই তিনি দিয়া এক বান্ধবীর কাছে থেকে দিয়ার খোঁজ খবর নিয়ে আসে । এদিকে দীপ মাকে মাঝে মাঝে দিদির কথা জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলে না, তাই ওর এক বন্ধুর কাছে থেকে খবর নেয়, সেই বন্ধুর মামা বাড়ির পাশে দিয়ার শোশুড় বাড়ি।


আজ ভাই ফোঁটা,দিয়ার কাছে এই দিনটা খুব স্পেশাল , সারা বছর অপেক্ষা করে থাকতো এই দিনটার জন্য। অন্যান্য বছর ওরা চার জনে এই দিনটা নিজেদের মতো করে আনন্দ করতো ।কিন্তু এই বছর দিয়া নেই তাই বাড়িতে কোনো আনন্দ নেই । তবুও সবাই মনে মনে আজ খুব খুশি এই খুশির কারণ সেই দিয়া ,তবে এই বিষয়ে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে না , সবাই জানে দিয়ার আসার খবর শুধু আমি একাই জানি আর কেউ জানে না , তাই যে যার মতো করে দিয়ার আসার অপেক্ষায় প্রস্তুতি করছে। সুখেন বাবু সকাল সকাল গিয়ে মেয়ে পছন্দের জিনিস বাজার করে এনেছেন। এতো বাজার দেখে মা সাবিত্রী দেবী জিজ্ঞাসা করতে বলেন, আজকে দীপ এর মন ভালো নেই তাই যদি ওর পছন্দের রান্না বান্না করো তাহলে ও খুশি হবে ।তথচ সব দিয়ার পছন্দের বাজার করে এনেছে, সাবিত্রী দেবীও শুনেছেন আজ দিয়ারা আসবে  , কিন্তু যদি এই স্বামীকে বলেন তাহলে হয়তো সুখেন বাবু বাড়িতে নাও থাকতে পারেন তাই আর কিছু বলেন না। , ভাবলেন ভালোই হয়েছে মেয়ে আমার কতো দিন আমার হাতের রান্না খায়নি , কতোদিন পরে আসছে , ওদের জন্য রান্না বান্না করে রাখি। এদিকে দীপ ও বন্ধুর কাছে শুনেছে দিদি ভাই ফোঁটা দিতে এই বাড়িতে আসবে। তাই দীপ ও মায়ের চোখ বাঁচিয়ে দিদির জন্য দিদির পছন্দের সব আইস্ক্রিম, চকলেট ইত্যাদি কিনে এনেছে। 


তিন জনেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলছে না। হঠাৎ কলিং বেল বাজার শব্দ শুনে একসাথে তিনজনেই দৌড়ে আসে , অথচ অন্য সময় কলিং বেল বার বার বাজলেও কেউ শুনতে পায় না।যত কাজ থাক সাবিত্রী দেবী কেই দরজা খুলতে হয়। কিন্তু আজ ঠিক অন্য রকম। দরজায় একসাথে সবাইকে দেখে দিয়া খুশিতে দিশে হারা। দিয়া খুব  ভয়ে ভয়ে এসেছে, যদি বাবা এখনও রেগে থাকে, যদি অপমান করে ইত্যাদি। কিন্তু এখানে এসে দেখে সবাই ওর জন্যেই অপেক্ষা করছে। দিয়া আর অপেক্ষা না করে বাবাকে আলিঙ্গন করে কাঁদতে থাকে, 

-বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো,আজ আমি খুব খুশি।

- তোকে আমি কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি , সেদিন রাগ করেই তোকে চলে যেতে বললাম,আর তুই চলে গেলি,আমার কথা গুলো শুনলি অথচ আমার অন্তরের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলি না।আর তুই সেই যে চলে গেলি আর আসলি না ,একটা ফোন কোরেও খোঁজ নিলি না ।বাবা,মা ভাইয়ের কথা তোর মনে পরে না।

- এখান থেকে যাওয়ার কয়েক দিন পরেই আমরা বাইরে নিয়ে চলে গিয়েছিল।এই ৩দিন হল এসেছি। আজ ভাই ফোঁটা, তাই না এসে থাকতে পারলাম না।

- তোর ভাই ও সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। তোর সাথে কতো দিন ঝগড়া করেনি । আমরাও তোদের এই ঝগড়া দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। 

মেয়ে জামাই কে কাছে পেয়ে সাবিত্রী দেবীও খুব খুশি, দীপ ও খুব খুশি।এখন আর তার জনে না ৫জনে আনন্দ করবে।  




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama