Partha Pratim Guha Neogy

Romance

3.4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

বাজির ভালোবাসা

বাজির ভালোবাসা

12 mins
680



বড়লোক বাপের উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়ে অনুপমা । প্রচন্ড জেদী , বদমেজাজি সাথে আগুন ঝরা সুন্দরী। বি বি এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। এটাও বলা যায় যে সেই তার ভার্সিটি সেরা সুন্দরীর খেতাব পেয়েছে।কিন্তু দিন দিন সে উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে দেখে তার বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই।সারাদিন হই হুল্লোর আর আড্ডা মেরে পার করে।আর কথায় কথায় বাজি করে সবার সাথে আর বাজিটা জিতবেই জিতবে। তার মা বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বসে আনতে পারে নি।কারন তাদের একটাই মাত্র সন্তান।তাই আদর পেয়ে পেয়ে অনেকটা বেয়াড়া হয়ে গেছে। আর এখন সেটা এতই বেশি যে তাদের পক্ষে তাকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে গেছে। তাই তার মা বাবা ঠিক করলো মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিবে।কিন্তু এই মেয়ের সম্পর্কে জানার পর কেউই তাকে বাড়ির বউ বানাতে চাইবে না।এই নিয়ে এক গভীর চিন্তায় পড়লো তারা। শেষে অনুপমার মায়ের মনে হল তার গ্রামের বান্ধবীর কথা। ওরা গ্রামেই থাকে, তার তো একটা ছেলে আছে।আর তাকে এই অবস্থায় একমাত্র তার এই বান্ধবীই উদ্ধার করতে পারে। তিনি তখন তার বান্ধবীর সাথে কথা বলে জানতে পারলেন তার ছেলের লেখাপড়া প্রায় শেষ। তাই বিয়ে দিতে আপত্তি নেই তার।আর তার ছেলেও সে কথা দিলে সেটা ফেলবে না। আর ওনার অনুপমা কে বেশ পছন্দ। তাই তিনি অনুপমার মা কে পাকা কথা দিলেন।

অনুপমার মা গ্রামে গিয়ে তার বান্ধবীকে সব বুঝিয়ে বললো সাথে তার বান্ধবীর ছেলে কেও দেখে আসলো। ছেলে খুবই সুন্দর। সবদিক থেকেই পারফেক্ট কিন্তু সমস্যা ছেলে গ্রামেই লেখাপড়া করেছে তাই অনুপমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না হয়তো। ছেলে কে সব বলে অনুপমার নাম্বার দিয়ে চলে আসে। তারা বাড়িতে ফিরে অনুপমাকে বিয়ের কথা বলে ভার্সিটি যাওয়া অফ করতে বলে কিছুদিন। অনুপমা তো রেগে আগুন।

এভাবে কয়েকদিন থাকার পর অনুপমার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল তাই সে আর পারছিল না। তাই সে তার মার কাছে জানতে চাইলো ছেলের সম্পর্কে। সব জেনে অনুপমার চক্ষু চড়কগাছ।সে বাবা - মার মুখ চেয়ে বিয়ে করতে পারে,কিন্তু একটা গেয়ো ছেলে কে কখনোই তার স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবেই। তাই অনুপমা ছেলেটির নাম্বার তার মার থেকে চেয়ে নিল যে সে ছেলেটির সাথে কথা বলে পরিচিত হতে চায়, বিয়ের আগে ফ্রি হতে চায় জড়তা কাটিয়ে। অনুপমার মা ছেলেটির নাম্বার দিয়ে দিল।

অনুপমা রাত ১০টার দিকে ছেলেটির নাম্বার এ ফোন করল ।

অনুপমা: হ্যালো

ছেলেটি: কে কইতেছেন?

অনুপমা: আমি অনুপমা ...মানে যার সাথে আপনার বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে।

ছেলেটি:ওহ এইটা তুমার নাম্বার ? আচ্ছা শুনো তোমারে আমার মেলা পছন্দ ওইছে।মুই তুমারেই বিয়া করিম। অনুপমা:আপনি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারেন না?

ছেলেটি: তুমি তো মোর বউ হবা, তুমার লগে শুদ্ধ ভাষায় কতা কয়ন যায় নাকি? এইটাই ঠিক আছে।

অনুপমা: ডিসগাস্টিং.....এই শুনেন আমি আপনার মত একটা গেয়ো ভুত, গাইয়া, খ্যাত কে বিয়ে করবো না। আপনি সবাইকে না করে দেন।

ছেলেটি: কিন্তু আমি তো তুমাক ই বিয়া করিম। মুই তো সবাক বন্দু গুলাক কইয়া দিছি।

অনুপমা: আপনাকে বিয়ে করবো না আমি মরে গেলেও করবো না।

ছেলেটি:তুমি মোক বিয়া করার জন্য পাগল হইয়া যাইয়া মনে রাখো। মোরে বিয়া করার লাইগা মরতেও চাইবা।

অনুপমা: আপনি শুধু গাইয়া ভুত না আপনার মাথাতেও সমস্যা আছে...আমি একটা একটা বেকার অকমর্ণ ছেলে কে বিয়ে করতে পারবো কিন্তু আপনাকে নেভার এভার....

ছেলেটি:কিন্তু মুই তো তুমাক বিয়া করিম এইডা ফাইনাল।

অনুপমা: অসম্ভব। আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করবো না।

ছেলেটি:আর যদি বিয়া করবার পারি?

অনুপমা:যদি না পারেন?

ছেলেটি:বাজি ধরবেন?

অনুপমা: করলাম, বলেন কি বাজি...

ছেলেটি:মুই তুমারে বিয়া করবার পারলে তুমি রোজ রাতে ঘুমানোর আগে আর সকালে ঘুম ভাঙার পর তুমার ভেজা চুল দিয়ে আমার পা মুছাই দিতে হবে...

অনুপমা: ইয়াক.....আর আপনি যদি হারেন তাহলে?

ছেলেটি: তুমি যেই ছেলের লগে বিয়া করবা তার লগে বিদ্যাসে হানিমুন করতে সব টাকা মুই দিমু....

অনুপমা: অনুপমা খুশি হয়ে.... অকে ফাইনাল....

তারপর অনুপমা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিল বাসায়। সে ওই গাইয়া খ্যাত কে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু তার মা তার সিন্ধান্তে অটল বিয়ে তার বান্ধবীর ছেলেকেই করতে হবে। এক সপ্তাহ এভাবে চলার পর একদিন অসুস্থ হয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় অনুপমা তখন অনুপমার বাবা বিয়ে ভেঙে দেয়,তার মেয়ের কথা ভেবে। অনুপমা তো মহাখুশি সেই গাইয়ার হাত থেকে বাঁচতে পেরে… কিছুদিন বাসায় রেষ্ট নিয়ে আবার আগের মতই হয়ে গেল অনুপমা...............

বেশ মাসখানেক পর ভার্সিটি তে আসলো অনুপমা।এসেই বান্ধবীদের সাথে আড্ডা ফাজলামিতে আবার মেতে ঊঠলো।তখনি নোটিশ করলো যে ক্যাম্পাসে একটা নতুন ছেলে একা একা বসে পড়ছে । বান্ধবীদের কে জিজ্ঞেস করলো নতুন ছেলেটি কে? বান্ধবীরা বললো নাম প্রলয় , ভার্সিটিতে নতুন কিন্তু আমাদের সিনিয়র। MBA করছে। কারো সাথেই তেমন মিশে না। মেয়েদের আশে পাশেও তাকে খুজে পাওয়া যায় না। প্রচন্ড লেভেলের ব্রিলিয়ান্ট & স্কলারশিপ পেয়ে MBA ভর্তি হয়েছে। সারাদিন বইয়ে মুখ গুজে থাকে এক কথায় বই পোকা কিন্তু অনেক হেল্পফুল।

মেয়েদের আসেপাশে থাকে না কেন? গে নাকি???

অনুপমার কথা শুনে হেসে ফেললো তার সব বান্ধবীরা। উমা হঠাৎ বলে উঠলো মেয়েদের সাথে মিশে না কথা টা ঠিক না আমি সেদিন আমাদের একটা সাবজেক্ট এ এসাইনমেন্ট করি নি। ওই দিন জমা দেবার শেষ দিন ছিল। অনল ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া ওনাকে দেখিয়ে দিয়ে তার কথা বলতে বললো। আমি গিয়ে আমার সমস্যার কথা বলতেই তিনি ওনার পুরোনো এসাইনমেন্ট বের করে দিল।আর কভার পেজ চেঞ্জ করে আমার নাম লাগিয়ে দিয়ে জমা দিতে বললো। আমি সেদিন ওটাই জমা দিয়েছি। আর স্যার বললো আমার এসাইনমেন্ট টাই নাকি বেষ্ট ছিল। অনেক বাহবা দিলেন।

আসলে উনি মেয়েদের সাথে প্রেম ভালবাসা রিলেশন এগুলো থেকে দুরে থাকতে চান।উনি অনেক সহজ সরল কিনা তাই।পটানোর ধান্দা করে গেলে উনি কথা বলবে না। লেখাপড়ায় হেল্প লাগলে, ওনার সাধ্যমত সাহায্য করেন। তো কি হইছে? আমি যদি তার সাথে প্রেম করতে পারি তো কি করবি বল? অনুপমা বললো। তুই অনেক সুন্দরী কিন্তু তাকে পটাতে পারবি না। তোর আগেও অনেক মেয়ে তার উপর ক্রাশড এবং রিজেক্ট হইছে।তাই তুই ও পারবি না সেটা সিওর.....

উমা তুই আমাকে চিনিস না??? আমি অনুপমা, যার উপমা নাই সেই অনুপমা। আমার মত কেউ নেই। ওয়ান পিস।আমি পটাতে পারবো না এমন কোন ছেলে এই ক্যাম্পাসে নাই। উমার অনুপমার জেদ সম্পর্কে ভালই ধারনা আছে। কিন্তু নিলয় ছেলেটিকে পটাতে পারবে না সেটা সে সিওর। কারন উমার প্রলয় ছেলেটির উপর একটা কনফিডেন্স জন্মে গেছে। তাই উমাও জেদ ধরে বসলো। উমা বললো তুই পারবি না ওই ছেলেকে পটাতে।

অনুপমা অনেক টা রেগে গিয়ে বললো এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ছেলে কে পটাবো এবং এক সপ্তাহ তোদের নাকের ডগার উপর দিয়ে প্রেম করবো এবং এক সপ্তাহ পর তোদের সামনেই ওর সাথে ব্রেক আপ করবো & ও আমার হাত পা জো করবে ব্রেক আপ না করার জন্য...... 


বেট ধরবি?

উমা ভাবলো অনুপমা অসম্ভব কিছু বলছে তাই বেট করেই ফেললো। ৫০০০ টাকা বেট হল অনুপমা & উমার মধ্যে। ওকে তাহলে কাল থেকেই তোর বাজির দিন শুরু উমা বললো..... অনুপমা বললো, ওকে বন্ধু টাকাটা রেডি রাখো আজ ৫ তারিখ........ ১৯ তারিখে টাকা টা পাচ্ছি...... ৭দিনে পটাবো এবং ৭দিন প্রেম......ডান......

আজ ১২তারিখ....

অনুপমা প্রলয় নামের ছেলেটার হাত ধরে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ করে উমাদের সামনে এসে গেছে। তাই উমাদের সাথে প্রলয়ের পরিচয় করিয়ে দিল। অনুপমা বললো উমা এই হল প্রলয় আমার বয়ফ্রেন্ড আর প্রলয় এই হল উমা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। প্রলয় আর উমা হ্যান্ডশেক করলো। সেদিনের মত বিদায় নিল যে যার মত। ..

এদিকে নতুন প্রেমে পড়ে প্রলয় তো পাগল হয়ে গেছে। আসলে ক্যাম্পাস এর সেরা সুন্দরী যখন তাকে এসে বললো যে সে তাকে পছন্দ করে তখন প্রলয়ের তো চাঁদ হাতে পাবার অবস্থা। তাই পরের দিন গিয়েই বলে দিয়েছিল যে প্রলয় ও তাকে পছন্দ করে।সেদিন থেকেই প্রেম।অনুপমা যে বাজি করে প্রেম করছে প্রলয় বেচারা সেটা জানেই না।আর অনুপমাও হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছে। তার মাথায় এখন একটা চিন্তা তাকে বাজি জিততে হবে। আর অনুপমা কখনোই কোন বাজি তে হারে নি। তাই এবারও হারতে চায়না। সারা সপ্তাহ জুড়ে কপোত কপোতীর মত প্রেম চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে দুজনই…

আজ ১৯তারিখ....

অনুপমা প্রলয়কে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে উমা,অনলরা যেখানে আড্ডা দিচ্ছিল সেখানে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে সবাইকে ডাক দিল।সবাই আসলে অনুপমা প্রলয়কে বললো প্রলয় গেম ওভার। প্রলয় বললো মানে? তখন অনুপমা সব খুলে বললো আর উমা প্রলয় অনল সবার সামনেই বাজির ৫০০০টাকা অনুপমাকে দিয়ে দিল। প্রলয়ের আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার অবস্থা। প্রলয় অনুপমার হাত ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো। প্লিজ অনুপমা এমন করো না তোমার বাজির টাকা টা আমি দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু অনুপমার মায়া হল না। সে বিজয়িনীর বেশে অট্টহাসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো কিরে উমা, এই তোর সেই প্রলয়।আমার কাছে এখন হাত ধরে প্রেম ভিক্ষা চাইছে। বলেই একটা অট্টহাসি দিল......

অনল , উমা , প্রান্ত, মনিরা সবাই নিরুপমার এই রুপ দেখে অবাক। কিভাবে এতটা কঠিন মনের হতে পারে একটা মেয়ে। প্রলয় কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো ঘাসের উপর।অনুপমা প্রলয়ের হাত থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল হাসি মুখেই। সবাই অনুপমার আচরনে হতবাক.... অনুপমা চলে যাচ্ছে.....

হঠাৎ অনুপমা শুনতে পেল পিছনে প্রলয় আর কাঁদছে না।প্রলয় আর উমা দুজনেই হেসে উঠছে একসাথে।অনুপমা অবাক হয়ে ফিরে আসলো সবার কাছে।তখন দেখলো প্রলয় অনল ভাইয়ার কাছ থেকে ২৫০০০টাকা নিচ্ছে। অনুপমা উমাকে জিজ্ঞেস করলো এটা কিসের টাকা। তখন অনল বললো, আমি বাজি করেছিলাম প্রলয়ের সাথে। প্রলয় বলেছিল তুমি নিজে এসে প্রলয়কে প্রোপোজ করবে এবং এক সপ্তাহ প্রেম করে নিজেই ব্রেক আপ করবে। আমি বলেছিলাম অনুপমা তোমাকে পাত্তাই দিবে না।তাই আমি ওর সাথে বাজি করেছিলাম কিন্তু আমি হেরে গেছি তুমি ওকে প্রোপোজ করে এক সপ্তাহ প্রেম করে এখন নিজেই ব্রেক আপ করছো তাই প্রলয় জিতে গেছে।

অনুপমা অবাক না হয়ে পারলো না। সে তো বাজি ধরেছে উমার সাথে ৫০০০ টাকা আর নিলয় সেটাই করেছে ২৫০০০ টাকা। কিভাবে? তার মানে কি উমা ??? তখন উমা বলা শুরু করলো, বললো অনুপমা , স্যরি বন্ধু ।তোর সাথে এই বাজি করার জন্য টাকা টা আমাকে প্রলয় ভাইয়াই দিয়েছিল।যেদিন এসাইনমেন্ট জমা দেবার পর প্রলয় ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাতে যাই তখন তিনি এই বাজি টা করতে বলেন আর এটাও বলেন যে বাজির টাকা উনি দেবেন । তাই আমি বাজিটা ধরি। বাকি টা প্রলয় ভাইয়ার কাছেই শুনে নে...

হচ্ছে টা কি প্রলয়? অনুপমা বললো। অনুপমা তুমি এতটাও সুন্দরী বা চালাক নও যে আমার মত ছেলে কে এক সপ্তাহে তোমার ন্যাকামি দেখিয়ে প্রেমে ফেলতে পারবে ।তুমি যেদিন আমাকে প্রথম নোটিশ করো। সেদিন আমি তোমার ব্যাপারে অনলের কাছে জানতে চাই। তাতেই বেরিয়ে আসে তোমার এই ভয়ংকর রুপ টা। তাই ভাবলাম তোমাকে একটা শিক্ষা না দিলেই নয়।তখন অনল বললো তুমি নাকি আমাকে পাত্তাই দেবে না। আর তখনি বাজি টা করলাম অনলের সাথে ২৫০০০ টাকা। আর সেটার ২০% মানে ৫০০০ টাকার বাজি ধরতে বললাম রুনা কে তোমার সাথে। রুনা ও তাই করলো। আর আমিও তোমার নেকু নেকু প্রেম সহ্য করলাম ১সপ্তাহ। আর হ্যাঁ তুমি নাকি কখনো হারোনি ??? হারতে শেখো আজ থেকে, হারের একটা আলাদা মজা আছে।

অনুপমা জীবনে প্রথম কোন বাজিতে হেরে বাসায় গেল।সারারাত ঘুম আসছে না।সে কখনোই হারতে পারে না।সে তার হার টা মেনে নিতে পারছে না।তাকে জিততেই হবে যেভাবেই হোক। এখন জিততে হলে একটাই কাজ আছে সেটা হল প্রলয়ের সাথে ব্রেক আপ না করা। কিন্তু সেটা সে আজকেই সবার সামনে করছে। তাই এটা সম্ভব না। কিন্তু করবে কি সে প্রলয়ের কাছে তার হার টা মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই।

অবশেষে অনুপমা একটা চরম সিন্ধান্তে উপনীত হল।যা কারো কল্পনাতেও আসতে পারে না শুধু মাত্র একটা বাজি জেতার জন্য। না না একটা নয় ২টা বাজি জিতবে সে যদি এইকাজ টা করতে পারে।

প্রথমত... সে কাল কে প্রলয়কে বিয়ে করবে জোর করে রাজি করিয়ে হলেও। প্রয়োজন হলে সুইসাইড এটেম্পট করবে। প্রলয়কে বিয়ে করলে তাদের ব্রেক আপ হলো না মানে অনুপমা জিতে গেল বাজি টা।

দ্বিতীয়ত... প্রলয় মার পছন্দ করা গাইয়ার থেকে অনেক ভালই আছে। সে প্রলয়কে বিয়ে করলে ওই গাইয়ার সাথে বাজিতে জিতবে। হানিমুন খরচ টা তার কাছে উসুল করবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন অনুপমা ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রলয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে প্রলয়কে বললো তাকে বিয়ে করতে। প্রলয় বললো অসম্ভব আমি তোমার মত মেয়ে কে কখনোই বিয়ে করবো না। তখন অনুপমা প্রলয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে সবার সামনেই দৌড়ে ৫ তলা ভবনের উপর উঠে চিৎকার করে বলতে লাগলো সবার উদ্দেশে প্রলয় তাকে আজকেই বিয়ে না করলে সে সুইসাইড করবে। কিছুক্ষন এর মধ্যেই পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী উপস্থিত হলো সেখানে। আর সবার অনুপমার জেদ সম্পর্কে ভালই ধারনা আছে। তাই সবাই প্রলয়কে হাত জোর করে হলেও বিয়েতে রাজি করিয়ে ম্যারেজ রেজিস্টার রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে টা দিল...

রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বের হয়েই অনুপমার মুখে প্রথম কথা ছিল.... বাজি টা আমিই জিতলাম আর তুমি হারলে। ব্রেক আপ আর হলো না। অনুপমা কখনো কোন বাজিতে হারে না মাইন্ড ইট.... প্রলয় বেচারা অবাক হবে নাকি শকড হবে কিছুই বুঝতেছে না। একটা মেয়ে শুধু মাত্র একটা ৫০০০ টাকার বাজির জন্য একটা ছেলেকে সুইসাইডের ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়ে বিয়ে করতে পারে বলে তার ধারনার বাইরে ছিল। তাই আপাতত প্রলয় কিছুই বললো না।

অনুপমার বিয়ের খবর টা এতক্ষনে তার বাবা মাও জানতে পেরেছেন।প্রথমে রাগ হলেও পরে পুরো ব্যাপার টা জানতে পেরে মেনে নিয়েছেন তাই প্রলয়কে নিয়েই অনুপমাকে বাসায় যেতে বলছে।সন্ধ্যার দিকে অনুপমা প্রলয়কে নিয়ে তাদের বাসায় আসলো। এসে দেখে বাড়িতে মোটামুটি একটা বিয়ের আমেজ এসেছে।বাড়িতে কিছু আত্বীয়রাও এসেছে, যাদের কাউকে চেনা আবার কেউ কেউ অচেনা।অনুপমার সেগুলোতে কোন খেয়াল নেই।তার চিন্তা হল সে এক বারে ২টা বাজি জিতেছে এবং তাকে কেউ কখনো কোন বাজিতে হারাতে পারে নি।রাত ১২ টা....

অনুপমার ঘরে বাসর সাজানো হয়েছে তাদের।অনুপমা খাটের উপর বসে আছে। প্রলয় আসলো রুমে।প্রলয় বেচারার মন খারাপ।অনুপমা যদিও বাজি জেতার জন্য প্রলয়কে বিয়ে করেছে কিন্তু এমনিতে প্রলয়কে তার খারাপ লাগে না।দেখতে শুনতে ভাল ব্রিলিয়ান্ট, হ্যান্ডসাম, অনেক মেয়ের ক্রাশ, স্বামী হিসেবে এমন ছেলেই চায় মেয়েরা।তাই নিরুপমা মনে মনে প্রলয়কে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে। প্রলয় অনুপমার রুমের বারান্দায় গিয়ে বসলো মন খারাপ করে। 

হঠাৎ অনুপমার মনে হল গাইয়া টাকে বলা দরকার যে সে অন্য একটা ছেলে কে বিয়ে করেছে & কয়েক দিন এর মধ্যেই হানিমুনে যাবে। তাই হানিমুনে যাওয়ার টাকা টা রেডি রাখো। অনুপমা ফোন দিতেই গাইয়া টা ফোন রিসিভ করলো। অনুপমা তো এক নিশ্বাসে সব বলে ফেললো।

অনুপমা:আমি কিন্তু পরের সপ্তাহে হানিমুনে যাবো।

ছেলেটি: সেটা তো হবে না। মুই তো পরের সপ্তাতে হানিমুন যাবার পাইম না।মোর ফাস্ট সেমিস্টার এর ফাইনাল পরীক্ষা আছে।

অনুপমা: আপনি কেন যাবেন? আপনি বাজির টাকা দিবেন আমি আমার স্বামী কে নিয়ে হানিমুনে যাবো।

ছেলেটি:টাকা না হয় দিলাম কিন্তু স্বামীকে ছাড়া হানিমুনে কিভাবে যাবে [ ফোন কানে ধরে বলতে বলতে প্রলয় রুমে আসলো।]

এসে অনুপমার সামনে বসে বললো স্বামী কে ছাড়া কি হানিমুনে যাওয়া যায়? অনুপমা তো অবাক? আমি এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলাম। আর এতক্ষন তো গাইয়া টা আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলছিল আর এখন এত সুন্দর করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে কি করে? তখন দেখলো কথা গুলো মোবাইল থেকে নয় সামনে থেকে আসছে।তখন প্রলয় বললো চুল ভেজা আছে?? ভেজা চুল দিয়ে পা মুছানোর কথা ছিল!!!!!!!!..

অনুপমা হাঁ করে অবাক হয়ে বললো, প্রলয় তার মানে তুমি মার বান্ধবীর ছেলে??

প্রলয় বললো, বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হবে , সুইসাইড ও করতে চাইবে ... করেছো। বলেছিলাম তোমাকেই বিয়ে করবো...করেছি। এখন থেকে প্রতিদিন ভেজা চুল দিয়ে সকাল আর রাতে পা মুছে দেবে। অনুপমা বললো সব করবো আগে বলো এতসব করলে কি করে?

প্রলয় বললো, যেদিন তোমার মা তোমার সম্পর্কে আমাকে বলে সেদিনই বুঝেছিলাম তুমি কক্ষনো কোথাও হারো নি। তাই এমন জেদী আর বদমেজাজী হয়েছো। আমি চাইলে তোমার সাথে মিট করে কথা বলেই বিয়ে টা করতে পারতাম। কিন্তু সেটা করলে তোমার জেদী আর বদমেজাজী অভ্যাস টা থেকেই যেত।তাই সেটা না করে তোমার মার কাছ থেকে তোমার নাম্বার টা নিয়ে ফোন এ রাখলাম।আর প্ল্যান করলাম কিভাবে তোমাকে ঠিক করা যায়। আর তুমি যেদিন তোমার মার কাছের থেকে আমার নাম্বার নিয়েছো তখনি আন্টি আমাকে বলে দিয়েছে।আর আমিও তোমাকে খেপিয়ে দিয়ে বিয়ে না করার বাজি ধরালাম। কারন আমি জানতাম

বাজির কথা বললেই তুমি রাজি হবে, তারপর ভার্সিটি তে এডমিশন। প্ল্যান মতই সব হল আর তুমি বিয়েও করলে।

তার মানে তুমি সব গুলো বাজি জিতলা???? অনুপমা বললো। আমাকে কি সত্যি সত্যি তোমার পা ভেজা চুল দিয়ে মুছে দিতে হবে??. প্রলয় বললো, না হবে না।তুমি সব সময় আমার বুকে থাকবে ।আর হ্যাঁ আরো একটা বাজি জিতেছি।সেটা হলো আমার শ্বশুর বাবার কাছে। সেটা হল আমি যদি ওনার মেয়ে কে ওনার মেয়ের ইচ্ছাতেই বিয়ে করতে পারি তাহলে হানিমুন এর বাজেট উনি দিবেন সেটা অনুপমা যেখানে যেতে চাইবে......।

তো অনুপমা বাজিতে নাকি সব সময় জিতে যাও কখনো হারাতে পারে নি কেউ। এখন তো দেখছি একটা বাজিও জিততে পারলে না। অনুপমা:কে বললো আমি বাজি জিতি নি...

প্রলয়:কোথায় জিতলে বাজি?

অনুপমা: আমি বাজিতে জিতে নিলাম সেই মানুষ টাকে যার কাছে হাজার বার বাজিতে হেরে যেতেও শান্তি আছে।সেই মানুষ টাই আমার সব থেকে বড় বাজি জেতা।.....

আর সেটা আমার গাইয়া খ্যাত প্রলয় .....

প্রলয় : তাই নাকি?? তাহলে চল এখন বিছানায় তোমাকে হারিয়ে দিয়ে জিতিয়ে দেই আবার।

অনুপমা: ইশ রে শখ কত... আগে ভাল করে প্রোপোজ কর.... তারপর ভাববো......প্রলয় : বউকে বাসর রাতে প্রপোজ করা লাগবে? পারবো না..

অনুপমা: পারতেই হবে... জোর করে প্রপোজ করাবো।

প্রলয় : পারবো না প্রপোজ করাতে বাজি কর....

অনুপমা: ওকে বাজি ........ বলো কি বলবে না?

প্রলয় : I LOVE YOU...

অনুপমা: হেরে গেছে হেরে গেছে… প্রপোজ করেছো...

প্রলয় : না না করি নি এমনি বলছি ওটা..... 


এভাবেই চলতেই থাকবে বাজি..... একজন হেরেও জিতে যাবে আর একজন অন্য জন কে জিতিয়ে দিয়ে জিতে যাবে সেই মানুষ টাকে যার মুখে জিতের হাসিটা পৃথিবীর সব কিছুর থেকেও বেশি মুল্যবান.....

চলুক ওদের খুনশুটির ভালবাসা......



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance