অতিথি
অতিথি
গল্পের শিরোনাম :-"অতিথি"
গল্প লিখনী :-ডা: সত্যব্রত মজুমদার
তারিখ :-১৭/০৮/২০২২
-------------------------------অতিথি
ডা: সত্যব্রত মজুমদার
অতিথি
বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের জলে পুষ্ট দক্ষিণের সুন্দরবনের "হাড়িয়া ডাঙ্গা" নদীর ধারে বিখ্যাত খাড়ি আর ম্যানগ্রোভ অরণ্য দিয়ে ঘেরা গ্রাম " "স্বজন ভূমি" আনন্দ কীর্তনীয়া দের খড়ের চালের মাটির বাড়ি, নোনতা জলের জন্য চাষবাস সেইরকম হয়না, খাড়িতে গলদা চিংড়ির মীন ধরা, সারাদিন, গভীর জঙ্গলের মধু, মাছ ধরে সংসার অতি বাহিত হয় কষ্টেসৃষ্টে, স্ত্রী অতসী কীর্তনীয়া, চার সন্তান, ছয় কাঠা সহ ভিটেবাড়ি, কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালান, মাঝেমাঝেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরছাড়া হতে হয়, বছরে এক-দুইবার, অতসী দেবী দের মাটির ঘরের পিছনে কিছুটা দূরে গোয়াল ঘর রয়েছে বহু পুরনো, দেশী কালো গাই গরু, বাছুর, ছাগল, মুরগি, হাঁস রয়েছে, সামনে পুকুর মিষ্টি জলের -------সারাদিনে তাদের দেখভাল করতেই কেটে যায় সময়, অবলা জীব দের প্রতি বড় মায়ার বাঁধন, বছর ৪৫ এর অতসী মাঝরাতেও একাধিকবার ওঠেন, বিশেষতঃ ভোররাতের দিকে, লন্ঠন জ্বালিয়ে গোয়াল ঘরে যান, গরু-বাছুর ছাগলদের দিকে তাকিয়ে দেখেন,"তাদের কোনো অসুবিধা নেই তো", তাদের সারা শব্দ পেলে নিশ্চিন্ত হন।
এক অমাবস্যার ঘনঘোর রাত্রি, চারিদিকে ভারী নিস্তব্ধ, বন বাদাড়ের খসখসে আওয়াজ শোনা যায়, আজ অতসী দেবীর কিরকম ভয় ভয় লাগছিলো, গোয়ালঘর একদম নিস্তব্ধ, শেষ রাত্রি, লন্ঠন জ্বালিয়ে গোয়াল ঘরের সামনে যেতেই আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠল, এক বিশাল আকৃতির সুন্দরবনের সুন্দরী, ডোরাকাটা বাঘ বাবাজি দিব্যি শুয়ে ঘুমোচ্ছে, নাক ডাকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, গরুর বাছুরের রক্ত চারদিকে জমাট বেঁধে আছে, সবশেষ,------- মাথা ঘুরে গেল আতঙ্কে, টলতে, টলতে নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে অচেতন হয়ে পড়লেন, স্বামী আনন্দ, ছেলেমেয়েরা মার মাথায় জল দিতে লাগলে, চেতনা ফিরে পেলেন মা, গোয়াল ঘরে বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভয়ে, আতঙ্কে সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো, ভোরের আলো ফুটতেই জানাজানি হতেই গ্রামের শোরগোল পড়ে গেল, বাঘ এসেছে, তড়িঘড়ি স্থানীয় বনবিভাগকে খবর দেওয়া হল,-------- কেউ ঘর থেকে বেরোবে না, বন বিভাগে কর্মীরা এসে দেখলেন বাঘ বাবাজি আর নেই, গোয়াল ঘরে ----- শূন্য গোয়াল ঘর, অতসী দেবী শোকে ভেঙে পড়লেন,------স্বামী আনন্দ কীর্তনীয়া ক্রন্দনরত স্ত্রীকে বললেন, দুঃখ করোনা, আবার সব হবে, আমরা বাঘের দেশে বাস করি, অতিথি এসেছিল, প্রকৃতির লীলাখেলা কে মেনে নাও, আমরা বেঁচে থাকলে গোয়াল ঘরে আবার নতুন করে গরু-বাছুর, ছাগল আসবে," হাড়িয়াভাঙ্গা" নদী সাঁতরে তিনি খাদ্যের সন্ধানে এসেছিলেন, সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
