অনন্তর (পর্ব ৩)
অনন্তর (পর্ব ৩)
©️ অনিশ্রী
নক্ষত্র :
--------------
"যদি রাত্রির মতো ফুরিয়ে যাই
যদি আজকের আমি হয়ে যাই গতকাল,
তবে ভুলে যেও একদিন কেউ ছিলাম
বুকে নয় অভিশাপে রেখে দিও চিরকাল।"
(প্রজ্ঞা অনূসুয়া)
পেছন থেকে শব্দগুচ্ছ ভেসে আসতেই আচমকাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে পালক, সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্ত শরীর মূহুর্তে টানটান। আর প্রায় সাথে সাথেই একজন ত্রিশ বত্রিশের শক্ত সামর্থ্য সুশ্রী দর্শন পুরুষ এগিয়ে আসে ওর কাছে। যুবাটি ওর দিকেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। পুরুষের চোখের মুগ্ধতা পালকের কাছে কোনো নতুন ব্যাপার নয়, আর এই যুবার চোখের মুগ্ধতায় কোনো কামনা ছিল না। তবুও নির্জন এবং অন্ধকার গলিতে রাতে একান্তে এভাবে একজন পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে একটু সঙ্কোচবোধই করলো পালক। একটা টিমটিমে Street Light কোনোভাবে আলোকিত করে রেখেছে গা ছমছমে এই গলিটাকে। পালকের সাথে কথা বলার জন্য হঠাৎই এই গলিটাই কেন বাছা হলো, তা নিয়ে পালকের দ্বন্দ্ব থেকেই গেলো। তবুও সৌজন্যসূচক মৃদু হেসে খুব নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলো,
"উদ্দালক বাবু, আপনি !! এখনো বাড়ি যান নি !!"
উদ্দালক হেসে মৃদু ঘাড় নেড়ে পালককে 'না' বলে। পালক দেখে মোটা চশমার ফাঁকে উদ্দালকের মারকাটারি চাহনি আর মুচকি হাসি, যা দেখে মেঘান্ত সহ ওদের নক্ষত্রের অনেকেই পাগল। উদ্দালক যদিও যতবারই পালককে দেখে, ততবারই ওর নতুন লাগে মেয়েটাকে। উদ্দালক পালকের দিকে তাকিয়ে বলে,
"হাসিটা সবার জন্য হতে পারে কিন্তু চোখের জল কোনো এক বিশেষ মানুষের জন্য পড়ে।"
চোখের ভাষার মতো এত কঠিন ভাষা জগতে আর একটাও হয় না। আর যে এটা বুঝতে পারে সে হয় কবি, নয়তো প্রেমিক। সামান্য ঝুঁকে উদ্দালক তাকিয়ে আছে ওর দিকে উত্তরের প্রতীক্ষায়। বুকের ভেতরটা আরো একবার উথালপাতাল করে উঠলো পালকের... অবহেলিত অভিমানের অবর্ণনীয় অধঃক্ষেপণের অসুখে আক্রান্ত পালক মূহুর্তে নিজেকে আড়াল করার জন্য মুখ ফিরিয়ে নেয়। কি উত্তর দেবে সে উদ্দালককে !!! সে নিজেও কি জানে, কি সম্পর্ক ছিল তাদের !!! বন্ধুত্ব না কি ভালোবাসা !! কেবল নীরবে নিভৃতে দুটি মন হয়েছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কি সেই প্রতিশ্রুতি !!! তাও তো জানে না পালক !!! পালকের দাদাভাই-এর মৃত্যুর পর জেতা বাজি হেরে জিতিয়ে দেবার পরাগমিলনের মতো পালক সরে এসেছিলো তার জীবন থেকে। সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। সেদিন পরিবারের যা অবস্থা ছিল, তাতে দাদাভাই-এর মৃত্যুর জন্য চোখের জল ফেলাটাও তখন পালকের জন্য বিলাসিতা ছিলো। কিন্তু ওর মায়ের বলা একটা কথায় সেই মানুষটার সাথে সব সম্পর্ক সে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
"রাক্ষসী... রাক্ষসী তুই একটা... পেটে আসতেই বাপকে খেলি। যে দাদাভাই তোকে বুকে আগলে মানুষ করলো, আজ তোকে বাঁচাতে গিয়ে সেই বুকটাই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলো। যার জীবনের সাথে নিজেকে জড়াবি, তাকেই গিলে খাবি না কি রাক্ষসী !!! এত লোককে না খেয়ে নিজে মরতে পারিস না !!!"
দুই হাত দিয়ে নিজের দুটো কান চেপে ধরে পালক। গোটা শরীরটা থরথর করে কাঁপছে ওর। হঠাৎই দুই চোখে আঁধার নামে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই ওকে ধরে ফেলে উদ্দালক।
Care and Cure Hospital :
------------------------------------------
"হ্যালো... হ্যালো.."
বুকের রক্ত জমিয়ে দেওয়া এক গম্ভীর, রাশভারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো ফোনের ওপার থেকে,
"হ্যালো..."
তীক্ষ্ণ দুটো চোখ আরো একটু জ্বলজ্বল করে উঠলো। ঠোঁটের কোনায় একটা পাতলা হাসি এঁকে মসৃণ গলার স্বর উচ্ছ্বসিত স্বরে বলে উঠলো,
"হ্যাঁ দাদাভাই..."
"হ্যাঁ, টিমো বল..."
ফিকে গলায় ঠোঁট ফুলিয়ে টিমো বললো,
"শোন না, আজ আমার ফিরতে দেরী হবে।"
গলাটা উদ্বেগে একটু ঘন হয়ে এলো তাতানের। ভ্রূ-টা ঈষৎ কুঁচকিয়ে কয়েক মিনিটের ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলো,
"কেন !!! Anything Serious !!!"
মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে মিটিমিটি হেসে টিমো উত্তর দেয়,
"আরে না না, Bro... No চাপ। আসলে, এইমাত্র এখানে একজন পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে। Panic Attack হয়েছে, মনে হচ্ছে। আমি একটু Stable করে ফিরবো। আসলে এখনো তো সব সিনিয়র ডক্টররা Join করে নি। আর এটা একটা High Profile Case। তাই তেমন সিরিয়াস না হলেও জুনিয়র ডক্টররা একটু ভয়ই পাচ্ছে। শোন দাদাভাই, এইদিকটা আমি একটু সামলে নিই বুঝলি। তারপর আমরা দু'জনে Long Drive-এ বেরবো। Long Drive, Light Music, রাতের কলকাতা আর রাস্তার ধারের দোকানের মাটির ভাঁড়ের চা। জমে ক্ষীর হয়ে যাবে একেবারে।"
দশদিক কাঁপিয়ে বেশ উচ্চস্বরে হেসে উঠলো তাতান ওরফে মেজর ঊশান্ত রায়। আপাত কাঠখোট্টা রসকষহীন মানুষটাকে এমনতর হাসাতে একমাত্র টিমোই পারে।
"আচ্ছা, বেশ তাই হবে। আজ্ঞা শিরোধার্য টিমো বাবু। তুই বললেই আমি গাড়ি নিয়ে চলে আস.."
স্বভাবসিদ্ধ কঠিন গলায় কৌতুক স্বরে বলা কথাগুলো শেষ হবার আগেই ফোনের ওপার থেকে ভেসে এলো কিছু উদ্বিগ্ন স্বরে বলা শব্দবন্ধ,
"উপমন্যু স্যার, ঐকান্তিকা ভট্টাচার্যের বাড়ির লোক কেউ আসতে পারবে না বলছে। ওনার Bond-এ কে Sign করবে !!"
'ঐকান্তিকা ভট্টাচার্য'... ফোনের ওপার থেকে এই একটা নাম ভেসে আসতেই হঠাৎই ঊশান্তের গলার কাছে জমাট বাঁধলো আহত আত্মসম্মান আবার অনিয়ন্ত্রিত আবেগগুলোর সাথে যুদ্ধে নামলো মস্তিষ্ক। দাঁত দিয়ে ঠোঁটটা চেপে ধরলো ঊশান্ত। ইচ্ছেদেরও অভিমান হয়, তবে তার দাম সবাই দিতে পারে না। ঊশান্তর না বলা অভিমানগুলো কলি থেকে কখনো ফুল হয়ে ফোটে নি বলেই হয়তো তার ঘ্রাণ পায় নি কেউই। আসলে আমাদের সবারই একটা মন পাখি থাকে, যাকে সবার অজান্তেই আমরা মনের গহীনে পুষি। একটা বয়সের পর, একটা বোধ তৈরি হবার পর আঙুলে আঙুল ছুঁইয়ে সম্পর্ক তৈরি করা বা ইতি টানার প্রয়োজন পরে না। জরুরি হল স্বচ্ছ, সুন্দর, লোভ-হিংসা-বিদ্বেষহীন একটা মন; সুন্দর মানসিকতা, ভালোবাসা, আন্তরিকতা। বোধ তৈরি হওয়ার পর কিছু সম্পর্ক হয়তো হয় কিন্তু অন্তরঙ্গতা তৈরি হবার জন্য মানসিক উচ্চতায় মিলতে হয়। মানসিক উচ্চতা মানে উন্নত মানসিকতা। ততখানি উন্নত মানসিকতার হতে হবে, যতখানি হলে নিজের আয়ত্তের বাইরের যে কোন কিছুকে গুরুত্ব দিতে পারা যায়। ততখানি বোধ তৈরি হতে হবে, যতখানি হলে নিজের মতটাকে চাপিয়ে না দিয়ে যে কোন বিষয় আগ্রহ নিয়ে শুনতে পারা যায়। ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ অপছন্দ মেনে নেয়া যায়, অন্যকে সম্মান করা যায়। মানুষ হিসেব করে, কেন সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে? কেন কেউ দূরে সরে যাচ্ছে? কতটা তারা দিয়েছে অথবা কত দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু তাদের হিসেবে এটা থাকে না যে, তারা কি আসলেই কারো ভরসার জায়গা হতে পেরেছিলো? তারা কি আসলেই কারো মানসিক শান্তির কারণ হতে পেরেছিল? আসলেই কি তারা কোন স্বার্থের হিসেব না করে আন্তরিক ছিল? তাদের সংস্পর্শে আসলে কি কারো মন শান্ত হয়? প্রবল বিপর্যস্ততার দিনগুলিতে তারা কি একটা কাঁধ বাড়িয়ে দিতে পেরেছিল, যেখানে নির্ভয়ে মাথা রাখা যায়?
না, পারে নি ঊশান্ত। ঐকান্তিকার চরম দুর্দিনে ওর পাশে দাঁড়াতে পারে নি ঊশান্ত। যদিও ঐকান্তিকার পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানানোর মতো আদৌ তেমন কোনো সম্পর্ক ওদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল কি !! যদিও বা হয়ে থাকে, সেটা ঊশান্তের তরফেই ছিল। কারন, ঐকান্তিকার তরফ থেকে তেমন কোনো ইঙ্গিত কোনোদিনই সে পায় নি। শেষ যেদিন কথা হয়েছিল, মনের অবাধ্যতায় করা শেষ প্রশ্নটা বোধহয় ঐকান্তিকার কানে ঢোকার আগেই ঐকান্তিকা হঠাৎই ওকে ফোনটা রাখতে অনুরোধ করে। সেই মূহুর্তে ঊশান্তর মনে হয়েছিলো, কথারও সময় অসময় আছে। সময়ের কথা অসময়ে বললে কথারাও বোধহয় মরে যায়। ব্যাস... তারপর একটা ঝড়ে ঐকান্তিকার জীবন তছনছ হয়ে যায়। শেষ মূহুর্তে ঐকান্তিকার গলার স্বর ঊশান্তের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সারারাত এক অজানা আশঙ্কা আর অস্বস্তিতে ছটফট করেও পরেরদিন থেকে ঐকান্তিকাকে আর ফোনে আর পায় নি। তীব্র বালখিল্য অভিমানে ভেবেছিলো, আর কোনোদিন ঐকান্তিকার কোনো খবর নেবে না। প্রকৃত ভালোবাসায় অভিমান আর অভিযোগ থাকবেই, কিন্তু অন্তরালে ভালোবাসাটার চোরাস্রোতটাও যে থেকে যায়। সব সময় তো চিৎকার করে বলা সম্ভব না যে, 'তোমাকে ভালোবাসি'। কিছু সময় বুঝে নিতে হয়। অভিমানের মধ্যেও ঠিক কতটা ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে !! অভিমানের উপর সময়ের স্বল্প পলি পড়তেই ঊশান্তের মনে হয়েছিল, ভালোবাসতেও একটা সম্মানজনক দূরত্ব প্রয়োজন, সম্পর্ক যেন রুদ্ধশ্বাস না হয়ে ওঠে। কখনো কখনো দূরত্বও সম্পর্ককে আরো মধুর করে তোলে। RAW Officer হবার দৌলতে ঐকান্তিকার কোনোরকম মনোমালিন্য, মতান্তর বা মনান্তর ছাড়াই একদিন হঠাৎ করে ওমন করে খুব দূরে চলে যাওয়ার কারনটা জানতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি ঊশান্তের। কিন্তু ততদিনে বোধহয় বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছিল। ঐকান্তিকার প্রতি তীব্র অভিমান ধীরে ধীরে বদলে গেল নিজের প্রতি অসহ্য রাগে, দায়িত্বজ্ঞানহীনতারও বোধহয় একটা সীমা থাকে। ভুলেরও হয়তো প্রায়শ্চিত্ত আছে, তবে তা পুড়ে ছারখার হবার পর। ছেড়ে যাওয়ারও ফিরে আসা আছে, তবে তা আর কখনোই আগের মতো হবার নয়। যে প্রাণোচ্ছল মেয়েটাকে ঊশান্ত সবার অজান্তেই নিজের মন, প্রাণ সঁপে দিয়েছিলো, ততদিনে সে পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। সেই মূর্তমান বিষাদের লৌহবর্ম ভেদ করে, তা কার সাধ্যি !!! তবে ঊশান্ত এতদিন দূর থেকে ঐকান্তিকার সব খবর রাখলেও ওর সামনে যায় নি কখনো। ঐকান্তিকাকে ও একটু সময় দিতে চেয়েছিলো। বড্ড আত্মাভিমানী যে ওর মনের মানুষটি এবং ততোধিক জেদী, একগুঁয়ে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলো ওই মেয়ে। বন্ধক হিসেবে সে অনেক কিছুই রাখতে পারতো, কিন্তু আত্মসম্মানবোধকে সে বন্ধক রাখতে পারে নি। নিজে একা সমাজের কটুক্তির প্রতিমুখে আত্মসম্মানের ডানায় ভর দিয়ে পরিবারের সবার প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্যের উড়ান দিয়েছিলো। সবাই বলে, বিপরীত মেরু আকর্ষণ করে। তাহলে ঊশান্তের মনের মানুষ কিভাবে এমনতর সমমনস্কতার হলো !! কিন্তু আর নয়, স্বর্গীয় Air Chief Marshal ঐতিহ্য ভট্টাচার্যের সহোদরা ঐকান্তিকা ভট্টাচার্য এইভাবে অভিভাবকহীন হয়ে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকবে, এটা মেজর ঊশান্ত রায়ের পক্ষে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। মূহুর্তেই ঊশান্তের চেহারাতে ফুটে উঠলো এক অসম্ভব কাঠিন্য... প্রাথমিক ভাবাচ্ছন্নতা কাটিয়ে তাই কড়া সুরে টিমোকে বলে,
"হ্যালো টিমো, শুনতে পাচ্ছিস !!"
তাতানের এই ধরনের কন্ঠস্বরকে খুব ভালো করে চেনে টিমো। তাই বুকের ভেতরটা ঈষৎ কেঁপে উঠলো, গলাটাও যেন শুকিয়ে গেলো টিমোর। তবে সেই অনুভূতি মূহুর্তে ঢোক গিলে গোপন করে টিমো বলে,
"হ্যাঁ, দাদাভাই বল।"
"তুই ওর Treatment start করে দে। আমি আসছি। Bond-এ আমি Sign করবো।"
তাতানের উচ্চারণ করা প্রতিটা শব্দগুচ্ছে ছড়িয়ে পড়ছে কঠোর আদেশ। সেই আদেশ কানে প্রবেশ করতেই কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল টিমো, বিস্ময়ের ঘোরটা যেন কাটতেই চাইছে না তার। কোনোক্রমে ঠোঁটদুটো নাড়িয়ে অস্ফুটে বলে,
"দা-আ-দা-আ-ভা-আ-ই-ই..."
মেজর ঊশান্ত রায় মানুষটা বড়ই বিচিত্র, অন্যের প্রয়োজনে বহু চরিত্র যে কোনো সময় ধারণ করতে পারে। তাই টিমোকে কোনোরূপ জবাব না দিয়েই আবারও ঝরা বকুলের মতো ছড়িয়ে দিলো কঠোর আদেশ,
"বাকিটা হসপিটালে পৌছে বলি। আধ ঘন্টার মধ্যে আমি পৌছাচ্ছি।"
ফোনটা কেটেই আবারও বুকের ভেতরটা কেমন যেন উথালপাথাল করে উঠলো ঊশান্তর। হসপিটালে গিয়ে কেমন দেখবে ঐকান্তিকাকে !!! সহ্য করতে পারবে তো ঐকান্তিকাকে ওইভাবে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে !!! পারলে এই মূহুর্তেই ঐকান্তিকাকে নিজের বুকের মাঝে টেনে জড়িয়ে ধরে বলতো,
"ভয় পেয়ো না। আমি আসছি। কিছু হবে না তোমার, আমি কিছু হতে দেবো না।"
কিন্তু কবেই বা মেজর ঊশান্ত রায়ের মনের কথা হৃদয়ের অলিন্দ পেরিয়ে ঠোঁটের চৌকাঠে এসে পৌছেছে !! কেবল দৃঢ় হলো চোয়ালের পেশি, মুষ্টিবদ্ধ হলো কড়া হাতের মুঠো, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো চোখের দৃষ্টি। হয়তো বা নিজের অজান্তেই ঠোঁট দুটো অল্প নড়ে উচ্চারণ করলো বিদ্রোহী কবির কিছু পঙক্তি,
"পথের আজো অনেক বাকি, যদি তাই হয় প্রিয়
পথের শেষে তোমায় পাওয়ার যোগ্য করে নিও। "