অদ্ভুত প্রেম
অদ্ভুত প্রেম
কোথাও একসাথে যেতে হলে সাজের ব্যাপারে মহিলাদের সময় লাগার ব্যাপারটা সকলেরই জানা. তারপর যদি নব বিবাহিত দম্পতি হয় সে বিষয়ে ব্যাখ্যায় না যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- কি রে! হলো তোর? বিয়েতে তো অনেক সাজলি। আর কি, না সাজলেই নয়? মধুচন্দ্রিমায় এসে কোনো মেয়ে এতো সাজতে পারে এই প্রথম দেখলাম।
- এই তুই চুপ করতো! বেরসিক একটা লোক। নতুন বৌ বলে কথা, একটু তো সাজতে সময় লাগবেই।
- ও আচ্ছা! এক ঘন্টাটা বুঝি একটু সময়?
- চুপ বেয়াদপ কোথাকার, তুই মেয়েদের ব্যাপারে কি বুঝিস রে হাঁদারাম? তোকে কি দেখে যে ভালোবাসলাম কে জানে?
- তুই আবার শাড়ি পড়েছিস? শাড়ি ঠিকঠাকভাবে সামলাতে পারবি তো?
- সব পারবো, তোকে চিন্তা করতে হবে না।
- বাব্বা ! তুই সবুজ শাড়ি পড়েছিস দেখছি। ওই জন্যই আমাকে সবুজ পাঞ্জাবিটা সকাল থেকে পড়তে বলছিলি বারবার।
- হ্যাঁ হাঁদারাম, যাতে আমাদের ড্রেস ম্যাচ করে বুঝলি।
- এই ম্যাচ করে জামাকাপড় পড়ার কনসেপ্টটা কেমন যেন জোকারের মতো লাগে।
- কিছুই জোকার লাগে না, ওটা ভালোবেসে দু'জন দু'জনের জন্য পরে বুঝলি। বেশি কথা না বাড়িয়ে চল এইবার সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলো দেখে আসি।
রূপম আর জয়ী দু'জনেই কর্মজীবনে ইঞ্জিনিয়ার। আজ থেকে তিনবছর আগে কর্মসূত্রে দু'জনের আলাপ, তারপর বন্ধুত্ব। তারপর সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে সম্পর্কে পরিণত হয়। রূপমের পরিণতবোধ আর ধীরস্থির স্বভাব জয়ীর চঞ্চল মনকে ভীষণ আকৃষ্ট করেছিলো। সে ভেবেছিলো রূপমই তাকে সারাজীবন আগলে রাখতে পারবে। তাই জয়ী আর দেরি না করে রূপমকে সবটা জানায় এবং রূপমও দু'দিন পর তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তারপর দু'জনের পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে দু'জনের বিয়ে হয়। বিয়ের পনেরো দিন পর তারা এখন মধুচন্দ্রিমা কাটাতে এসেছে সুন্দর এক শান্ত নির্জন জায়গায়।
- দেখ ওই জায়গা টা কি সুন্দর! সবুজ ঘাসের মধ্যে কি সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে! আমি যাবো ওখানে।
- এই জয়ী কি করছিস কি তুই? এভাবে ছুটিস না, পড়ে যাবি তো। উফফ! এই মেয়েটা না আমায় পাগল করে ছাড়বে।
- এই যা সব শেষ হয়ে গেলো!
- কি হলো রে? কোথাও লেগেছে নাকি রে তোর? তোকে দৌড়োতে না করলাম না! তোর পেছনে দৌড়োতে গিয়ে আমিও হাঁপিয়ে গেলাম।
- দেখ রূপ! আমার শাড়ির কুচিটা কেমন একটা হয়ে গেলো। এতো সুন্দর করে শাড়িটা পড়লাম নষ্ট হয়ে গেলো!
- ও আচ্ছা এই ব্যাপার? চাপ নিতে হবে না কন্যা, তোর বর এইসব ব্যাপারে খুব পটু। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
- আচ্ছা ঠিক করে দে।
- এই এই এইতো! দেখ এইবার কেমন সুন্দর করে শাড়ির কুচিটা ঠিক করে দিয়েছি। এ কি! জয়ী তুই কাঁদছিস কেনো?
- রূপ এইভাবেই আমার সবকিছু ঠিক করে দিবি তো সবসময়? ভালোবেসে আগলে রাখবি তো আমাকে?
- ধুর বোকা! ভালোবেসে আগলে রাখবো বলেই তো তোকে বিয়ে করলাম। তোকে আগলে রাখতে আমার খুব ভালো লাগে। এখন কান্নাকাটি করিস না তো! বেকার চোখের কাজলটা নষ্ট হয়ে যাবে।
- তাহলে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে I love u বল। বিয়ের পর একবারও বলিসনি।
- বলবো আগে একবার আদর করতে দে আমায়।
- ধ্যাৎ অসভ্য ছেলে একটা!
- তবে রে আমায় অসভ্য বলা? এই তো আমার বৌটাকে জড়িয়ে ধরলাম। আদরটা নাহয় অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক আপাতত I love u বৌ।
- I love u too আমার হ্যান্ডসাম বর।
এভাবেই ভালোবাসা নির্ভর এক অদ্ভুত প্রেম, যা একটা গল্পের মত এগিয়ে নিয়ে চলল দুটি উচ্ছল
জীবনকে।