অবশেষে ভালোবাসা
অবশেষে ভালোবাসা
মানব জীবনে ভালোবাসার ব্যাপারে একটি উক্তি আছে -
"যে ভালোবাসতে জানে , ভালোবাসি বলতে জানে না, তার মতো অভাগা এ পৃথিবীতে নেই “।
কারণ আমাদের জীবন নানা অনিত্যে ভরা, কখন কি ঘটবে এই চাবিকাঠি আমাদের হাতে নেই। তাই মনের কথা মনে না রেখে, ভালোবাসার জনকে জানালে একটা তৃপ্তি লাভ করা যায়। নাহলে বহু ক্ষেত্রে ভালোবাসা না বলাই থেকে যায় - তাঁর ফলে বহু স্বপ্ন পরিণতি পায় না।
– তুই আমাকে এখনো ভালোবাসিস ?
– না।
– কেন ?
– কেন আবার কি ?
– ভালোবাসিস না কেন ?
– যখন ভালোবেসে ছিলাম তখন তো মূল্য দিলি না।
– তুই তো আমাকে বলিসনি কোন দিন ?
– তোর বোঝা উচিত ছিলো।
– তুই না বললে কেমন করে বুঝবো ???
– কেমন করে বলব ? বলার আগেই তো তুই ওই ছেলেটাকে আমাদের মাঝে নিয়ে আসলি।
– ও আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড ছিল আর কিছু না।
– আমি তো তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। মাত্র দুই দিনের একটা ছেলের জন্য তুই আমাকে ভুলে গেলি ?
– আমি তোকে ভুলিনি , তুই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছিস।
– কেন গেছি তু্ই জানিস না ?
– না।
– জানবি কেমন করে ? আমি তো তোর কেউ ছিলাম না।
– এমন ভাবে বলিস কেন ? তু্ই তো জানিসই আমি একটু কম বুঝি। বললেই পারিস।
– আমি তোর পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
– একবার বললেই পারতিস !!
– কেন বলব ? তুই বুঝিতে পারিস না ?
– বুঝলে কি আর তোর থেকে দূরে থাকতাম।
দুজনেই চুপ। কিছুটা সময় নীরবতার পর প্রিয়া বলে উঠল,
– চুপ কেন ?
– এমনিই।
– কাউকে ভালোবাসিস ?
– না।
– ভালোবাসতি ?
– হ্যা।
– সেদিন বলিসনী কেন ?
– বলার সাহস ছিলো না।
– কেন ?
– তোকে হারানোর ভয়ে।
– কেন হারাবি আমায় ?
– তোকে বলার পর যদি তুই “না” বলে দিস। যদি তুই চলে যাস আর আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট করে দিস।
– তুই কেমন করে ভাবলি “তোকে ছেড়ে আমি চলে যাবো ?”
– তাহলে এই দুই বছর কোথায় ছিলি ?
– ওটা তো……………….!!! থাক পুরানো কথা বাদ দে।
– ok, দিলাম।
আবারও নীরবতা দুজনের মাঝে। প্রকৃতি টাও কেমন যেন ওদের সাথে শান্ত হয়ে গেল । মনে হচ্ছে আকাশেরও বুঝি আজ মন খারাপ। এই বুঝি কান্না শুরু করবে।
– কিছু বলবি ?
– কি বলবো ?
– যা ভাবছিস এখন।
– তুই বলতে পারিস না ?
– না।
– কেন ?
– তুই জানিস না, “মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না”।
– কেন ফোটে না ? তোরা ফোটাতে চাসনা দেখেই ফোটে না।
– হা……..হা……..হা……..হা……..!!!
– তোর হাসিটা এখনো আগের মতোই সুন্দর। (প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বিপুল)
– যাক বাবা, আমার হাসির কারণে হলেও তুই একবারের জন্য আমার দিকে তাকালি। এতক্ষণ তো আমার মনে হয়েছিলো আমি কোন রোবটের সাথে কথা বলছি।
– (চুপ)
– আচ্ছা আমি আসি (প্রিয়া উঠতে যাবে ঠিক তখনি প্রিয়ার হাত ধরে ফেলল বিপুল)
– বস।
– কেন বসবো ? তুই তো কিছু বলবি না !!!
– বস বলছি।
– বল, কি বলবি ?
– আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরবি ?
– হুম ধরলাম।
– ছোটবেলায় তোকে হরলিক্স খাওয়ানি ?
– কেন ? (বিস্মিত হয়ে)
– তোকে শক্ত করে ধরতে বলছি , স্পর্শ করতে বলিনি ।
– ok বাবা, ধরলাম। এবার বল কি বলবি ?
– প্রিয়া , আমি…….
– হুম….!!
– আমি……
– তারপর ?
– তোকে…
– হুম…..!!
– তোকে…
– তোকে কি …..??
– আমি একটু জল খাবো, একটু জল দে…। (হতবিহ্বল হয়ে পড়লো বিপুল)
– (হাত ছেড়ে দিয়ে রাগান্বিত হয়ে) যা ওই দোকান থেকে খেয়ে আয়।
– তোর কাছে নেই ?
– না।
বিপুল উঠে জল খেতে চলে গেল। এমন ভাবে গেল মনে হয় কত বছরের তৃষ্ণার্ত । অপর দিকে প্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ দুই বছর পর ওদের দেখা অথচ বিপুল ওর মনের কথাটা আজও বলতে পারলো না। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে এই দিনে প্রিয়ার সাথে বিপুলের প্রথম পরিচয় হয়। বন্ধুত্বের কিছুদিন পরেই প্রিয়াকে ভালোবাসতে শুরু করে বিপুল । প্রিয়াও ব্যাপারটা বুঝতে পারে কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকে। মেয়েদের এই এক স্বভাব, “বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না”। ওই দিকে বিপুল নানা কথা-বার্তায়, চাল-চলনে প্রিয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে সে প্রিয়াকে ভালোবাসে। প্রিয়া বুঝেও সবসময় না বোঝার ভান করে থাকতো। কারণ, প্রিয়া সবসময় চাইতো বিপুল প্রিয়াকে সরাসরি প্রপোজ করুক। সব মেয়েরই এই রকম স্বপ্ন থাকে যে তার ভালোবাসার মানুষ তাকে আগে প্রপোজ করুবে, তার মনের কথাটা বলবে কিন্তু বিপুল সেটা পারছে না শুধুমাত্র বন্ধুত্বটা নষ্ট হওয়ার ভয়ে। কোনদিন আর পারেওনি । মাঝে অন্য একটা ছেলের জন্য দুই জনের বন্ধুত্বের ফাটল দেখা দেয়। অতঃপর দীর্ঘ দুই বছর পর আজ আবার তাদের দেখা কিন্তু বিপুল আজও প্রিয়াকে মনের কথা না বলায় প্রিয়ার মন খারাপ।
৩০ মিনিট হয়ে গেল বিপুল এখনো আসছে না। প্রিয়া ফোন করলো কিন্তু বিপুল ফোনটাও ধরছে না। হয়তো বিপুল চলে গেছে, হয়তো বিপুলের আজও বলার সাহস হয়নি এমনটা ভেবে প্রিয়া উঠে দাড়ালো। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন “প্রিয়া ” বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। প্রিয়া পিছনে ফিরে তাকালো। আরে এতো বিপুল ! ও একটু দূরে হাটুগেড়ে বসে আছে, হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ। বিপুল লাল গোলাপ গুলো দিশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল,
– প্রিয়া ……, I……Love……You……..!!!
লেকের পাড়টা যেন বিপুলের চিৎকারে কেঁপে উঠল। লেকের পাড়ের উৎসুক মানুষ গুলোর দৃষ্টি এখন শুধু বিপুল আর প্রিয়ার দিকে। এমন দৃশ্য হয়তো আজ বিরল তাই কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল। অন্য দিকে প্রিয়া অপলক দৃষ্টিতে বিপুলের দিকে তাকিয়ে রইল। যে বিপুল ভালোবাসি কথাটা বলতে তিন বছর সময় নিলো, যে বিপুল মনের কথাটা বলতে গেলে হাত কাঁপতে শুরু করে সেই বিপুল আজ পুরো পৃথিবীর সামনে প্রপোজ করল। এটা ভাবতেই প্রিয়া অবাক হয়ে গেল। প্রিয়া কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। প্রিয়ার বিস্ময় যেন কাটছে না। বিপুল সত্যি আজ প্রপোজ করল নাকি প্রিয়া স্বপ্ন দেখছে। কেন যেন আজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না প্রিয়া । সব কিছুই যেন আজ স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে প্রিয়ার চোখে জল চলে আসল।
– কিরে আর কতক্ষণ বসে থাকবো ??
বিপুলের কথায় যেনো জ্ঞান ফিরল প্রিয়ার। প্রিয়া আস্তে আস্তে বিপুলের দিকে এগিয়ে আসলো। বিপুলের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিলো। বিপুল উঠে দাড়ালো। প্রিয়া বিপুলের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল।
কিছুক্ষণ পর_________
– কিরে, কিছু বলবি না ?
– কি বলবো ? (প্রিয়ার চোখের জল)
– তুই কাঁদছিস কেন ?
– মার খাবি। এই কথাটা বলতে এত সময় লাগলো ???
– ওকে, সরি…..।
– কানে ধর।
– কার ? তোর না আমার ?
– তোর, শয়তান। (ধমক দিয়েই বলল প্রিয়া)
বিপুল কানে ধরতে যাবে ঠিক তখনি প্রিয়া “I Love You Too” বলে বিপুলকে জড়িয়ে ধরল। প্রিয়ার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। বিপুল জানে প্রিয়ার চোখে আজ কোনো কষ্টের কান্না ছিলো না, যা ছিলো তা ছিলো আনন্দের। আর বিপুলের চোখে-মুখে ছিলো আনন্দের হাসি। গত দুই বছর বিপুল প্রিয়ার জন্য অনেক কেঁদেছে, সেই কান্না আজ হাসিতে রুপান্তরিত হয়েছে।
নীতিশিক্ষা: সত্যিকারের ভালোবাসায় যতই ফাটল ধরুক না কেন, একদিন না একদিন মিলন ঠিকই হয় ।

