INDRANI BANERJEE

Tragedy Fantasy

3.9  

INDRANI BANERJEE

Tragedy Fantasy

অভাব

অভাব

3 mins
657


সংসারে অভাব কি তা আমরা খুব ছোট থেকেই বুঝতাম।দিনের পর দিন মা বাবা কে কষ্ট করতে দেখেছি।আমার বাবা গ্রামের জমি তে চাষ করতো। আর মা ঘরে একটু আধটু সেলাই করে,শাড়ির পার বসায় গ্রামের মেয়ে বউ দের। আমাদের অনেকদিন গেছে যখন আমরা ভাত খাবো বলে বসে অথচ আমাদের সেদিন ভাত না দিয়ে মা মুড়ি মেখে খাইয়েছে।আমরা দুই ভাই বোন মা বাবা মিলে আমাদের সংসার।ভাই ছিল ছোট আর পেটুক তাই ওকে খেতে বেশিটা সবসময় দেওয়া হতো।ভাত এর বদলে মুড়ি দেখে আমি বুঝতে পেরে যেতাম আজও বাড়িতে চাল নেই।তার মানে আজ বাবা মা না খেয়ে আমাদের খেতে দিয়েছে। যেদিন আপনাদের চাল থাকতো না সেদিন বাড়িতে ভাত হতনা।সেটা মা কোনোদিন না বললেও বুঝতে পারতাম। হাসি ন খে আমাদের মা কোলে বসিয়ে মুড়ি মেখে খাওয়াতো।ভাই বলতো,"মা আজ মুড়ি কেনো ভাত খাবো। মুড়ি খেতে আমার ভালো লাগেনা".মা হেসে বলতো"আজ খেতে নে কাল ভাত ন মাছ ও রেধে দেবো"।এই সব আজগুপি গল্পঃ বলে মা আমাদের সান্তনা দিয়ে দিন পার করতো।তবু মা বাবার মুখ দেখে কোনোদিন বোঝার উপায় ছিল না এতো সমস্যাই আছে।তবু আমাদের হাসি মুখে দুজন কে যা দরকার দিয়ে যেত।যতটা পারতো দেওয়ার চেষ্টা করেছে।আমরাও অভাবের সংসারে থেকে সবই বুঝতাম। শুধু না বোঝার ভান করে থাকতাম।

আজও তো অনেক বড় হয়েও না বোঝার ভান করে থাকি।যেমন টা মা তুমি থাকতে।


 স্কুল এ টিফিন কোনোদিন নিয়ে যেতাম আবার কোনোদিন মা হাতে 2 টাকা দিয়েও বলতো যা পারিস পছন্দ মতো কিছু খাস কিনে।যেদিন মা পয়সা দিত হাতে সেদিন আমি জমিয়ে রাখতাম।ভাই কে 1টাকার ঝালমুড়ি কিনে দিতাম।বা কোনোদিন একটা কুলফী।খুব ভালোবাসে ছেলেটা। আর কুলফি পেলে ও খুব খুশি হতো আর বলতো "দিদি আমাকে কালকেও একটা কিনে দিবি"।আমি শুনে শুধু হাসতাম।ভাই খিদে পেলে না খেয়ে থাকতে পারেনা।তাই ওকে দিতেই হতো।


কতদিন এমন আছে ওকে বাড়ির বাইরে এসে বুঝতাম আজ কম খাস।যা দেবে খেতে মা তোকে খেতে নিস।কিন্তু আরো চেয়ে বসিস না।তুই চাইলে মা নিজে না খেয়ে তোকে দিয়ে দেবে।

 মা বাবা কিছুই খাইনি।বাবা পয়সা দিলেও নিবিনা বলবি তোর কাছে আছে। বাইরে বেরিয়ে বায়না করবিনা এটা খাবো ওটা খাবো বলে।আমি ওকে যতই বুঝতাম ও সব ভুলে যেতো।

আমার মা বাবা আমাদের উপর কোনোদিন গায়ে হাত তোলেনি।কারণ আমরা খুব ছোট থেকেই খুব বড় হয়ে গেছিলাম।খুব বুঝতাম।তোলার প্রয়োজন হইনি।

আমরা চারটে মানুষ অভাবে থাকলেও ভালোবাসার টার অভাব কোনোদিন হয়নি।বরং বেশি ছিল তাই আজও মনটা ওখানেই পরে থাকে।


গ্রামের দুপুরের রবিবার গুলোতে বেশী ভাগ বাড়ীতেই মাংস রান্না হতো। রাস্তা দিয়ে পেরোনোর সময় চারিদিকে শুধু ভালো মন্দ খাবারে গন্ধ।কি ভালো লাগতো সেই গন্ধ। কতদিন ভাই রাস্তা দিয়ে পেরোলে মনি পিসির বাড়িতে ঢুকে পড়ত সেই গন্ধ পেয়ে।আসলে মাঝে মাঝে মনি পিসি ভাই কে দেখে দিত 2 কুচি মাংস আর এক বাতি ঝোল। তাই ভাই ভালো গন্ধ পেলেই চলে যেত মনি পিসির বাড়িতে।র মনী পিসি ভাইকে ভুলিয়ে অনেক সময় বাড়ী পাঠিয়ে দিত।আমার খুব রাগ হতো কতদিন গিয়ে আমি মনি পিসি কে গিয়ে বলতাম"দাও না গো একটু ঝোল আমার ভাই টা মাংস খেতে খুব ভাল বাসে"।দিত কোনোদিন তার বদলে আমাকে দু খান কাজ করিয়ে নিত।মা কে না জানিয়ে ভাত আর মাংস ঝোল খেত কতদিন। র যেদিন জানতে পারতো মা সেদিন বাড়ি এসে আমাকে খুব বকা বকি করতো।তারপর নিজের মনেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো।

আজ আমি নিজের সংসারে যখন সবার জন্য মাংস রান্না করি আর যখন বাতি ভর্তি করে মাংস নিয়ে সবার পাতে দি মনে পড়ে


Rate this content
Log in

More bengali story from INDRANI BANERJEE

Similar bengali story from Tragedy