আত্মহত্যা
আত্মহত্যা


সারাদিনের কর্মক্লান্ত শরীরটাকে বাসের সিটে এলিয়ে দিয়েই অনিশ ফোন করলো বাড়িতে, 'মা আজ একটু জমিয়ে রান্না করো তো, পোলাও মাংস… আমি যাওয়ার পথে মাংসটা নিয়ে যাবো কিচোখ বুজে জিভের আরামের কথা চিন্তা করে চোখে ঘুম এলো তার।
মুরগির দোকানের মালিক পড়ে থাকা রক্ত পালক পরিষ্কার করে দোকানে চাবি দিতে যাবে, শব্দ পেয়ে শুরু হলো দুই মুরগির আবেগঘন আলাপ। 'জানিস বাবু! ভেবেছিলাম আজ যদি কোনোরকম বেঁচে যাই, তবে সারাটা রাত তোকে আদর করবো আমি। আমরা দুজনেই আজ বেঁচে গেলাম কেমন বল!' অপর মুরগি উগরে দিল তার ভালোবাসার মোলায়েম উক্তি, 'হ্যাঁ সেই! বুদ্ধিটা কেমন দিলাম বলো? দুজনেই একটু ছোট ছোট। চলো, দুজনেই দুজনের আড়ালে লুকিয়ে থাকি কোণের ওই দিকে। তাই তো, মালিক আমাদের খুঁজলো না আর। ওই শোনো চাবি দিল, এসো এবার আমরা তৈরি করে নিই আমাদের জগৎ। কাল সকালে যে আগে যাবো বঁটির ফলার উপরে অপরজন কিন্তু এই স্মৃতি নিয়েই কাটাবো বাকিমুরগি দুটোর চারটে ঠোঁট ডুবে গেল তাদের পৃথিবী গড়তে, সাদা পালকের খাঁজে ভাঁজে আবেগে চার চোখের কোনেই নেমে এলো জলের ধারা। জড়িয়ে ধরলো পায়ে পায়ে, একসঙ্গে গলা মিলিয়ে বললো, 'যেটুকু বাঁচি পৃথিবী থাকবো নাহয় আদর মুড়ে।'মালিকের গজগজানির সঙ্গে চাবি খোলার ঝাঁঝালো আওয়াজে আবেগ থতমত খায় মুরগিদের। ভিতরে প্রবেশ করে অনিশ। 'বুঝতে পারছি কাকা, একটু রাত হয়ে গেছে কিন্তু কী করবো খেতে খুব ইচ্ছে করছে... আজ তাই তোমায় জ্বালিয়ে ফেললাম।' মালিকের ক্ষুব্ধ কণ্ঠ, ' না আসলে বঁটি টাও ধুয়ে ফেলেছি তো! আবার ধুতে হবে, দাঁড়াও দেখি সবথেকে ছোট দুটো আছে…।'
ঝটপট ঝটপটের আওয়াজে শুধুই কান্না শুনলো অপরজন। সারারাত্রির ভালোবাসার স্বর্গে হঠাৎ শ্মশান নেমে এলো। পা দুটো আঁকড়ে ধরতে চাইলো আটকাতে, তার আগেই বঁটির ক্যাঁচ শব্দে বুঝলো সব শেষ।গুনগুন গাইতে গাইতে অনিশ মাংস নিয়ে ঘরে ফিরলো। পেট ভর্তি আরাম নিয়ে ক্লান্তি কাটাবে শীতেল রাতের।পরদিন সকালে মুরগির দোকানের সামনে বাসস্ট্যান্ডে বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করার সময় হঠাৎ সমবেত হাসির শব্দে অনিশ এগিয়ে গেল দোকানের দিকে। 'কি হয়েছে কাকা, সবাই এত হাসছে কেন?'
…'আর বোলো না বাছা! কাল রাতে তো তুমি মাংস নিয়ে গেলে, তারপর আমি ভুল করে খাঁচা বন্ধ না করেই চলে গেছি ঘরে চাবি দিয়ে। সকালে এসে দেখি কী আশ্চর্য! সবচেয়ে ছোট আর একটা আমার মুরগি নিজেই বঁটির উপর গলা দিয়ে মরে পড়ে আছঅনিশও মজা পেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল বাসের উদ্দেশ্যে।
আবেগঘন রাতে সঙ্গীর কান্না যখন বঁটির ধারে টুকরো টুকরো হয়ে প্লাস্টিকে মুড়ে অনিশের বাড়ি গিয়েছিল মাংস হয়ে, ঠিক সেই সময় খাঁচার বাইরে বেরিয়ে এসে সকালের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই বরণ করেছিল মৃতসকালের হাসির খোরাক হয়ে উঠলো বাজার বেশ কিছুক্ষণের জন্য, কেবল সেই আবেগ মাখানো ভালোবাসার রাত স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল খাঁচার কোণে আর পাষাণ বঁটির অপারগ হৃদয়ে।