আমার প্রিয় পাঞ্জাবিটা
আমার প্রিয় পাঞ্জাবিটা
অষ্টমীর সকাল বাঙালির সবচেয়ে ব্যস্ততার দিন, অঞ্জলি নিয়ে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে জয়ীর পরিবার কিন্ত জয়ী তখনও ফোনের দিকে তাকিয়ে সকল ব্যস্ততার মাঝেও যেন কিছুর অপেক্ষা তাকে বারবার ডাকছে।
বিছানায় ওল্টে পড়ে আছে তার মেকআপের জিনিস আর পুজোয় কেনা তার প্রিয় জামদানিটা।
বড় শখ করে তুলে রেখেছে আজ পড়বে বলে । মনে মনে আর একটি আশা জন্মেছিল কিন্তু তার সাথেই
জন্মেছিল নিরাশতা সে জানে তার কথা মতন কোনোদিন মন পাঞ্জাবি পড়বে না । তাই এইবার আর বলে ব্যর্থ চেষ্টাও করেনি।
বেলা বইছে আর জয়ীর মন কেমন করছে । ভয়, আশা , আবার হতাশার যেন অদ্ভুত এক খেলা চলছে তার ভেতরে ।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে ......ওপাশে মন ...আনন্দে মরিয়া হয়ে ওঠে সে ।
- হ্যালো... হ্যাঁ..কখন আসবো আমি ? কোথায়
তুমি ?
- তুমি কখন কার সাথে আসবে তোমার ব্যপার, এই নাটক গুলো আমার সাথে করবে না । তোমার জন্য কিছু হয় না জীবনে আমার ...
- আমি কী করলাম , আমি তো তোমার সাথেই বেরোবো বলে রেডি....
- তুমি যা ইচ্ছে কর , যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে গিয়ে মুখ কালো কর , আমাকে ফোন না করে তুমি কার সাথে প্রেমনীলা করছো শুনি , সে নিশ্চয় শুতেও ডাকবে ....বল বল..
- তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে কি বলছো , আমি চাইছিলাম তুমি আমাকে একটা ফোন কর তাই আমি ......
- অন্য কোথাও মুখ মারছো আর বললেই দোষ..... ******* মেয়ে কোথাকার ...ছোটোজাত হলে যা হয়....
- তুমি কী বলছো ....
জয়ীর মন তখন টেবিল থেকে পড়ে যাওয়া বাড়ির সবথেকে দামি কাপের মতন ভেঙে যায় , পার্থক্য শুধু এটুকুই যে মন ভাঙার শব্দ খুব লোকে কানে শুনতে পায় ।
- সত্যি কথা গায়ে তো লাগবেই.....ছোটলোক কোথাকার.....
বিনা দোষে অবিরাম তিরস্কার আর গালি শোনার পর ২ ঘন্টা পর জয়ী হোশ ফিরে আসে .... চোখ খুলে মার চিন্তিত মুখখানা দেখে সে আর সামলাতে পারেনি নিজেকে ...ঝরে পড়েছে তার মায়ের কোলে কিন্তু তার কান্নার কারন একমাত্র সে জানে ....
জয়ীর বাড়িতে সেদিন শোকের কালো ঘন মেঘ ভিড়
করে । সারাদিন চলে তার তান্ডব।
রাতে কোনো মতে তার মা যখন বিছানায় পড়ে থাকা সেই শাড়ি গোটায় ,
জয়ীর চোখের জল থামেনি তখনও.....
ভাবছে পাঞ্জাবির কী দাম!!!! প্রিয় পাঞ্জাবি তিরস্কার ও জানে ? নাকি তার পাঞ্জাবির রং ফ্যাকাশে.......
রাত ১১:২৩ মন অনলাইনে বন্ধুর সাথে ছবি আপলোড করে .....জয়ী তখনও জেগে তিরস্কারে ডুবে।
তখনও শাড়ি দেখে আর মনে মনে পাঞ্জাবি আঁকে।
