আইফোন আর বৈশাখী ইলিশ
আইফোন আর বৈশাখী ইলিশ
দেখতে দেখতে আরো একটা বছর শেষ হতে চলল - আর কয়েকদিন পরেই শুরু নূতন বছরের। তাই নূতন বছর নিয়ে ভালোবাসার জনদের মধ্যে উন্মাদনার তীব্রতা প্রচুর। কোথায় গেলে নূতন ফ্যাশনের কি পাওয়া যাবে, সেটা পড়ে কটা সেলফি তোলা হবে, কি স্টাইল পোজ দেওয়া হবে - এসব নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। এমত অবস্থায় এরকমই এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকার কথোপকথন
--সোনা, নূতন বছর তো এসে গেল, বল আমাকে পহেলা বৈশাখে কি গিফট করবে ঠিক করলে ?
---একটা android Nokia মোবাইল ফোন ।
---না সোনা প্লিজ এটা লাগবেনা।
---তাহলে কি লাগবে?
---মানে আমার সেরকম কিছু demand নাই, তবে তুমি যখন এতবার ধরে অনুরোধ করছো তখন তুমি আমাদের বাসায় জাস্ট দুইটা বড় ইলিশ নিয়ে এসো,প্লিজ।
---কেন সোনা ইলিশ কেন?
---মা বলেছে যে পহেলা বৈশাখে
একজোড়া বড় ইলিশ গিফট করবে আমাদের,তার কাছে আমায় বলি সরি মানে বিয়ে দেবে।
— জানো,অলরেডি এর মধ্যে পাড়ার ট্যারা মোহিত লাইনে সিরিয়াল নম্বর ১ হয়ে আছে ।
---সোনামনি,আমার এতটাকা কোথায়? আর কি করে পাবো এত টাকা ?
---দেখ সোনা এটা বললে তো হয় না, বলো? তুমি যখন আমাকে এত ভালোবাস, তখন এটা তোমায় যেভাবে হোক পূরণ করতে হবে। এক কাজ করো,তোমার ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে
ধার নাও।
---আরে বাবা, তুমি তো আমার বন্ধুদের আর্থিক অবস্থা তো জানোই - ওরা আমার মতই দিনে আনে দিনে
খায়। ওদের কাছে এত টাকা থাকবে কি করে?
---মা কে বলো।
— কি পাগলের মত কথা বলছ?এত টাকা চাইলে মা আমাকেই বলি দিয়ে দেবে।
---হুম,তাহলে কি করা যায়? আচ্ছা একটা কাজ করা যায় তোমার আইফোনটা বিক্রি করে দাও। ভালো দাম পাবে, তাতে তোমার প্রয়োজন মিটে যাবে।
---এই খুব খারাপ হবে কিন্তু। তুমি আমার ফোনটার দিকে নজর দেবেনা
এটা আমার ভাই গিফট করেছে।
---তাহলে আর কি হবে বলো, তুমি যখন আইফোনটা ছাড়তে পারবে না। তখন তুমি আমার আশা ছেড়ে দাও, আমি জানতাম তুমি আমার জন্য কিছুই করবে না জানি।
---এমন করে বলোনা সোনা, তোমার
জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। জানো, প্রয়োজনে জীবন পর্যন্ত দান করতে পারি।
– শোনো তোমাকে অনেক দিন ধরে চিনি, যত বড় বড় কথা কাজের কাজ কিছু না।সিনেমার ডায়লগ বাদ দাও দুইটা ইলিশ দিতে পারো না আবার জীবন দিয়ে দেবে।
---ওহ, বুঝতে পারছি আমিতো এখন পুরানো হয়ে গেছি তাই আর কি।আমার দাম এখন পড়ে গেছে। এখন তো ট্যারা মোহিতের দাম অনেক বেশী আমার থেকে, এটাই স্বাভাবিক।
---এই মেয়েদের মত ন্যাকা ডায়লগ
মারবে না।
– এই শোনো,তুমি কি আমাকে ইলিশের জন্য ভালবাস?
---না তা নয়, তবে তুমি আমার অবস্থাটা বোঝো। আমার প্রচন্ড অসহায় অবস্থা, জানিনা আমি কি করবো। তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পারছো না - আমি নিরুপায় সোনা। জানো আমার বান্ধবী জয়িতার বয় ফ্রেন্ড তাকে চাঁদপুরে স্পেশাল ইলিশ
গিফট করেছে।
---দেখ, এরকম করলে,আমি কিন্তু কাঁদবো।
---শোনো তাহলে আরও আমার আরেক বান্ধবী সোমার বয় ফ্রেন্ড তো আরও এডভান্স উনি ইলিশের সাথে আবার স্পেশাল শাহী পান্তা ভাত অর্ডার করেছেন।
– সোনা, আমি আর শুনতে পারছি না। আমার শরীর অসুস্থ লাগছে,বুকের বামপাশে চিনচিন করছে মনে হয় আইফোনটা হারালাম। অবশ্য না হলে তো তোমায় হারাতে হবে।
— শরীর খারাপ হোক আর যাই হোক, শুনতে তোমায় হবেই। আমি বলে নিজে জ্বলে পুড়ে মরছি আর উনি একথা শুনবেন না। রীতার বয় ফ্রেন্ড ইলিশ পান্তা মশলাপাতির সাথে কাঁচা মরিচও
এনেছে।
— ওগো দয়া করো, আর বলো না। বুঝতে পারছি গেল আমার আইফোন পহেলা বৈশাখের ইলিশের ভোগে।
--আরোও শোনো সোমার বয় ফ্রেন্ড শুধু এই বছরের জন্য তো ইলিশ পাঠিয়েছে, আবার আগামীবছরের জন্যও অর্ডার দিয়েছে রেখেছে।
--এই এবার দয়া করে একটু চুপ করতো, আমাকে এবার Olx এ এড
দিতে দাও - আইফোন শেষ।
--এই একটু দাঁড়াও, শুনছিলাম ভাইয়া আইফোন কিনবে। আমি বরং আইফোনের ব্যাপারে ওকে বলছি।
--কেন?
--আরে তোমারটা কম দামে মেরে দেয়া যাবে।
--হ্যাঁ, সত্যিই তো এই না হলে ডিজিটাল
গার্লফ্রেন্ড, দেখ আমি কিন্তু আইফোনের বাইরে বাজেট বাড়াতে
পারবো না।
--ওকে,তাহলে পহেলা বৈশাখে
উৎকৃষ্ট মানের ইলিশ নিয়ে আমাদের
বাসার সামনে দাঁড়াবে আমরা
তোমাকে বরণ করবো।
--আচ্ছা বাবুই।
--আর শোন আমরা দুজন হিলশাফি ( হিলসা সেলফি )তুলে
এফবিতে আপলোড দেবো।
অতঃপর বালিকার ভাই তার হবু
জামাইবাবুর মোবাইল স্বল্প দামে
মেরে দিয়ে বেশ আয়েশ করে
চালাতে লাগলো।
আর ইলিশ নিয়ে অসহায় প্রেমিক তার
প্রেমিকার বাড়িতে যাওয়ার কারনে বিয়ের আগেই জামাই আদর তার ভাগ্য জুটে গেলো।
কিন্তু বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যথা করে তখন যখন দেখে তার হবু
শ্যালক তার আইফোন নিয়ে গুঁতোগুতি
করে।
মানুষের শরীরে মাথার স্থান হৃদয়ের উপরে - এর কারণ হৃদয়ের আবেগ যতই তীব্র হোক না কেন বুদ্ধির বিচক্ষনতার অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

