ও যে মেয়ে
ও যে মেয়ে
জন্ম মুহূর্তে মুখটা প্রথম যেদিকে ঘুরিয়েছিল ,
চিতায় শুয়েও মুখ রেখেছে সেদিকেই ।
ও যে মেয়ে ............
সত্ত্বাটা ঘুরতেই থাকে সংসারের চরকায় !
পা ছুটছে ঢেঁকিশালে , হাত নাড়ছে খুন্তি !
চিতায় শুয়েও শান্তি নাই ,
আগুনের আঁচ পেতেই
চিতাকাঠ দুহাতে ঠেলে ঘাড় বাঁকিয়ে
উঁকি মারে রান্নাশালে -
তরকারিটা পুড়ছে না তো !
দু’পা মুড়ে লাফ দিতে চায় চিতা থেকে ,
এই তো এক্ষুণি উঠোনে ছিল দামালটা !
দেখছে না যে !
ডুবলনা তো খিড়কি পেরিয়ে পুকুর জলে !
চিতা এখন মাথায় থাক !
দৌড়...... দৌড়.....দৌড়......
চিতায় পোড়ার সময় কোথায় !
চিতাটাকেই বিছানা ভেবে
হাত বাড়িয়ে আদর মাখায় ছেলেটার গায়ে ,
ও যে ঘুমায়নি এখনো ,
ঘুম পাড়াতে হবে তো !
বড্ড বে- আক্কেলে বাপ ওর !
শুয়ে থেকেই উশখুশ করছে ,
ওকে তৃপ্ত করতে হবে যে !
নয়তো রাত দুপুরেই ...
পোড়ার কি আর সময় আছে !
ঘর- সংসার ... দস্যি- দামাল ...
ক্ষেত- খামার ...রাঁধাবাড়া ...
বিছানা পাতা আদর করার পরেও
প্রাণপুরুষের প্রতাপ ...
আগুনটাও কেমন তার রোজ নামচার মত
পাংশুটে হয়ে যাচ্ছে !
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ !
চিতার আর দোষ কি !
গঞ্জনার কালিতে কালো হয়ে আছে অন্তর,
প্রহারের লাঞ্ছনায় কালশিটেময় গা !
আঁতের কালি চাপা ছিল বুকে ,
শাড়ির আঁচল ঢেকে রাখত দেহ ,
আগুন তো আর আড়াল মানে না !
সে সর্বভুক ! সবটাই খায় – সে-ই খায় !
তাকেই করা যায় নিঃশর্ত সমর্পণ...
সব ... সব কিছু – নির্ভয়ে নির্ভাবনায় নির্দ্বিধায় !
কিছুতেই অরুচি নাই তার !
তবুও ...
তবুও সেই লাঞ্ছনা গঞ্জনার অন্ধকুপটার জন্যই
চিতায় শুয়েও শান্তি নাই !
ওযে মেয়ে !
ওর মুখ ঘোরানো আছে সংসারের দিকে
ওর মুখ ঘোরানো আছে জীবনের দিকে
পাদুটো আটকে আছে মায়ার ফাঁদে
সেখান থেকে কিছুতেই ফিরতে পারছেনা !